![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত্রির নির্জনতায় নিঃসঙ্গ কেঁদে কেঁদে, একদিন হয়তো তুই অজান্তেই মরে যাবি, তবুও তুই জানবি না পাষাণ এ বুকে কতটুকু ভালবাসা তোর জন্যে জমা রাখি।
বাচ্চা পেটে আসার ছমাস পরেই আদ্রিয়ানের সাথে বিয়ে হয়ে যায় বেশ জাঁকজমকভাবেই রোজালিনের এনন শহরের এক চার্চে। এনন শহরে বিয়ে হলেও তারা চলে আসে ২৫ কিমি দূরের সিনকো সালতোসে বসবাসের জন্যে। সিনকো সালতোস আর্জেন্টিনার রিও নেগ্রো প্রদেশের একটা শহর, যা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী নিউক্যুইনের পূর্ব পাশে পেল্লেগ্রিনি লেকের পার্শ্ববর্তী। লেকের অদূরেই তারা একটা পতিত ডুপ্লেক্স বাড়ি কিনে যার উপরের তলা পুরোটা জুড়ে একটাই বেডরুম এটাচ বাথসহ, নিচতলায় লাইব্রেরী, বসার ঘর, কিচেন এবং একটা স্টোর রুম। বাড়ির সামনের দিকে বিশাল ঘাসে ঢাকা লন এবং পিছনে বিভিন্ন মৌসুমী গাছগাছড়ার বাগান। বেশ ছিমছিম তবে অনেক সুন্দর একটা বাড়ি, আশেপাশে বাড়িঘর নেই, যা আছে তা একটু দূরেই, নির্জন ও শান্ত একটা পরিবেশ। রোজালিনের স্বপ্ন ছিল অনেকদিনের এরকম একটা বাড়িতে সে বিয়ের পর থাকবে। আদ্রিয়ানের সাথে তার পরিচয় হয় তিন বছর আগে, তারপর চুটিয়ে প্রেম করে, একটা সময় পর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে তারপর শুভ একদিন দেখে আদ্রিয়ান তাকে একটা রিং পরিয়ে দেয়। বর্তমানে সুখীই আছে আদ্রিয়ানকে নিয়ে, আদ্রিয়ান তাকে অনেক ভালো বাসে।
বাসায় আসার পর সবকিছু গোছগাছ করতে প্রায় সপ্তাহখানেক লেগে যায় রোজালিনের, অসুস্থ শরীর নিয়ে তেমন একটা কাজ করতে পারে না আদ্রিয়ান তাকে সাহায্য করে। দিনের বেলা প্রায় একাই থাকে, এসময় আদ্রিয়ান চলে যায় এনন শহরে কাজে, ফিরে আসে ঠিক সন্ধ্যার আগে আগে। সন্ধ্যার পর খেয়েদেয়ে তারা টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে, কোনদিন চলে রাতভর শারীরিক উত্তেজনার খেলা।
দিনের বেলা ঘরে খুঁটিনাটি কাজ করে রোজালিন, বাসার পিছনের বাগানেও অনেকটা সময় ব্যয় করে। সেদিন বাগান পরিষ্কার করতে গিয়ে আবিষ্কার করে বড় একটা কূয়া, ঠিক বাগানের পূর্ব কোণায়। প্রায় দশ ফুট ব্যাসার্ধের বড় একটা কূয়া, নিচে পানি একেবারে কম, তলদেশ দেখা যায় যেখানে কয়েকটা ভাঙ্গা কাঁচ আর ছেঁড়া জুতো আছে। এত বড় কূয়া দেখে তার মাথায় প্রশ্ন আসলো, এ বাড়িতে এত বড় কূয়া কেন? এটাকে কি পূর্বে বাগানের গাছে পানি দেওয়ার জন্যে ব্যবহার করা হত? না গোসল করার কাজে ব্যবহার করা হত? সেসব চিন্তা বাদ দিয়ে অন্যকাজে মগ্ন হলো তখন সে। কাজকর্ম শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল, এরপর রাতের খাবারের পর আদ্রিয়ানের সাথে বিছানায় ঘুমোতে গেল। ঐ রাত ছিল শনিবার রাত, রোববার ছুটির দিন, ছুটির আগের রাতে আদ্রিয়ান কামুক থাকে তাকে বিছানায় পাবার জন্যে।
