নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মহাকাল

I am trying to write

েমাঃ নজরুল ইসলাম

I am a Software Engineer and Working in a software firm. I like to read Novel, History, Poem, Writing, Traveling and Gardening

েমাঃ নজরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘বাঙালী না মুসলমান?’

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৪৪

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ

বিভিন্ন আঙ্গিকে এ প্রশ্নটা খুব শোনা যায়। এই শ্লেষাত্মক প্রশ্ন একশ্রেণীর মানুষকে বেশ উল্লসিত করে, আরেক শ্রেণীকে বিব্রত ও চিন্তাগ্রস্ত করে। যারা বিব্রত হন তাঁদের অধিকাংশই এ প্রশ্নের মুখোমুখী হলে জবাব দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল অন্বেষণ করেন, কিন্তু প্রশ্নটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না। বাংলাদেশে তথাকথিত বাঙালীদের যে আগ্রাসী মনোভাব, বাঙালিত্বের ‘ব্যাখ্যা’য় তাদের যে বিপুল উদ্যম হয়তো সে কারণেই শান্তিপ্রিয় বুদ্ধিজীবীগণ বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চান। তবে সত্য এই যে, এ দেশের ‘বাঙালী’ বুদ্ধিজীবীরা বাঙালিত্ব নিয়ে যতই ধুম্রজাল সৃষ্টি করুন, সাধারণ বোধসম্পন্ন নাগরিক-সমাজ মনে করেন, ‘বঙ্গদেশে বসবাসকারী, বাংলা ভাষায় মনের ভাব প্রকাশকারী মানুষমাত্রই বাঙালী।’ সুতরাং এটি একটি ভাষা ও ভূখন্ড-ভিত্তিক পরিচয়। কারো প্রধান পরিচয় নয়, একমাত্র পরিচয় তো নয়ই।

এই পরিচয় বহনকারী সকল মানুষের শিক্ষাগত, পেশাগত ও অঞ্চলগত, সর্বোপরি ধর্মীয় তথা আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় অভিন্ন নয়। ধর্মীয় দিক থেকে কারো পরিচয় মুসলিম, কারো পরিচয় হিন্দু, কেউ খৃস্টান আবার কেউ বৌদ্ধ। ভাষা ও ভূখন্ড ভিত্তিক এই পরিচয়ের সাথে যদি অন্যসব পরিচয়ের সংঘর্ষ না থাকে তাহলে শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের থাকবে কেন? তদ্রূপ যদি হিন্দু-বৌদ্ধ ও খৃস্টান পরিচয়ের সংঘর্ষ না থাকে তাহলে শুধু মুসলিম পরিচয়ের থাকবে কেন?

হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টানরা যেমন এ ভূখন্ডের অধিবাসী মুসলিমরাও তো অধিবাসী। মুসলিমরাও তো বাংলা ভাষায় তাদের মনের ভাব প্রকাশ করেন। বস্ত্তত এ প্রশ্নের মূলে রয়েছে ‘বাঙালী’র এক সাম্প্রদায়িক সংজ্ঞা। আর সেই সংজ্ঞার মূলে রয়েছে এক উৎকট সাম্প্রদায়িক দর্শন। আর তা হচ্ছে : ‘বঙ্গ-অঞ্চলের প্রকৃত অধিবাসী হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়, মুসলিমরা এ অঞ্চলে ‘বহিরাগত’। সুতরাং হিন্দুরাই হচ্ছে ‘বাঙালী’ আর মুসলিমরা বাইরে থেকে আগত দস্যু-লুটেরা।’

এই হিংস্র মনোভাবই উপরের প্রশ্নের শিরা উপশিরায় রক্ত-জীবাণুর মতো প্রবাহিত। বলাবাহুল্য, এ এক চরম অবাস্তব ও সংকীর্ণতম সাম্প্রদায়িক

