নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদা কালো দর্পণে আঁকাআঁকি

আকিব আরিয়ান

রাত্রির নির্জনতায় নিঃসঙ্গ কেঁদে কেঁদে, একদিন হয়তো তুই অজান্তেই মরে যাবি, তবুও তুই জানবি না পাষাণ এ বুকে কতটুকু ভালবাসা তোর জন্যে জমা রাখি।

আকিব আরিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

"পাইলট" মাসুদ (গল্প)

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৫:১৯

'এখনও সময় আছে চিন্তা করে দেখো কি করবা। ডেডবডি চাই তোমার না কয়েক রাউন্ড গুলি?' আমি আবার তাকে বুঝাতে লাগলাম। কিন্তু সে বড্ড দ্বিধায় কি করবে না করবে তা নিয়ে। ডেডবডি নিলে সে বেঁচে যাবে, স্বাধীন একটা জীবন পাবে, হয়তো এতে কষ্ট থাকবে কিন্তু বুলেট নিলে তার শান্তি। কষ্ট থাকবে না। সাময়িক কষ্টের দ্বারা কষ্ট থেকে চিরমুক্তি পাবে।





ছেলেটার নাম মাসুদ। তার অবশ্য আরেকটা নাম আছে পাইলট মাসুদ। এই নামেই সে সবার কাছে এখন পরিচিত। আমার কাছে বেশ কয়েকদিন ঘুরাঘুরি করেছে। রইছ মিয়া সেদিন হুট করে ধরে নিয়ে এল। 'মোসাদ্দেক ভাই একটা অর্ডার পাইছি ডেডবডির। আপনে খালি কইলেই অইব। কাইত কইরা দিমু।' রইস মিয়া ছেলেটাকে আড়ালে রেখে আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল। আমি ঘাড় কাত করে ছেলেটাকে ভিতরে নিয়ে আসতে বললাম। ছেলেটাকে দেখে অবাক হলাম। খুব বেশি একটা বয়স না, এই চব্বিশ পঁচিশের কাছাকাছি। শুকনো শরীরে বয়স আরও কম লাগে। মনে হয় নেশাটেশা করে, চোখ লাল। আমার খাটের লাগোয়া যে টুল আছে তাতে বসার ইশারা করলাম। চট করে বসল না, সতর্ক একটা ভাব চোখেমুখে। সহজে কাউকে বিশ্বাস করে না চোখ দেখলেই বুঝা যায়। কপাল কুঁচকে তাকিয়ে দেখছিল চারপাশ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'ডেডবডি দিয়া কি করবা?'

'আছে দরকার আছে।'

'কি দরকার সেইটা বলো।'

'আমার ডেডবডি হিসেবে চালিয়ে দিব।'

'কার কাছে?'

'আমার পরিবারের কাছে।'

তখন আমি নিজেও ভ্র কুঁচকালাম। তাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম, 'মানে কি বুঝলাম না, বুঝায়া বলো।'

'শুরু করব কোথা থেকে?'

'একবারে গোড়া থেকে।'

ছোটখাটো একটা প্রস্তুতি নিল কথা শুরু করার আগে। আমি এর মধ্যে আরেকটা সিগারেট ধরালাম।







''আমি মাসুদকে আগে কেউ পাইলট মাসুদ নামে ডাকত না। বছর পাঁচেক হয়েছে আমাকে এ নামে সবাই ডাকে। বাবা মা অবশ্য আমাকে ডাকে খোকা। এক ছেলে তো তাই অনেক আদর করে। কিন্তু জানেন এই আদরটাই আমার গলায় ফাঁস হয়ে লেগে গেছে। আমি তাদের বিশ্বাস ভাঙ্গাতে চাই না। আমি চাই তাদের বিশ্বাসটুকু অটুট রাখি। কিন্তু গত একবছর ধরে আমি এদের কাছে একটা ব্যাপার লুকাতে গিয়ে এক কোটিবারেরও বেশি মিথ্যা কথা বলে ফেলছি। আমি মিথ্যা কথার গন্ডি থেকে বের হতে চাই। কিন্তু পারতেছি না।''

লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার চোখে দিকে তাকিয়ে আমার হাতের বাকী সিগারেটটুকু চাইলো। অন্যসময় অন্যকেউ হলে হয়তো দিতাম না কিন্তু কি মনে করে জানি না মাসুদকে দিয়ে দিলাম। মুখ ভরে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কথা বলতে লাগল আবার।





''বছর তিনেক আগে বিমান বাহিনীতে অফিসার পদে এপ্লাই করছিলাম। পাইলট হওয়ার ইচ্ছা। ইচ্ছা টিচ্ছা কিছু ছিল না আসলে ঐসব বাহিনীকে ঢুকতে পারলে দ্রুত নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায় আর আয় রোজগার বেশ ভালো। ফ্যামিলির অবস্থা এমনিতে পুরো খারাপ। আমারই সংসারের হাল ধরা লাগে এমন অবস্থা। প্রিলি পরীক্ষা দিলাম, টিকে গেলাম আইএসএসবির জন্যে। ভালো করেই প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম। আত্নীয় স্বজন এলাকার লোকেরা বাহবাহ করতে লাগল আব্বার মুখ থেকে শুনে। লোকজন ভাবল আমি পাইলট হয়ে যাব কিংবা চান্স পেয়ে গেছি। চান্স আমি পাইতামও কিন্তু কপাল যে একটা জিনিস আছে না? ঠিক সময়ে প্যাঁচ লাগায়া দিলো। প্রেম করতাম এক মেয়ের সাথে। স্বপ্ন দেখাদেখি একইসাথে করতাম। ধুপ করে মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেল আমাদের ব্যাপারটা জানাজানি হওয়ায়। আমি না পারি এই অবস্থায় সবকিছু বাসায় বলতে আবার না পারি পালিয়ে বিয়ে করতে। কিছুদিন আগে যে ছেলে ইন্টার পাস করছে তাকে দিয়ে অন্তত বিয়ে করাটা মানায় না। আমার সাহস এবং সামর্থ্য দুইটাই কম ছিল। বিয়ের তারিখও ঠিক হলো। কপাল যে পোড়া তাই আমার আইএসএসবি শুরুর তারিখ পড়ল তার বিয়ের পরদিন। আপনে জানেন কিনা জানিনা আইএসএসবি কিন্তু পুরাই একটা মেন্টাল গেইম কিংবা টেস্ট। যে ছেলের প্রেমিকার বিয়ে আগের দিন হয়ে গেছে, ঐ ছেলে তারপরের চারদিন কিভাবে মেন্টালি শক্ত থেকে পরীক্ষাগুলো দেয়। হইলোও সেটাই আমি চান্স পাইলাম না। জগতের সবাই জানল আমি মাসুদ চান্স পাই নাই। ধিক ধিক শতধিক দিতে লাগল আমাকে। সব যন্ত্রণা কষ্টমষ্ট করে সহ্য করলাম। কয়েকটা ভার্সিটিতে পরীক্ষা দেওয়ার পর চান্স পাইলাম পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাড়ি থেকে এত দূর পড়ালেখা করলে সংসার চালাতে পারব না দেখে গেলাম না ঐখানে।আর আমার পোস্ট মাস্টার বাবারও সামর্থ্য নাই বয়সের ভারে এই সংসার চালানোর। আরও তিনটা বোন আছে বড়। তাদের কারোই বিয়ে হয় নাই। বিশাল গ্যাঞ্জাম সংসারে। তাও ভর্তি হলাম কিছু টাকাপয়সা জমা ছিল তা দিয়ে, ঢাকায় এক প্রাইভেট ভার্সিটিতে। ভার্সিটির অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনে ভার্সিটি যাই নাই কিছুদিন। এরপরে সুক্ষ রাজনীতির চাপের পড়ে আমি ভার্সিটিতে ব্যান হয়ে গেলাম। যাহ শালার কপাল। বাড়িতে আজও জানে না আমি পড়ালেখা যে করতেছি না। তারা জানে আমি পড়ালেখা করছি। টাকা রুজিও করতেছি। নিজের খরচ নিজে চালাচ্ছি। কিন্তু আমার একটাকাও রোজগার নাই। আর এসব নিয়েই বাসায় মিথ্যা বলতেছি প্রতিদিন। আর ভাল্লাগে না।''

