![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আবার আসবে তুমি নিশুতি প্রেমে , বুকের পাঁজরে বাজি ফোটাবে তুলকালাম মেঘের । জানালা বন্ধ করলে তুমি আরও ঘিরে ধরবে বেশি করে, এক কোটি বছরের গল্প করবে https://www.facebook.com/nazmulhasanmajumder
অঝোরে কাঁদছে গির্জার কেয়ারটেকার ডেসমন্ড । সেই কান্না ছাপিয়ে যাচ্ছে ছোট্ট জেলেপল্লী কুমারগঞ্জের আকাশ-বাতাস । কিন্তু সেই কান্নাতো পৌঁছায়না কোন মানুষের কাছে । ছোট্ট এ জেলেদের গ্রামে ডেসমন্ড ব্যতীত এখন আর কোন মানুষ নেই, বেশিরভাগই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে । আর যারা কিছুক্ষণ আগেও তার সঙ্গে ছিল, তাদের কেউই এখন বেঁচে নেই । বেঁচে থাকা মানেতো এক অদ্ভুত আলেয়ার পেছনে ছুটা, নিজের মাটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় হন্যে হয়ে জীবনকে খোঁজা । আর সেই সুন্দর জীবনটা পাওয়ার স্বপ্নে মানুষকে জীবনটাই বিলিয়ে দিতে হয় । মরে গিয়েও মানুষ বেঁচে থাকে, নিজের স্বপ্ন, ভালোবাসা-দেশপ্রেম বেঁচে থাকে অন্যের মাঝে। স্বাধীনতার লাল সূর্য সবাই দেখে যেতে পারেনা, কিন্তু সেই স্বাধীনতার পেছনে মানুষ ছুটে চলে, সেই স্বাধীনতার স্বাদ পেতে চায় । আর তাই মানুষ ভয় পায়না সেই স্বাধীনতার জন্যে উৎসর্গ করতে নিজের জীবন । ‘একাত্তরের যীশু’ চলচ্চিত্র আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জেগে ওঠার গল্প । একটা দেশ একটা স্বাধীনতার জন্যে মানুষের মনের আকুতি ফুটে উঠেছে এ চলচ্চিত্রজুড়ে । মানুষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভাবে শেষ মুহূর্তে হয়ত সে ঠিক ঠিক বেঁচে যাবে । কিন্তু যুদ্ধের সময় সবার কী আর ঘরে ফেরা হয়? স্বাধীনতার মূল্য অনেক, আর সেই স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগের স্বপ্নে বিভোর মানুষগুলোর কাউকে না কাউকেতো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেই হয়, করতে হয় ত্যাগ স্বীকার ।
ছোট্ট জেলেপল্লী কুমারগঞ্জের বেশিরভাগ মানুষ খ্রিস্টান । তাদের প্রধান পেশা মাছ ধরে হাটে বিক্রি করা । সেই গ্রামে একটা গির্জা আছে । প্রতি রোববার সকালে গির্জার কেয়ারটেকার ডেসমন্ডের ঘণ্টা বাজানোর শব্দে গ্রামের মানুষ সেখানে ভীড় জমাতেন । গীর্জার ফাদার তাদেরকে যীশুর গল্প শোনাতেন বাইবেল থেকে । অবসর সময়ে ডেসমন্ড ক্রুশ বানাতেন আর তাতে রঙ মাখাতেন। ছিমছাম এই পল্লীর মানুষ নিভৃতেই জীবন-যাপন করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দেশজুড়ে একসময় যুদ্ধের দামামা বেজে উঠে । সেই যুদ্ধের হাওয়া এসে লাগে কুমারগঞ্জেও। শহর থেকে মানুষ আসতে শুরু করে দলে দলে । ক্ষুধার্ত–অসুস্থ মানুষগুলোকে সেবা দেয়ার জন্যে এগিয়ে আসে গ্রামের মাস্টার ও তার ছাত্ররা । গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় তাদের