নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সীমাহীন সমর

নয়ন_রংপুর

নিজের সম্পকে বলা খুব শক্ত

নয়ন_রংপুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাশিয়া বিজয়

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ২:১৬

রাশিয়া বিজয়!

সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা প্রবাদতূল্য। এদেশের অনেক লেখক ও ইন্টেলেকচুয়ালের জন্ম তার হাত ধরে, তার প্রেরণায়। তাদের মধ্যে তার শ্রেষ্ঠ প্রডাকশন হল আহমেদ ছফা। রাজ্জাক সাহেব তার জীবনে লেখা একমাত্র উপন্যাস "কন্যাকুমারি" তে শ্রমিক, কারিগর ও শিল্পীর এক ক্লাসিক সংজ্ঞা প্রদান করেছেন; যে হাত দিয়ে কাজ করে সে শ্রমিক, যে হাতের সাথে মাথা যোগ করে কাজ করে সে কারিগর, আর যে হাত ও মাথার সাথে হৃদয় যোগ করে কাজ করে সে শিল্পী!

রাশিয়া বিজয় একটি বইয়ের নাম। এটি মূলতঃ ফার্সি ভাষায় লেখা যেখানে এ বইয়ের নাম "তাসকেয়ার রাশিয়া", যেটি লেখক নিজেই পরে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ও নাম হয়েছে " কনকয়ার রাশিয়া" যেটিকে বাংলায় অনুবাদ করলে নাম আসে রাশিয়া বিজয়। এ বইয়ে নায়ক চরিত্র মূলতঃ দুজন। একজন লেখক নিজে যিনি উত্তম পুরুষে নিজেকে বর্ননা করেছেন আর একজন ওবায়েদ, লেখকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বইটি রাশিয়ার যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে লেখা তা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লেই বোঝা যাবে রাজ্জাক সাহেবের সেই শ্রমিক কারিগর আর শিল্পীর উপমা। লেখক এখানে সেই কারিগর আর ওবায়েদ সেই শিল্পী! ওবায়েদ স্বপ্ন সৃষ্টি করতে দক্ষ আর লেখক নেঘবান দক্ষ তা বাস্তবায়ন ও পরিচর্যায়!!

গল্পের শুরুতেই আমরা দেখি ওবায়েদের ঝড়ের গতিতে রাশিয়া থেকে লন্ডনে আগমন ও লেখকের সাথে সাক্ষাৎ। কোন ভূমিকা নয়, নয় কোন প্রাণোচ্ছল সম্ভাষণ যা ওবায়েদের স্বাভাবিকতা; তাকে পাশ কাটিয়ে তিনি লেখককে সরাসরি তার আগমনের কারণ জানালেন এবং আরো সহযোগী ষ্টাফদের নিয়ে দ্রুত মিটিং আয়োজন করতে বললেন। মিটিংয়ে ওবায়েদের আগে লেখক ও অন্য পার্শ্বচরিত্ররা সে সময়ের পরিবর্তনশীল বিশ্বে নিজেদের ব্যাবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করলেন। তারা তাদের ব্যবসায় সম্ভাবনা খুঁজে পেলেন উত্তর আফ্রিকাসহ মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং জাপান ও দূরপ্রাচ্যে। এসময় ওবায়েদ আলোচনায় ফ্লোর নিয়ে আরেকটি বিস্তৃত দেশের নাম উল্লেখ করলেন যেখানে তেল ও গ্যাসের বিশাল মজুদ আছে, আছে অপার ব্যবসায়িক সম্ভাবনা, আর সেই দেশটি হল রাশিয়া।