এতটুক শুনে আমি নিজেই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। বেচারা ভাগ্যের রোষানলে পড়ে জীবনের রাস্তা থেকে ছিটকে গেছে। হঠাত্‍ করে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি যে আমার অন্যদের আসার সময় হয়ে গেছে। পান্না, মনি, মালতীরা আসবে আমার এই বদ্ধ আস্তানায়। বাইজীদের নাচ আমি বেশ উপভোগ করি। ছেলেটা থাকলে খানিকটা আমোদ ফূর্তি থেকে আমি বঞ্চিত হব তাই ঐদিন তাকে বিদায় করে দিলাম।



"স্যার আমারে একটা বিড়ি দিবেন? গলা শুকায়া যাইতাছে, কথা বলতে পারব না একটু পরে আবার।" মোসাদ্দেক কথা বলা বন্ধ করে দিল। প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে দিলো অফিসার। সিগারেট টানতে টানতে আবার কথা বলা শুরু করল সে।





দুদিন পর আবার আসল বিকেল বেলা। আমি মাত্র এসেছি তখন কামরাঙ্গীচর থেকে। শরীর ভীষণ ক্লান্ত। পুরো গোডাউনের মাল সাপ্লাই দিতে এত কষ্ট আগে জানলে করতাম না কাজটা। লাভটা কিঞ্চিত বেশি। মনটা তাই ভালো, ক্লান্ত হওয়া সত্ত্বেও মাসুদকে বসালাম। বেশ খানিক সময় সে চুপ ছিল। পকেট থেকে পাইলট ব্র্যান্ডের প্যাকেট বের করল। আমার কাছ থেকে লাইটার চেয়ে নিয়ে সিগারেট ধরাল। এরপর ভুসভুস করে ধোঁয়া ছাড়তে লাগল।





''আপনি মনে হয় কিছুটা অবাক হয়েছেন আমি পাইলট খাই দেখে।''

আমি মাথা ঝাঁকালাম।

''আসলেই অবাক হওয়ার কথা। আমার বেশভূষা দেখে কারোই ভাবার কথা না আমি পাইলট খাই। করব কি বলেন? দিনে দুই আড়াই প্যাকেট সিগারেট খাই। এখন যদি গোল্ডলীফ অথবা বেনসন খাইতাম তাহলে অনেক টাকা খরচ। এত টাকা খরচের মুরোদ নাই দেখে পাইলট টানি।

হোক না এই সিগারেট রিকশাওয়ালারা খায়। তবুও তো দাম কম, আমার টাকা বাঁচে। আমার সকালের নাস্তা পর্যন্ত এই পাইলট। ঘুম থেকে উঠে প্রথমে সিগারেটে টান দেই আর কিছু খাই না সকালে। বন্ধু বান্ধবেরা যারা আছে তারা মজা নেয়। আমার নাম ওরাই দিছে পাইলট মাসুদ। এই পাইলট কিন্তু বিমান বাহিনীর পাইলট না, সিগারেট পাইলট। আমার আরেকটা বন্ধু ছিল সে শেখ ব্র্যান্ড টানত। তার নাম পরে হয়ে যায় নাবিল শেখ। বন্ধুবান্ধবেরা ঠাট্টা মশকরা করে বলে তুই চাইছিল পাইলট হতে কিন্তু পারলি না। তাই বোধহয় পাইলট ধরছস যেন পাইলট হওয়ার ভাবে। আমি আর কি করব এসব নির্মম রসিকতায় হাসতে থাকি। সবই কপাল বুঝলেন। সাথের পোলাপান ডাক্তারী পড়তাছে, ভার্সিটিতে পড়তাছে। কিন্তু আমি যে কেমন করে যে লাইনচ্যুত হয়ে গেলাম!! একবার এক বন্ধুর সাথে তার শশুড় বাড়িতে যাইতেছিলাম। সাথে তার বউও। সিগারেট টানতে যাব এমন সময় বন্ধু রসিকতার এক পর্যায়ে বলল তার বউকে, 'মাসুদ তো সকালের নাস্তাও পাইলট দিয়া করে। পাইলট মাসুদ নাম কি মাগনা নাকি?' তার বউ হাসতে হাসতে উল্টিয়ে পড়ল। আমি আর কি করব ভদ্রতাসূচক হাসি দিলাম। এই হলো ভাই আমি পাইলট মাসুদের ইতিহাস। এখন বলেন আপনি আমাকে সাহায্য করবেন কিনা? দেখেন আমি এর আগে দুইবার আত্নহত্যা করতে গেছি কিন্তু সাহস হয় নাই বলে পারি নাই। এবারও কিন্তু আত্নহত্যা করতে চাইছিলাম। শেষ পর্যন্ত দেখলাম সাহস হবে না। কিন্তু আমার মরে যাওয়াটা খুবই দরকার।''