চিন্তা। নতুবা সরল অর্থে তো হিন্দুরাও বহিরাগত। হিন্দুদের আগে এ অঞ্চলে বৌদ্ধদের শাসন ও প্রাধান্য ছিল। তাদের উৎপাটিত করেই তো একদা হিন্দুরা এ অঞ্চলের শাসন ও কর্তৃত্ব দখল করেছিল। আর শুধু এ অঞ্চল কেন পৃথিবীর সকল ভূখন্ডেই তো বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠির মাঝে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের পালাবদল চলে আসছে। কোনো ভূখন্ডই কোনো জাতির জন্য কিয়ামত কাল পর্যন্ত রেজিষ্টার্ড নয় যে, তাদের পরে যারাই আসবে তারাই সেখানে বহিরাগত।

তবে ইতিহাসের জ্বলন্ত সত্য এই যে, এই পালাবদলের সময়ে সকল বিজয়ী জাতির আচরণ বিজিতের প্রতি একরকম ছিল না। কোনো সন্দেহ নেই, ইসলামী ইতিহাসের অন্যান্য অংশের মতো এই অংশটিও ক্ষমা, উদারতা ও মহত্বের আলোয় উজ্জ্বল।

এই উপমহাদেশের কোনো জাতিকে যদি তাদের শাসন-চরিত্রের কারণে বহিরাগত বলতে হয় তাহলে সে হচ্ছে ইংরেজ জাতি। এ ভূখন্ডের শাসন-ক্ষমতা গ্রহণের পরও তাদের ‘ভিনদেশী’ চরিত্রের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এই ভূখন্ডের ততটুকু ‘উন্নতি’ই তারা করেছে যতটুকু তাদের ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য এবং এই ভূখন্ডের রূপ-রস শোষণ করার জন্য প্রয়োজন ছিল। এ ভূখন্ডের সম্পদ দ্বারা তারা সমৃদ্ধ করেছে ‘নিজেদের’ ভূখন্ডকে। এরপর যখন সময় এসেছে স্বাধীনতাকামী জনগণের প্রচন্ড আন্দোলনের মুখে স্বদেশে ফিরে গেছে।

পক্ষান্তরে এ অঞ্চলে মুসলিমদের ইতিহাস সম্পূর্ণ আলাদা। রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অর্জনের বহু আগেই এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে, ইসলামের ন্যায় ও সাম্যের আদর্শে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। এরা তো বহিরাগত ছিল না, এ অঞ্চলের ‘প্রকৃত’ অধিবাসীই ছিল। তাহলে কি শুধু ইসলাম গ্রহণের ‘অপরাধে’ তারা ও তাদের বংশধররা ‘বহিরাগত’ হয়ে গেল?

তদ্রূপ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যে মুসলিম রাজন্যবর্গ এ অঞ্চলে এসেছেন তারাও এ ভূখন্ডকে নিজেদের আবাসভূমি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এর সুরক্ষা ও সমৃদ্ধির জন্য তারা জীবনব্যাপী সংগ্রাম-সাধনা করেছেন। অতঃপর এ ভূমিতেই শেষ শয্যা গ্রহণ করেছেন। তাহলে তারাও বা বহিরাগত হন কীভাবে?

এ তো হল ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক দিক। এর চেয়েও সত্য ও বাস্তব হচ্ছে ধর্মীয় দিকটি। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) নিশ্চয়ই ভূমি আল্লাহর, তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাকে চান এর উত্তরাধিকারী বানান। আর (শুভ) পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য। আ’রাফ ৭ : ১২৮

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীগণকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্য পসন্দ করেছেন এবং ভয় ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার কোন শরিক করবে না, অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা তো সত্যত্যাগী। (নূর ২৪ : ৫৫)

সুতরাং ভূমির সার্বভৌম অধিপতি একমাত্র আল্লাহ। সৃষ্টিসূত্রে তিনি এ ভূমির মালিক। তিনিই বান্দাদের এ ভূমির কতৃত্ব দান করেন আবার তিনিই কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেন। সুতরাং মুসলিমরা যখন এ ভূখন্ডের কর্তৃত্ব লাভ করেছেন তখন ভূমির মালিকের পক্ষ থেকেই লাভ করেছেন। অতঃপর সেবা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ ভূখন্ডের প্রতি তাঁরা তাদের কর্তব্য পালন করেছেন।

