নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদা কালো দর্পণে আঁকাআঁকি

আকিব আরিয়ান

রাত্রির নির্জনতায় নিঃসঙ্গ কেঁদে কেঁদে, একদিন হয়তো তুই অজান্তেই মরে যাবি, তবুও তুই জানবি না পাষাণ এ বুকে কতটুকু ভালবাসা তোর জন্যে জমা রাখি।

আকিব আরিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কয়েকটি সত্ত্বার অপমৃত্যু

২৭ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৫

(এই গল্পটা হুমায়ুন আহমেদ স্যার যে রাতে মারা যান, সে রাতেই লেখা তাকে এবং আমার ভালো লাগা তার সব চরিত্রদের উৎসর্গ করে। আমার কাছে মনে হয় স্যারের মৃত্যুর পর লেখা যে কারো আগে লেখা এটা। কারন আমি এই গল্প লেখা শুরু করি ঐ রাত সাড়ে বারোটার দিকে শেষ হয় দুইটার দিকে।)









তানজি কান্নাভেজা কন্ঠে বললঃ আমি কখনোই আর নীল শাড়ি পরব না।

আমি বললামঃ আমি কিনে দিলেও কি পরবা না?

'হু,তুমি কিনে দিলেও পরব না। যে শাড়ি পরে আমি তোমার সামনে আসতে পারব না, সেই শাড়ি পরে কি লাভ?'

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। কতো স্বপ্ন ছিলো নীল শাড়ি নিয়ে আমাদের। কোন একদিন যাবো সমুদ্রের পাড়ে, কোন এক সূর্যাস্তে সে দাঁড়িয়ে থাকবে বিষণ্ণ বদনে সমুদ্রের দিকে মুখ করে। বাতাসে তার নীল শাড়ির আঁচল উড়িয়ে নেওয়ার স্পর্ধা দেখাবে, চুলগুলো বাঁধ ভেঙ্গে উড়তে থাকবে। আমি দূরে বসে থেকে দেখবো জগতের সবচেয়ে রূপসীর বিষাদ মাখা মুখ।

স্বপ্নগুলো এভাবে কাঁচের গুড়ো হয়ে যাবে তা ভাবি নি আগে। তবুও তার ঐ কথায় মনে হল, নাহ, যত দূরেই থাকুক না কেন সে আমাকে ঠিকই তার বুকের মাঝে রাখবে।



ভালবাসা মানে শুধুই কাছে থাকা নয়, দূরে থেকেও অনুভব করা।



রূপা নীল শাড়ি পরে বসে আছে। বিকেলে হিমু সালাম স্টোর থেকে টিএনটি তে ফোন করে বলল, 'রূপা, জানো আজ না পূর্ণিমা?'

'পূর্ণিমার খবর এখন আমি তোমার চেয়েও বেশি রাখি। আজ পূর্ণিমা না'

'নীল শাড়িটা পরে দাঁড়াতে পারবে বারান্দায়? আমি এসে তোমাকে দেখে যাবো।'

'কেন শুধু শুধু মিথ্যা বলো? আমি জানি তুমি আসবে না। আমাকে এভাবে মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে ভড়কে দিতে চাও না? আমি তোমার ঐসবে ভড়কাই না।'

'তোমাকে নিয়ে শালবনের ঐদিকে যাবো, ওখানে ভালো চাঁদ দেখা যায়।'

হিমু ফোন রেখে দেওয়ার কিছুক্ষন পর পর্যন্ত কানে চেপে রাখলো।



এখন হিমু আসবে না জেনেও সে নীল শাড়ি পরে বসে আছে সে, হিমু তাকে বলেছে নিয়ে যাবে জোছনা দেখতে কিন্তু আজ অমাবস্যা। সে আসবে না, একা একা ঘুরে বেড়াবে রাজপথে। তার মহাপুরুষ বানানোর কারিগর পিতার কথামত সে মায়া ত্যাগ করার চেষ্টা করবে।



