![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত্রির নির্জনতায় নিঃসঙ্গ কেঁদে কেঁদে, একদিন হয়তো তুই অজান্তেই মরে যাবি, তবুও তুই জানবি না পাষাণ এ বুকে কতটুকু ভালবাসা তোর জন্যে জমা রাখি।
(পূর্বকথাঃ গল্পের থীম রাবিতে আমি যখন আব্বাকে নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাই তখন আমার মাথায় আসে আমার বাবাকে লক্ষ্য করে। প্রায় তিন বছর পর উনার ভার্সিটি লাইফের এক ডায়েরি পেয়ে আগের থীম কাজে লাগিয়ে গত মার্চ মাসে এ গল্পটা লেখি।)
১৯৮১ সালের ডিসেম্বরের কোন এক সকাল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। মমতাজ উদ্দিন কলাভবনে ভর্তির ফরম ফিলআপ করছে খাটোসাটো এক ছেলে। এরপর ভর্তি হয়ে গেল। অনেক দূরে তার বাড়ি। তত্কালীন সিলেট জেলায়। বড় ভাই সাথে করে নিয়ে এসে ভর্তি করিয়ে দিল। আইন অনুষদ। এসব ঘটনা মনে হচ্ছে এই সেদিনের। অথচ এরই মাঝে ত্রিশ বছর কেটে গেছে। একটুও অতীত মনে হচ্ছে না আলী খসরু সাহেবের। এখন তিনি দাঁড়িয়ে মমতাজ উদ্দিন কলাভবনের সামনের ফাঁকা মাঠে। তাকিয়ে দেখছেন পুরো ভবনটিকে। একটা সময় কত পদচারনা হয়েছে এই ভবনে। মনে হচ্ছে এইতো সেদিন। আশেপাশে অনেক মানুষের ভিড়। ভর্তি পরীক্ষা চলছে এখন। প্রায় পঁচিশ বছর পর নিজের ছেলেকে নিয়ে আসলেন। ভিতরে ভিতরে অনেক উচ্ছসিত তিনি। বহুদিন পর প্রিয় মানুষের সাথে দেখা হলে যেমন অনুভূতি হয় তেমনি তার অনুভূতি। একটা সময় এই ক্যাম্পাস, হল ছিল তার প্রিয় থেকেও প্রিয়। জীবনের প্রায় ছয় বছর কাটিয়েছেন এখানে। সবকিছুই এখন স্মৃতি নামক সোনার পাতায় মোড়া।
হাঁটছেন অনেকক্ষন ধরে। স্মৃতিময় রাস্তায়গুলো দেখে পাতা উল্টাচ্ছেন একে একে স্মৃতির। অনেকটা বদলে গেছে সব। হলের দিকে এগুতে লাগলেন। প/৫, শের-এ-বাংলা একে ফজলুল হক হল। এই ছিল তার ঠিকানা। এই হলেই কাটিয়েছেন সবকয়টা বছর। নিজের রুমের সামনে দাঁড়ালেন। ভিতরে একজন আছে। তার কাছে মনে হল, ফকির ভাই তার বন্ধুদের নিয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। যেই তিনি রুমে ঢুকবেন, ফকির ভাই তাকে হেসে হেসে বলবেন, 'আরে খসরু তুমি আজকে এসেছো'।
হয়তো বা নোমান বসে থাকবে তার বিছানায়। দরজা দিয়ে উঁকি দিলেন কিন্তু ওদের কাউকে দেখলেন না। ভিতর থেকে একজোড়া উত্সুক চোখ তার দিকে তাকাল। হলের ডাইনিংয়ে গেলেন। একসময় এখানে বসে রাতে নাটক দেখা হত। সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া। সামসু, লুতু, জোবাইর মিলে কত হাসি ঠাট্টা। মাঝে মাঝে এখানে খাওয়া দাওয়া হত। আহা কত মজার দিনই না ছিল। আলী খসরু সাহেব ফিরে গেলে ছাব্বিশ সাতাশ বছর আগের দিনে।
ক্যাফেরিয়ায় বসে আছেন। দুপুরের খাওয়া খাবেন। কমদামের খাবার তবুও আনন্দের। একটা সময় ছিল ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার দাবার চলত। ক্যাফেটেরিয়ার ডাল তার খুব প্রিয় ছিল। এখনও অন্য ডালের সাথে ক্যাফেটেরিয়ার ডালের তুলনা করেন। ক্যাফেটেরিয়া থেকে খেয়ে শহীদ মিনারের পাশে দাঁড়ালেন। নাট্যগোষ্ঠীর মঞ্চস্থ কত নাটকই না তারা উপভোগ করেছিলেন এখানে। ঘুরতে ঘুরতে পোস্টঅফিসের সামনে এসে পড়লেন। স্টেডিয়ামের পাঁশ ঘেঁষে পোস্টঅফিস। কত শত চিঠি আসত। প্রতি সপ্তাহে চিঠি আসত বাড়ি থেকে, কখনও ঢাকা থেকে, কখনও বা লন্ডন থেকে বোনের চিঠি। রাস্তায় চলতি পথে পিয়ন তাকে দেখলেই চিঠির কথা জানাত। চিঠি ছাড়াও মানিঅর্ডার আসত। তবে একটা চিঠির অপেক্ষা থাকত, সেই চিঠিটা কখনও আসে নি।