যে সময়কালকে কেন্দ্র করে এই বইয়ের ঘটনাপ্রবাহ চলমান, সেটি নব্বইয়ের দশকের প্রায় শুরুর সময়। পৃথিবীর এক নতুন টার্নিং পয়েন্ট। দীর্ঘ ৭০ বছরব্যাপী পুঁজিবাদী পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজবাদী বিশ্বের ঠান্ডা লড়াইয়ের আপাতঃ অবসানের পর এক নতুন সম্ভাবনার বিশ্ব। বিশেষতঃ সোভিয়েত লৌহ বলয় থেকে মুক্ত দেশগুলোতে তখন নতুন নিঃশ্বাস। তাদের সামনে পুঁজিবাদী দেশগুলোর সাথে হাত মিলিয়ে নতুন সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধির হাতছানি ও দেশ গড়ার প্রচেষ্টা। সোভিয়েত ইউনিয়নের কয়েয়টি প্রজাতন্ত্র তখন আলাদা হয়ে গিয়েছে, খোঁদ সোভিয়েতের সর্ববৃহৎ অংশগুলো নিয়ে গঠিত হয়েছে নতুন দেশ রাশিয়া, যেখানে রয়েছে বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ আহরনের অবারিত সুযোগ এবং তা ব্যবহার ও বাজারজাতকরণের অমিত সম্ভাবনা। গল্পের মূল চরিত্র ওবায়েদের যুক্তিযুক্ত ও প্রাণোচ্ছল বক্তব্য উপস্হাপনের পর মোটামুটি সকলেই, বিশেষত লেখক আমীর নেঘবান একপ্রকার বিমোহিত এবং সেই আলোচনার টেবিলেই একটি নতুন প্রকল্পের জন্মবীজ রোপিত হয়। ওবায়েদ এই প্রকল্পে ম্যানেজারের দায়িত্ব নেয়ার জন্য লেখক নেঘবানের নাম প্রস্তাব করে কারণ তার মতে নেঘবান একজন জন্মগত ব্যবস্থাপক। ওবায়েদের নেঘবানের প্রতি এই যে জন্মগত ব্যবস্থাপকের যে ধারণা, তা যে শুধু ধারনা নয় বরং পুরোপুরি সত্যি, তা আমরা পরবর্তীতে নেঘবানের কর্মদক্ষতায় দেখতে পাব। আর ওবায়েদ সাহেবের এই প্রজ্ঞা এমনি এমনি তৈরী হয় নি। কারণ তার জন্ম আর বেড়ে উঠা এই উপমহাদেশের এক আলোকিত ও পরিবর্তনশীল সময়ে, যে আলো ও পরিবর্তনকে তিনি পুরোপুরি তার মধ্যে ধারণ করতে পেরেছিলেন, যা তার দৃষ্টি, প্রজ্ঞা ও মেধাকে করেছে শানিত ও পরবর্তী পথকে প্রসারিত। তার সেই শৈশব থেকে যৌবন পর্যন্ত তিনি নিজ দেশে সরাসরি স্পর্শ পেয়েছেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিব, প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন,কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজসহ এদেশের সকল রথী মহারথীর, আর নিজের দেশের বাইরে ষাট ও সত্তর দশকের আন্তর্জাতিক রাজনীতির অনেক দিকপাল যেমন ফিদেল, মাও, মার্শাল টিটো থেকে শুরু করে তৎকালীন দুই দুনিয়ার অনেক পরিচিত রাষ্টনায়ক থেকে আন্তর্জাতিক অনেক শিল্পী সাহিত্যিক ব্যবসায়ির। সকল অর্জিত জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে নিজের দেশকে ছাড়িয়ে ও ছাপিয়ে তিনি তাই হয়ে উঠেছিলেন ৬০, ৭০ ও ৮০'র দশকে একজন আন্তর্জাতিক মানের এ্যাডভাইজার। বইয়ের পরবর্তী চ্যাপ্টারে আমরা তাই দেখি লেখকের গুনমুগ্ধতা ওবায়েদের প্রতি। ওবায়েদকে এই চ্যাপ্টারে তিনি একজন প্রাণোচ্ছল ও রঙিন মনের মানুষ হিসেবে দেখিয়েছেন। তাদের প্রথম সাক্ষাৎ ও পরিচয় তাদের ছাত্রজীবনে লন্ডনে যেখানে তিনি ওবায়েদকে পেয়েছিলেন একজন হাসিখুশি, স্বপ্নবাজ তরুন হিসেবে যিনি বিশ্বরাজনীতি নিয়ে আলাপ করতে ভালবাসতেন, ভালবাসতেন নিপিড়ীত জাতিগুলির প্রতি তার সহমর্মিতা ও সহযোগিতার আকাঙ্খা আর আবেগ, যিনি চিত্রকলা পছন্দ করতেন, পছন্দ করতেন পৃথিবীব্যাপী ঘুরে বেড়াতে। শৈশবে তার জন্মস্হানে এক দরবেশ অবশ্য তাকে দেখে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন, "তুমি পৃথিবীব্যাপী ঘুরে বেড়াবে" আর আমরা পরবর্তীতে এর সত্যতা খুঁজে পাই তার জীবনে।

