নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদা কালো দর্পণে আঁকাআঁকি

আকিব আরিয়ান

রাত্রির নির্জনতায় নিঃসঙ্গ কেঁদে কেঁদে, একদিন হয়তো তুই অজান্তেই মরে যাবি, তবুও তুই জানবি না পাষাণ এ বুকে কতটুকু ভালবাসা তোর জন্যে জমা রাখি।

আকিব আরিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দর্পণে কার মুখ

২৩ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ২:১৬

(পূর্বকথাঃ গল্পের নাম নেয়া হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দর্পণে কার মুখ' উপন্যাস থেকে)







আবারো ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হল। রাফি কোনরকমে গা বাঁচিয়ে যাত্রী ছাউনীর নিচে এসে দাঁড়ালো। মন মেজাজ ভালো না তেমন, তার উপর আবার বৃষ্টি সেই সকাল বেলা থেকে, বিরক্তিকর লাগছে তার সবকিছু। মন মেজাজ ভালো না থাকার কারণ হচ্ছে, মিতুর সাথে তার সম্পর্কের টানাপোড়ন চলছে। হয়তো এবার সম্পর্কটা ভেঙ্গেই যাবে। রাফি চাইছে না সম্পর্কটা ভাঙ্গুক, সম্পর্ক ভাঙ্গাভাঙ্গি তার ভালো লাগে না। তবে অবশ্য যে সম্পর্কে মনের মিল ধীরে ধীরে হ্রাস পায় সে সম্পর্ক বয়ে বেড়ানোর যন্ত্রণাও আছে।



যাত্রী ছাউনী লাগোয়া এক চায়ের দোকান, রাফি এক কাপ চা অর্ডার করলো। পকেট থেকে সিগারেট বের করলো, ত্যানাত্যানা হয়ে গেছে সিগারেট প্রায়, পকেটের চাপে আর হালকা বৃষ্টির ছাঁটে। আঙুল দিয়ে চেপে চেপে সিগারেট সোজা করে জ্বালালো, চায়ে চুমুক দিয়ে মন ভালো করার চেষ্টা করলো। গাড় লিকারে দুধ চিনি বেশি দিয়ে চা আর একটা সিগারেট মন ভালো করার মতো ক্ষমতা রাখে। চায়ে চুমুক দিয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছে, বৃষ্টি কমার কোন লক্ষণই নাই। হঠাত্‍ করে তার চোখ আটকে গেল রাস্তার অপারে অদূরে এক মেয়ের দিকে, বৃষ্টিতে ভিজে জবজবে হয়ে গিয়েছে। লাফালাফি হুড়োহুড়ি করছে রাস্তায়, একেবারে একা না তার সাথে একটা পিচ্চি ফুলওয়ালাও আছে। রাস্তায় জমে থাকা কাদাপানি ছিটাচ্ছে, কাদাপানির মধ্যে লাফাচ্ছে। রাফি এই আজব চিড়িয়ার দিকে তাকিয়ে চা খেতে ভুলে গিয়েছিল, সম্বিত ফিরতেই চায়ে চুমুক দিয়ে ভাবতে লাগলো 'কি পাগল রে বাবা, ঢংয়ের আর সীমা নাই!' চা শেষ করতে করতে বৃষ্টি খানিকটা কমে গেল। বিল দিয়ে হাঁটা শুরু করলো হলের দিকে।











আর. এফ. রহমান হলের দোতলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠেই ডানপাশে চার নম্বর দরজাটাই রাফির রুমের। সে বিছানায় শুয়ে দেয়ালে পা তুলে দিয়ে একমনে সিগারেট টানছে। মিতুর সাথে কিছুক্ষণ আগে কথা হয়েছিল। মিতু বলেছে, 'দ্যাখো রাফি, তুমি যে রকম মেয়ে আশা করো না? ঐ রকম আমি হতে পারব না, আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু পারি নি। আর তুমি আমারে কালকে যে সব কথা শুনিয়েছো তারপর থেকে আমার মন প্রায় ভেঙ্গেই গেছে। রিলেশনের এতোদিন পর এসে তুমি আমারে বলো যে, কি আছে আমার যা দেখে ভালোবাসা যায়? আসলেই ফারজানা মিতুর কিছুই নাই। সে ভালোবাসার যোগ্য না। একটা কথা জানো তো রাফি? ভাঙ্গা কাঁচ গ্লু দিয়ে জোড়া লাগালেও তাতে ভাঙ্গাটা চোখে পড়ে, আমার কাছে এখন তাইই মনে হয়।'

