নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমাদের এ শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি। দূরে! বহু দূরে! ঈগল চোখের আড়াল খুঁজে নিচ্ছি- যেখানে সমস্ত পাপী স্বীকারোক্তি দেয় তাদের আকন্ঠ পাপের। অন্তত তারা সত্যের আড়ালে পাপ করে না; পাপ নিয়ে করে না কোন মিথ্যাচার!

নয়ন বিন বাহার

আমাদের একেক জনের জীবনের এক একটা নির্দিষ্ট বিন্দুতে এসে আমাদের আশপাশে যা হচ্ছে তার উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলি। তখন জীবনের নিয়ন্ত্রন নেয় ভাগ্য। এটাই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মিথ্যা।

নয়ন বিন বাহার › বিস্তারিত পোস্টঃ

নজরুল চরিত্রে নার্গিস উপাখ্যান : নয়ন বিন বাহার

২৮ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:৫৩

(কাজী নজরুল ইসলামের জীবনে নার্গিসকে নিয়ে বহু ভুল তথ্য আছে। অনেকেই এই ভুল তথ্যগুলো বিশ্বাস করে আসছে। ভুলের আড়ালে প্রকৃত সত্য চাপা পড়তে যাচ্ছে। তাই সঠিক তথ্য সবাইকে জানানোর এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা)

