![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত্রির নির্জনতায় নিঃসঙ্গ কেঁদে কেঁদে, একদিন হয়তো তুই অজান্তেই মরে যাবি, তবুও তুই জানবি না পাষাণ এ বুকে কতটুকু ভালবাসা তোর জন্যে জমা রাখি।
[গল্পটা একটা এক্সপেরিমেন্টাল টাইপ গল্প আমার, লিখতে সাহায্য করেছে 'সুজানা আবেদীন সোনালী'। গল্পের 'সোনালীকথন' পার্টটুকু তার লেখা]
সৌম্যকথনঃ
হঠাত্ কাঁধে উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে তাকিয়ে দেখি সোনালী চেয়ারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমার কাজে বাঁধা পড়লে এমনিতেই বিরক্ত হই তবে কেন জানি না তার প্রতি আমি বিরক্ত হতে পারি না। সোনালী ঝুঁকে ল্যাপটপের স্ক্রীনে তাকিয়ে বলল, 'কি লিখছো এতো মনোযোগ দিয়ে? নতুন গল্প?'
'হুম সামনে ঈদ উপলক্ষে 'চলন্তিকা'র ঈদ সংখ্যায় গল্প চাইছে খুব জোর করেই। আরে ভাই! আমি হিন্দু মানুষ আর তোরা কিনা আমাকেই বলিস ঈদের জন্যে গল্প দিতে!! অবাক হই আসলে, দেশে কি মুসলিম রাইটারের আকাল পড়েছে নাকি যে শেষ পর্যন্ত সৌমেন আচার্য্যের মতো লেখকের কাছ থেকে গল্প নিবি!!'
সোনালী বলল, 'সৌম্য, তুমি কিন্তু ফেলনা না এটা ভালো করেই জানো। তোমার লেখা কতটা জনপ্রিয় চিন্তা করো, তাই তোমার লেখা নিয়ে ওরা পত্রিকার কাটতি বাড়াতে চায়। আচ্ছা এখন বাদ দেও সেসব, ঘুমোতে হবে অনেক রাত হয়েছে, ঘুম পেয়েছে, আমাকে আবার বেশি রাত পর্যন্ত জাগিয়ে রেখো না। তোমার জন্যে একটা দিনও আগে আগে ঘুমোতে পারি না।'
'আসছি বাবা যাও! খালি প্যানপ্যান। মাছির মতো অবস্থা।'
সোনালী যেতে যেতে বলছে চিত্কার করে, 'হু হু মাছিই তো, তবুও তো মাছিটাকেই....'
বাকীটুকু শোনার ইচ্ছা নেই তাই আর কান দিলাম না। মন ডুবিয়ে দিলাম লেখায়।
সোনালীর সাথে আমার পরিচয়ের সময়কার কোন একটা ঘটনা কি এই গল্পে গল্পের ছলে ঢুকিয়ে দেব? তা ভাবতে ভাবতেই বেশ কিছু সময় পেরিয়ে গেল। অবশেষে সোনালীকে নীলার জায়গায় বসিয়ে শান্তনু আর নীলার পরিচয় পর্ব হিসেবে রবীন্দ্র কলাভবনের সামনে আমার আর সোনালীর প্রথম কথোপকথনটা লেখতে শুরু করলাম। লেখকেরা তো আর সবকিছু কল্পনা থেকেই সবসময় নেয় না, বাস্তবের বিভিন্ন সত্যঘটনাও মিথ্যা গল্পে ঢুকিয়ে দেয়।
নাহ কেন জানি না মনে হচ্ছে ঐ কথোপকথন এখানে খাটবে না। বাদ! বাদ!! নতুন কিছু গল্পে ঢুকাতে হবে। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করতেছে, বিছানায় উঠে যেতে হবে কিন্তু পারতেছি না, টেবিলে ঘুমিয়ে পড়াটাই ভালো হবে। ইচ্ছে হচ্ছে না উঠে গিয়ে সোনালীর পাশে গিয়ে ঘুমাই। সে হয়তো কিছুক্ষণ আমার জন্যে অপেক্ষা করে ঘুমিয়ে পড়বে, এমনিতেই তার যে ঘুম!! ঘুমালে টেরই পায় না কাপড় জায়গায় ঠিকমতো আছে কিনা। ভাগ্যিস আমি তার স্বামী বলে।
সোনালীকথনঃ