আমি অনেকক্ষণ ধরে শুনছিলাম তার কথা। ভাবছিলাম তাকে কি আমার কোন কুকর্মে ব্যবহার করা যায় কিনা। মাথায় অবশ্য বুদ্ধি খেলতেছিল কয়েকটা। দেখি কি করা যায়। তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম, 'তোমার মরে যাওয়া এত দরকার মনে হয় কেন? বেঁচেও তো থাকতে পারো।'



''মরে যাওয়া দরকার কারন আমি বাপ মায়ের আমার উপরে যে বিশ্বাসটা আছে তা ভাঙ্গতে চাই না। তারা যদি জানতে পারে এমন করছি তাহলে তারা কষ্ট পাবে। এমনকি আমার আব্বা স্ট্রোকও করতে পারে। আমি চাই না তারা কষ্ট পাক। যদিও আমার অনিচ্ছায় আমি তাদেরকে কষ্ট দেওয়ার মতো কাজ করেছি। আমি চাই না আমার মুখ তাদের আর দেখাতে। তাই চিন্তা করছি ডেডবডির দরকার।''





আমি কিঞ্চিত বিরক্ত তার এসব প্যানপ্যান শুনে। 'মরতে চাস ব্যাটা আমারে ক তরে ঠুস কইরা গুলি কইরা মগজ ঝাঁঝড়া বানাই দেই'।

এসব ভাবতে ভাবতে তাকে বললাম, 'দেখো, মরতে চাও কিন্তু পারতেছো না। আমি তোমাকে মরতে সাহায্য করতে পারি। তুমি আমারে বিশ হাজার টাকা যোগাড় করে দেও। আমিই তোমাকে শ্যূট করে দিব। আর ডেডবডি দিয়া ত্যানা প্যাঁচানোর দরকার নাই।'



"ব্যাটা তুইই ত তারে মারার কথা নিজ মুখে কইছস!!"

"না স্যার আপনে ভুল বুঝতাছেন, আগে সব কথা শুনেন।"

"আচ্ছা কইতে থাক।"





এর পর আমার কথা শুনে মাসুদ বলতে লাগল, ''আমি এখন মরতে চাই না। বেঁচে থাকতে চাই একটা জিনিস দেখে যাওয়ার জন্যে। তাই বলছিলাম টাটকা ডেডবডি ব্যবস্থা করে দেন। টাকাপয়সা কোন সমস্যা না। ডেডবডি পেলে বাসায় পাঠিয়ে দিব চোখমুখ বিকৃত করে আমার লাশ হিসেবে। আমার পরিবার এতদূর যাবে না যে আমার লাশের ডিএনএ টেস্ট কিংবা ফরেনসিকে পাঠাবে। তারা ছেলে মৃত্যুর কষ্টে কান্নাকাটি করে ঐ লাশকে আমি ভেবে দাফন করে দিবে।''