ভালবাসাই এটা যে,সে না আসবে জেনেও অপেক্ষা করে যাওয়া।



শাহরিয়ার আজ কাঁদছে অজোর ধারায়, যদিও হিমু হতে গেলে মায়া ত্যাগ করতে হয়। কান্না নামক ভয়ংকর ব্যাধি থেকে দূরে থাকতে হয়। আলমারি থেকে নিজের পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবী পরে খালি পায়ে বেরিয়ে পরল রাস্তায়। আজ তার বড় দুঃখের দিন, নিজের বাবা মারা যাওয়ার পরে এতোটা খারাপ লাগে নাই তার, কিন্তু আজ তার প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ স্যার সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন, এটা সে মানতে পারছে না। সবাই বিশ্বাস করলেও সে করতে পারছে না, তার কাছে মনে হচ্ছে স্যার আবার আমেরিকা থেকে ফিরে লেখতে শুরু করবেন।



আজ যে শাহরিয়ারকে সবাই হিমু বলে ডাকে তার জন্যে হুমায়ুন স্যারের কৃতিত্ব। তার হিমুগিরির শুরু যে উনার বইগুলো পড়ে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে চিত্‍কার করে বলে উঠলঃ স্যার আপনি মরতে পারেন না, আপনি আছেন আমার এই হলুদ পাঞ্জাবীতে মিশে।



ভালবাসা হয়তো যে চিরতরে চলে গেছে তাকে মনে রেখে অশ্রু জড়ানো।



শুভ এতদিন নিজেকে নিষ্পাপ মনে করত কিন্তু আজ সে বিরাট অপরাধ করে ফেলেছে। একটু আগে মৃন্ময়ী ফোন দিয়ে কাঁদছিল, শুভ্র জিজ্ঞেস করলো, 'কি হয়েছে? কাঁদছ কেন?'

মৃন্ময়ী ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, 'শুভ্র, হুমায়ুন স্যার আর নেই, মারা গেছেন।'

শুভ্র বলল, 'ওহ।'

ফোন রেখে দিলো মৃন্ময়ী। সে মনে করলো মৃন্ময়ী যেহেতু বলেছে, তাহলে এটা সত্য হবে। মৃন্ময়ী কখনও মিথ্যা বলে না। আবার পর মুহূর্তে ভাবতে লাগলো, আরে এটা কি করলাম আমি উনি মরে গেলে আমি বেঁচে আছি কিভাবে? নাহ, উনি মরতে পারেন না।



ভালবাসা হয়তো এরকমই, সে চলে যাওয়ার পরও অবিশ্বাস করা যে সে চলে যায় নি।





আমি আকিব ফিরে গেছি সেই অতীতে, এসএসসি পরীক্ষা শেষে ৩ মাস বন্ধ রেজাল্টের আগে। তখন চাচার লাইব্রেরি থেকে বই ধার করে এনে পড়তাম। এর বেশিরভাগই হুমায়ুন আহমেদের লেখা, তার বই পড়তে পড়তে কখন যে আমি নিজেকে হিমু ভাবতে শুরু করলাম নিজেই জানি না, শখের বশে খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি শুরু করলাম কিন্তু আজও হিমু হতে পারলাম না। তবে পুরোপুরি হিমু না হতে পারলেও হিমুর কিছু জিনিস আমার মাঝে গেঁথে গেছে। আমি এখন মানুষ ভড়কে দেবার মতো করে হাসতে পারি, মাঝে মাঝে দুয়েকটা সিক্সথ সেন্স মিলে যায়।



স্যারের প্রায় বইতেই নীল শাড়ি পরা নায়িকার কথা পড়তাম। কিভাবে যেন এই নীল শাড়িটার কথা আমার মাথায় গেঁথে গেল। আমি তানজিকে কল্পনায় নীল শাড়িতে সাজাতাম আর তার কপালে থাকত ছোট্ট নীল টিপ আর হাত ভর্তি নীল চুড়ি। তানজিকে চাওয়ার আগেই সে অনেক দূরে চলে যায়, অন্যের ঘরণী হয়ে। একটা সময় সে আমার মাঝে তীব্র ভালবাসার আবেগে নিমজ্জিত ছিল, এখন হয়তো বা আর নেই। ও নীল শাড়ি কখনো না পরলেও আমি কল্পনায় ঠিকই সাজাই তাকে। নীল শাড়ি পরা সে সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে হাঁটছে, বাতাসে এলো তার চুল। আমার হাতের আঙুলের ফাঁকে তার কড়ে আঙুল।