ঐ রাতে উদ্দাম শারীরিক রতিক্রিয়ার পর দুজনেই ঘুমোতে গেল, শেষ রাতের দিকে রোজালিনের ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে শুনতে পেল কূয়ায় কিছু একটা ঝপ করে পড়ার শব্দ এবং সাথে সাথে একজন মানুষের আর্তনাদের আওয়াজ, 'আহ্হ্হ্হহ্হ'।
সে নিজের কানের ভুল ভাবতে লাগলো, হুট করে ঘুম ভাঙ্গায় তার অডিটরি হ্যালুসিনেশন হয়েছে ভাবল, ব্যাপারটা পাত্তা দিল না।
পরদিন সকালে কূয়ার কাছে গিয়ে দেখলো, নাহ কূয়া তো কিছু নেইই। পানি একদম তলানিতে তাও একেবারে বরফের কাছাকাছি পানি, এতে কেউ ঝাপিয়ে পড়লে শব্দও হবে না এবং চোর জাতীয় কেউ পড়লে তাকে দেখা যেত। তাছাড়া আশেপাশে আর বাড়িঘর নেই যে প্রতিবেশীদের জিজ্ঞেস করবে, ব্যাপারটা এড়িয়ে গেল।
বিশাল একটা দালানের সামনে দাঁড়ানো রোজালিন, দালান লোহিত বর্ণের, দালানের দেয়াল থেকেই লাল রঙের আলোকরশ্মি বিচ্ছুরিত হচ্ছে যার কারনে অন্ধকারের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। এই দালানটি গোল এবং এর বিশেষ একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি সাপের মতো পেঁচানো, সিঁড়ি বলতে কিছু নেই কিন্তু বারান্দাটাই প্যাঁচিয়ে একেবারে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত উঠে গেছে সিঁড়ির মতো করে। রোজালিন দাঁড়িয়ে থেকেই দালানটি দেখছে।
পরদিন রাতে আবার ঘুম ভেঙ্গে গেল রোজালিনের এবং ঠিক আগের রাতের মতো কূয়োতে উঁচু থেকে কিছু পড়ার আওয়াজ পেল, ঠিক এরই সাথে সাথে 'আহ্হ্হ্হ্হহ' একটা আর্তনাদ শুনলো। তার ঘুম ভেঙ্গে গেল, চিন্তা করতে লাগলো, তবে কি এটা হ্যালুসিনেশন নয়? তাহলে এটা কি? পরপর দুইদিন রাতে একই আওয়াজ কেন? আগে তো শুনি নি? রোজালিন কিছুটা ভয় পেল, নিজেকে বুঝাতে চেষ্টা করলো এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি অনেক সাহসী একটা মেয়ে যে কিনা চৌদ্দ বছর বয়সেই একা রাতে সিমেট্রীর মধ্য দিয়ে হেঁটে এসেছি।
পরদিন সকালে আদ্রিয়ান ঘুম থেকে উঠে তাকে বিছানায় পেল না, অনেক খোঁজাখুঁজির পর পেল বিছানা আর দেয়ালের ফাঁকে সে কম্বল জড়িয়ে শুয়ে আছে, এভাবে শুয়ে থাকার কোন কারণ খুঁজে বের করতে পারল না আদ্রিয়ান। অনেক ডাকাডাকির পর শরীর ধরে তাকে ঝাঁকি দিতেই চোখ মেলে প্রথমেই রোজালিন জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা তুমি রাতের বেলা কূয়োতে কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পাও?'
আদ্রিয়ান এহেন প্রশ্ন শুনে ভ্রু বাঁকিয়ে বলল, 'না তো কিন্তু কেন?'
