নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাকতালীয়ভাবে আমি সবচেয়ে বেশি যাকে নিয়ে পড়াশুনা করেছি, তিনি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস! কেন তা জানি না!!! নিজের কর্মকান্ডের জন্য তিনি হয়েছিলেন শুধু ভারতবর্ষের নয়, পুরো এশিয়ার মুক্তির রুপকার। ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রাজনীতির আজকের যে নৈতিক অধঃপতন, তার শুরু সেই ১৯৪৭ সালে বৃটিশভারত থেকে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের জন্ম ও তার নেতৃত্ব নেতাজীর মত কোন উজ্জ্বল নক্ষত্রের হাতে না যাওয়া! নেতাজী ছাড়া মোটামুটি সকল সর্বভারতীয় নেতৃত্বই ছিল আপোষকামী। কিন্তু দরকার ছিল আমূল পরিবর্তন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব বৃটিশ বিদায়ের পর। কিছুই হয়নি। তার বদলে ভারতের নেতৃত্ব গিয়েছিল স্টালিনের ভাষায় কিছু পলিটিক্যাল প্রস্টিটিউটের হাতে, আর পাকিস্তানের নেতৃত্ব গিয়ে পড়ল শেষমেশ উর্দিওয়ালাদের হাতে। অবশ্য আইয়ুব খাঁন শাসক হিসেবে এখনকার তুলনায় দক্ষ ছিলেন, কিন্তু দূরদর্শী ছিলেন না!
নেতাজীর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতি, গান্ধীর বিরোধীতায় কংগ্রেস ত্যাগ, ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন কিছুই তাকে তার অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছাতে সাহায্য করেনি। তাই প্রচন্ড বাস্তববাদী এই মানুষটি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন চতুর বৃটিশদের তাড়ানোর কৌশল কি হওয়া উচিৎ! তাই গোপনে আফগানিস্তানের ভিতর দিয়ে সোভিয়েত রাশিয়ায় গমন, সেখানে সুবিধা না করতে পেরে তারপর জার্মানীতে হিটলারের সাথে সাক্ষাৎ, সেখান থেকে সাবমেরিনে করে মাদাগাস্কার হয়ে সাউথ ইস্ট এশিয়ায় গমন, সেখানে বয়সের ভারে ন্যুয়ে পরা রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব গ্রহন ও সেই বাহিনীর দ্বারা আসাম পর্যন্ত দখলের সেই রোমাঞ্চকর কাহিনীই আসলে ভারতের স্বাধীনতার আসল ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে ৪৬/৪৭ এ বৃটিশ ভারতীয় নৌবাহিনীর নৌ বিদ্রোহ যা ছিল দিল্লীর লালকেল্লায় আজাদ হিন্দ ফৌজের গ্রেফতারকৃত সৈনিকদের বিচারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ ; তা আর বেশিদিন ইউনিয়ন জ্যাককে উড়তে দেয়নি এমাটিতে। বৃটিশ সত্যিই ঘাবড়ে গিয়েছিল এতে। তাহলে অহিংস আন্দোলনকারীরা কিভাবে স্বাধীনতার মূল নেতা হতে পারে?