মুন্নুজান হলের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হল লাবনীর কথা। মাঝে মাঝে লাবনীর কাছে আসা হত। লাবনী ছিল ব্যাচমেট। রোকেয়া হলেও কে জানি থাকত এই মূহুর্তে তার মনে পড়ছে না। ঘুরে ফিরে রবীন্দ্র কলা ভবনে। কলাভবনের দ্বিতীয় তলায় দাঁড়িয়ে দূরে তাকিয়ে আছেন। স্মৃতির পটে অনেক ছবিই ভাসছে।
প্যারিস রোড। ভিসির বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটেই ডানদিকে ঘাটলাওয়ালা পুকুর। পুকুরের পাড়ের কত স্মৃতি। মৌনীসহ অন্যান্যদের সাথে আড্ডা। এই মেয়েটা অনেক খেয়াল রাখত তার। তারও ভাললাগত কিন্তু কখনও প্রকাশ করা হয় নি। রক্ষণশীল ভালবাসা। মাঝে মাঝে তার চোখে ভ্রম খেলা করত। আসলেই কি মৌনী তাকে ভালবাসে। মৌনীর চোখের ভাষা তিনি ধরতে পারতেন না। কেমন যেন দূর্বোধ্য ঠেকত তার কাছে। অন্যান্য বান্ধবীদের সাথে প্রাণখোলা কথাবার্তা থাকলেও মৌনীর সাথে কথা একটু কম হত। জড়তা কাজ করত তার সামনাসামনি হলে। মাঝেমাঝে দরকার বশতঃ তার সাথে নোটের আদানপ্রদান হত। মৌনী নামটা অবশ্য তার নিজের দেয়া। মেয়েটা তার আবেগ লুকিয়ে রাখত চোখের কোনে। কোন কিছুই প্রকাশ করত না, তাকে বুঝতেও দিত না। মেয়েটার অবশ্য একটা নাম ছিল, শোহা। একটা সময় গেছে অনেক কবিতা লেখা হত। প্রায় সবকিছুই ছিল মৌনী কেন্দ্রিক। তার মৌনতা নিয়ে। অনেক বছর কেটে গেছে। মৌনীর কোন খবর তার কাছে নেই। কোথায় আছে, তার সংসার এসব সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তার অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায়। মৌনীর কথা একটা সময় তাকে অনেক ভাবিয়েছে। অনেক আকর্ষণ করেছে মৌনী। সেই আবেগ আজ নেই, তবুও একটু দোলা দিয়ে গেল তাকে। প্যারিস রোডের পুকুর পাড়ে এতক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন ঘাটে বসা এক যুগলের দিকে। আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাঁটতে লাগলেন কাজলা গেটের দিকে।
মতিহার সবুজ চত্বরে অনেকটা সময় কাটিয়ে ফিরতে লাগলেন ছেলের উদ্দেশ্য। আবার এসে দাঁড়িয়ে আছেন সেই মমতাজ উদ্দিন কলা ভবনের সামনে। দলে দলে ছেলেমেয়ে বের হচ্ছে পরীক্ষা শেষ করে। তার হঠাত্ মনে হল কে জানি তাকে ডাকছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেন হেঁটে আসছে শোহা। তার চোখেমুখে রাজ্যের মৌনতা। শোহা এসে তার পাশে দাঁড়াল। 'খসরু এতক্ষন ধরে তোমাকে খুঁজছি কোথায় ছিলে তুমি?' নির্বাক চেয়ে রইলেন শোহার দিকে। তার প্রিয় কচুয়া রঙের সালোয়ার পরা। কপালে ছোট্ট কালো টিপ।
পিছন থেকে কে যেন পিঠে একটা টোকা দিল তাকে। ফিরে দেখেন তার ছেলে দাঁড়িয়ে। 'কই আব্বা আপনেরে এতক্ষন ধইরা খুঁজতাছি?' তার ভ্রম কেটে গেল। কাটলো কিনা নিজেও বুঝতে পারলেন না। দেখলেন ভীড়ের মধ্যে আবার মৌনী মিশে যাচ্ছে। ছেলের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি ফ্যালফ্যাল চেয়ে রইলেন মাঠের পাশের রাস্তার দিকে। মৌনী তাকে ডাকছে হাতের ইশারায় যেমনটি ডেকেছিল পঁচাশির কোন এক ভরদুপুরে।