কথা বলার শেষদিকে মিতু কান্না করছিলো, চুপ করে থেকে রাফি একটার পর একটা সিগারেটে টান দিচ্ছিলো।



ভালোবাসার মানুষটি যদি মনের মতো না হয় তাহলে কষ্টটাই বেশি। সারাজীবন তো আর সম্ভব না মনের অমিল সাথে নিয়ে বসবাস করা। রাফি ভাবছে অনেক কিছুই কিন্তু কোন শেষ নাই ভাবনার।













কয়েকদিন পরের কথা। মিতুর সাথে সম্পর্কটা এখন এক অর্থে ঝুলে আছে, আগের মতো মনে হয় কেউই ভিতরে টান অনুভব করে না অন্যের প্রতি। তবুও প্রতি আগের অভ্যাস বশত প্রতি রাতে দশ পনের মিনিট কথাবার্তা হয়। কথাবার্তাগুলোও একেবারে সাধারণ, শুধু নিয়মরক্ষা আর কি। এর মধ্যে রাফির সাথে পরিচয় হয়েছে মীরার। মীরার সাথে পরিচয়ের ঘটনাটা তেমন আহামরি কিছুই নয়। সেদিন ডিপার্টমেন্টে ক্লাস ছিলো না, তাই জামিলুর রেজা স্যারের রুমে গিয়েছিলো যদি পরীক্ষার আগে কোন দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়। রুমে ঢুকতেই হঠাত্‍ চোখ পড়লো সামনের চেয়ার দুটিতে, দুইটি মেয়ে বসা, দুজনেই শাড়ি পরেছে। রাফি ভাবছে আজকে কোন অনুষ্ঠান নাকি যে এরকম শাড়ি পড়েছে। দূরের একটা সোফাতে বসতেই মেয়ে দুইটার একটাকে চিনতে পারলো রাফি, সেদিন বৃষ্টিতে যে মেয়েটা কাদাপানিতে লাফালাফি করেছিলো সে। সাদা, নীল, গাড় নীল এই তিনরঙের সমণ্বয়ে তার শাড়ি, দুহাত ভর্তি নীল চুড়ি আর কপালে নীল টিপ। রাফির চোখ আটকে আছে মেয়েটার দিকে, তার অন্যমনস্কতা ভাঙ্গলো স্যারের ডাকে।

'কি ব্যাপার রাফি?'

'স্যার সাবসিডিয়ারি সাবজেক্টের ব্যাপারে আলাপ করতে আসছিলাম।'

'ও আচ্ছা' বলে তিনি আবার মেয়ে দুইটার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর দুজনই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো, জামিলুর রেজা তাদেরকে ডেকে রাফিকে দেখিয়ে বললেন, 'একে সঙ্গে করে নিয়ে যাও।'

আর রাফিকে বললেন, 'তুমি যাও তো এদের সাথে, কি দরকার এদের দেখো।'

রাফি নিতান্ত অনিচ্ছায় এদের সাথে বেরিয়ে পড়লো। আজকেও তার স্যারের সাথে আলাপ করা হলো না।



করিডোরে তাদের পিছন পিছন হাঁটতে থাকলো সে। সেদিনের মেয়েটা পিছনে ফিরে তাকে জিজ্ঞেস করলো, 'আসলেই কি আপনি আমাদের সাথে যাবেন? না আপনার অন্য কোন কাজ আছে?'

রাফি কি উত্তর দিবে বুঝতে পারলো না। 'আসলে আমরা একটু নীলক্ষেতে যাবো, এরপরে অন্যকাজ আছে। আপনি চাইলে আসতে পারেন।'

রাফি দাঁড়িয়ে চিন্তা করছে, সে আসলেই যাবে কিনা। সে বলল, 'আচ্ছা চলুন, কিছুদূর গিয়ে যদি যেতে ইচ্ছে করে তবে যাবো নাইলে যাবো না।'

'কনফিউশন! আচ্ছা ঠিক আছে যেতে হবে না।'

তিনতলা থেকে হঠাত্‍ চোখ পড়লো নিচে দূরে, মিতু তার ডিপার্টমেন্টের কয়েকটা ছেলেকে নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে ঘাসের উপর বসে। রাফি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বলল, 'নাহ, কনফিউশন না, চলুন। যে কাজটা ছিল তা আজ না করলেও চলবে।'