রোজালিন মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, 'নাহ এমনি।'
আদ্রিয়ান বলল, 'এই শোনো আজ আমি কাজে যাবো না, পেল্লেগ্রিনিতে ওয়াটার ফেস্টিভ্যালে যাবো আমরা। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।'
রোজালিন উঠে গেল তারপর আস্তে আস্তে বাথরুমের দিকে প্রাতঃকর্ম সারতে গেল।
সিনকো সালতোসিস শহরে একটা উত্সবের নাম হচ্ছে প্রভিন্সিয়াল ওয়াটার ফেস্টিভ্যাল কিংবা প্রাদেশিক পানি উত্সব, যা পেল্লেগ্রিনি লেকে হয়ে থাকে ফেব্রুয়ারি মাসে, ১৯৭৬ সাল থেকে এটা হয়ে আসছে, এতে ঐ এলাকার অধিবাসী ছাড়াও বাহিরের অনেক পর্যটক অংশগ্রহন করে থাকে। এখানে একটা জায়গার নাম হচ্ছে বাজো নেগ্রো, এখানে পেল্লেগ্রিনি নিয়ে অনেক রহস্য রয়েছে। কথিত আছে যে, একটা বাচ্চা প্রায় ৫০ বছর পূর্বে এই লেকে ডুবে মারা যায় এবং এখনও এর আত্না ঐখানে আছে। আরেকটা রহস্য আছে যে, একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ের পুরোপুরি তাজা লাশ পাওয়া যায় স্থানীয় সিমেট্রী বা কবরস্থানে যে কিনা ৩০'এর দশকে মারা গিয়েছিলো। এবং এখানে নাকি অনেক অদৃশ্য শক্তির প্রাদূর্ভাব দেখা যায় পেল্লেগ্রিনি লেকের মাঝে।
সারাদিন ওয়াটার ফেস্টিভ্যালে সবার সাথে মিলে অনেক আনন্দ উল্লাস করল তারা দুজনে। রোজালিন একটা হলদে বিকিনি পরা ছিল এবং আদ্রিয়ান শুধু একটা থ্রী কোয়ার্টার শর্টস। পানিতে ভিজেটিজে দুজনের একাকার অবস্থা, লেকের পানিতে কোমর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আদ্রিয়ান তার পেটে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। সে মুচকি মুচকি হাসছিলো, আদ্রিয়ান জিজ্ঞেস করল, 'আমাদের বাচ্চাটা তো মেয়ে হবে, তাই না? আল্ট্রাসনোগ্রাফে তাইই তো দেখা গেছে।'
রোজালিন গভীর মমতায় মাথা নাড়ে। আদ্রিয়ান সপ্রতিভ হয়ে জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা মেয়ের নাম কি রাখবে?'
'অগাস্টিনা?'
'নাহ, অগাস্টিনা না আরিয়ানা।'
'আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাই বলো।'
হাত দিয়ে রোজালিনের ভিজে চুল ঘাড় থেকে সরিয়ে পিঠে একটা চুমু দিলো আদ্রিয়ান। রোজালিন তার মুখটা পিছনে বাড়িয়ে দিল, আদ্রিয়ান আস্তে করে তার ঠোঁটটা নিজের ঠোঁটে পুরে নিল।
রোজালিন সেই গোলাকার দালানের সামনে দাঁড়ানো, চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার তবুও দালানের আলোতে কিছুটা অন্ধকার প্রশমিত। সে আস্তে আস্তে তার পা বাড়ালো দালানের ভিতরে প্রবেশ করার জন্যে, বারান্দাটা নিচ থেকে সাপের মতো প্যাঁচিয়ে উপরে উঠে গেছে সিঁড়ির মতো করে। বারান্দার ডানপাশে প্রতিটা কক্ষ এই দালানের, রোজালিন বুঝতে পারল এটা একটা ব্রোথেল বা পতিতালয়। প্রতিটা কক্ষের ভিতর থেকে শীতকারের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এখানে একেবারে নিচের কক্ষে আছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পতিতাটি, তার পরের কক্ষে একটু কম আকর্ষণীয় পতিতা, এভাবে নিচ থেকে উপরে প্রতিটা কক্ষে অনিন্দ্য সুন্দরী পতিতা থেকে ক্রমান্বয়ে নিকৃষ্ট পতিতা আছে। নিকৃষ্ট, কদাকার পতিতার কষ্ট একেবারে উপরের কক্ষে। এখানে যে খদ্দের নির্দিষ্ট সময়ে সবার আগে আসবে সে পাবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পতিতাটিকে, আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে ক্রমানুসারে প্রত্যেক খদ্দের সুন্দরী ক্রমানুযায়ী পতিতা পায়। রোজালিন আস্তে আস্তে নিচ থেকে উপরে উঠতে থাকল, সে খেয়াল করে দেখলো প্রায় প্রতিটা দরজাই ভিতর থেকে আটকানো। এভাবে উঠতে উঠতে সে একেবারে উপরের তলার কক্ষের সামনে পৌঁছে যায় এবং দেখে যে পুরো পতিতালয়ে শুধু ঐ কক্ষেরই দরজা খোলা, তার মানে এতে কোন খদ্দের এখনও আসে নি এবং সেই এর খদ্দের।
পর পর তৃতীয় রাত, রোজালিনের ঘুম ভেঙ্গে গেল এবং সে শুনতে পেল কে যেন উঁচু থেকে কূয়োতে লাফ দেওয়ার শব্দ, লাফ দেওয়ার পরপরই 'আহহ্হ্হ্হ্হ' জাতীয় আর্তনাদ। সে ভয় পেয়ে গেল খুব, আদ্রিয়ানকে জাগিয়ে তুলল ডেকে। ঘুম ঘুম চোখে আদ্রিয়ান উঠে বসে জিজ্ঞেস করল, 'কি হয়েছে?'