"সৌম্য... এই সৌম্য!" সেই কখন থেকে এই ডাকগুলো তার কানে যাচ্ছে কিন্তু সে জবাবই দিচ্ছেনা। কী নিয়ে এত ব্যস্ত তা জানি না! একা বারান্দায় বসে কাঁহাতক ভালো লাগে কারো! আমাকে নাকি তার কষ্ট দিতেই মজা লাগে আর সেটা ভেবেই হয়তো সে আধঘন্টা আগে আসছি বলে এখনও আসছে না। উঁকি দিয়ে দেখি চেয়ারে বসে সামনে টেবিলে রাখা ল্যাপটপে গভীর মনযোগে কিছু একটা টাইপ করে চলছে। কৌতুহল হল। আমার সবকিছুই সৌম্য বলতে পারে, আমি কি করতে চাই বা না চাই, মনে মনে একাকী কিসব চিন্তা করি তা সব সে বুঝতে পারে, সবই ওর জানা। তার কাছে আমিই হচ্ছি পৃথিবীর একমাত্র নারী যে তার একেবারে মনের মতো।
ভাবছি লেখালেখি নিয়ে পড়ল নাতো আবার! এইতো সেদিন আমাকে খুশি করতে কথা দিয়েছিল কয়েকটা দিন লেখালেখি থেকে দূরে থাকবে। আমি নাকি মৃদু হেসেছিলাম তখন। এসবই তার ধারণা, আসলেই কি আমি খুশী হয়েছিলাম খুব?? আমি তার বিশ্রাম আর আমাকে একটু সময় দেওয়ার জন্যেই নাকি তাকে লেখালেখি আপাতত বন্ধ করতে বলেছিলাম। ভেবেছিলাম যখন তার অফিস ছুটি থাকবে তখন দুজন মিলে কোথাও বেড়াতে যাবো! তার প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হওয়া চোখজোড়া আমার মাঝে হাহাকার জন্মায়, নিজেকে আরেকটু দেখার। কিন্তু.....
"সৌম্য... এই সৌম্য!" আর না পেরে উঠে গেলাম ঠিক তার কাছে। পেছনে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম, ও আসলে কীসে ডুবে আছে। আমি পিছন দিক থেকে আসলেও সে ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে আমি আসছি। তবুও কাঁধে হাত রাখতেই বোকা চাহনিতে চমকে উঠার একটা ভান করলো। চমকে উঠার পরের ধাপ হিসেবে মুখে কপট বিরক্তির ভাব। সৌম্য বড্ড কাজপাগল, কাজে সামান্য ব্যাঘাত ঘটলেই প্রচন্ড বিরক্ত হয়। কিন্তু কোন এক বিচিত্র কারণে এই 'আমি'র উপর কখনোই বিরক্ত হয়না। হয়ত ভান করে মাঝে মাঝে বিরক্ত হওয়ার কিন্তু সত্যি সত্যি কখনোই হবেনা। ওর বিরক্তির ভানকে পাত্তা না দিয়ে ঝুঁকে ল্যাপটপের স্ক্রীণে তাকালাম।
"কী লেখতেছো এত মনযোগ দিয়ে? নতুন গল্প?"
আমার গলায় অভিযোগের সুর টের পেয়েই হয়ত ও সাফাই গাইতে শুরু করল।
"হুম... সামনে ঈদ উপলক্ষে চলন্তিকার ঈদ সংখ্যায় গল্প চাইছে, খুব জোর করেই। আরে ভাই আমি হিন্দু মানুষ আর তোরা কিনা আমাকে বলিস ঈদের জন্য গল্প দিতে? অবাক হই আসলে, দেশে কি মুসলিম রাইটারের আকাল পড়ছে নাকি যে, শেষ পর্যন্ত সৌমেন আচার্য্যের মত লেখকের কাছ থেকে গল্প নিবি!!!"
আমার রাগ কমাতে গিয়ে সে নিজেই রেগে যাচ্ছে। যেটা ওর জন্য মোটেই ভাল হবেনা। আর আমি তা হতে দিতে পারিনা! আচ্ছা আমি কি রাগ করেছি??
"সৌম্য, তুমি কিন্তু ফেলনা না এটা ভাল করেই জানো। তোমার লেখা কতটা জনপ্রিয়! চিন্তা করো, তাই তোমার লেখা নিয়ে ওরা পত্রিকার কাটতি বাড়াতে চায়। আচ্ছা, এখন বাদ দাও সেসব। ঘুমোতে হবে। অনেক রাত হয়েছে। ঘুম ও পেয়েছে। আমাকে আবার বেশী রাত পর্যন্ত জাগিয়ে রেখোনা। তোমার জন্য একটা দিন ও আগে আগে ঘুমাতে পারিনা।"
"আসছি বাবা, যাও! খালি প্যানপ্যান। মাছির মত অবস্থা।"
"হুঁ হুঁ মাছিইতো। তবু ও তো মাছিটাকেই ভালবাসো!"