বিচিত্র বর্ণিল জীবনের অধীকারী বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর খেয়ালী বর্ণাঢ়্য জীবনে সবচেয়ে বহুল আলোচিত অমীমাংসিত বিষয় হল নার্গিস উপাখ্যান। নজরুলের জীবনের সবচেয়ে আলোচিত দুই নারী নার্গিস এবং প্রমীলা। যদিও আরও একজন নারী নজরুলের জীবনে এসেছিল। তিনি ফজিলাতুন্নেসা।
নার্গিস নজরুলের জীবনের প্রথম নারী।
নজরুলের বয়স যখন ২২ বছর তখন তিনি আলী আকবর খানের সাথে কুমিল্লার দৌলতপুরে বেড়াতে আসেন। আলী আকবর খান নজরুলের মেধা ও মনন উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই অসীম আদর ও আপ্যায়নের ভিতর নজরুল দিন কাটাতে লাগল তার বাড়ীতে। নজরুলের বাঁশী বাজানোর শখ ছিল। প্রায় রাতে তিনি বাঁশি বাজাতেন। একদিন একটি মেয়ে এসে নজরুলকে জিজ্ঞেস করল, ‘‘ গত রাতে আপনি বাঁশি বাজিয়েছিলেন? আমি শুনেছি।’’ ২২ বছরের নজরুল মেয়েটিকে দেখে মুগ্ধ হলেন। মেয়েটি নাম বলল- সৈয়দা খাতুন। সৈয়দা খাতুন আলী আকবর খানের ভাগ্নী। নজরুলের নামটি পছন্দ হলনা। তিনি তার নাম দিলে- নার্গিস। ফার্সীতে নার্গিস হচ্ছে- গুল্মবিশেষ। এই গুল্মে অতি সুগন্ধি সাদা ফুল ফোটে। ইরানের কবিদের কাছে এই গুল্ম ও ফুল খুবই প্রিয়। নার্গিস কবির দেয়া এই নামটি খুবই পছন্দ করে। এভাবেই প্রেমের সূত্রপাত।
প্রেম পরিণয়ের দিকে মোড় নিল। আলী আকবর খান নজরুল-নার্গিসের বিয়ে জাঁজমকের সাথে আয়োজন করলেন। নজরুল আলী আকবর খানের বাড়াবাড়ী রকমের আগ্রহ এবং নার্গিসের কিছু কিছু আচরনে ক্রমে বিরক্ত হতে লাগলেন। বিরক্তি চরম শিখরে উঠল যখন আলী আকবর খান কাবিননামায় একটি শর্ত রাখতে চাইলেন- ‘‘বিয়ের পরে নজরুল নার্গিসকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবেন না। দৌলতপুরেই তার সঙ্গে বাস করবে।’’ এ অপমানজনক শর্ত নজরুল মেনে নিতে পারেননি। তিনি বিয়ের মজলিশ থেকে উঠে যান। ১৩২৮(১৯২১ ইংরেজী) বঙ্গাব্দের ৩ আষাঢ় নজরুল-নার্গিসের আক্দ হওয়ার কথা ছিল। কাজী নজরুল ইসলাম ৩ আষাঢ় রাতে দৌলতপুর ছেড়ে ৪ আষাঢ় সকালে কুমিল্লায় এসে পৌছেন। তার মানে সৈয়দা খাতুন ওরফে নার্গিস এর সাথে নজরুল ইসলামের আক্দ বা বিয়ে একেবারেই হয়নি।(কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা-মুজফর আহমেদ, পৃষ্ঠা নং-৬৭)। প্রায় ১০-১২ বছরের বড় মুজফর আহমদকে(ভারতীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রধানতম ব্যক্তি) নজরুল পিতার মত শ্রদ্ধা করতেন। মুজফর আহমেদ ছিলেন নজরুল ইসলামের একান্ত সুহৃদ ও পৃষ্ঠপোষক। তাই মুজফর আহমেদের কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কিত কোন তথ্যই ভুল হতে পারেনা। কারন মুজফর আহমেদ রচিত ‘‘কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা’’ কে নজরুল বিষয়ক তাত্ত্বিকরা নজরুলের জীবন সম্পর্কিত যে কোন তথ্যের মূল আকর গ্রন্থ হিসেবে গন্য করে। কাজেই নজরুল-নার্গিসের বিয়ের প্রচলিত উপাখ্যানটি সঠিক নয়।
আরেক অকাট্য প্রমান রয়েছে নজরুলের মাতৃসম কুমিল্লার বিরজা সুন্দরী দেবীর প্রবন্ধে। যার সম্পাদনা কবি নিজে করেছেন। তিনি তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন-‘বিয়ে তো ত্রিশঙ্কুর মতন ঝুলতে লাগলো মধ্যপথেই, এখন আমাদের বিদায়ের পালা।’ সুতারাং নার্গিস নজরুলের প্রথম স্ত্রী নন। তিনি নজরুলের বাগদত্তা। প্রমীলাই নজরুলের প্রথম ও একমাত্র স্ত্রী। প্রসঙ্গত প্রমীলাও কুমিল্লার মেয়ে।
এর পর কেটে গেল ১৫ বছর। ইতিমধ্যে নার্গিস তাদের ভুলগুলো বঝতে পারলেন। কিন্তু নজরুলকে চিঠি লেখার কোন উপলক্ষ পেলেন না। শেষে একটা উপলক্ষ পেলেন। ঐ সময় একটা গুজব উঠল যে নজরুল নার্গিসের কাছে দূত পাঠিয়েছেন। এই বানানো দূত কাহিনীকে কেন্দ্র করে নার্গিস নজরুলকে একটি চিঠি পাঠান। নজরুল তার এ চিঠির উত্তরে একটি গান ও একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে নার্গিসের চিঠির উত্তর খুব সুন্দর ভাবে কবি ফুটিয়ে তোলেন। নজরুল লিখেছিলেন-‘‘ আমি কখনো কোন দূত প্রেরন করিনি তোমার কাছে। আমাদের মাঝে যে অসীম ব্যবধানের সৃষ্টি হয়েছে, তার সেতু কোন লোক তো নয়ই স্বয়ং বিধাতাও হতে পারেন কি-না সন্দেহ।....তোমার ওপর আমার কোন অশ্রদ্ধা নেই, কোন অধিকারও নেই আবার বলছি।.... তুমি রূপবতী, বিত্তশালিনী, গুণবতী, কাজেই তোমার উমেদার অনেক জুটবে- তুমি যদি স্বেচ্ছায় স্বয়ম্বরা হও, আমার তাতে কোন আপত্তি নাই। আমি কোন অধিকারে তোমায় বারণ করব বা আদেশ দিব? নিষ্ঠুর নিয়তি সমস্ত অধিকার থেকে আমায় মুক্তি দিয়েছেন। আমি জানি তোমার সেই কিশোরী মূর্তিকে, যাকে দেবী-মূর্তির মত আমার হৃদয়-বেদীতে অনন্ত প্রেম অনন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম। সেদিনের তুমি সে বেদী গ্রহণ করলে না। পাষাণ-বেদীর মতই তুমি বেছে নিলে বেদনার বেদী-পীঠ।’’
নজরুল পত্রের শুরুতে বলেছেন- ‘ তোমাকে লেখা এই আমার প্রথম ও শেষ চিঠি হোক।’ সুতরাং এর পরে নজরুল নার্গিসকে আর কোন চিঠি লিখেননি। নজরুল নার্গিসকে যে গান টি লিখে পাঠিয়েছিলেন তা পরে একটি অন্যতম জনপ্রিয় গানে পরিনত হয়। গানটি হল-
‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারি নাই
কেন মনে রাখ তারে।
ভুলে যাও তারে ভুলে যাও একেবারে।’

