নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এদেশের স্বাধীনতার জন্য অনেকেই দিয়েছেন তাদের জীবন; কিন্তু একজন আছেন, যিনি দিয়েছেন তার যৌবন। তিনি সিরাজুল আলম খাঁন! আজ তার দীর্ঘ রহস্যময় জীবনের অবসান হল! আজ থেকে তিনি নতুন পথের যাত্রী, যে পথটাও অদৃশ্য ও আরো রহস্যময়!
এ প্রজন্মের ক'জন চিনেন এ মহান মানুষটিকে, ক'জন দীর্ঘ পড়াশোনা করে সত্যের নির্যাস নিয়ে বলতে পারেন যে স্বাধীন বাংলাদেশ যে ভবিষ্যতের বাস্তবতা তা উপলব্ধি করেছিলেন ও বলেছিলেন ৩ জন মানুষ; মাওলানা ভাসানী, শহীদ কমরেড সিরাজ সিকদার ও সিরাজুল আলম খাঁন! এ ৩ জনের মধ্যে সিরাজ সিকদারের পথ ছিল শুরু থেকেই সশস্ত্র!! বাকী দুজনের চিন্তাটা ছিল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পথটাকে স্বাধীনতার আন্দোলনের পথে নিয়ে যাওয়া!! এ প্রজন্মের ক'জন জানে এ বাংলাদেশ ২ জন অতি মেধাবী সিরাজকে পেয়েছিল। একজন বুয়েটের সিভিল ইন্জিনিয়ারিং এ ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট, এদেশের প্রথম রাস্ট্রীয় তথাকথিত ক্রস ফায়ারের শিকার শহীদ কমরেড সিরাজ সিকদার। আরেকজন ম্যাট্রিক এ ফাস্ট স্ট্যান্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিতের মেধাবী ছাত্র সিরাজুল আলম খাঁন! রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের কাছে যিনি দাদাভাই! এই দুই সিরাজের কেউই ব্যক্তিগত লাভের জন্য, এমপি মন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনীতি করেননি। দুজনেরই দেশপ্রেম প্রশ্নাতীত, স্বপ্ন ছিল শোষনহীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা!
আমি এখানে অবশ্য সিরাজুল আলম খাঁনের জীবনী লিখতে বসিনি, যাদের কৌতহল হয় তারা গুগল করে জেনে নিয়েন অথবা বাজারে শামসুদ্দিন পেয়ারা রচিত আমি সিরাজুল আলম খাঁন বইটি কিনে নিয়েন। আমি বলতে এসেছি, তিনি কোন নেতা ছিলেন না, বরং ছিলেন নেতা তৈরীর কারিগর। এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ষাটের দশকের সকল গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতাই ছিল মূলত তার প্রডাক্ট, যারা এখনো এদেশের অতি পরিচিত নাম। যদিও তার এ প্রডাক্টগুলোর অনেকে তার মত জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সৎ থাকতে পারেন নি।
এ কথা অনেকের কাছে অতিরঞ্জন মনে হলেও এটা সত্য যে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে শেখ মুজিব যাদের পরামর্শে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হতেন, তাদের মধ্যে ১ম নামটাই হল সিরাজুল আলম খাঁনের! তিনি ছিলেন রাষ্ট্র পরিচালনায় আ ম্যান অফ নিউ কনসেপ্ট!!
তাহলে শেখ মুজিবের সাথে তার বিরোধটা স্বাধীনতার পরে শুরু হল কেন? সিরাজ চেয়েছিলেন সর্বদলীয় সরকার, আর সরকার গঠনে মুজিব আওয়ামী অন্তঃপ্রান। দেশ পরিচালনায় সিরাজ শুরুতেই গলদ অনুভব করে শেখ সাহেবকে সুপরামর্শ দিতে গিয়ে ব্যর্থ হন, মুজিব তখন পরিবার ও চাটার দল দ্বারা পরিবেষ্টিত। বন্ধু পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিঞাকে বললেন যে একপায়া টেবিল মজবুত ও ব্যালেন্সড, নাকি চারপায়া টেবিল? পদার্থবীদ হিসেবে ওয়াজেদ সাহেবের স্বাভাবিক আন্সার ছিল চারপায়া টেবিল। সিরাজের প্রতিবক্তব্য ছিল যে সবাই বুঝল, কিন্তু তোমার শ্বশুর এটা বুঝল না!! চোখের সামনে স্বাধীন দেশটায় নিজের স্বপ্নভঙ্গ হতে দেখে এবার উদ্যোগী হয়ে গঠন করলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, জাসদ! উফ! কি প্রচন্ড জোয়ার তিনি অন্তরালে থেকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এদেশের ৭০'র দশকের তেজ্বদীপ্ত ও মেধাবী তরুনদের মাঝে! চারিদিকে জাসদের জয়গান, জাসদ তখন টেনে এনেছিল চুম্বকের মত এদেশের সকল মেধাবী তরুনকে! এ তরুনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা ফাইনালি দখল করতে না পারা অবশ্যই সিরাজুল আলম খাঁনের জীবনে বড় ব্যর্থতা! আর সফলতা একটাই - তা হল এদেশের স্বাধীনতা!""