চলে এলাম আবার বারান্দায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব। ওর কাজ শেষের অপেক্ষায়। ও না ঘুমালে আমি ও যে ঘুমাতে পারিনা! হাহাহা, অদ্ভূত আমাদের সম্পর্ক! অদ্ভূত আমাদের টান! একে অপর থেকেই সৃষ্টি!!
বেচারা অল্পতেই খুশি হয়ে যায়, এই এখন যেমন খুশিতে ঝলমল করছে একেবারে! কিন্তু চেপে রাখার চেষ্টা করছে তা। আর তাই ভুলভাল বকছে। মাছি নাকি প্যান প্যান করে! এটা নিঃসন্দেহে ভুল, আসলে আমার ভুল ধরিয়ে দেওয়ার কথাও না, তার কাছে যা ঠিক তা আমার কাছেও ঠিক।
আচ্ছা ও আমাকে এত ভালবাসে কেন? এতোটা বছর ধরে সে আমাকে একসাথে রেখেছে। তার সব সুখদুঃখ একসাথে ভাগাভাগি করে এসেছে আজ পর্যন্ত। আমাদের পরিচয়ের ঘটনা সৌম্যের মাথায় গেঁথে আছে, তার মস্তিষ্কে...
সৌম্য তখন রাজশাহী ভার্সিটি থেকে পাস করে বের হবে হবে করছে এমন ছাত্র। উশকো খুশকো চুলের ভাবুক এক তরুণ, আমি নাকি একদম কিশোরীই ছিলাম তখন, সবে তখন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি মাত্র। একদিন রবীন্দ্র কলাভবনের সামনের ঘেসো মাঠটাতে সে পা ছড়িয়ে বসে সে ভাবছিলো...
বৃষ্টিবিলাসে মত্ত একটা কিশোরী মেয়ে ধবধবে সাদা জামদানি, কালো ব্লাউজ, কপালে বড় একটা কালো টিপপরা। একহাতে সাদা-কালো চুড়ি, আরেক হাতে আর মাথায় বেলী ফুলের মালা, চুলগুলো খোলা, তবে ভিজে কিছু চুল মুখের সামনে এসে পড়েছে তার লাফালাফিতে। হাত দিয়ে চুলগুলো সরাতে যাবে।
''প্লীজ চুলটা মুখের সামনে থেকে সরিয়ে নিবেন না, ওতেই আপনাকে ভালো লাগছে।''
আমি নাকি অবাক হয়েছিলাম প্রচন্ড।"কী?"
"আমি... আমি ঠিক আপনার মতোই একজনকে ভাবছিলাম, তবে ভাবনাটা ঠিকমত হচ্ছিলো না। আর তখনই আপনি এসেছেন!"
বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে গেলে নাকি আমাকে আরও সুন্দর লাগে, আমাকে পরে সেদিন বলেছিলো। তখন কিছু না বলে সরে এসেছিলাম। ততক্ষণে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। হঠাত গলা খাঁকারির শব্দে চমকে তাকিয়ে দেখি নাকি সে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
"আমি সৌমেন... সৌম্য। আপনি?"
"সোনালী মেঘ।"
"মেঘ সোনালী হয়?"
"হয়তো! শেষ বিকেলের মেঘগুলো সোনালী হয়।"
"আপনার নাম সোনালী মেঘ?"
"নাহ! সোনালী। বাকিটা আপনাকে বিভ্রান্ত করতে বললাম!" আমি শব্দ করে তখন বুঝি হেসেছিলাম। তার বিভ্রান্ত চেহারা দেখে মজা পাচ্ছিলাম হয়তো। সেটা সৌম্যও তখন ধরতে পারে নি।
"হুমমম.. সোনালী?"
"বলে ফেলুন।"
"আমি কি আপনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে পারি?"
মানা করতে গিয়েও করি নি, "জ্বী পারেন। তবে একটা শর্ত!"
তাকে দেখে মনে হল ভড়কে গেছে, "কী শর্ত?"
