নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের সন্ধানে

মোঃ নজরুল ইসলাম

লেখক, সম্পাদক, প্রকাশক এবং ডিজাইনার

মোঃ নজরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিচিত্র ও স্বার্থপর প্রাণি

০৭ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৪১

প্রাণিজগতে মানুষের চেয়ে বিচিত্র ও স্বার্থপর এবং মুর্খপ্রাণি আর আছে বলে মনে হয় না। সেই শৈশবে যখন গ্রামে ছিলাম তখন গোহালে অনেক গরু-ছাগল ছিল। হাট থেকে নতুন গরু বা ছাগল আনা হলে অন্য পশুগুলো নতুন পশুর পাশে এসে তার খোজ খবর নিয়ে তাকে আশ্বাস দিয়ে নিজেদের দলভুক্ত করে নিতো দেখতাম। আবার কোন পশু দল থেকে হারিয়ে গেলে অন্যদের মধ্যে একটি বিষণ্নতা দেখা যেতো।
উঠানে চরে বেড়ানো হাঁস-মুরগীগুলো পাশের বাড়ি থেকে আসা হাঁস-মুরগীর সাথে ভাব জমিয়ে একসাথেই ঘুরে বেড়াতো। তবে অবশ্য সাক্ষাতের প্রথম পর্যায়ে শক্তির একটি ছোট পরীক্ষায় এদের মধ্যে দল নেতা নির্ধারণ হয়ে যেতো। সে শুধু একবার আর কখনও তাদের মধ্যে ঝগড়া হতে দেখতাম না। বিপদের সম্ভবনা দেখলে বিশেষ সংকেত ব্যবহার করত অন্যরাও সতর্ক হয়ে যেতো। কখনও কখনও একসাথে বিপদের মোকাবেলা করতো দেখতাম।
ভুল করে পাড়ায় ঢুকে পড়া কুকুরটি দেখে এলাকার কুকুরগুলো দল বেধে আক্রমণ করত। আমরা জানি কুকুরের লেজ বাকা এবং সবসময় উপরের দিকে কোকড়ানো থাকে। তবে শক্তিতে হেরে যাওয়া কুকুরটি নিজের লেজ নিচে নামিয়ে দিয়ে নিজেকে সমর্পন করলে অন্যরা তাকে তাদের দলভুক্ত করে নিতো।
এক সময় গ্রামের পরিবেশ থেকে দীর্ঘসময়ের জন্য ছিটকে গেলাম। ভুলেই বসেছিলাম, হৃদয় থেকে সেই সব অনুভূতি মলিন হয়ে গিয়েছিল। কিছুদিন হচ্ছে গ্রামের সাথে আবার সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। মানুষের চেয়ে জ্ঞানী প্রাণিদের সংস্পর্শে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। কিছুদিন হলো বারবার এশহর-ওশহর করতে হচ্ছে। কত মানুষের সাথে সাময়িক বা দীর্ঘ সময়ের সখ্যতা তৈরি হয়েছিল। কজন মনে রেখেছে, আমিই বা তাদের মনে রেখেছিলাম কই! সেই প্রথম দেখা, শেষ দেখা, মাঝের দীর্ঘ আনন্দ-বিষাদ সবই মনে পড়ে দীর্ঘ যাত্রাকালীণ নিরাবতায়। কত মানুষের সাথে মধুর সম্পর্ক হওয়া উচিত ছিল কিন্তু কখনও কথাই হয়নি। সে কি আমরা একটি মুর্খ প্রাণির প্রতিনিধিত্ব করছি বলে নয়?
একটি দীর্ঘরাত তারপর বেশ কয়েক ঘন্টা কেটে যায় পাশাপাশি ছিটে বসে। অথচ পাশের ছিটে বসা লোকটার নাম জানা হয়নি কোন দিন। যে লোকটি পাশের ছিট থেকে কাঁত হয়ে আমারই কাধের উপর মাথা রেখে নির্দিধায় ঘামালো আর নিজের অজান্তে লালা ঝরিয়ে ভিজিয়ে দিলো, যার উড়ে আসা চুলে আমার চোখের ঘুম হারাম করে দিলো সেও তো নেমে যাওয়ার সময় বলল না...
প্রতিদিন এত মানুষের সাথে সাক্ষাত হয় এত স্বার্থের সংঘাত হয়। কিন্তু কজনের মধ্যে সম্প্রতি গড়ে ওঠে? মানুষে মানুষে এতএত সুসম্পর্ক শুধু স্বার্থের আদান প্রদান ছাড়া আর কিছুই না। কাউকেই
স্মরণ করি না। কেউ স্মরণ রাখে না।
পাশাপাশি টেবিলে বছরের পর বছর কাজ করলেও হৃদয় থেকে একটি গোলাপ কখনও পাশের টেবিলে এসে পড়ে না। চিরপ্রতিদ্বন্দী হয়ে কেটে যায় কাজের প্রথম দিন হতে অবসর পর্যন্ত। তারপর শূন্য চেয়ার দেখে কখনও হয়ত মনে পড়ে তার সাথে কাটানো বিষাক্ত সময়গুলো। তারপর হয়ত নিজে নিজে পীড়িত হতে হয়, কি দরকার ছিল অনাকাঙ্খিত মধুর সময়টুকু বিষাক্ত করার!
.
- মো. নজরুল ইসলাম
www.facebook.com/AuthorNazrul

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.