লন্ডন থেকে এরপর লেখক আমাদের নিয়ে যান মস্কোতে। রাশিয়ান তেল মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে ও মস্কোর মেয়রের আয়োজনে রাশিয়ান তেল শিল্পের উপর পশ্চিমা বিনিয়োগকে আহবানের একটি কনফারেন্সে। লেখককে এই অংশগ্রহণের সুযোগ অবশ্য করে দিয়েছিলেন ওবায়েদ তার স্ট্রং রাশান কানেকশনে। নেগবানও এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছিলেন ওবায়েদের আন্তর্জাতিক কানেকশন এবং বিশ্বাসযোগ্যতা ও সত্যবাদিতার পুরোনো বিশ্বাসে। এই কনফারেন্সে অনেক আন্তর্জাতিক নামীদামী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব ছিল। মেয়র ও রাশান কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের পর লেখক পরিবর্তিত রাশিয়ান সমাজের কিছু চিত্র এখানে তুলে ধরেছেন। বয়োবৃদ্ধ কিছু মানুষের হীমশীতল রাশান রাত্রীতে রাস্তায় দাড়িয়ে রুটি বিক্রির গল্প বলেছেন যা অল্পকিছুকাল আগেও এদেশে অবাস্তব ছিল। হোটেলে রাশান আতিথ্য ও ভোজনের বর্ননার পাশাপাশি লেখক আমাদের মস্কোর তীব্র ঠান্ডা পথঘাটও ঘুরিয়ে এনেছেন।

মস্কো থেকে ফিরে লেখক এই প্রজেক্টের একটি বিস্তারিত বিবরণ ওবায়েদের সামনে পেশ করেন। একই সাথে মেমোরেন্ডামের মাধ্যমে শেয়ার ডিস্ট্রিবিউশনও করে নেন। কারণ লেখক ততদিনে মনস্থির করেছেন এই প্রকল্পে পুরোপুরি আত্ননিয়োগ করার। এজন্য তিনি পড়াশুনা শুরু করলেন রাশিয়ান হিস্ট্রি ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর। কারণ এই জ্ঞানই তাকে পরবর্তী পথ দেখাবে। এরমধ্যেই তিনি আবার আমন্ত্রণ পেলেন বেলারুশের একটি নামী প্রতিষ্ঠান থেকে সেখানকার তেল সম্পদ নিয়ে পর্যালোচনা ও সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে, যা বেশিরভাগ ব্যবহৃত হতে পারে ওই অঞ্চলের একটি সুদীর্ঘ রেলপথে। পথে নামলেই লক্ষ্যে পৌছা যায়, এই সত্য বাস্তবায়নে লেখক এবার আমাদের নিয়ে যাবেন বেলারুশের মিনস্কে।

এরপরের অংশগুলো আসলে লেখকের মিনস্ক, মস্কো আর লন্ডনের মাঝে ছোটাছুটি। এসময়গুলোতেই আসলে আমরা দেখতে পাই নেঘবানের আজন্ম ব্যবস্হাপকের বৈশিষ্ট্য। তিনি মাল্টিন্যাশনালিটির লোকজনের সাথে মিটিং করছেন, পরিকল্পনা করছেন পরবর্তী পদক্ষেপের। কোন ইন্জিনিয়ারিং ফার্ম এ কাজে বেশি দক্ষতায় কাজ করতে পারবে, ফান্ডিং কোথায় থেকে আসবে, সেই ফান্ডিংয়ের লায়াবিলিটি কিভাবে অনটাইম পরিশোধ হবে সেই সময়ের ক্যালকুলেশন, কাজের পরিধি কতটুকু হবে, কত বছর এ প্রজেক্ট চলতে পারে, প্রডাক্টের বাজারজাত কৌশল কি হবে আরো কত কি!! একটা বিষয় লক্ষণীয়, আর তা হল নেঘবানের ফোরকাস্টিং নলেজ, যার দ্বারা কোন কাজের নিখুত সফলতা তিনি ধরতে পারেন যা তাকে এই মিটিংগুলোতে দৃঢ়তার সাথে কাউন্টার পার্টকে প্রবাবিত করতে সহায়তা করে। আর তার যে ওবায়েদের মত বিস্তৃত বিষয়ে পড়াশুনা আছে তা আলোচ্য মিটিংগুলোতে প্রতীয়মান হয়। একসময় ফান্ডিংয়ে এগিয়ে আসেন ইউরোপিয়ান ব্যাংক অব রিকনস্ট্রাকশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ইন্জিনিয়ারিংএ সাপোর্টের জন্য মনোনীত হয় জাপানিজ একটি ইন্জিনিয়ারিং ফার্ম। একটি বিষয় এখানে উল্লেখ্য, আর তা হল গল্পের অন্যতম নায়ক ওবায়েদের একটি কথা, যা তার মানবতাবাদী মনের পরিচায়ক। নেঘবানকে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন যে বেলারুশে তিনি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন শুধু ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে নয়, বরং একই সাথে বেলারুশকে সেখানকার বিজনেস মাফিয়াদের হাত থেকে রক্ষা করতে। যাহোক, এরমাঝে লেখক আমাদের হটাৎ যুক্তরাষ্ট্র ঘুড়িয়ে আনেন, সেখানকার একটি বিজনেস কনফারেন্স থেকে। এখানে তার সফরসঙ্গী ছিল মঙ্গোলিয়ার প্রধাণমন্ত্রী যিনি আবার তার অনুন্নত দেশকে পশ্চিমের মত উন্নত করতে চান। এখানেও ওবায়েদের খেল দেখতে পাবেন, যিনি আবার মঙ্গোলিয়ার প্রধান উন্নয়ন উপদেষ্টা সেই সময়। ওই যে ওবায়েদের সম্পর্কে বললাম তার মানবতাবাদী চরিত্র নিয়ে, তার প্রমাণ পাবেন তার জ্ঞানকে তিনি ব্যয়িত করেন ৩য় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোর উন্নয়নে। চাইলেই তিনি উন্নত বিশ্বে তার ভাগ্য গড়তে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং দাঁড়িয়েছেন সর্বদা শোষিত বঞ্চিত দেশগুলোর পক্ষে। আমেরিকা অবস্থানকালেই নেঘবান তার লেডি সেক্রেটারীর জরুরী তারবার্তা পান যে পরদিন মস্কোতে রাশান খনিজসম্পদ মন্ত্রী জেনকিন, ইবিআরডি প্রতিনিধি ও অন্যান্যের এ প্রজেক্টের ব্যাপারে জরুরী মিটিং আছ এবং তারা সেই মিটিংয়ে তার উপস্থিতি কামনা করছেন। কি আর করা! তাড়াহুরো করে নেঘবানের আমেরিকা থেকে রাশিয়ায় আগমন এবং মিটিংয়ে উপস্হিতি। এ মিটিংয়েই আসলে এ প্রজেক্টের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়।