ভূমি যেহেতু আল্লাহর তাই পৃথিবীর কোনো ভূখন্ডই মুসলিম উম্মাহর জন্য ‘বেগানা’ নয়। বিশেষ কারণে কোথাও বিশেষ কোনো বিধান সাময়িকভাবে আরোপিত হতে পারে, কিন্তু কোনো ভূখন্ডই মুসলিম উম্মাহর দাওয়াত, জিহাদ ও দীন কায়েমের বিধানের বাইরে নয়। ইসলাম তো গোটা মানবজাতির জন্য আদর্শ। ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো গোটা মানবজাতির নবী। তাই গোটা পৃথিবীই এ উম্মতের দাওয়াত-ভূমি। সকল ভূখন্ডই তাঁদের ইবাদতের স্থান।

এক হাদীসে বলা হয়েছে-

جعلت لى الأرض مسجدا

ভূপৃষ্ঠকে আমার জন্য সিজদার জায়গা ও পবিত্রতা অর্জনের উপায় বানানো হয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৩৮; জামে তিরমিযী হাদীস ৩১৭; সুনানে আবু দাউদ হাদীস ৪৮৯; সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস ৫৬৭)

ইসলামী আদর্শের এই বিশ্বজনীনতা ও বিশ্বকালীনতা হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন বলেই কবি বলতে পেরেছেন-

چين وعرب ہمارا ہندوستاں ہمارا

مسلم ہيں ہم وطن ہيں سارا جہاں ہمارا

তো এই আদর্শের যারা অনুসারী তারা তো আল্লাহর প্রতিনিধি-খলীফা। আল্লাহর যমীনে আল্লাহর খলীফা ‘বহিরাগত’ হয় কীভাবে?

সুতরাং আসমানী সত্য কিংবা রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক বাস্তবতা কোনো বিচারেই মুসলিমগণ এ ভূখন্ডে বহিরাগত নন।

বস্ত্তত এইসব অপপ্রচারের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য, মুসলমানদের হীনম্মন্যতাগ্রস্ত করা এবং এ অঞ্চলে ইসলাম বিরোধী সাম্প্রদায়িকতা জোরদার করা। আর প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের মাঝে মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে ঐ ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা, যা কোনো লুণ্ঠিত জনপদে শোষক ও হানাদারদের বিরুদ্ধে সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ কারণে এ সকল দর্শনই হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক মুসলিম গণহত্যার প্রচ্ছন্ন ‘সনদ’। কোনো ডাকাতদলের সদস্য নিরস্ত্র অবস্থায় ধরা পড়লে তার উপর সর্বপ্রকার জুলুম চালানো যেমন ‘গণচিন্তায়’ সম্পূর্ণ বৈধ, মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের মাঝে তেমনি একটি ‘গণ-মানস’ তৈরির উদ্দেশ্যে এ সকল দর্শনের উদ্ভব ও প্রচার।

পৃথিবীর যত জায়গায় মুসলিমরা নির্যাতিত সবখানে এই নির্যাতনকে স্থানীয় বা বৈশ্বিক ‘গণসমাজে’ বৈধতা দেয়ার জন্য এ ধরনের প্রোপাগান্ডাই কার্যকর।

মিয়ানমারের ব্যাপক মুসলিম নিধনের পেছনেও কি এই মানসিকতাই কার্যকর নয় যে, মুসলিমরা এ ভূখন্ডে বহিরাগত! অথচ ঐ ভূখন্ডের ইতিহাস থেকে মুসলমানদের কখনো আলাদা করা যাবে না। ঐ অঞ্চলে দীর্ঘ কাল ধরে সুকৌশলে মুসলিম বিরোধী সাম্প্রদায়িকতা তৈরি করা হয়েছে, একসময় রাষ্ট্রীয়ভাবেও মুসলিমদের ‘বহিরাগত’ বলে প্রতিষ্ঠার জন্য নথিপত্র তৈয়ার করা হয়েছে। এরপরের ঘটনাপ্রবাহ তো আমাদের চোখের সামনে।

শুধু মিয়ানমারই কেন পৃথিবীজুড়ে যে মুসলিম-নিধন, তার ‘বৈধতা’ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং মানববিবেককে এই চরম নৃশংসতার বিষয়েও নির্লিপ্ত রাখার জন্যই কি ‘জঙ্গিবাদ’ তত্ত্ব সৃষ্টি হয়নি? যেন মুসলিম মানেই ডাকাত আর ডাকাত হত্যা পাপ নয়। একারণেই দেখা যায়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে যে মানবাধিকার সংগঠনগুলো, এমনকি মুসলিম দেশগুলোতেও, সোচ্চার, তারাই সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত মুসলিম গণহত্যার বিষয়ে!