আমার হল তখন পুরোপুরি মেজাজ খারাপ। ছোটবেলা থেকে বাবা কি জিনিস দেখিনি। মা ছিল বেশ্যা, দৌলতদিয়ার বেশ্যাপাড়ায় আমার জন্ম। বাবা কে সেইটাই জানি না। আমার মত কলিজাহীনেরও খারাপ লাগতেছিল তার বাবা মার কথা শুনে। মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম তার গালে বিছানা থেকে খানিকটা ঝুঁকে। গালে হাত দিয়ে সে হতভম্ব হয়ে বসে আছে। আমি রাগ প্রকাশ করে বললাম, 'তুমি মিয়া বাপ মারে কষ্ট দিতে চাও না তবুও আবার আরেক ব্যাটার লাশরে পাঠাইবা। জানোও আবার তুমি মনে করে ওরা কাঁদবে। ফাইজলামি পাইছো? চড় একটা দিছি কম হয়ে গেছে। ঐ হাবলু হাবলু।' হাবলু সাথে সাথে সামনে এসে হাজির। 'হাবলু এই হারামজাদারে বান্ধা দে তো। তারপর ঐ চিপার রুমে লাইট বন্ধ কইরা ফালাই রাখবি।' মাসুদের চোখে ভীতি কাজ করতেছিল। মাসুদ হাঁসফাঁস করে নড়াচড়ার চেষ্টা করলেও লাভ হল না। ক্ষরিত্‍কর্মা হাবলু চটাচট বেঁধে দিল তাকে চেয়ারের সাথে। আমি উঠে তার সামনে গিয়ে ঝুঁকে আবার বলতে লাগলাম, 'দ্যাখ তরে মাইরা ফালাই। তর লাইগা একটুও দয়া লাগতাছে না আমার। তুই কুলাঙ্গার। ঠুস কইরা গুলি করলেই তুই শেষ।'



মাসুদ ভয় পেলেও একেবারে সিঁটিয়ে গেল না। চোখে চোখ রেখেই বলতে লাগল, 'ভাই মরে যেতাম ঠিকই কিন্তু একটা ইচ্ছা আছে। ঐ ইচ্ছাটা পূরণ হওয়ার আগে মরতে চাই না।' 'কি ইচ্ছা?' 'যে মেয়েটারে ভালবাসতাম তারে এক নজর দেখতে চাই আরেকবার। তাকে দেখার সুযোগ আমার নাই। সে কোথায় আছে তাও জানি না। আমি খুঁজতেছি তাকে। জানি একদিন পেয়ে যাব। তার সাথে দেখা হওয়ার পর আপনার কাছে আসব আপনি আমারে গুলি কইরেন তখন। এখন আপাতত ডেডবডি ব্যবস্থা করে দেন। টাকা পয়সা কোন সমস্যা না।'



আমি জীবনে কত কেইস দেখলাম কিন্তু এইটা পুরো ভিন্ন কেইস। যাই হোক জীবনটা তার, সে যা ইচ্ছা তাই করব। আমি বাঁধা দেওয়ার কে। তবুও এই কয়েকদিনে একটা মায়া জন্মে গেছিল তার প্রতি। টাকা পয়সা হলো আমার চাহিদা। টাকার বিনিময়ে যেকোন কিছু করতে পারি। আপাতত তাকে হাতে রাখি। আমার কোন কাজে লাগে কে জানে। তবুও আরেক বার শেষ চেষ্টা করে দেখলাম। 'এখনও সময় আছে চিন্তা করে দেখো কি করবা। ডেডবডি চাই তোমার না কয়েক রাউন্ড গুলি?' আমি আবার তাকে বুঝাতে লাগলাম। 'ডেডবডি নিলে তুমি বেঁচে যাবে, স্বাধীন একটা জীবন পাবে, হয়তো এতে কষ্ট থাকবে কিন্তু বুলেট নিলে তোমার শান্তি। কষ্ট থাকবে না। সাময়িক কষ্টের দ্বারা কষ্ট থেকে চিরমুক্তি পাবে।'





"স্যার এই হইল কাহিনী, এখন আপনেই কন আমি দোষী কিনা?" মোসাদ্দেক সহায়তা পাবার আশায় সামনের দুজনের দিকে তাকাল। চরম হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মাসুদের বাবা, ভাবতে লাগলেন এহেন অবস্থায় দোষ কি মাসুদের না মোসাদ্দেকের। অবশেষে লোকের কাছে মৃত ছেলেকে ফিরে পাওয়ায় সকল দুঃখ ভুলে গেলেন। মৃত মানুষ কখনও ফিরে আসেনা তবে পাইলট মাসুদেরা হয়তো ফিরে আসে।



[ঈষৎ পরিমার্জিত]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.