মূলত অনেক পরাশুনা করে আমি দেখেছি যে ১৯৪৫ সালের তথাকথিত বিমান দূর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু ছিল পুরোটাই ভূয়া, বলতে পারেন নেতাজীর নিজের পরিকল্পিত সাজানো নাটক। সংক্ষেপে এই নাটকের ভবিষ্যৎ ফলাফল বলা কঠিন। তবে নেতাজী এটা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি যতটুকু নাড়া দিয়েছেন, তাতেই তার জীবনের অভিষ্ঠ লক্ষ্য সফল হতে বাধ্য, অর্থাৎ শৃঙ্খলমুক্ত স্বদেশ। অন্যদিকে বৃটিশ ও আমেরিকান ইন্টেলিজেন্সও ভালভাবে জানত যে নেতাজি জীবিত। সুভাষ অনমনীয় আপোষহীন সমাজবাদী। সোভিয়েত ও চীনের পর ভারতে সমাজবাদ দৃঢ় হলে ও সুভাষের নেতৃত্ব ভারতে প্রতিষ্ঠা পেলে পুরো এশিয়ায় বৃটিশ ও মার্কিন প্রভাব বলয়ের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। সেদিক দিয়ে নেহেরু নমনীয় ও আপোষকামী। সমাজতন্রীর ভং ধরলেও নেহেরু মূলত পুঁজিপতিদেরই প্রতিভূ!! ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে তিনি পুরো হিন্দু আচার মেনে শপথ নিয়েছিলেন।
চার্চিল পরবর্তী বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি পরবর্তিতে ১৯৫২/৫৩ সালের দিকে কলকাতায় এলে ১৯৪৫ পরবর্তি দ্রুততম সময়ে ১৯৪৭ সালের আগস্টের মধ্যে ভারতের স্বাধীনতা দেয়ার কারনটি জিজ্ঞেস করলে এটলি সাহেব শুধুমাত্র একটি শব্দের মাধ্যমে তার উত্তর দিয়েছিলেন, "বোস"!! দ্যা রিয়েল হিরো। কিন্তু ভারত দীর্ঘকাল কংগ্রেস শাসনাধীনে থাকার ফলে নেতাজীর মূল্যয়ন কোনভাবেই হয়নি। হতে দেয়নি নেহেরু ও তার কন্যা ইন্দিরা!
বিমান দূর্ঘটনা না হলে নেতাজী কোথায় গেলেন!! মূলত সোভিয়েত রাশিয়ায় কিছুকাল কাটিয়ে বা স্ট্যালিনের নজরবন্দি থেকে উনি এশিয়ার দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদ মুক্তির নেপথ্য কারিগর ছিলেন। শোনা কথা বলে যে ভিয়েতনামের মুক্তি আন্দোলনে হো-চি-মিন ও জেনারেল গিয়াপের উপর তার প্রভাব ছিল। শোনা কথা বলছি এ কারনে যে নেতাজী আর কখনই নিজেকে প্রকাশ করতে চাননি। এটা বিশ্বাস করা যায় যে উনি তার মাতৃভূমি ভারতেই ফিরে এসেছিলেন সন্ন্যাসির বেশে এবং ফৈজাবাদ নামক স্থানে দেহত্যাগ করেন ১৯৮৫ সালে। ঈশ্বরধ্যাণে মগ্ন থাকতেন বেশিরভাগ সময়। ছদ্মনাম নিয়েছিলেন ভগবানজ্বি নামে। তার ডেরায় যাতায়াত ছিল ভারতের অনেক প্রভাবশালী পার্সোনালিটির। তাদের একজন ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ্, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর ভগবানজ্বি যাকে বাংলাদেশের ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিতে বলেছিলেন। যে ইতিহাস একদম অনুচ্চারিত তা হল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব কলকাতায় এলে একথা নাকি বলেছিলেন যে বাংলাদেশ যে স্বাধীন হয়েছে তা একথাই প্রমাণ করে যে নেতাজী এখনো জীবিত আছে। শেখ হাসিনাও পরবর্তীতে কলকাতায় নেতাজী রিসার্স ব্যুরোতে একতা নাকি বলেছিলেন যে তার বাবা একথা বলেছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় রহস্যময় ব্যাপার হল ভারত সরকার কলকতায় ফোর্ট উইলিঅমে রক্ষিত ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সমস্ত নথিপত্র পুঁড়িয়ে দিয়েছে! কোথায় কাকে নিয়ে তাদের এতবড় ভয়!!!