একটু চিন্তা করলেই দেখি, জঙ্গিতত্ত্ব ও বহিরাগত-দর্শনের মাঝে দূরত্ব খুব বেশি নয়। কারণ ‘বহিরাগত’ মানে বাইরের ডাকু। আর জঙ্গি মানে জনবিচ্ছিন্ন ডাকাত। এ কারণে যারা ইসলামী

বেশ-ভূষার অধিকারী কিংবা যাদের উচ্চারণে প্রকাশিত তিনি ঈমানদার, মুসলিম জনপদেও তাদের পরিচয় ‘জঙ্গি’।

বাস্তবজীবনে তাঁরা যতই সভ্য ও সুশীল হন না কেন। এই পরিচয়ের তাৎপর্য, এরা এই সমাজ থেকে আলাদা (বহিরাগত) ডাকু-সম্প্রদায়! একটি জাতিকে বিভক্ত করার কী হিংস্র প্রয়াস!

তো দেখা যাচ্ছে, ‘জঙ্গি-তত্ত্ব’ ও ‘বহিরাগত-দর্শন’, দু’ টোই হচ্ছে অন্তত দুভাবে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির উপায় : এক. অমুসলিম জাতি-গোষ্ঠির মাঝে ইসলাম-ভীতি ও মুসলিম বিদ্বেষ তৈরি। দুই. মুসলিম সমাজেও পরস্পর বিভেদ-বিভক্তি সৃষ্টি। এ কারণে যেসব মুসলিম নিজের ভাইকে জঙ্গি বলে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলেন তাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, অন্তত নামটি মুসলমানের হওয়ার কারণে তার কপালেও ‘জঙ্গি’ লেবেল সাঁটা রয়েছে। তিনি নিজে তা পড়তে না পারলেও সকল অমুসলিম অনায়াসে তা পড়তে পারে এবং পড়ে থাকে। তাদের উপলব্ধি করা উচিত, আল্লাহ না করুন এই ভূখন্ডে যদি কখনো মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা হয় তাহলে তা শুধু দাড়ি-টুপি ওয়ালা ‘জঙ্গিদের’ বিরুদ্ধেই হবে না, তাদের মতো ‘ক্লিন’ সুশীলরাও এর শিকার হয়ে পড়বেন। মিয়ানমারে, গুজরাটে এবং ইরাকে ও ফিলিস্তিনে, এমনকি পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলগুলোতেও শুধু ‘জঙ্গি’ মুসলিমরাই আক্রান্ত হচ্ছেন না, শুধু পর্দানশীন নারীদেরই অশ্রু ঝরছে না, যেসকল সুশীল মুসলমান শান্তির সময় জঙ্গিবাদ বিরোধিতায় সোচ্চার হয়ে ‘জাতে’ ওঠার চেষ্টা করেছিলেন তাদেরও রক্ত ঝরছে, তাদেরও স্ত্রী-কন্যার সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হচ্ছে। আর এটাই তো স্বাভাবিক, ঐ সকল তত্ত্ব তো প্রচারই করা হয়েছিল জাতিকে বিভেদ-বিভক্তির দ্বারা দুর্বল করার জন্য। যখন তা সম্পন্ন হয়েছে তখন গোটা জাতির উপর অমুসলিম শক্তির মূল আক্রমণ শুরু হয়েছে।