'শুনতে পেয়েছো কোন আওয়াজ? কূয়োতে ভারি কিছু পড়ার আওয়াজ?'
'নাহ তো, আর ধুররর। তুমি সারাদিনের ফেস্টিভ্যাল শেষে খানিকটা অবসন্ন, তাই এসব শুনতে পাচ্ছো।'
'নাহ আদ্রিয়ান, আমি ঠিক শুনেছি।'
আদ্রিয়ান আবার ঘুমিয়ে যেতে যেতে বলল, 'কালকে একবার ডাক্তারের কাছে তোমাকে নিয়ে চেকআপ করিয়ে নিয়ে আসবো, ঠিক আছে? শুয়ে পড়ো।'
রোজালিন শুয়ে পড়ল ঠিকই কিন্তু তার ঘুম আসলো না।
পরদিন সকালে রোজালিনকে নিয়ে নিকটস্থ কমিউনিটি হসপিটালে গেলো আদ্রিয়ান। মহিলা ডাক্তারটি তাকে সব ধরনের চেকআপ শেষে জিজ্ঞেস করলেন, 'তা আপনার সমস্যাটা কি খুলে বলুন।'
রোজালিন কিছুটা ইতস্তত করছিল, তারপর সংকোচ ঝেড়ে বলল, 'আমি ইদানীং প্রতিরাতেই বাসার পিছনে কুয়োতে কেউ একজনের লাফিয়ে পড়ার মতো শব্দ শুনি এবং সে আর্তনাদ করে উঠে।'
ডাক্তার সব বিস্তারিত জেনে বললেন, 'কূয়োতে কেউ পড়লেও দরজা জানালা বদ্ধঘরে আওয়াজ আসার কথা না এত দূর থেকে। ব্যাপারটা অসংগতিপূর্ণ, আপনি সারাদিন বাসায় একা থাকেন তার উপর আবার এখানে নতুনই। তাই একটা অজানা ভয় কাজ করে আর কিছু না। ঝেড়ে ফেলুন ব্যাপারটা মাথা থেকে।'
রোজালিন মিনমিন করে বলল, 'আমি প্রায় প্রতি রাতেই এখন একটা স্বপ্ন দেখি, একটা গোলাকার লাল দালান, এটা একটা পতিতালয়। স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গার পরই ঐ আওয়াজ শুনি।'
রোজালিন স্বপ্নের সব কিছু খুলে বলল, তা শুনে ডাক্তার বললেন, 'প্রেগন্যান্ট অবস্থায় মায়েরা এরকম উদ্ভট স্বপ্ন দেখেই, এটা কোন ব্যাপার না।'
তারপর ডাক্তার তাকে কিছু কড়া ঘুমের ঔষধ এবং শরীরে পানি এসে পড়ার ভয়ে প্রত্যেকদিন সকালে প্রাতঃভ্রমন করার উপদেশ দিলেন। রোজালিনকে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করতে বারণ করলেন।
রোজালিন সেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এবং সাথে সাথে দরজাটা হুট করে খুলে গেল। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সে হেঁটে ভিতরে প্রবেশ করল, হঠাত্ করে চোখ পড়লে জানালার দিকে, সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এক অপরূপ সুন্দরী নগ্ন রমণী। রোজালিন ভেবে পেল না কেন এই পতিতাকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কদাকার পতিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো, সে তো এখানকার উত্কৃষ্ট পতিতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে। ঠিক তখনই সে আবিষ্কার করল, কেন সে পতিতাকে কদাকার বলে গণ্য করা হয়। অদ্ভূত সে নারী যারা স্তন ও নিতম্ব একই পাশে; পিঠ, যোনি ও হাঁটু বিপরীত পাশে। একটা স্বাভাবিক মানুষকে যদি মাথায় আর পায়ে ধরে একেবারে কাপড় নিংড়ে ফেলার মতো মুচড়িয়ে দেওয়া হয় যেমন হবে ঠিক তেমনই ঐ পতিতা। মনে হয় তাকে তার কোমরে ধরে একেবারে ১৮০ ডিগ্রি কোণে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে তবুও তাকে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না, অত্যন্ত মোহনীয় ও যৌন আকর্ষক মনে হচ্ছে।