নজরুলের এই উত্তর পেয়ে প্রায় মধ্য বয়সে নার্গিস কবি আজিজুল হাকিমকে বিয়ে করেন। গত শতাব্দীর আশির দশকে নার্গিস মারা যান।
আর এভাবে নজরুল-নার্গিস প্রণয় না পাওয়া বেদনার হাহাকারে চির প্রজ্জ্বলিত প্রেমের অমর কাহিনী হয়ে আমাদের মাঝে অমলিন হয়ে আছেন।।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮

সরদার হারুন বলেছেন: আজো. মধুর বাঁশরি বাজে....................... গানটিতে নজরুল বলেছেন য়ে নার্গিসকে তিনি ভাল বাসতেন ।
হ্যাঁ, তার সাথে নজরুলের বিয়ের কলেমা পরানো হয়নি ।

লেখার জন্য ধন্যবাদ।+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++


২| ২৮ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১:০০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
চমৎকার!!

৩| ২৮ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১:২২

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: ধন্যবাদ, সরদার ভাই। এই সত্যটা অনেকেই স্বীকার করেনা।

৪| ২৮ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১:২৩

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: ধন্যবাদ নূর ভাই।

৫| ২৮ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:২৬

বাকপ্রবাস বলেছেন: ভালো লাগল

৬| ২৮ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:০৩

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: ধন্যবাদ বাকপ্রবাস..........।

৭| ২৮ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৫:২৮

মিতক্ষরা বলেছেন: নার্গিসের ভাষ্য মতে আকদ হয়েছিল। কিন্তু পরদিনই কবি চলে যান। এর অনেক পরে তালাকনামা সংগ্রহের মাধ্যমে নার্গিসের দ্বিতীয় বিয়ে সম্পন্ন হয়। নার্গিস বহু বছর কবির জন্য অপেক্ষা করেছিলেন।

৮| ২৮ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৯

তুষার কাব্য বলেছেন: চমৎকার লেখা ।আমি বা অনেকেই হয়তো ভুল জানতাম! যদিও তথ্য গুলো যাচাই বাছাইয়ের দাবী রাখে। ভালো থাকবেন ।

৯| ৩০ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪

সাদিকনাফ বলেছেন: মিতক্ষিরা কে বলছি : আপনার কথার supporting documents কি?

১০| ৩১ শে মে, ২০১৫ সকাল ৯:২০

মিতক্ষরা বলেছেন: @সাদিকনাফ,
সাপোর্টিং ডকুমেন্ট ইন্টারনেটে অনেক রয়েছে। ওটাই বিশ্বাসযোগ্য।

আমি নার্গিসের সাক্ষাৎকারটি পড়েছিলাম একটি জার্নালে। নজরুল নিয়ে বাংলাদেশে গবেষনা যারা করেন তাদের কেউ সেই সাক্ষাৎকারটি সংগ্রহ করেছিলেন। সেখানেই জানতে পারি, নার্গিসের দ্বিতীয় বিয়েতে কবি "পথ চলিতে যদি চকিতে" গানটি রচনা করেন।

নজরুলের প্রকৃত জীবনসংগী তার স্ত্রী প্রমীলা। বাকী নারীরা ছিলেন অনেকটা ধূমকেতুর মতই। কিন্তু কবি তাদেরকেও নিজে প্রেমের শ্রদ্ধাজ্ঞলি দিয়েছেন। কবি মন তো, তাই অনুরাগে ভরপুর।

০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ১০:৩০

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: মিতক্ষরা, ইন্টারনেটের সব তথ্য সঠিক নয়। খোদ উইকিপিডিয়াতে এ সম্পর্কে যা আছে তার কোন ভিত্তি নেই। আপনার আপনজন আপনার বিষয়ে যতটুকু সঠিক জানবে তা আর কেউ জানবে না। কবি কুমিল্লায় এসে প্রথম উঠেন বিরজা সুন্দরী দেবী’র বাড়ীতে। উনার সাথে কবির পরিবার সদৃশ সম্পর্ক ছিল। বিয়েতে বিরজা সুন্দরী উপস্থিত ছিলেন। তাই তার কথা সর্বৈব সঠিক। মুজফর আহমদ ছিলেন কবির একান্ত সুহৃদ। এদের কথা কিভাবে মিথ্যা হবে? বিয়ের সমর্থনে এরকম কোন কাছের জনের সাপোর্ট কি আপনার কাছে আছে?
নার্গিসের সাক্ষাৎকারে কি ছিল তা আপনি বলেননি। আর নার্গিস সাক্ষাৎকার দিয়েছিল এ কথা প্রথম শুনলাম।

১১| ২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩২

উর্বি বলেছেন: দারুন।। খুব ভালো লাগল

৩০ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:২১

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: ধন্যবাদ উর্বি আপু।
ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.