সন্ধ্যা হয়ে আসছিলো, ছাত্রীর বাসায় যেতে হবে রাফির, তাই ফিরে এসেছিলো একটু তাড়াতাড়িই। ক্লাস টেনে পড়ুয়া ছাত্রীর পরীক্ষা সামনেই। সারাদিন ভালোই কেটেছে মীরা ও তার বান্ধবী সোমার সাথে। সোমার বড় বোনের বিয়ের বাজারে রাফি সাহায্য করেছে। মীরার সাথে কাটানো সময় অনেক ভালো গিয়েছে, একটা মেয়ের মাথায় এত পাগলামি থাকতে পারে! না দেখলে হয়তো জানতোই না সে। মিতুর মধ্যে এসবের ছিটেফোটাও নেই, হয়তো মিতু মীরার বয়সটা আগেই পার করে এসেছে তাই। সেদিন লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলো রাফি, সোমাকে রেখে মীরা হুট করে তাকে বলল, 'চলেন আইসক্রীম খেয়ে আসি, রাস্তার পাশের কুলফি খেতে আমার খুব ভালো লাগে।'

ভালো কথা আইসক্রীম খাবে, বিলটা মীরাই দিল কিন্তু রাফি লক্ষ্য করলে সে তিনটা আইসক্রীম নিয়েছে হাতে। তিনটা থেকে একেকবার একেকটায় কামড় বসাচ্ছে আর হাঁটছে, তার এই ছেলেমানুষিকতা আর লোকজনের তাদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা দেখে সে লজ্জা পেল। রাস্তায় দুইটা পিচ্চি মীরাকে দেখে 'কাঙ্গাল' বলে টিটকারী মেরে চলে গেল। রাফির নাক লজ্জায় কেটে যাওয়ার মতো অবস্থা, সে বলল, 'ইয়া আল্লাহ এইসব কি করছেন আপনি!'

'দেখেন আমার যা ভালো লাগে তা আমি করব, কে কি বলল তাতে আমি মাথা ঘামাই না।'

রাফি আর কথা বাড়ালো না।











নীল শাড়ির ব্যাপারে রাফির ভীষণ দুর্বলতা একেবারে কৈশোরের প্রথম থেকেই। সেদিন মীরা নীল শাড়ি পরে সারাদিন ঘুরেছে তার সাথে। ব্যাপারটা অনেকটা স্বপ্নের মতো মনে হয়েছে, সে কখনও আশা করে নি কেউ একজন তার পাশে নীল শাড়ি পরে ব্যস্ত রাজপথে হাঁটবে। অনেক দিন আগে একদিন সকালে বাসা থেকে নেমেই দেখে রিকশায় করে এক তরুণী যাচ্ছে নীল শাড়ি পরে, সে তাকিয়েছিলো অনেকক্ষণ রিকশা দৃষ্টির বাইরে যাওয়া পর্যন্ত। সেদিন মিতুকে বলেছিলো, 'এই তুমি নীল শাড়ি পরতে পারবে? একদিন নীল শাড়ি পরা তোমাকে নিয়ে পুরো ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াবো।'

'দ্যাখো, আমি শাড়ি পরি না, পরতে পারিও না, আমার কাছে বিরক্ত লাগে ব্যাপারটা, বুঝতে পারি না কিভাবে একজন একটা লম্বা কাপড় শরীরে প্যাঁচিয়ে রাখে।'

মিতুর উত্তর শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলো তখন রাফি। টপ জিন্স পরতে কখনও না করেনি সে মিতুকে, তবুও মিতু কি পারতো তাকে খুশি করার জন্যে অন্তত এটুকু বলতে, 'ঠিক আছে আমি পরবো।'

এসব ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাফি।









ইদানীং মীরার সাথে বেশ ভালোই খাতির, দুদিন পরেই নানা ছুতায় রাফি তার সাথে দেখা করতে চায়। মীরাও চলে আসে সে সব জায়গায় হাওয়ার বেগে। তারও ভালো লাগে তার সাথে ঘুরতে, মিশতে। মাঝে মাঝে ভাবে, 'এই ছেলেটা এতো হাসাতে পারে!! কাছে গেলেই হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়।'

রাফির চোখের দিকে তাকালে মীরা কিসের অতৃপ্তি যেন দেখতে পায়। রাফি ছেলেটা প্রচুর কথা বলে, কথার ফাঁকে ফাঁকে তার জীবনের গল্প শোনায়। নিতান্তই সাধারন একটা ছেলে, যার স্বপ্ন কম কিন্তু সুখ খুঁজে বেড়ায়।