দরজা পেরিয়ে কখন যে সে ঐ পতিতার কাছে গিয়েছে টেরও পেল না। অদ্ভূত সেই পতিতাটি তাকে জড়িয়ে ধরল, একটু পরে নিজেকে আবিষ্কার করলো যে সে নগ্ন অবস্থায় ঐ পতিতার সাথে নরম বিছানাটিতে শুয়ে আছে। দুজনে সমকামী যৌনসংসর্গে মেতে উঠলো, রোজালিনে নিজেকে হারিয়ে ফেলল ঐ রমণীর দেহে।
ঘুম থেকে কেঁপে জেগে উঠল রোজালিন, চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সকাল হয়ে গেছে, তার পাশে আদ্রিয়ান নেই। হাতড়িয়ে বেডসাইড টেবিল থেকে ঘড়ি নিয়ে দেখে সকাল পেরিয়ে প্রায় দুপুর, এতক্ষণে আদ্রিয়ান হয়ত এনন শহরে কাজে চলে গেছে। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে প্রাতঃকর্ম সেরে নিচে নামল। ঘরের ভিতর বসে থাকতে থাকতে এ গুমোট পরিবেশ অসহ্য লাগছে তার, বাইরে থেকে একা ঘুরে আসা যায় এতে ডাক্তারের পরামর্শও মানা হলো।
বাইরে অনেকক্ষণ ঘুরোঘুরি করল সে, একা একা রাস্তায় হাঁটলো, হাঁটতে হাঁটতে একেবারে নিউক্যুইন নদীর পাড়ে চলে গিয়েছিল। নদীর পাড়ে এসে তার মন ভালো হয়ে যায়, অসংলগ্ন স্বপ্ন আর ক্লান্তি যেন নিমেষেই কেটে গেল। নদীর পানিতে পা ভিজিয়ে বসে থাকলো দূরের ড্যামের দিকে তাকিয়ে। হঠাত্ করে তার মনে হলো, সে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ। আদ্রিয়ানের মতো একটা যত্নশীল স্বামী, বিশাল একটা বাড়ি আর অনাগত সন্তান এবং এ বিশাল নদী। এ রকম যার আছে সে কি সুখী না হয়ে পারে। নদীর পাড়ে অনেকক্ষণ বেড়িয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হল, পথিমধ্যে আশেপাশের বাড়িঘর, পীচ কার্পেটিং রাস্তা এবং পরিকল্পনামাফিক সাজানো শহর ব্যবস্থা দেখতে লাগলো। ঠিক তখনই সিদ্ধান্ত নিল যে সে কখনও সিনকো সালতোস ছেড়ে অন্য শহরে যাবে না।
দীর্ঘসময় সম্ভোগের পর পরিতৃপ্ত রোজালিন বেরিয়ে আসছে ঐ পতিতার কক্ষ থেকে, বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। আবার ফিরে তাকালো দরজার দিকে, দরজা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেল। আস্তে আস্তে প্যাঁচানো বারান্দা দিয়ে নিচে নামতে লাগলো সে, হঠাত্ করে কানে আসতে লাগল পানিতে ঝপাং করে পড়ার আওয়াজ এবং সাথে সাথে 'আহ্হ্হ্হ্হ' জাতীয় আর্তনাদ। বারান্দা থেকে ঝুকে নিচের দিকে তাকাল, বিশাল গোলাকার এক কুয়ো সেটা, কুয়োর পরিধি চারদিকে এক দালানটি ঘরে উঠেছে। যেসব পতিতারা খদ্দেরদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি তাদেরকে কুয়োতে ফেলে দেয়া হয়, রোজালিন দ্রুত উপরের দিকে তাকাল, সে যে কয়টা জায়গা পেরিয়ে নিচে এসেছে তা বর্তমানে কাঠের সিঁড়ির মতো ধাপ হয়ে গেছে এবং ধাপগুলো দ্রুতগতিতে নিজ অক্ষে ঘুরছে। ভয়ে চিত্কার করে উঠল সে।
চিত্কার করে ঘুম ভাঙ্গলো রোজালিনের, আদ্রিয়ানও জেগে উঠেছে, 'কি হয়েছে?'
