নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদা কালো দর্পণে আঁকাআঁকি

আকিব আরিয়ান

রাত্রির নির্জনতায় নিঃসঙ্গ কেঁদে কেঁদে, একদিন হয়তো তুই অজান্তেই মরে যাবি, তবুও তুই জানবি না পাষাণ এ বুকে কতটুকু ভালবাসা তোর জন্যে জমা রাখি।

আকিব আরিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অশরীরী (১ম পর্ব)

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৩

'চিলেকোঠার প্রেমে' গল্পটার সিক্যুয়েল গল্প এটা। 'চিলেকোঠার প্রেমে' না পড়লে এই গল্প সহজে বুঝা যাবে না।



'চিলেকোঠার প্রেমে'- Click This Link





(ক)

ধ্যাত ছাই!! এতক্ষণ ধরে চেয়ারে বসে আছি অথচ তার ঘুম ভাঙ্গার কোন লক্ষণই নাই। বাবু মশাই নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন। মন চাইছে টেবিলের নিচে রাখা বোতলের সব পানি গায়ে ঢেলে দেই কিন্তু আমি পারছি না। আমি ডাকছি, এই রাজু, রাজু। তার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না আমার কথা কিংবা তার কানের ক্ষমতা নেই আমার স্বর ধরার। বসে থাকতে থাকতে আমার বিরক্তি লেগে যাচ্ছে। সময় কাটানোর জন্যে কিছু করার দরকার। টেবিলের উপর বই খাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একটা খাতা সামনে বের করে রাখা তার ভিতরে একটা কলম দেওয়া। তাই কিছুটা উঁচু হয়ে আছে। আমি খাতা না উল্টেই ভিতরের লেখা পড়তে পারছি। আমার এই ক্ষমতা আছে, কিছুদিন আগেও ছিল না। বড় বড় হরফে কিছু ইংরেজী লেখা। লেখার শ্রী বেশ ভালো না। আগে রাজুর লেখা অনেক সুন্দর ছিল। আমাকে প্রায়ই চিঠি লেখত যদিও এযুগে কেউ চিঠি লেখে না। তার কথা হচ্ছে চিঠিতে নাকি অনেক আবেগ প্রকাশ করা যায় তা নাকি মুখে বলে বুঝানো যায় না। আমি ছাব্বিশটা চিঠি জমিয়ে রেখেছিলাম তার। অনেক দিন ধরে আমাকে চিঠি লেখে না রাজু। আজ ঘুম থেকে উঠুক বলব একটা চিঠি লেখতে আমাকে। হয়তো লজ্জা পাবে চিঠি লেখার কথা বললে। তবুও। তার লজ্জামাখা চেহারা দেখতে আমার অনেক ভালো লাগে। ছেলেমানুষ তবুও এত লজ্জা পায়। আমার খুব হাসি উঠে তবু হাসি দেখাই না। মুখ টিপে হাসি আর বিরক্ত হওয়ার ভান ধরি।





বাবু মশাই উঠেছেন। ঘুম ভাঙ্গার পরই বালিশের তলা হাতড়ে সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেট ধরালেন। একটা সময় আমি কত বকেছি এই সিগারেট খাওয়ার জন্যে। আমার কথা শুনতই না। উল্টো বলত, 'আমি বিড়ি ছাড়তে পারি কিন্তু বিড়ি তো আমায় ছাড়ে না'।

আমি রাগতাম খুব। আমাকে রাগিয়ে সে খুব মজা পেত। এখন অবশ্য রাগি না। আমার খুব ভালো লাগে লাইতার দিয়ে ওর সিগারেট জ্বালানো দেখতে। খুব আয়েশ করে সিগারেট খায়। এত তৃপ্তি নিয়ে যে সিগারেট খাওয়া যায় তা আমি জানতাম না। সিগারেট খেতে খেতে অবশ্য তার শরীর শুকিয়ে গেছে। খাবার দাবারের ঠিক নেই। একা থাকে চিলেকোঠাতে। বুয়াও আসে না ঠিকমতো। নিজে রাঁধতে পারে না। আমার খুব ইচ্ছে হয় রান্না করে দেই কিন্তু পারি না। সিগারেট ধরিয়েই বাথরুমের দিকে গেল সে।





