নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাগর পাহাড় পেড়িয়ে আমি... অচীন দূর দেশে। পাহার কূলে বেঁধেছি বাসা... সাগর জলে গিয়েছি ভেসে।

ইসলামের পথে থাকতে চেষ্টা করি...।

নাঈম আহমেদ

পেশায় চিকিৎসক, মানসিক ভাবে কবি ও পরিব্রাজক

নাঈম আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চীনের জে-১০ যুদ্ধবিমান কোনো চকচকে ল্যাব বা বিলাসবহুল ফ্যাক্টরিতে জন্মায়নি

১২ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৬

চীনের জে-১০ এর পেছনেও রয়েছে সেই ত্যাগ আর সংকল্পের গল্প—
১: গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) দলের অক্লান্ত পরিশ্রম।
২: বাইসাইকেলে চেপে কাজে যাচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলী সু চিশৌ।
৩: প্রথম উড্ডয়নের পর কেঁদে ফেলেন পরীক্ষামূলক পাইলট—কারণ উড্ডয়নের আগে তিনি ছিলেন প্রাণ উৎসর্গে প্রস্তুত।

সাফল্যের পথ কখনোই সহজ হয় না—আর চীন তার এক জীবন্ত উদাহরণ। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত, দরিদ্র ও কৃষিনির্ভর দেশ কীভাবে মাত্র কয়েক দশকে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি, প্রযুক্তির পরাশক্তি এবং বিশ্ব রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারে—তা দেখে বিস্মিত হয় পুরো বিশ্ব। চীন আমাদের শিখিয়েছে যে ভালো নেতৃত্ব, সুপরিকল্পনা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম একটি জাতিকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে।

১৯৪৯ থেকে বর্তমান: এক বৈপ্লবিক যাত্রা
১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে মাও সেতুং-এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। তখন দেশটির অধিকাংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করতো, জীবনযাত্রার মান ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। কিন্তু ১৯৭৮ সালে দেং শিয়াওপিং-এর অর্থনৈতিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ ছিল চীনের ভাগ্য পরিবর্তনের টার্নিং পয়েন্ট। তিনি বলেন, “It doesn't matter whether a cat is black or white, as long as it catches mice”—অর্থাৎ, আদর্শের চেয়ে বাস্তবিক উন্নয়নই মুখ্য।

এই নীতির আলোকে চীন বেসরকারি খাত, বিদেশি বিনিয়োগ, রপ্তানিনির্ভর উৎপাদন এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পে জোর দেয়। মাত্র ৪০ বছরের মধ্যে চীন পৃথিবীর ‘কারখানা’ হয়ে ওঠে।

অর্থনীতিতে দানবীয় উত্থান:
আজ চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, যার জিডিপি প্রায় ১৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৮০ সালে এই জিডিপি ছিল মাত্র ১৯১ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রায় ৮৫ কোটির বেশি মানুষকে চীন দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে সক্ষম হয়েছে—যা মানব ইতিহাসে সর্ববৃহৎ দারিদ্র্য বিমোচনের সাফল্য।

প্রযুক্তিতে বিপ্লব:
চীন এখন আর কেবল প্রযুক্তি আমদানিকারক নয়, বরং উদ্ভাবন ও উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় দেশ।

বুলেট ট্রেন: চীনের হাই-স্পিড রেল নেটওয়ার্ক বিশ্বের সর্ববৃহৎ—৪০,০০০ কিমি-র বেশি ট্র্যাক বিদ্যমান, যেখানে ট্রেনগুলো ঘণ্টায় ৩৫০ কিমি গতিতে চলতে পারে।

স্পেস প্রোগ্রাম: চীনের চাঁদে ল্যান্ডার, মঙ্গল অভিযানের সফলতা, এবং নিজস্ব স্পেস স্টেশন ‘Tiangong’-এর নির্মাণ বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

ইলেকট্রিক ভেহিকেল (EV): চীনের ব্র্যান্ড যেমন BYD এখন Tesla-এর প্রতিদ্বন্দ্বী। তারা বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন ও রপ্তানিতে বিশ্বসেরা।

ড্রোন ও AI: DJI নামক ড্রোন কোম্পানি বিশ্বের ৭০% বাণিজ্যিক ড্রোন সরবরাহ করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও নজরদারি প্রযুক্তিতে চীন অত্যন্ত অগ্রগামী।

সেমিকন্ডাক্টর ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং: যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চীন নিজস্ব চিপ উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ করছে।

প্রতিরক্ষা ও মহাশক্তি স্ট্যাটাস:
চীন এখন ৫ম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান J-20 সফলভাবে পরিচালনা করছে এবং ৬ষ্ঠ প্রজন্মের স্টেলথ বিমানের পরীক্ষায় এগিয়ে গেছে। দেশটি রণতরী, সাবমেরিন, সাইবার আর্মি, এবং মহাকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিট তৈরি করছে—যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা অর্জন করেছে।

মানবসম্পদ ও শিক্ষা:
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে থাকা অসংখ্য চীনা স্কলার বিলাসী ক্যারিয়ার ছেড়ে এখন নিজ দেশে ফিরে আসছেন। ‘হুয়িগুই’ (归国) নামক এই ট্রেন্ড চীনের মেধা ফিরে পাওয়ার এক বড় দৃষ্টান্ত। নিজস্ব গবেষণা ল্যাব, বিশ্ববিদ্যালয় ও R&D তে সরকার বিপুল বরাদ্দ দিয়েছে।

বিশ্ব কূটনীতিতে আধিপত:
চীন এখন Belt and Road Initiative (BRI)-এর মাধ্যমে ১৪০টির বেশি দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করছে। আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার বহু দেশে তারা বন্দর, রেললাইন, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে—এটাই ‘নরম শক্তি’ (Soft Power)-এর এক অসাধারণ ব্যবহার।


চীনের অভাবনীয় উত্থান প্রমাণ করে দেয়, নেতৃত্ব যদি দূরদর্শী হয়, পরিকল্পনা যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং জনগণ যদি একসঙ্গে পরিশ্রমে উৎসাহী হয়—তবে কোনো জাতিকেই দাবিয়ে রাখা যায় না।

চীন কেবল অর্থনীতি বা প্রযুক্তিতে নয়, একটি জাতি হিসেবে আত্মবিশ্বাস, ঐক্য এবং আত্মমর্যাদায় বিজয়ী হয়েছে। এটাই একটি জাতির প্রকৃত সাফল্য—নিজস্ব পথ খুঁজে নেওয়া ও বিশ্বকে পথ দেখানো।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:১৪

যামিনী সুধা বলেছেন:




আপনি চিলিৎসক; কিন্তু মানসিকভাবে কবি ও পরিব্রাজক!

ইহাই কি কারণ যে, আমাদের লোকজন দেশে চিকিৎসা না পেয়ে, ভারত গিয়ে ৩/৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে?

২| ১২ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:২৪

নকল কাক বলেছেন: j-10, People's Liberation Fighter

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.