সে কোন উত্তর না দিয়ে আদ্রিয়ানের বুকে মুখ গুজে কাঁদতে লাগল।
রোজালিন পার্কিং লট পেরিয়ে মাত্রই রাস্তায় উঠলো, একেবারে খালি রাস্তা, ভোরের রাস্তাগুলো একেবারে খালিই থাকে, মাঝেমধ্যে দুয়েকটা মালবাহী লরি যায়। রাস্তায় কয়েকটা ছেলে বাইসাইকেল দিয়ে স্টান্ট করছে, এদের মধ্যে দুজন একটু দ্রুতগতিতে সামনে গেল। রোজালিন দেখলো অপরপাশ থেকে একটা বড় লরি আসছে এবং চোখের পলকে ছেলে দুটো একই সাতে ক্রমানুযায়ী লরির ডানপাশের সামনের ও পিছনের চাকার নিচে চাপা পড়ল। লরি তাদের পিস্ট করে একেবারে থেঁতলে চলে গেল।
ঘুম ভেঙ্গে গেল রোজালিনের, হাতড়ে বেডসাইড টেবিল থেকে পানির বোতল নিয়ে গলায় ঢালল। সকাল হয়ে গেছে, আদ্রিয়ান তখনই নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে, ঘুমন্ত আদ্রিয়ানকে দেখে তার মন ফুরফুরে হয়ে গেল। বিছানা থেকে নেমে প্রাতঃকর্ম সেরে কফি বানাল দু মগ, তারপর বিছানায় এসে আদ্রিয়ানের পাশে বসল। তার ঘুমন্ত দুচোখে চুমু দিতেই সে জেগে উঠল, জড়িয়ে ধরে একটা লম্বা চুমু খেল রোজালিন, ব্রেকফাস্ট কিস।
আদ্রিয়ানকে সাথে নিয়েই সকালে হাঁটতে বের হলো সে, দুজন পাশাপাশি হাঁটছে, আদ্রিয়ানের বাম বাহু ডান হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে সে। হঠাত্ তার চোখে পড়লো কয়েকটা ছেলে সাইকেলে স্টান্ট করতে করতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ঠিক সে সময়ই একেবারে রাতে দেখা স্বপ্নের মতো একটা বড় লরি এগিয়ে আসছে। ছেলেদুটো ভালোই চালিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু লরির ডানপাশের সামন ও পিছনের চাকায় একই সাথে চাপা পড়ল। 'ঘট' করে একটা বিকট আওয়াজ হলো হাড় আর সাইকেলের লোহা গুড়িয়ে যাওয়ার। রোজালিন অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগমূহুর্তে দেখল লরি সরে গেছে ছেলেদুটোর উপর থেকে আর তাদের মাথা ছিটকে শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেল ঠিক যেভাবে বলির পশুর হয়, ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়তে থাকা দেখে আর দাঁড়াতে পারল না সে। আদ্রিয়ান তাকে সাথে সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
আদ্রিয়ান হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে বসে আছে, তার মাথা ভনভন করে ঘুরছে, রোজালিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ডাক্তারদের অনেক চেষ্টার পর তার সংজ্ঞা ফিরানো সম্ভব হল কিন্তু জটিলতা দেখা দিল আরেকটা। আল্ট্রাসনোগ্রাফের রিপোর্টে নাকি বাচ্চার অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে, এছাড়া বাচ্চা গর্ভাশয়ে উল্টো হয়ে আছে, জরায়ুমুখের দিকে পা চলে এসেছে। ডাক্তাররা জানিয়েছে দ্রুত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাচ্চা গর্ভ থেকে অপসারন করতে হবে নয়ত বাচ্চা ও মায়ের ক্ষতি হতে পারে। আদ্রিয়ান অস্ত্রোপচারের আগে হাসপাতালের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে উত্কন্ঠায় ওয়েটিং রুমে হাঁটাহাঁটি করতে লাগল।