৭৫'র নভেম্বর বিপ্লবের পরে তিনি মূলতঃ তার গোপন ও প্রকাশ্য রাজনৈতিক কার্যক্রম আস্তে আস্তে গুটিয়ে ফেলেন। জিয়াউর রহমানের আমলে গ্রেফতার ও অন্যান্য জাসদ নেতাদের সাথে বিচারের সম্মুখিন হলেও পুরো সাজার আগেই মুক্তি পান। হতে পারে এ ছিল জিয়াউর রহমানের সাথে গোপন কোন বোঝাপড়া। আমার অনুমান মিথ্যাও হতে পারে, তবে একেবারে অমূলক নয় যে জিয়াউর রহমানের অনেক গণকল্যানমূখী নীতিতে তিনি পরামর্শও দিতে পারেন। কারণ আর যাই হোক, জিয়া ট্যালেন্ট চিনতেন। যেমন এরশাদের আমলে উপজেলা পদ্ধতি, হাইকোর্টের স্হায়ী বেঞ্চ দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্হাপন এসব ছিল সিরাজুল আলম খাঁনের সুপরামর্শ! তার একজন ঘনিষ্ঠ অনুসারী আমাকে বলেছিলেন যে এরশাদ সাহেবকে অংক কষে উনি বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন উপজেলা পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা।
হ্যাঁ, উনি ছিলেন গনিতের মেধাবী ছাত্র পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অংক কষেই উনি বুঁজতে পেরেছিলেন স্বাধীন বাংলার অবশ্যম্ভাবীতা। অনার্সের পরে আর প্রথাগত পড়াশুনা করতে পারেননি পাকিস্তান সরকারের হুঁলিয়ার কারনে। ২৫শে মার্চের কালোরাতে তিনি ছিলেন পাক আর্মির কাছে টপ মোস্ট ওয়ান্টেড, প্রকাশ্যে আসেন স্বাধীনতার পরে। তখন তিনি শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ, মুজিববাদের প্রবক্তা!
ও হ্যা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস বলে একটি ব্যাপার আছে, যার মূলকেন্দ্র কিন্তু সিরাজুল আলম খাঁন। আর দু'জন হল আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক ও জাসদের কাজী আরেফ আহমেদ। এ নিউক্লিয়াসই হল এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে জীবন যৌবন উৎস্বর্গ করা তিন তরুনের রোমান্টিকতার বাস্তব প্রকাশ।
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, উন্নত দেশগুলো তাদের দেশের উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী মেধাবীদের সন্ধান করেন। সিরাজুল আলম খাঁন তাই অংকের ছাত্র হলেও যুক্তরাষ্ট্রের উইনকনসিস বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক পান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অতিথি অধ্যাপক হিসেবে। প্রচন্ড বইপাগল মানুষ ছিলেন তিনি।
পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন হয়ে ৭১'র ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র আন্দোলনের লিভিং লিজেন্ড ছিলেম সিরাজুল আলম খাঁন। তাই আত্নপ্রচারবিমূখ এ মানুষটি যতই বলে যাক তার মৃত্যুর পর যেন কোন রাস্ট্রীয় সন্মান না জানানো হয়, তাকে নোয়াখালীতে তার মায়ের পাশে দাফন করা হয়; তবুও রাষ্ট্রের উচিৎ হবে তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সন্মানের সাথে দাফন করা, তার জানাজা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আয়োজন করা। রাস্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর স্বশরীরে সন্মান জানানো। অন্তঃত শেখ হাসিনা খুব ভালভাবেই জানেন হু ইজ সিরাজুল আলম খাঁন!!!
২| ১০ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৩:২৬
মোগল সম্রাট বলেছেন:
আপ্তানের কথা ধইরাই কই। তার প্রোডাক্টগুলোর কার্যকারিতা তো এদেশের জনগন গত আধা শতাব্দী ইউজ করছে। সবইতে শ্রীপুরের ট্যাবলেট।
৩| ১০ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৩:২৮
মোগল সম্রাট বলেছেন:
আপ্নের কথা ধইরাই কই। তার প্রোডাক্টগুলোর কার্যকারিতা তো এদেশের জনগন গত আধা শতাব্দী ইউজ করছে। সবইতো দেহি শ্রীপুরের ট্যাবলেট।
৪| ১০ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৪:১৫
কিরকুট বলেছেন: আপনার প্রবন্দ পড়ে আমার চোখ ঘুমে বন্ধ হয়ে আসছে । বেহুদা পাব্লিক কে ঘুম পাড়ানি গান কেনো শোনান ?
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ২:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: তার এত গুণগান গাওয়ার কিছু নেই।
তার সমস্ত কিছুই ছিলো ভুলে ভরা।