হুমায়ুন আহমেদের বই পড়া শুরু করি একটা জেদের চোটে, আমি এসএসসি এর আগে এক স্যারের কাছে ইংলিশ পড়তে যেতাম, তিনি হুমায়ুন স্যারের সবকয়টা বই পড়েছেন তখন পর্যন্ত প্রকাশিত সব। সেদিন আমার মনে হল উনি পড়তে পেরেছেন তাহলে আমি কেন পারব না? আমি পেরেছি অনেকাংশে, হাতেগুণা কিছু বই আছে যেগুলা পড়া হয় নি। ব্যক্তি হুমায়ুন আহমেদ থেকে লেখক হুমায়ুন স্যার আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। উনার লেখা পড়েই আজ গল্প লেখার শুরু, যদিও আমি তার লেখার মতো করে লেখি না। সব সময় এড়িয়ে চলি তার লেখার স্টাইল। আর আজ তিনি নেই আমাদের মাঝে, হয়তো মিশে থাকবেন আমার লেখনীতে।





বাচ্চু পালিয়ে যাবার সময় মূল্যবান সবকিছু নিয়ে চলে গেছে। শরীরটা আজ খুবই অসুস্থ, ক্রণিক কাশিটা যেন তার হঠাত্‍ করেই বেড়েছে। সময় যেন দিন দিন ফুরিয়ে আসছে তার, কাশির সাথে বুকে প্রচন্ড ব্যথা। চা খেতে খুব ইচ্ছে করছে তার কিন্তু উঠে গিয়ে বানানোর শক্তি নেই। বুকটা হঠাত্‍ করে চেপে ধরেছে ব্যাথায়, 'বাচ্চু,বাচ্চু' ডেকে মিসির আলী একপাশে ঢলে পড়লেন।

কোন এক সুন্দর জায়গায় দেখলেন কেউ একজন তাকে বলছে, 'মিসির আলি, তোমাকে আজ আমার খুব কাছে নিয়ে এসেছি। তুমি জানো আমি কে?'

মিসির আলি চশমা পরিষ্কার করে চোখে লাগালেন, 'আপনি হুমায়ুন আহমেদ না? আপনিই তো আমার সৃষ্টিকর্তা।'

সেই ব্যক্তিটি বললেন, 'আমি সৃষ্টিকর্তা নই তোমার, আমার মাঝেই তুমি লুকিয়ে ছিলে এতো দিন। আজকে থেকে তুমি আলাদা, সবাই তোমাকে মিসির আলি বলে চিনবে।'







রাস্তার সোডিয়াম লাইটগুলো যেন পুরো এলাকাজুড়ে এক রহস্যময়তা সৃষ্টি করে রেখেছে চারিদিক বৈরাগ্যের হলদে রঙে রাঙিয়ে । মেস থেকে বেরিয়ে হিমু নির্জন রাস্তায় হাঁটছে কিন্তু আজ ঘোর অমাবস্যা। অমাবস্যার সময় তেমন ঘর থেকে বের হওয়া হয় না। আজকের অমবস্যাটা পুরোটাই অন্যরকম, আজকে ঘরে বসে থাকার মতো অমাবস্যা না। মাঝরাস্তায় গিয়ে দাঁড়াল, এখান থেকে আকাশটা দেখা যায় দালানগুলোর ফাঁক দিয়ে, হিমু আজ আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু চাঁদ নেই। আজ মারা গেছেন তার স্রষ্টা হুমায়ুন আহমেদ, ওনার বাসায় অনেক আগে হিমু গিয়েছিল।

তাকে বলে এসেছিলঃ 'স্যার হিমুদের রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটতে কষ্ট হয়, ঢাকার রাস্তা তো অনেক নোংরা। পরবর্তী বইতে আপনি হিমুকে জুতা পরিয়ে দিবেন'।