(শেষকথাঃ গল্পটা আমার বাপজানকে দেখানোর ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু বাবা ছেলের মাঝে ঐ রকম সম্পর্ক না থাকার কারনে দেখাতে পারি নি। গত মাসে যখন আব্বা ঢাকা আসে তখন একটা ব্যাগের ফাঁকে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম গল্পটা এক প্রিন্ট করা কাগজে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে ঐ ব্যাগ তিনি হারিয়ে ফেলেন ঐদিনই। উনাকে নিয়ে আমার লেখাটা দেখাতে পারলাম না, আর হয়তো দেখানো হবেও না।)
২| ১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:০৬
আকিব আরিয়ান বলেছেন: বাপের কাছে দিলে মনে করবো আমি ফাজলামি করতেছি.।
৩| ১৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৮:০০
সোহাগ সকাল বলেছেন: আকিব ভাই জোস! সামু কর্তৃপক্ষরে মেইল করছিলেন? লিখে যান, সেইফ হয়ে যাবেন।
৪| ১৮ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৮
আকিব আরিয়ান বলেছেন: মেইল করছি অলরেডি দুইবার, কোন খবর নাই। আল্লাহই জানে সেইফ হমু কিনা, আমি সেইফ হওয়ার আশা ছাইড়া দিছি
৫| ২০ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৫
সোহাগ সকাল বলেছেন: আচ্ছা দেখি আমি কিছু করতে পারি কিনা!
৬| ২০ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৪
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ২য় ভালোলাগা ++++
ভালো থাকবেন সবসময়
৭| ২০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:০১
আকিব আরিয়ান বলেছেন: সোহাগ যা করছো তার জন্যে আমি কৃতজ্ঞ
অপূর্ণ আপনিও ভালো থাকবেন
৮| ২০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৩০
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: জোস!লিখে যান, সেইফ হয়ে যাবেন।
৯| ২০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:১২
সপ্নাতুর আহসান বলেছেন: আপনার লেখার হাত ভাল। লিখতে থাকুন।
পোস্ট ভাল লেগেছে।
১০| ২০ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:১২
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ
১১| ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ১:১০
মায়াবতী নীলকন্ঠি বলেছেন: অনেক ভালো লেখেন...চালিয়ে যান..+++++++
১২| ২১ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৫:১৩
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ
১৩| ২১ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১৩
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: +++++++++++++++++++++++++
১৪| ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:০০
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ
১৫| ২৩ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৫৩
আরজু পনি বলেছেন:
আপনিতো বেশ লিখেন।
এতোদিনেও জেনারেল/সেফ না হ্ওয়াটা দুঃখজনক।
চালিয়ে যান আপনার লেখনী।
ব্লগিং আনন্দময় হোক।
১৬| ২৩ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৫
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ, সেইফ হওয়ার ব্যাপারে কেউ যদি হেল্প করতেন!!!
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৫৬
মারুফ মুকতাদীর বলেছেন: কয়বার ব্যাগ হারাইবো মিয়া, আবার দ্যান…………
আর গল্প ভালা হ্ইসে।