এরপরের দৃশ্য লন্ডনে, ১৯৯৩ সলের সেপ্টেম্বর মাস। রাশান মন্ত্রী জেনকিন, ওয়ায়েদ ও নেঘবানের প্রতিষ্ঠান, ইবিআরডি ও জাপানি ইন্জিনিয়ারিং ফার্মসহ আরো অনেকের উপস্হিতিতে প্রজেক্টের ফাইনাল চুক্তি সাক্ষরিত হয়। সফল হয় ওবায়েদের স্বপ্ন আর নেঘবানোর প্রচেষ্টা! এই চুক্তি সম্পাদনের পর ওবায়েদ নেঘবানের দুহাত নিজের দুহাতে নিয়ে তার চোখে চোখ রেখে বলেছিলেন, "সর্বোপরি আমি জানতাম যে তোমার দক্ষ হাতেই 'রাশিয়া বিজয়' হবে"। একটি ঘটনা এখানে উল্লেখযোগ্য, আর তা হল এই চুক্তি স্বাক্ষরের ১৭ দিন পরে রাশান মন্ত্রী জেনকিন মস্কোতে তার নিজ বাসায় হত্যাকান্ডের শিকার হন। তারিখটি ছিল ৫ই অক্টোবর, ১৯৯৩ খৃষ্টাব্দ।

এখানে একটি বিষয় আকর্ষনীয়, আর তা হল এই প্রজেক্টের পথচলায় লেখক মেঘবান আমাদের শুধু তার গুণমুগ্ধ বন্ধু ওবায়দের কথাই শুনাননি; শুনিয়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন শহরের কিছু গল্প, বেলারুশে রোমানভ রাজবংশের এক সদস্যের সাথে কথোপকথন যিনি আবার এই প্রজেক্টের সাথেও কিছুটা জড়িত, শুনিয়েছেন রাশিয়ার তীব্র ঠান্ডার গল্প, টলস্টয় গোগলের মত রাশান প্রকৃতির সৌন্দর্যের গল্প, শুনিয়েছেন কৃষ্ণসাগর তীরে তার শৈশব ও কৈশরের স্মৃতিচারণ ও জলভ্রমনের গল্প, শুনিয়েছেন বিভিন্ন সংস্কৃতির উপাদেয় খাবারের গল্প, প্রজেক্ট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জাতির মানুষের স্বভাব ও চরিত্রের গল্প। তার এসব অভিজ্ঞতা আমাদের জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে, আলোকিত করে।