রাজুর ফোন বাজছে কিন্তু সাইলেন্ট। সে বাথরুমে থাকায় বুঝতে পারছে না কিন্তু আমি শুনতেও পাচ্ছি। রাজুর খালাত বোন ফোন দিয়েছে। নিশ্চয়ই তার বাসায় যাওয়ার জন্যে। আগে একসময় রাজুকে জোর করতাম তার খালাত বোনের বাসায় যাওয়ার জন্যে কিন্তু এখন চাই না ও ঐখানে যাক। ও আমাকে রেখে চলে যায়। আমি চাই সবসময় রাজু আমার আশেপাশে থাকুক।





(খ)

রাজু বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে আমি দাঁড়ানো। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে ওর হাত ধরতে। আমার হাতটা ঠিক যে জায়গায় রাজু তার উপরে হাত রাখল। বারান্দায় হালকা বাতাস এসে গায়ে লাগছে। রাজুর খালাত বোন জুঁই আপু আসতেছে বারান্দায়। তার চেহারায় রাগের চিহ্ন। দুদিন আগে বলেছিলেন রাজুকে তার বাসায় আসার জন্যে কিন্তু রাজু আসে নি। ভুলে গিয়েছিল। আসলে আমিই ওকে ভুলিয়ে রেখেছিলাম। একজন যৌবনবতী নারী যদি সারাক্ষণই কারো আশেপাশে ঘুরে তবে কি কারো অন্য কিছু মাথায় আসতে পারে। রাজুরও আসে নি। রাজুকে নিয়ে আমার সুখের সংসার কিন্তু এই আপু চাইছে না আমরা যেন একসাথে থাকি। একসময় আপুকে আমার ভালো লাগত কিন্তু এখন লাগে না। মনে হয় গলা টিপে মেরে ফেলি। আর কিছু না পারি অন্তত কাউকে মেরে ফেলার ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়েছে। যে কোন একদিন এই আপুকে শেষ করে দিতে হবে।





খাবারের টেবিলে বসে দুলাভাই রাজুকে জিজ্ঞেস করলেন, 'শরীরের এ কি হাল? খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো হয় না?'

_হুম হয় তো।

_তাহলে শরীরের এ অবস্থা কেন? শুকিয়ে যাচ্ছো যে।

জুঁই আপু কড়া গলায় বলতে লাগল, 'তোকে না বলেছিলাম ডাক্তারের কাছে যেতে, গেলি না কেন?'

_আমি তো সুস্থই আছি। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কি দরকার!!

_তোকে বলছি যেতে তুই যাবি।

_আচ্ছা যাব। অসুবিধা নাই।

_সামনের শুক্রবারের একটা এপয়েন্টম্যান্ট করে রাখব। তুই তো ঠিকানা জানিসই। ঠিক মতো চলে যাবি।

_আচ্ছা মনে করিও দিও।







আমার খুব মেজাজ খারাপ। রাগ উঠছে। আমি চাই না রাজু ডাক্তারের কাছে যাক। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কোন দরকার নেই। রাজু পুরোপুরি সুস্থ। রাজুকে বাধা দিতে হবে এবার। রাজু এখন ঘুমোচ্ছে। আমার খুব অস্বস্থি হচ্ছে এখানে। কখন যাবে রাজু চিলেকোঠায়?? চিলেকোঠা ছাড়া আর কোথাও আমার ভালো লাগে না। একটা সময় ছিল আমি বাসা থেকে চিলেকোঠায় এসে রুম সাজিয়ে দিতাম। এখন সারাদিনই থাকি। কিন্তু সাজানো যে আর হয় না। ভীষণ অগোছালো থাকে রাজুর রুম। তবুও আমার ভালো লাগে এতে থাকতে। সিগারেটের কটু গন্ধটুকুও আমার কাছে ডেনিমের কোন এক সুগন্ধির মতো মনে হয়।







অশরীরী (২য় পর্ব) - Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.