ধানমন্ডি লেকে বসে রাফি গল্প শুনাচ্ছিলো মীরাকে। চারপাঁচ বছর আগে ঢাকায় এসে কতটা কষ্ট করতে হয়েছে তাকে, সংসারের অভাব, মানুষিক অশান্তি, মিতুর সাথে অমিল, সবকিছু শোনায় সে। কথার ফাঁকে হুট করে তাকায় মিতুর দিকে, 'এই মেয়ে কাঁদছো কেন? কাঁদার কি আছে?'

'একটা জিনিস জানো? আমার চশমার কারনে কাঁদলে কেউ সহজে বুঝে না।'

'আরে ধুরর, আমার জন্যে কাঁদার কি আছে?'

হেসে দেয় মীরা প্রতিউত্তরে। রাফি তাকিয়ে ভেবেছে তখন, কেন এত মায়া জমিয়ে রাখছে তার জন্যে মেয়েটা। কদিনেরই তো পরিচয়। আস্তে আস্তে দুর্বলতা বাড়তে থাকে তার মিতুর প্রতি। দুর্বলতা যতই বাড়তে থাকে ততই তাদের মেলামেশা বাড়তে থাকে। কার্জন হল-টিএসসি-চারুকলা-ফুলার রোড থেকে শুরু করে মিরপুর-বনশ্রী-মোঃপুর বাড়তেই থাকে তাদের একসাথে চলাফেরা।









কিছুক্ষণ আগে মাত্র এসেছে মিতু, অনেকক্ষণ ধরে একা বসে ফলিত রসায়নে ঢুকার সিঁড়িতে অপেক্ষা করছিলো রাফি। কয়েকটা সিগারেট এর মধ্যেই বাতাসের সাথে মিলিয়ে গেছে। মিতুর আসার পর থেকেই চুপ, কোন কথা বলছে না। রাফিও চুপ করে দেয়ালের ওপারের রাস্তায় তাকিয়ে আছে আনমনে। আরেকটা সিগারেট ধরানোর জন্যে প্যাকেট বের করতেই মিতু চোখ লাল করে বলল, 'সিগারেটটা আর ছাড়তে পারলা না, তাই না? শুধু বলো আমিই তোমার কথা শুনি না, তুমি কই শুনো আমার কথা?'

'মিতু সিগারেটের সাথে তোমার ঐ স্বভাবগুলোকে মেলাতে যেও না, তুমি আমার প্রেমিকা অথচ তুমিই আমার মন ভালো রাখতে পারো না, করাতেও পারো না।'

'হুম আমি কিছুই পারি না, তুমি মনে করো আমি কিছুই বুঝি না, জানি না? ঐ মীরা না ফীরা ঐটার সাথে এতো গলাগলি কেন? মন ভালো রাখতে পারে বুঝি?'

'মিতু তোমার সমস্যাটা কি? আজাইরা ঝগড়া করতেছো কেন!'

'আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে না নিয়ে আরেক মেয়েকে নিয়ে ঘুরে আমার সমস্যা না? হায়রে আমার কপাল। আমার জন্ম নেওয়াটাই ভুল হইছে। কেউ আমাকে বুঝে না।'

বলে ফোতফোত করে কাঁদতে লাগলো মিতু। রাফি দীর্ঘশ্বাস ফেলে, হাত বাড়িয়ে মিতুকে বুকে জড়িয়ে ধরতে চায়। মিতু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। ব্যাগ নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সে চলে যায়। মিতুর চলে যাওয়া দেখে আগের না জ্বালানো সিগারেটটা জ্বালালো রাফি। কেন জীবনটা এতো জটিল সমীকরণে বাঁধা? একটু কি সহজ হতে পারত না? হাহাকার করে উঠে বুকটা। যে সুখটা মিতুর কাছ থেকে পেতে চেয়েছিলো, গত দেড় বছরে যেটা পায়নি সেটা গত কয়েকদিনেই মীরার কাছ থেকে অনেক অনেক বেশি পেয়েছে। সুখপাখি বড্ড উড়নচন্ডী, একটু পেলে আরেকটু পেতে চায়।









