![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাহিত্যে ব্যাপক আগ্রহ, আমি কবিতা পড়তে (কদাচিৎ লিখতেও) পছন্দ করি। ইতিহাস আমাকে আলোড়িত করে... আর রাজনীতি আমাকে দর্শন শেখায়।
বৃহস্পতিবার। আমার সাপ্তাহিক "মাইর খাওয়া" দিবস। প্রতি বৃহস্পতিবার মহাসমারোহে আম্মুর হাতে আমি বেশ মাইর খেতাম আর কি ! ভাবছেন এমন কি পূণ্যের কাজ সাধন করতাম???
মশাই,সেটাই তো বলছি...
বৃহস্পতিবার মানেই হাফ ক্লাস। আর হাফ ক্লাস মানেই আনন্দ,উল্লাস আর স্কুল ছুটি হলে খেলাধুলা।আর খেলাধুলার প্রতিশব্দ তো আমি ই!
মানে হল যে কলোণীতে বড় হয়েছি, বিল্ডিং এর সামনে মাঠ,পিছনে মাঠ,ডানে মাঠ,বামেও মাঠ! এই কারণে প্রচুর খেলাধুলার সুযোগ আর সেই সাথে খেলাধুলায় ভালো স্কিল ! আর এই কারণে বৃহস্পতিবার স্কুল ছুটি শেষে যে কোন খেলাধুলা (কি ক্রিকেট আর কি ই ফুটবল) আমাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে যেত। কেননা বেশির ভাগ স্কুল ছাত্ররা ছিল বাসাবো-মুগদা এইরকম এরিয়া থাকতো যেখানে আশেপাশের কয়েক মাইলে একটা ছোট্ট মাঠ নেই বললেই চলে। পড়তাম আইডিয়াল স্কুলে, রাস্তা পেরোলেই এজিবি কলোণীর বিশাল ঈদগাহ মাঠ,সেখানেই খেলা হত। কড়া রোদের মধ্যে খেলা! আকারে বীটপ আকৃতির হলেও টিক্রেটে (ছোটবেলায় ক্রিকেটকে টিক্রেট বলতাম ) ব্যাটিংয়ে আমার পার্ফরমেন্স অনবদ্য।আর ফুটবল হলে তো কথাই নেই, দৈহিক গঠনের সুযোগ নিয়ে সুনিপুণ "কাটানি" দিয়ে মুগ্ধ করতাম প্রতিপক্ষকেও ! ভাবছেন যে সব ই তো ভাল ই চলছে, "মাইর খাওয়া"র প্রসংগ আসলো কিভাবে? এটাই ট্রাজেডি... আমাদের ছুটি হতো দুপুর ১টায়, খেলা শুরু হতে ১:৩০, ঘড়ির কাটায় যখনই ২:৩০ টা বেজে যেতো তখনি মাঠের সাথে রাস্তা ধরে ছাতা হাতে আম্মুর প্রবেশ আর আমাকে ডাকা, প্রথমে ম্রিয়মাণ কন্ঠে, তখন আমি একটু দ্রোহের সুরে বলতাম "তুমি যাওতো আম্মু, আসছি।" আস্তে আস্তে আম্মুর কন্ঠে বিদ্যুতের ঘনঘটা টের পেতাম আর আমার কন্ঠ বিড়ালের মতন মিউ মিউ পর্যায়ে চলে যেত। আমার আম্মু কিন্তু ভীষণ রাগী ছিলেন। ভয় পেতাম গাছের ডাল-টাল ভেঙে সবার সামনে আমাকে দৌড়ানি দেন নাকি আবার !
আবার আম্মুর কাছেও যেতে পারতাম না কেননা কাছে গেলে যদি মেঘ না চাইতে বৃষ্টি (সবার সম্মুখে থাপ্পড়) হয়ে যায় তাহলে???