যাই হোক, প্রসঙ্গ থেকে খানিকটা বোধ হয় দূরে এসে গেছি। কথা হচ্ছিল, ‘বাঙালী না মুসলিম’-এই প্রশ্ন নিয়ে। এই প্রশ্নটি বোঝার জন্য একই ধরনের আরো কিছু প্রশ্ন করা যায়-‘মুসলিম না চাকুরীজীবী?’ ‘মুসলিম না ঢাকাবাসী’ ‘মুসলিম না বাংলাভাষী?’ কেমন উদ্ভট ও হাস্যকর লাগছে না? কেন? কারণ এসব বিষয়ের মাঝে তো কোনো সংঘর্ষ নেই। ইসলাম একজনের ধর্ম আর চাকুরি তার পেশা। মুসলিম একজনের আদর্শিক পরিচয় আর ঢাকায় তার বসবাস। মুসলিম একজনের জাতীয় পরিচয় আর বাংলা তার ভাষা। এসবের মধ্যে তো কোনো সংঘর্ষ নেই। তো যে বিষয়গুলোতে সংঘর্ষ নেই সেসবের মাঝে সংঘর্ষ কল্পনা করে যে প্রশ্ন তা সঠিক হয় কীভাবে?

একথাটাই ‘মুসলিম না বাঙালী?’ প্রশ্নের ক্ষেত্রেও বলতে চাই।

আর যদি প্রশ্নকারী মনে মনে বাঙালিত্বের এমন কোনো সংজ্ঞা নির্ধারণ করে থাকেন যার সাথে সত্যি সত্যি ইসলামের সংঘর্ষ আছে তাহলে সেই অর্থটাই তো পরিষ্কার করে বলা উচিত। সেটা কি পৌত্তলিকতা? কুসংস্কার? হিন্দুত্ব? তাহলে সেভাবেই প্রশ্ন করুন-‘আপনি কি পৌত্তলিক না মুসলিম?’ ‘কুসংস্কারে বিশ্বাসী না মুসলিম?’ ‘হিন্দু না মুসলিম?’ বলাবাহুল্য এভাবে পরিষ্কার ভাষায় প্রশ্ন করলে কোনো ঈমানদারকেই প্রতারিত করা যাবে না। তেমনি কোনো মুসলিম

নামধারী সুশীলও সরাসরি জবাব দেয়ার সাহস করবে না। ভাষা ও ভূখন্ডের প্রতি মানুষের যে সহজাত আবেগ তাকে ব্যবহার করে মুসলিমসমাজে ভাতৃঘাতী সাম্প্রদায়িকতা তৈরির অপচেষ্টাও একেবারে মাঠে মারা যাবে।

এ কারণে মতলবটা আবহে রেখে মুখে বলা হয় ‘বাঙালী’ শব্দটা। তো এটা একটা কূট প্রশ্ন বা প্রতারণামূলক প্রশ্ন।

মুসলিমদের মনে রাখতে হবে এ জাতীয় কূটপ্রশ্ন সম্পর্কেও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিধান দিয়েছেন। হাদীস শরীফে বিভ্রান্তিকর (কূট) প্রশ্ন করতে নিষেধ করা হয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সুনানে আবু দাউদ হাদীস ৩৬৫; মুসনাদে আহমাদ হাদীস ২৩৬৮৮)

সুতরাং অমুসলিমরা করুক, কোনো মুসলিম এ ধরনের প্রশ্ন করতে পারে না। এখানে আরো একটি কথা আছে। তা নিবেদন করেই আলোচনা সমাপ্ত করছি। সব ক্রিয়ারই একটি প্রতিক্রিয়া থাকে। ‘বাঙালী না মুসলিম’- এই প্রশ্নের তাৎপর্য উপলব্ধি করে মুসলিম তরুণরা যদি প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের এবং তাদের ইয়ার-দোস্তদের প্রশ্ন করতে আরম্ভ করেন-‘হিন্দু না বাংলাদেশী?’ ‘সুশীল না দেশপ্রেমিক?’ তখন কেমন হবে? যদি তারা প্রশ্ন করতে থাকেন, ‘বাংলাদেশ কি বাংলাদেশীদের, না হিন্দুদের? বাংলাদেশীদের না সুশীলদের? তাহলে কেমন লাগবে?

এসব কি জাতীয় ঐক্য বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে খুব সহায়ক হবে? নিশ্চয়ই হবে না। সুতরাং সংযত হওয়া কর্তব্য। আচরণ ও উচ্চারণে আগ্রাসী মনোভাব ত্যাগ করা ছাড়া সামাজিক ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আশা দূরাশামাত্র।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.