মিতুর সাথে ঐ দেখার দুইদিন চলে গেছে, মনটা খানিক খারাপ তার। মিতু কথা বলছে না তার সাথে রাগ করে, এদিকে সে তার ইগো বজায় রাখতে গিয়ে কথা বলছে না। অবশ্য মিতুর দোষটাই চোখে পড়ছে তার বেশি। তার কথা হলো মিতু যদি তাকে ভালবাসা দিতে কমতি না করতো তাহলে সে মীরার প্রতি দুর্বল হতো না। সবচেয়ে বড় কথা কৈশোর থেকে যে রকমের মেয়ে সে তার জীবনে কামনা করতো তার অনেক কিছুই মীরার মধ্যে আছে। মিতুর মতো হয়তো সে সুন্দরী না, মীরার শ্যামলা মায়াকাড়া চেহারাতে অনেক আকর্ষণ বোধ করে রাফি। অদ্ভূত এক দোলাচালে পড়ে গেছে সে। নিজে কোন কিনার করতে পারছে না।









ফুলার রোডে উদয়ন স্কুলের ওপর পাশে রাস্তার ফুটপাতে বসে আছে মীরা ও রাফি। আকাশ কালো হয়ে আসছে, যে কোন মূহুর্তে বৃষ্টি নামবে। রাফি ভাবছে বৃষ্টি হলে মীরাকে নিয়ে ভিজবে, ইচ্ছা করছে বৃষ্টিভেজা রাস্তায় তার হাত ধরে হাঁটতে। মিতুর ঠান্ডার সমস্যা আছে, একটুতেই সে হাঁচি দিতে দিতে কাহিল হয়ে যায় তাই বৃষ্টিতে ভিজে না। রাফিরও কোন দিন মিতুর সাথে বৃষ্টিতে ভেজা হয় নি। বেশ কিছুক্ষণ ধরে দুজনেই নীরব, নীরবতা ভাঙ্গলো, 'রাফি একটা কথা জিজ্ঞেস করি?'

রাফি মৌনসম্মতি দিল।

'আচ্ছা তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না আমাকে ভালো লাগে? না শুধুই মোহ?'

রাফির কাছে এ প্রশ্নের উত্তর নেই, সে কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না। তার কাছে মনে হচ্ছে মীরা তার কাছে থাকলে তার মন সবসময় ভালো থাকবে, জীবনে যে সুখটা সে চেয়েছিলো তা ফিরে পাবে।

'দ্যাখো রাফি, তুমি মিতু আপুকে ভালোবাসো, এখন যদি তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলো তবে তার সাথে চীট করা হবে। আর একজন মানুষকে ভালো লাগতেই পারে, সেক্ষেত্রে আমাকে ভালো লাগলে দোষের কিছু না। আর মোহ হলে কাটিয়ে ফেলো কারণ আমি একজনকে মনে প্রাণে ভালোবাসি যদিও জানি সে কখনও আমাকে ভালোবাসবে না।'



রাফি চুপ থেকে মীরার কথা শুনছে, 'আমি চাই আমাদের মধ্যে যে বন্ধুত্বটা হয়েছে তা সবসময় থাকুক। আমি উঠি কাজ আছে, উত্তরটা আমাকে না দিয়ে নিজে নিজে চিন্তা করতে থাকো। উত্তর যদি খুঁজে না পাও তবে সাহায্য করতে পারি। আসি।'



মীরা উঠে চলে যাচ্ছে, এতক্ষণ খেয়াল করে নি রাফি, টিপটিপ বৃষ্টি আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করেছে। মীরা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাস্তায় পড়ে থাকা ফুল কুড়াচ্ছে, রাফির ভিতরটা কেমন জানি করছে। তার কাছে মনে হচ্ছে খুব দামী যেন তার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মীরা যদি একবার ফিরে তাকাতো, তাকালেও দেখতে পেত না ঝুম বৃষ্টির মাঝে একা বসে রাফি কাঁদছে। বড়ই নিষ্ঠুর প্রকৃতির নিয়ম।





(শেষকথাঃ খুব সম্ভবত সিক্যুয়েল লিখবো)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:০২

আরজু পনি বলেছেন:
আস্তে আস্তে দুর্বলতা বাড়তে থাকে তার মিতুর প্রতি।.........এখানে সম্ভবত মিরার প্রতি হবে।

মানুষের চাহিদা, মন বড়ই বিচিত্র!

ভালো লাগলো পড়তে।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৮

আকিব আরিয়ান বলেছেন: হুম কিঞ্চিত গন্ডগোল আছে নামে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.