![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দলমত নির্বিশেষে একতাবদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি!
স্বার্খপর!
...............
সুমির সাথে পরিচয় ফেসবুকে। অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে। সুন্দর কবিতা লেখে। বেশ সাংস্কৃতিমনা। জীবন সাথী হিসেবে শাওন এমন মেয়েই চেয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয়; শাওন বিবাহিত আর দু’টি বাচ্চা আছে জেনেও সুমি তার সাথে সম্পর্ক করতে আগ্রহী। শাওনের মাঝে মেয়েটি কি দেখল? শাওন ভেবে পায়না।
অবশ্য শাওনের মাঝে নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে, যা মেয়েদের আকৃষ্ট করে। কিন্তু দু:খের বিষয়, শাওনকে পাঁচটা মেয়ে প্রোপজ করেছে তার বিয়ের পরে। তেতুলিয়ার মেয়েটিতো বিশ্বাসই করতে চায়নি যে, শাওন বিয়ে করেছে। বলতো, আপনার মুখ দেখে বুঝা যায়না আপনি বিবাহিত। বিবাহিত কথাটা মুখে লেখা থাকে কিনা কি জানি? অফিসের পথে মেয়েটি শাওনের জন্য ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকতো। শাওন বিবাহিত না হলে মেয়েটির সাথে জড়াতে বাধ্য হতো হয়তো। সেযাত্রা ট্রান্সফার নিয়ে বেঁচে গিয়েছে। চলে আসার দিন মেয়েটির সে কি কান্না। শাওন মেয়েটিকে ভুলতে পারেনা। আহ্ বেচারী! তাকে কত ভালোবাসতো!
শাওন তার স্ত্রীর থেকে কিছুই লুকায়না। পাঁচটা মেয়ের কথাই সে তার স্ত্রীকে বলেছিল। বর্তমানে সুমির সাথে ফেসবুকে চ্যাটিংয়ের কথাও তাকে বলেছে। নাজুর কোন ভাবান্তর নেই। বলে, ‘তুমি চাইলে আরো একটি বিয়ে করতে পার, আমার কোন আপত্তি নেই’। আহ্, এমন মেয়েকে কি কষ্ট দেয়া যায়?
শাওন ভাবে, এই প্রেমের জন্য ছাত্র জীবনে সে কিইনা করেছে। সাথী, আইরিন, লাবনীর পিছনে কত ঘুরঘুর করেছে। লাবনী অবশ্য তাকে ভালোবেসেছিল; কিন্তু তার বড় ভাই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আর আইরিন তার ডাকে সারা দিলেও; সে ছিল শারিরীক সম্পর্কে বিশ্বাসী। বড় লোকের মেয়ে। বলতো, ‘ভবিষ্যতে কেউ কাউকে পাব কিনা কে জানে? পারতো এখন মজা করে নাও’। শাওন তার থেকে সরে এসেছিল। বাড়ীর পাশের কাজলও ছিল আইরিন ক্যাটাগড়ির। শরীরটাকেই সামনে নিয়ে আসতো। কিন্তু বিবাহ বহির্ভুত শারিরীক সম্পর্ককে শাওন ঘৃণা করে। শাওনের দরকার ছিল একজন মনের মানুষ। যাকে নিয়ে সময়ে অসময়ে ঘুরে বেড়ানো যায়। সুখ-দু:খের কথা শেয়ার করা যায়। নির্জনে একান্তে যার কথা ভাবা যায়। যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা যায়। এই সবই।
সেক্সতো সাময়িক উত্তেজনার বিষয় মাত্র। হয়ে গেলেই শেষ। আজকাল যা নাকি টাকায় কিনতে পাওয় যায়। এটা কখনো ভালোবাসার প্রকাশ হতে পারে?
শাওন তখন মনের মানুষ পায়নি। যাকে মনে ধরে, তারই বিয়ে হয়ে যায়। সুতরাং তার আর প্রেম করা হলনা। ভাবলো বিয়ে করে বউয়ের সাথে চুটিয়ে প্রেম করবে। এক সময় সুন্দরী আর যথেষ্ট ভদ্র দেখে একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিল সে। কিন্তু নাজু শুধু তার স্ত্রী হয়েই রইল; প্রেমিকা হতে পারল কই? তার কাছে খাওয়া, ঘুম আর সংসার সামলানোই জীবন। শারিরীক সম্পর্কেও মেয়েটার কোন আগ্রহ নেই। শাওন চাইলে আসে, না চাইলে নাই। কোন এক পড়ন্ত বিকেলে নাজুর হাত ধরে নদীর পাড়ে হাটতে চাইল শাওন, নাজু তাতে লজ্জা পায়। কোন এক পূর্নিমা রাতে শাওন নাজুকে ছাদে নিয়ে গেল, হাত ধরে গান গাইতে চাইল, নাজু লজ্জা পেয়ে পালিয়ে এলো। এ কেমন মেয়েরে বাবা! এতটুকু রোমান্টিকতা না থাকলে কি জীবন চলে? জীবন কি শুধু বিছানায় কাটিয়ে দেয়ার জিনিস?