জন্যে তাঁবু টানানো হয় । মাস্টার গির্জার ফাদারের কাছে যান, যেন শরণার্থী মানুষদের চিকিৎসায় সাহায্য করেন গির্জার সিস্টাররা । কিন্তু চিন্তায় পড়ে যান গির্জার ফাদার । কিন্তু ফাদার যুদ্ধে জড়াতে চান না তার গির্জাকে । তাই দ্বিধায় পড়ে যান। কিন্তু মানবতার কাছে হার মানলেন ফাদার। মানুষের সেবা করা মানে ঈশ্বরের সেবা করা । তিনি আহত মানুষের আর্তচিৎকার শুনে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসলেন । গ্রামের মানুষ, কেয়ারটেকার ডেসমন্ড এবং সিস্টাররা চিকিৎসা এবং যাবতীয় সহযোগিতা করলেন শহর ছেড়ে আসা সেই মানুষদের । পরেরদিন আবার ছুটে চলার গল্প শুরু হয় । ভারতে আশ্রয়ের খোঁজে উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে যেতে থাকে শহর ছেড়ে আসা সেই অসহায় মানুষগুলো । নিজের দেশ, ভিটে-মাটি, প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে তারা পড়ি জমায় অচেনা এক দেশে, অজানা ভবিষ্যতের দিকে। শুধুমাত্র বেঁচে থাকার আশায়। সবাই চলে গেলেও একটি বাচ্চা মেয়ে থেকে যায়। মেয়েটি কিছুই বলেনা, শুধু দেখে যায়। গির্জার কেয়ারটেকার ডেসমন্ড বুঝতে পারে ছোট মেয়েটি কথা বলতে পারেনা ।
যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে, ডেসমন্ডকে ফাদার তাদের সঙ্গে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে যেতে বলে। কিন্তু ডেসমন্ড তার মাতৃভূমি ছেড়ে যেতে চায়না। ফাদার তার গির্জার সিস্টারদের নিয়ে চলে যান । পরে রয় একা ডেসবন্ড । চল্লিশটি বছর যে গির্জায় জীবন কাটিয়েছেন এক মুহূর্তের জন্যও কি তাকে ছাড়া যায়! হানাদাররা গ্রামে গ্রামে আক্রমণ করছে, চারপাশে মরছে মানুষ । ডেসমন্ড বেঁচে থাকে। গির্জায় নিয়ম করে মোমবাতি জ্বালায়, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে। আকাশের পানে চেয়ে ডেসমন্ড ঈশ্বরেকে বলে -’আমি আকাশের পানে চাহিলাম, কখন আসিবে সাহায্য।’ মুক্তিযোদ্ধাদের পেছনে তাড়া করতে করতে একদিন গির্জায় হানাদার বাহিনী আসে । মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকে । কিন্তু এক সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সব গোলাবারুদ শেষ হয়ে যায় । একে একে সবাই ধরা পরতে থাকে। হানাদাররা কেয়ারটেকার ডেসমন্ডকে এই মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে । কিন্তু তাদেরকে চিনতে অপারগতা প্রকাশ করে ডেসমন্ড। ডেসমন্ডের সামনে একে একে সবাইকে ক্রুশবিদ্ধ করে গির্জার মাঠে টানিয়ে দেয়া হয় । অথচ এতদিন এই মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ডেসমন্ড আশ্রয় দিয়েছিল । চরম এক অনুশোচনাবোধ ও পাপবোধে ভুগতে থাকে ডেসমন্ড । চোখের সামনে দেখতে থাকে এতদিনের পরিচিত মুখগুলোর করুণ পরিণতি । সময় যেন থমকে যায়, চারপাশে নিস্তব্ধতা । স্বাধীনতার এত মূল্য !!!