পরিশেষে আমি বলতে পারি, এই বইটি শুধু একটি সুখপাঠ্য বই নয়, একই সাথে হতে পারে এন্টারপ্রানারশীপ অধ্যায়নের একটি ক্লাসিক বই, কেস স্টাডির একটি ভাল রেফারেন্স। বিজনেসের ছাত্ররা, এমনকি শিল্পোদ্যোক্তাগণ এই বই থেকে একটি ব্যবসায়িক স্বপ্নকে কিভাবে বাস্তবায়িত করতে হয়, তা শিখতে পারেন। ব্যবসায়িক লক্ষ্য ও স্বপ্নকে সামনে রেখে কোন স্টেপের পর কোন স্টেপে যেতে হবে, তা এই বই থেকে তারা শিখতে পারেন। ব্যবসায়িক মিটিংগুলোতে কিভাবে কাউন্টারপার্টকে যুক্তির মাধ্যমে প্রভাবিত ও বল নিজের কোর্টে নিয়ে আসতে হয়, তা জানতে পারবেন। আরো জানতে পারবেন ব্যবসায়িক ম্যানার এন্ড এটিকেড, সর্বোপরি কাঙ্খিত বিজয় ঠিক নেঘবানের "রাশিয়া বিজয়" এর মত!!

! সমাপ্ত!

নোট ১ঃ ওবায়েদ বলতে যাকে আমি উল্লেখ করেছি তার পুরো নাম ওবায়দুর রহমান জায়গীরদার, বাংলাদেশে কিউবার অনারারী কনসাল জেবারেল। তার সম্পর্কে সংক্ষেপে আমার পক্ষে লেখা কস্টসাধ্য। ভবিষ্যতে লেখার ইচ্ছে আছে বিস্তৃত পরিসরে, এদেশ প বিশ্বইতিহাসের অনেক রোমাঞ্চকর ঘটনার রেফারেন্সে। সংক্ষেপে বলতে গেলে জন্মসূত্রে তিনি সিলটি। তার পূর্বপুরুষ উজবেক, এদেশে আগমন সম্রাট আওরঙ্গজেবের দস্তখতকৃত সার্টিফিকেটে সিলেটের বিস্তৃত এলাকার জায়গীর নিয়ে। তার পিতা ছিলেন বৃটিশ আমলে আসাম মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক যখন মওলানা ভাসানী ছিলেন সভাপতি। তৎকালীন সিলেটের অনারারী ম্যাজিস্ট্রেটও ছিলেন তার পিতা। ওবায়েদ সাহেব এদেশ ও ইউরোপে বিদ্যাশিক্ষার সময়েই বাম রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। যে বয়ানে পাকিস্তানিরা আমাদের শোষন করছিল বলে প্রচারিত, সে সময়েই তিনি নিজ যোগ্যতায় ৬০ এর দশকেই হয়েছিলেন মাল্টি মিলিয়নিয়ার। এদেশের জন্ম ইতিহাস ও সফল অনেক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তার বিশাল নেপথ্য ভূমিকা। এখনো তিনি নেপথ্যেই থাকতে পছন্দ করেন। কারণ তার মতে কাজের মানুষ কখনো বেশি সামনে আসে না, আত্নপ্রচার করে না। এই বইটি যখন তিনি আমাকে উপহার দেন, তখন বলেছিলেন, এখানে আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে...

নোট ২ঃ লেখক আমীর নেগবান একজন ইরানী সফল প্রফেশনালিস্ট। অবস্থান করেন লন্ডন ও তেহরান উভয় জায়গা মিলে। তেহরানে ফার্সি সাহিত্যে পড়াশুনা করে পরবর্তীতে লন্ডনে উচ্চশিক্ষা নেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিজনেসে। এরপর কর্মজীবন শুরু করেন ইরান সরকারের জাতীয় তেল কোম্পানীতে উচ্চপদে। চাকুরী করেছেন জাতিসংঘের বিভিবন্ন সংস্হায়। তিনি ইরানের এক উচ্চবংশীয় সন্তান। তার পিতাও শাহ আমলে ইরানে একজন রাজনীতিবীদ ছিলেন, ছিলেন ইরানিয়ান পার্লামেন্টের মেম্বার ১৯২৫ থেকে ১৯৩৫ পর্যন্ত সময়ে। তেহরানের মাঝে অবস্হিত বিশাল গার্ডেন " বাগ ই নেঘবান" জাতির প্রতি তাদের উপহার যা আজো তেহরানে স্বমহিমায় বিদ্যমান।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.