একদিন পর।।
রোজালিন তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, একটু আগে তার কোলে নার্স বাচ্চা দিয়ে গেছে। রোজালিনের মেয়েটা হয়েছে ঠিক সেই পতিতার মতো যার বুক ও নিতম্ব একই দিকে এবং পিঠ ও হাঁটু অন্যদিকে। রোজালিন বিস্ফোরিত নয়নে বাচ্চার দিকে তাকাচ্ছে, তার কেমন যেন ঘৃণা লাগছে, গলার কাছে উল্টে কি যেন চলে আসছে, বাচ্চাটিকে কোল থেকে সে ফেলে দিল।
[বইমেলা-১৫ তে গল্পের হাট নামক এক সংকলনে প্রকাশিত]
[পটভূমিঃ কতটুকু নেশা হলে একটা মানুষ ঘোরের মধ্যে চলে যায়? যেখানে অদ্ভূদ সব হ্যালুসিনেশন ঘটে তার চারপাশে। ঠিক ততটুক নেশাগ্রস্ত আমি কিছুক্ষণের জন্যে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি এবং চোখের সামনে ঐ পতিতালয়, সেই পতিতা এবং বাচ্চাদের এক্সিডেন্ট দেখি। গল্পে স্বপ্নের যতটুক অংশ আছে তা আমি নিজে ঘোরের মধ্যে হ্যালুসিনেশনে দেখেছি। ঘোর কাটার পর পুরোপুরি মখা বনে গেলাম, 'আরে এইটা কী দেখলাম আমি!!' তত্ক্ষণাত্ মোবাইলের নোটসে মূল থীম টুকে রাখলাম। অল্প কিছুক্ষণ পর মেডিক্যাল পড়ুয়া এক ফ্রেন্ড ফোন দিল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এরকম স্ট্রাকচারের মানুষ পসিবল কিনা। সে বলল, 'নরমাল মেডিক্যালে নাই তবে হাইয়ার মেডিক্যাল স্টাডিতে থাকলেও থাকতে পারে।'
সিনকো সালতোস পৃথিবীর মোস্ট হাউন্টেড এলাকা, ঐ এলাকা সম্পর্কে তথ্য সব উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া।]
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৩
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ বন্ধু
২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৯
মারুফ মুকতাদীর বলেছেন: ভাল্লাগছে।
আপনার লেখার স্টাইল এমনিতেও সুন্দর!
সেকেন্ড সিক্যুয়াল কি হতে পারে ?
গল্পে +++++
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩১
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ঐ মিয়া আমি কি সব গল্পেরই সিক্যুয়েল লেখি নাকি! :p এইটার সিক্যুয়েল নাই
৩| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪
আশিকুর রহমান টিংকু বলেছেন: প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম । এখন একটু তাড়াহুড়া, রাতে সময় করে পড়ব । তখন মন্তব্য করে জানাব ক্যামন লাগল ।
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২৯
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৫১
পলাশ মিয়া বলেছেন: ফেসবুকে কমেন্ট না করে এখানেই কমেন্ট করলাম। এক কথায় বলব অসাধারণ। চালিয়ে যাও বন্ধু তোমার এই প্রতিভা। ভাবতেই ভাল লাগে যে আমার কলেজ লাইফের কিছু বন্ধু আছে যারা কিছুটা হলেও এক্সট্রাওর্ডিনারি...