"আপনাকে আমার হাত ধরে ভিজতে হবে।" বলেই বাঁ হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।"কই? ধরুন!" সৌম্য আমার বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা ধরল খুব ধীরে আলতো করে। আর ধরেই রইলো অনেকক্ষণ। কেমন যেন বোকা বোকা দৃষ্টিতে দেখছিলো। আর হ্যাঁ, তখনই। ঠিক তখনই নাকি আমি এই বোকাসোকা বুদ্ধু ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেলাম খুব ভয়ংকরভাবে!!! সেবার বৃষ্টিতে ভিজে আমার গাঁ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছিলো আর তখন তাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করতো। আমার সাথে তার পরিচয় প্রায় প্রতিটা লেখায়ই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ঢুকায় এবং তা থেকেই আমি জানি।
সৌম্যকথনঃ
তীক্ষ্ন আওয়াজে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে, কে জানি বারবার ডোরবেল বাজাচ্ছে। ডোরবেলের আওয়াজে যতই সমধুর পাখির ডাক হোক না কেন আমার কাছে তা সবসময় কর্কশ মনে হয়। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম যে আমি কোথায় আছি, হুম, আমি আমার লেখার টেবিলেই ঘুমিয়ে ছিলাম এতোক্ষণ। কতক্ষণ হবে? রাতে ঘুমানোর কথা ছিলো কিন্তু এখন তো দুপুর পেরিয়ে বিকেল। এতোটা সময় ঘুমালাম অবাক লাগে, খুব সম্ভবত ডাক্তারের দেয়া ঘুমের ঔষধগুলো কাজে লাগছে। ডোরবেল বেজেই যাচ্ছে, বিরক্তি লাগছে কেউ গিয়ে উঠে খুলে দেয় না কেন দরজা। 'সোনালী, সোনালী' বারদুয়েক ডাকার পরও তার কোন শব্দ নেই। হয়তো আমাকে ঘুমে রেখে সে বেরিয়ে পড়েছে কোন কাজে। অগত্যা উঠে যেতে হলো আমাকে, দরজা খুলে দেখি আমার ছোট বোন শর্মিলী ও তার স্বামী অজিত। অজিত আমার কলিগ ছিলো, আমার তিন বছরের জুনিয়র, পাশের টেবিলেই কাজ করতো। ছেলেটাকে অনেক ভালো লেগেছিলো তাই শর্মিলীর সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্যে তখন বাবা মার সাথে আলাপ করি।
তাদেরকে দেখে চোখ কচলে ঠিক করলাম, লজ্জিত ভঙ্গিতে বললাম, 'আসলে সোনালী কোথায় জানি চলে গেছে ঘুম থেকে উঠে। আমি একাই বাসায়। আয় তোরা ভিতরে।'
শর্মিলী কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘর গোছগাছ করা শুরু করে দিলো। মেয়ে মানুষের এই এক সমস্যা, সারাদিন কাজ আর কাজ, কাজ ছাড়া কিছুই বুঝে না। শর্মিলী কাজ করছে এদিকে অজিত আমার টেবিলের আশপাশ বসে কাগজপত্র খুঁটে খুঁটে দেখছে। অজিত জিজ্ঞাসা করলো, 'দাদা নতুন কিছু লেখালেখি করছেন নাকি?'
আমি মাথা ঝেঁকে উত্তর দিলাম, 'হুম সামনে ঈদের জন্যে, কিন্তু লেখা শেষ করতে পারছি না শুধু ঘুম পায়, ডাক্তার কি যে এক ঔষধ দিয়েছে!'
'ঔষধে তো কাজ করছে বলে মনে হয় না।'
'আরে না প্রচুর ঘুম আসে, বাইরেও যেতে পারি না। চাকরীটা চলে গেল।'
'দাদা আপনি কি মনে করেন আসলেই সোনালী নামের কেউ আপনার স্ত্রী??'
'আরে কি আজব! আমার স্ত্রীকে নিয়ে আমার সন্দেহ থাকবে কেন! আমরা একসাথে আছি এতটা বছর ধরে!'