শাওন যেমন চেয়েছিল, সুমি যেন ঠিক তাই। তো বাবা এতদিনে কেন এলি? বিয়ের আগে কই ছিলি? শাওন দ্বিধান্বিত। মন একবার চায় সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিতে, আর একবার ভাবে ঠিক হবে কি? শাওন ভাবে আর ভাবে। এটাই কি তবে পরকীয়া? ছাত্র জীবন থেকেই সেতো পরকীয়াকে ঘৃণা করত। সে কেন জড়াবে পরকীয়ায়?
শাওন নাজুর দিকে তাকায়। নাজু তার ছেলেমেযেকে খাওয়ানোর কাজে ব্যাস্ত। ইস! কি নিস্পাপ চেহারা! শাওনের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে গান গাইতে লজ্জা পায় যে মেয়েটি, সে নিশ্চয় জীবনে কোন পরপুরুষের দিকেও তাকায় নি। চাঁদনী রাতে ছাদে যাইতে না পারুক; সে তাকে বিছানায়তো আনন্দ দেয়। আচ্ছা, নাজু যদি কোন ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করত, চ্যাটিং করতো, শাওন নিজে কি তা মানতো? কিন্তু নাজুতো তার সম্পর্কটাকে অবলীলায় মেনে নিয়েছে! মনে মনে কষ্ট পায় নাতো মেয়েটি?
আর তার ফুটফুটে বাচ্চা দুটি? আহ্ কি সুন্দর দু’টি বাচ্চা আল্লাহ তাকে দিয়েছে। এমন অকৃতজ্ঞ হওয়া কি তার ঠিক হবে?
তিন বছরের মেয়েটার দিকে তাকায় শাওন। তার মেয়েটাও দিনে দিনে বড় হচ্ছে। একদিন স্বামীর ঘরে যাবে। মেয়ে জামাই যদি দুশ্চরিত্রা হয়, বৃদ্ধ বয়সে সে কি সইতে পারবে? অথবা ছেলেটা যদি ঘরে স্ত্রী রেখে একাধিক সম্পর্ক করে বেড়ায়, সে কি তা মানতে পারবে? অথবা তার বিবাহিত বোনের স্বামীটি যদি আর একটি বউ ঘরে নিয়ে আসে? নাহ্ এ হবার নয়।
শাওন ভাবনায় পড়ে যায়। সুমির সাথে সম্পর্ক করার উদ্দেশ্য কি হতে পারে? তার নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করা, এই তো? সবার স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নিজের সুখের কথা চিন্তা করা!
না, এতটা স্বার্থপর শাওন হতে পারবেনা। জীবনটা কয়দিনের? বয়সতো ত্রিশ পেরিয়েছে সেই কবে!
দু’দিনের এই জীবনে এত স্বার্থপর হয়ে কি লাভ? নাজুতো খারাপ মেয়ে নয়। বাকী জীবনভর শুধু নাজুকেই ভালো বাসবে শাওন। আজ থেকে সে নাজুকে ভালোবাসা শিখানোর দায়ী্ত্ব নিবে। ফেসবুকে সময় দেয়া কমিয়ে দিবে। চ্যাটিং অপশন বন্ধ করে দিবে। সুমিকে বুঝিয়ে বলবে, ‘কষ্ট পেওনা, আসলে আমি তোমার যোগ্য নই’।
ছেলে মেয়েদের খাওনোর শেষে নাজুর চোখ পড়ে শাওনের দিকে। শাওনকে এমন করে একদৃষ্টে তাঁকিয়ে থাতেতে দেখে নাজু ভ্যবাচেকা খেয়ে যায়।
কি হলো তোমার?
শাওন হাতমোছার তোয়ালেটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। নাজুকে কাছে টেনে নেয়। বুকের সাথে প্রবল আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে নাজুকে। ঘটনার আকস্মিকতায় নাজু চমকে যায়। সেও নিজেকে শাওনের বুকে শপে দেয়। শাওনের মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে আসে, ‘আই লাভ ইউ নাজমুন; রিয়েলি আই লাভ ইউ’।
শাওনের কাঁধে কি নাজুর চোখের একফোঁটা জল গড়িয়ে পরল?
ছবি: ইন্টারনেট
২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:২৫
এস,এম,মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেছেন: অনেক দেরীতে আসার জন্য দু:খিত। সুন্দর মন্তব্যর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, ওমেরা।
২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:২২
এস এম জহিরুল ইসলাম স্যার বলেছেন: অসাধারণ শিক্ষণীয় গল্প। ভাল লাগলো।
২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:৩০
এস,এম,মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেছেন: লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগছে। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ এস এম জহিরুল ইসলাম স্যার। আপনার ব্লগে গিয়েছিলাম। কোন লেখা পেলামনা। লিখবেন আশা করি।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪৯
ওমেরা বলেছেন: গল্পটা। সুন্দর শিক্ষনীয় বটে অনেক ধন্যবাদ ।