নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল্লাহ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়।

এস,এম,মনিরুজ্জামান মিন্টু

দলমত নির্বিশেষে একতাবদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি!

এস,এম,মনিরুজ্জামান মিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন সুরভী এবং এ’রকম হাজার সুরভীর দু:খ গাঁথা

১৯ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:১১

না, আসিফের এখন কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। তার শরীরটা কেমন যেন হিম হয়ে আসেছে। প্রতিদিন সে রাত পৌনে তিনটায় উঠে। সেহরী করে। আজ একটু আগেই ঘুম ভাঙ্গলো। না, মোবাইলের এ্যালার্মে নয়; অনাকাঙ্খিত একটা নাম্বার থেকে ফোন পেয়ে। তার শরীর কাঁপছে বোধ হয়। যদিও নম্বরটা তার ফোনে সেইভ করা ছিল। কিন্তু কখনো ব্যবহার হয়নি। সে নয়, হয়তো লাবনীই কখনো সেইভ করেছিল তার বান্ধবীর নম্বরটা । তখনও লাবনীর নিজের ফোন হয়নি হয়তো।
ফোনটা অবশ্য লাবনীর কাছে আসার কথা। আসিফের একমাত্র শালী সে। অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। তার ফোনটা বোধ হয় সুইচড অফ করে ঘুমাতে গেছে। কোন এক সময় আসিফের নম্বরটা সুরভীদের দিয়ে ছিলো সে; আজ কাজে লেগে গেছে।
শশুর বাড়ী বেড়াতে গিয়ে দুই একবার তাকে দেখেছিল আসিফ। লাবনীর সহপাঠী এবং বান্ধবী। নামের মতই ভালো ছিলো মেয়েটি। হ্যা সুরভী! আহা কি প্রান চঞ্চল একটি মেয়ে।
আমাদের সমাজে আসলে নারীরাই নারীর সবচেয়ে বড় শত্রু! খুব লেখাপড়া করার ইচ্ছে ছিলো সুরভীর। কিন্তু টাকা-পয়সাওয়ালা ভালো পাত্র পেয়ে সুরভীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে্ এক প্রকার জোর করেই তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হল এস,এস,সি পাশ করতে না করতেই। শর্ত ছিল সুরভীকে তারা পড়াবে।
কিন্তু না, কিছু দিন যেতে না যেতেই তাতে বাধঁ সাধলো তার শাশুড়ী। শাশুড়ীর এক কথা, “বৌ মানুষের আবার লেখা-পড়া কিসের? মন দিয়ে ঘর-সংসার কর।” এর পরের ঘটনা আরো ভয়াবহ! বয়স্ক স্বামীটি তাকে চাপ দিতে থাকলো স্বন্তান নেয়ার জন্য। এবং মেয়েটি বাধ্য হলো সন্তান নিতে। সময়ের পরিক্রমায় অবশেষে তার কোলজুড়ে এলো সুন্দর একটি কন্যা সন্তান। আজ মাত্র আট দিন বয়স তার।
কিন্তু একি সংবাদ!
ফোনের ওপাশের মেয়েলি কন্ঠটি এখনো আসিফের কানে বাজে,
-ওয়া আলাইকুম আস সালাম, এখানে লাবনী আছে?
-কে বলছেন আপনি?
-বলুন না লাবনী আছে? একটু লাবনীকে দিন না?
-এত রাতে লাবনীকে কেন চাচ্ছেন? ও তো এখানে থাকে না, আমি ওর দুলাভাই বলছি।
-লাবনীকে বলবেন ওর বান্ধবী সুরভী মারা গেছে।
চমকে ওঠে আসিফ। কি বললেন ? কি হয়েছিল সুরভীর?
-লাবনীকে বলবেন প্লিজ, সুরভী আর নেই।
লাইনটা কেটে যায়। কাঁপতে কাঁপতে বিছানা ছাড়ে আসিফ। হাত মুখ ধুয়ে তার স্ত্রীকে ডেকে তোলে। লাবনীকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছেনা। বাসার অন্য নম্বরে ফোন দিয়ে লাবনীকে জানায় আসিফ। পরের দিন লাবনীর কাছেই সব কিছু জানতে পারে আসিফ।
জানালার রেলিংয়ের সাথে ওড়নায় পেচানো সুরভীর লাশ ঝুলতে দেখে পুলিশ। পোষ্টমর্টেম বলছে, তলপেটে যেখানে সিজারের সেলাই সেখানে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এটা কি আত্মহত্যা, নাকি হত্যা?
যদি আত্মহত্যাই হবে? মেয়েটি কেন বাধ্য হলো এমনটি করতে?
এর জন্য দায়ী কে?
শুনেছি তার স্বামীর বাড়ীর সব পলাতক।
একমাত্র মেয়েটিকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল তার মা-বাবা।
এমতাবস্থায় তাদের কি আমি প্রশ্ন করতে পারি, আমার জানামতে আপনাদের অর্থ সম্পদ তো ভালোই ছিল। মেয়েটির লেখাপড়া চালানোর সক্ষমতা আপনাদের পর্যাপ্তই ছিল। তার আচার আচরনেও তো কোন খারাপ প্রভাব ছিলনা। তবে কেন ষোড়ষী বয়সেই তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে দেয়া হলো?
কেন শশুর বাড়ীর অত্যাচারে এভাবে নিভে যেতে দিলেন একটি প্রানচাঞ্চল্য প্রদীপকে।
ভাবতে পারেন তার আটদিন বয়সী শিশু কন্যাটির কথা!
ইস্ ! শিউরে উঠি!
(একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.