'দাদা গত তিনবছর ধরে আপনি এ বাসায় আছেন পুরোপুরি একা। আর আপনি কখনও বিয়ে করেন নি। আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো কিন্তু তখন আপনি বিয়ের আসরে বলেছিলেন আপনি বিবাহিত এবং সেইসাথে আপনার বিয়ে ভেঙ্গে যায় আর সেই মেয়ে নিজেকে অলক্ষী ভেবে গলায় দড়ি দেয়।'
'কি যা তা বলছো এসব! একটাও সত্যি না।'
'আপনে যা ভাবছেন তা সত্য না। আমি যা বলছি তাইই সত্য। আপনি মিথ্যে কল্পনায় আছেন। এখনও সময় আছে দাদা আপনি আপনার মাথা থেকে এসব বের না করলে কেউ তা কখনও বের করতে পারবে না।'
'অজিত!! আর একটা কথাও না। আমাকে তোমার জ্ঞান দিতে আসতে হবে না কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক, অন্তত আমি তা বুঝি।'
অজিত আমার সামনে থেকে উঠে চলে গেল। আমার মেজাজটাই খারাপ হয়ে আছে, মেজাজ খারাপটা আস্তে আস্তে মন খারাপের দিকে যাচ্ছে।
আমি বারান্দার রকিং চেয়ারে অনেকক্ষণ ধরে দোল খাচ্ছি আর একটা কথাই ভাবছি, স্ত্রীরা বিয়ের পর খুবই স্বামীভক্ত হয়ে যায় নাকি ভান করে ভক্তি দেখানোর। এই যেমন অজিত আমার সাথে রাগারাগি করে চলে গেল তখন শর্মিলীও চলে গেল। শর্মিলীর চোখ দেখে মনে হচ্ছিলো না যে সে যেতে চাইছে তখন কিন্তু বাধ্য হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা, বিয়ের পর কি একে অপরের সাথে বাধ্যবাধকতা চলে আসে? আমাদের মধ্যে তো নেই।
খুব কাছেই পায়ের শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি সোনালী, এসেই বারান্দার গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে নিচে কি যেন দেখছে। আমি সোনালীকে কাছে ডাকলাম, সে ওখানে দাঁড়িয়েই বলল, 'কি বলবে বলো?'
'আচ্ছা সবাই যে বলে তুমি আমার কল্পনা, এটা কি সত্যি?'
'সত্যি মিথ্যা আমি জানি না তবে আমিও এটা জানি যে সবাই এসব বলে।'
'সোনালী তুমি আমাকে ভালোবাসো?'
'হুম'
'আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?'
'উহু, তবে আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়া হয়তো তোমার উচিত সৌম্য, সবাই বলতেছে তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।'
আমার খুব কান্না পাচ্ছে, কেন জানি না বুকের ভিতর কিসের একটা শূণ্যতা অনুভব করছি। এবার সোনালী ডাকতেই কাছে চলে এলো, জড়িয়ে ধরে রাখলাম। সোনালীও আমার বুকে ফোঁসফোঁস করে কাঁদছে। আমি হাত দিয়ে তার থুতনীতে ধরে মুখ উচিয়ে বাম হাত দিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বললাম, 'আমি তোমাকে ছেড়ে কখনও যাবো না।'
সোনালী কান্না থামিয়ে বলল, 'আমি জানি সৌম্য তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না কখনও।'
সোনালীকথনঃ
একটু শব্দ করেই বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম তার পিছনে, তারপর বারান্দার গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে নিচু হয়ে এমনি দেখতে লাগলাম। সৌম্য তার কাছে ডাকল, আমি জায়গায় দাঁড়িয়েই বললাম, 'কি বলবে বলো?'
'আচ্ছা সবাই যে বলে তুমি আমার কল্পনা, এটা কি সত্যি?'
'সত্যি মিথ্যা আমি জানি না তবে আমিও এটা জানি যে সবাই এসব বলে।'
'সোনালী তুমি আমাকে ভালোবাসো?'
'হুম'
'আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?'
'উহু, তবে আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়া হয়তো তোমার উচিত সৌম্য, সবাই বলতেছে তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।'
তার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো এখনই কেঁদে দিবে আমাকে ভবিষ্যতে হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায়। এতোটা ভালোবাসে কেন আমার এই সত্ত্বাকে! আরেকবার ডাকতেই তার খুব কাছাকাছি গেলাম, জড়িয়ে ধরে রাখলাম। সেও আমাকে শক্ত করে বুকে ধরে রেখেছে যেন আমাকে কখনও চলে যেতে দিবে না। তার ভালবাসা থেকে আমি যদি বঞ্চিত হই! আমার চোখ বেয়ে অজান্তেই অশ্রু বেরিয়ে আসতে থাকল, তার বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে ফোঁসফোঁস করে কাঁদতে লাগলাম। সৌম্য তার হাত দিয়ে থুতনীতে ধরে আমার মুখ উচিয়ে বাম হাত দিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বলল, 'আমি তোমাকে ছেড়ে কখনও যাবো না।'
আমি কান্না থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে বললাম, 'আমি জানি সৌম্য তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না কখনও।'
[সমাপ্ত]
২০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩১
আকিব আরিয়ান বলেছেন: হাহাহা
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে মে, ২০১৪ ভোর ৫:৩২
অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: এতো কম বার পঠিত! আবার কোন মন্তব্যও নাই!! আমি হতাশ!!!
যা হোক, গল্পটা পড়ে রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের কথা মনে পরলো।
অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে,
শেষ হইয়াও হইলো না শেষ।