শাহরিয়ার কবিরের উপন্যাস অবলম্বনে ‘একাত্তরের যীশু’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ। চলচ্চিত্রে গির্জার ফাদার চরিত্রে অভিনয় করেছেন পীযূষ বন্দোপাধ্যায়, গির্জার কেয়ারটেকার ডেসমন্ডের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরীদি। তাদের অসাধারণ সাবলীল অভিনয় দক্ষতা চলচ্চিত্রটিকে দিয়েছে গভীর প্রাণ । ক্রুশবিদ্ধ তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের আকুতি যখন ডেসমন্ডের মনকে যখন স্পর্শ করে যায় ,তখন সৃষ্টি হয় গভীর এক আত্মউপলব্ধির পরাজয় । ডেসমন্ড আজ যেন পরাজিত সময়ের কাছে । চলচ্চিত্রের অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন জহির উদ্দিন পিয়াল, আবুল খায়ের, কামাল বায়েজিদ, শহীদুজ্জামান সেলিম, শতদল বড়ুয়া বিলু, সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল, ইউসুফ খসরুসহ আরও অনেকে । ফ্রেমে মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যায়ন নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন বেবী ইসলাম । একশো মিনিট দৈর্ঘ্যের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছে অনুপম চিত্রয়ন ট্রাস্ট । ছবিটিতে সুর সৃষ্টির দায়িত্ব পালন করেছেন শিমুল ইউসুফ।
চলচ্চিত্র মানুষকে অনেক গভীরে নিয়ে যায় । জীবনের দুঃখবোধগুলো দারুণভাবে স্পর্শ করে । সমূলে টান দেয় অনুভূতির শেকড়ে । ‘একাত্তরের যীশু’ চলচ্চিত্রটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের চিত্রকেই তুলে ধরেছে সেলুলয়েডে । একটা যুদ্ধে কত মানুষ প্রাণ হারায়, কত মানুষ হারিয়ে ফেলে আপনজনকে, মানুষের জীবন কতটা বিপন্ন হয় একাত্তরের যীশু তারই একটি প্রতিচ্ছবি। একটা গ্রামকে কেন্দ্র করেই ‘একাত্তরের যীশু’ চলচ্চিত্র তুলে এনেছে আমাদের স্বাধীনতার গল্প, আত্মত্যাগের গল্প। সমগ্র মুক্তিযুদ্ধের একখণ্ড চমৎকার দৃশ্যায়ন । অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংলাপ, রূপসজ্জা সবকিছুই প্রাণ খুঁজেছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের । এ ছবির প্রতিটি মূহুর্ত অনেক বেশি জীবন্ত । একেকটি মূহূর্ত যেন ছুঁয়ে গেছে গভীরের মর্মবেদনা। যুদ্ধের কথকতা, যুদ্ধের সময়ের মানুষের বাস্তবতা । চমৎকার এক সার্থকতা দেখিয়েছেন ‘একাত্তরের যীশু’ চলচ্চিত্র নির্মাণে পরিচালক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ।
চলচ্চিত্রটির সংলাপ লেখার জন্য সেলিম আর দীন ১৯৯৩ সালে শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৩ সালে এডিনবার্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৯৪ সালে ব্রিসবেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এবং ১৯৯৪ সালে লন্ডন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করে ও পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়।
পূর্বে প্রকাশিত- মুখ ও মুখোশ সিনে ম্যাগাজিন
১৩ ই মে, ২০১৪ রাত ২:১৩
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: জি
২| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৩
নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: অসাধারণ একটি সিনেমা।
১৩ ই মে, ২০১৪ ভোর ৪:১৯
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: জি
৩| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৩
আছিফুর রহমান বলেছেন: সিনেমাটা আমার দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। এখনও দেখে উঠতে পারি নাই। তবে খুব শিঘ্রই দেখবো। পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। সিনেমাটা দেখার সেই পুরোনা তারনাটা আবার ফিরিয়ে আনার জন্য।
০৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:১১
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: বলতে পারছিনা , ডিভিডি পাওয়া যাবে নাকি জানিনা ।
৪| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৯
হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার রিভিউ।
০৯ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৩১
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: শুভেচ্ছা ভাই
৫| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৭
গৃহ বন্দিনী বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক অধিকাংশ ছবিই অসাধারণ লাগে ।
এই ছবিটা দেখা হয় নাই । ডাউনলোড লিংক দিলে ভাল হত । টরেন্টে বাংলা ছবি খুঁজে পাই না ভাল প্রিন্টের ।
১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: ডিভিডি পাওয়া যায়
৬| ১৩ ই মে, ২০১৪ রাত ২:৩৬
স্বপ্নবাজ (অতি ক্ষুদ্র একজন) বলেছেন: সিনেমাটি দেখার সৌভাগ্য হয়নি... :-(
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৮
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: দেখুন
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৫
মামুন রশিদ বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চমৎকার সিনেমা ।