হিমুর পায়ে কাঁটা ফুটেছে, গলায় কাঁটা বিধঁলে বিড়ালে পা ধরার নিয়ম আছে কিন্তু পায়ে কাঁটা বিধঁলে কি করতে হয় তা জানা নেই। হিমুর হাঁটতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তবুও খোঁড়াতে খোঁড়াতে এগিয়ে চলছে। তাকে আজ কাল্পনিক জোছনার আলোয় ভিজতে হবে। কল্পনায় ময়ুরাক্ষী নদী সাজাতে পারলে জোছনাকেও পারা যাবে। কাল্পনিক এই জোছনা আজ তার প্রয়োজন, হুমায়ুন আহমেদের খুব ইচ্ছা ছিল জোছনা আলোকিত রাতে যেন মারা যান। কিন্তু আজ অমবস্যার রাত, চাঁদ ডুবে গেছে আধাঁরে। শেষ ইচ্ছাটাও তার পূরণ হল না। সমস্যা নাই কল্পনা তো করাই যায়।



আকাশ ভরা জোছনা রূপালী আলো, চারিদিক যেন চিকমিক করছে। ভ্রম ধরিয়ে দেয় এমন জোছনা। চারপাশে যেন কিসের শূন্যতা। নেশা লাগিয়ে দেওয়া এক জোছনা, তার চোখের সামনে দেখতে পেল গায়ক এস.আই.টুটুল স্যারের খাটিয়ার পাশে টুলে বসে গান ধরেছে।



''ও কারিগর,দয়ার সাগর,ওগো দয়াময়__

চাঁদনী পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়__''



স্যারের শেষ ইচ্ছানুযায়ী (বলপয়েন্টে বর্ণিত) নুহাশ পল্লীতে এ আয়োজন করা হয়েছে, একপাশে বসে আছে কাঁদতে কাঁদতে চোখ শুকিয়ে যাওয়া শাওন। নিনিত বুঝতে পারছে না তার বাবা কোথায় গেছেন?



শাহরিয়ার হাঁটতে হাঁটতে দেখা পেল এক হলুদ পাঞ্জাবী পরা লোক খোঁড়াচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখে হিমু।

-হিমু ভাই আফনে?

-কিরে তর খবর কি?

-পায় কি হইছে? কাঁটা বিধঁছে?

-হুম।



কাঁটার ব্যাথা সহ্য করে হিমু এগিয়ে চলছে। তার বাবার উপদেশমালায় কাঁটা সম্পর্কেও উপদেশ আছে। শাহরিয়ার হঠাত্‍ বলে উঠলঃ হিমু ভাই আমাদের অনেক কষ্ট তাই না?

হিমু মাথা নেড়ে বললঃ মায়া থাকলেই কষ্ট আসে, মায়া ত্যাগ করতে পারলেই মহাপুরুষ হওয়া যায়।



হিমুর মনে পড়ল রূপাকে নিয়ে আজ জোছনা দেখার কথা ছিল। আজ অমাবস্যা জেনেও সে হিমুর জন্য নীল শাড়ি পরে অপেক্ষা করছে জোছনা দেখবে বলে। হিমুর কষ্ট লাগল অপেক্ষমান রূপার কথা চিন্তা করে। মায়া এসে তার উপর ভর করতে লাগল। ধ্যাত্‍ এ জীবনে আর মহাপুরুষ হওয়া হলো না।





(পরিমার্জিত)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:০৯

হারু মিয়া বলেছেন: ভালো লিখেছেন

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০২

আকিব আরিয়ান বলেছেন: ২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১:৩৬ টায় ধন্যবাদ জানানো হয়েছিল।

২| ২৮ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:০০

ক্লান্ত কালবৈশাখি বলেছেন: চমৎকার লাগল...

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০২

আকিব আরিয়ান বলেছেন: ২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১:৩৬ টায় ধন্যবাদ জানানো হয়েছিল।

৩| ১৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৮:০৪

সোহাগ সকাল বলেছেন: এইটা ফেবুর নোটেই পড়ছিলাম। :)

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০৪

আকিব আরিয়ান বলেছেন: ১৮ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১২ টায় বলেছিলাম,

হুম ফেবুর নোটেরগুলোই ব্লগে দেই

৪| ২০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:৩৪

অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: :( :(

২০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩০

আকিব আরিয়ান বলেছেন: :|

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.