নেতাজীকে নিয়ে গত ৭০ বছরে ভারতে বেশ কয়েকটি তদন্তদল গঠিত হলেও অজানা কারণে একটিও আলোর মুখ দেখেনি। তাই দিনে দিনে রহস্য বেড়েছে বৈ কমেনি।
ইন্ডিয়ান কংগ্রসের গান্ধীবলয়ের বাইরের সকলের কাছেই নেতাজী ছিলেন প্রিয়মুখ, আস্থার প্রতীক। এমনকি জিন্নাহ সাহেবের মত স্ট্রংম্যান পর্যন্ত আস্থা রেখেছিলেন সুভাষে! আশ্চর্য লাগে তৎকালীন আরবের নিরক্ষর বেদুঈন থেকে পূর্ব এশিয়ার শেষমাথা পর্যন্ত সকল এশিয়াবাসীর পরিচিত নাম ছিল সুভাসবোস। পুরো ইউরোপ ও আমেরিকায় যাকে একনামে লোকে চিনত , সুভাষিত সুভাসবোসকে, আমাদের নেতাজিকে।
এতকথা কেন লিখলাম? বর্তমান দক্ষিন এশিয়ার বড় সমস্যা নেতৃত্বের সমস্যা। এর শুরু ১৯৪৭ থেকেই। ৪৭ পরবর্তী এ অঞ্চলে যারা ক্ষমতায় এসেছেন তারা কেউই দূরদৃষ্টিস্বম্পন্ন ছিলেন না নেতাজীর মত। একমাত্র মওলানা ভাসানী ছাড়া কেউই সেভাবে সৎ ছিলেন না; বরং ছিলেন ক্ষমতালোভী, মরাল করাপ্ট। তা নেহেরু থেকে শুরু করে শেখ মুজিব, ভুট্টো কেউই এর বাইরে নন। বরং এ উপমহাদেশে এনাদের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে পরিবারতন্ত্র, জনগনতন্ত্র নয় মোটেও। সময়ে সময়ে যা আবার ফ্যাসিবাদ!!
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এ লেখা শেষ করছি শরৎচন্দ্রের পথের দাবী উপন্যাসের শেষ পংক্তি দিয়ে, "পরাধীন দেশের হে রাজদ্রোহী, তোমাকে শতকোটি নমস্কার"!!
২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:১৮
মাসুদুর রহমান (শাওন) বলেছেন: সাইটে কি কোন সমস্যা চলতেছে…? মন্তব্য করা যাচ্ছেনা...
৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:০১
শেরজা তপন বলেছেন: ভাল লেখা।
(আমি যতদুর জানি উঁনি' গুমনামী বাবা' ছদ্মনাম নিয়েছিলেন। যা নিয়ে বেশ কিছু আর্টিকেল,ডকু ও ফিল্ম আছে। )
৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৪৩
গরল বলেছেন: যতটুকু জেনেছিলাম যে উনি জাপানেও গিয়েছিলেন এবং জাপানকে সাহায্য করতে বলেছিলেন বৃটিশ তাড়াতে। সেই লক্ষে জাপানি সৈন্যরা বার্মা পর্যন্ত এসেছিল। তবে উনি থাকলে হয়ত ১৯৪৭ এই দুই বাংলা নিয়ে বাংলাদেশ হত।
৫| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ভোর ৬:৫৯
সোনাগাজী বলেছেন:
উনি হিটলার ও জাপানকে সাপোর্ট করে ভুল করেছিলেন।
৬| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৩:৩০
আল আমিন হাসান সাদেক বলেছেন: মালদ্বীপ । পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য । দুরবীন বাংলা । Maldives । DURBEEN BANGLA
৭| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: সুভাষ বোস আসলেই ভারতবাসীকে খুব ভালোবাসতেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫৯
সাসুম বলেছেন: নেতাজীকে যতটা দেবতা হিসেবে দেখা হয়, আমি ততটা দেবতা হিসেবে দেখতে রাজি নই। তিনি ব্রিটিশ শাসনের অন্ধকার থেকে আমাদের মুক্তির জন্য সহযোদ্ধা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন হিটলার কে। কলোনিয়াজমের নাগপাশ থেকে ছিন্ন করার জন্য তিনি বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন জেনোসাইডার কে। হিটলার এর প্রতি উনার ভালোবাসা এবং অন্ধ আনুগত্য আমাকে কস্ট দেয়।
ঠিক যেমন, এই মুহুর্তে আওয়ামীলীগের অপশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে বা কাজ করতে গেলে যে কারনে আমি পাকিপন্থী বাংলাদেশ বিরোধী জংগি টেররিস্ট জামাতে ইস্লামি কিংবা হেফাজতি কিংবা ইস্লামিস্ট দের সাথে একই কাতারে দাড়াতে রাজি নই।
এটা আমার একান্তই পারসোনাল মতামত।