তাই অবস্থা যখন দেখতাম বেগতিক তখন আম্মুর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব (যে দূরত্ব বজায় রাখলে ডাল ছুঁড়ে মারলে আমার গায়ে লাগবে না) বজায় রেখে কখনো সামনে কখনো পিছনে চলতাম, আম্মুর আগে যদি হেঁটে বাসায় পৌছাতাম তাহলে দৌড় দিয়ে গোসলখানায় ঢুকে পড়তাম এবং সিটকানি লাগিয়ে দিতাম ।
আর যদি আম্মু আমার আগে ঢুকে পড়তেন তাহলে কপালে যে কি নিদারুণ "মাইর" ছিল তা শুধু আমি ই জানি । "মাইর" পর্ব শেষে আম্মুর কাছে প্রতিজ্ঞা করতাম যে আর কখনো এই রোদের মধ্যে বৃহস্পতিবার খেলবো না ! কিন্তু পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের বিষয় হলো যে প্রতি বৃহস্পতিবার ই আমি এরকম খেলতাম এবং প্রতি বৃহস্পতিবার আম্মুর হাতে "মাইর" খেয়ে একই প্রতিজ্ঞা করতাম ।
গল্পের আঁখর দিয়ে সাজাতে গিয়ে মূল প্রসঙ্গ থেকে বেশ দূরে চলে এসেছি। আসলে সেদিন গিয়েছিলাম এক আত্মীয়ের বাসায়, সম্পর্কে আমার মামা হোন। তার দুটো ছেলে আছে, একজন ক্লাস ফোরে আরেকজন সম্ভবত কেজিতে পড়ে। বাচ্চাদের সাথে আমার আবার খুব খাতির জমে। তাই অল্প সময়ে তাদের সাথেও জমে গেল। হঠাৎ ছোট বাচ্চাটা আমাকে বলল যে “ভাইয়া,গেম খেলবা? আমাদের কম্পিউটারে না অনেক গেম আছে।” তারপর ওদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম যে বিকেল বেলায় কিংবা অবসরে ওরা গেম খেলেই সময় কাটায়, অ্যাকশন গেম,ক্রিকেট বা রেসিং গেম। আর ক্রিকেট খেললেও সেটা প্লাস্টিকের ব্যাট-বল দিয়ে ১০ ফুটের গ্রিল দেয়া বারান্দায় ! আর ফুটবল ! বাসার দামি জিনিসপাতি ভাঙ্গার ভয়ে ফুটবল খেলার সুযোগ কোথায় ?? এই পর্যায়ে নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল যে এই বাচ্চাগুলো জীবনে হাতে গোনা কয়েকবার (গ্রামের বাড়িতে বছরে একবার ঘুরতে গেলে এই সৌভাগ্য হয় তাদের) মাঠে খেলেছে,ছুটেছে,হৈ-হুল্লোড় করেছে।
কখনো বোম্বাস্টিং খেলেনি, কাউকে দৌড়াদৌড়ি করে ধরতে গিয়ে পড়ে যায় নি, কখনো উত্তেজনার খেলা খেলেনি (খালি টিভিতে দেখেই গেছে), বন্ধুদের সাথে কখনো কানামাছি খেলেনি, খেলতে গিয়ে ব্যথা ও পায়নি। খেলার মধ্যে হারের বেদনা আর জয়ের ডামাডোল বাজা উল্লাস করেনি ! ভাবতেই অবাক লাগে।
আমাদের এই শহরে (ঢাকায়) যেসব শিশু-কিশোর থাকে তাদের অধিকাংশই (হয়তো তারও বেশি) এভাবেই খেলাধুলা নামক মনোরঞ্জন থেকে প্রতিনিয়ত বিরত থাকে। আর এভাবেই পদে পদে বাঁধাগ্রস্ত হয় তাদের মানসিক বিকাশের পূর্ণরূপ।
চার দেয়ালের বাসা নামক কারাগারে এভাবেই জন্মের পরেই সদ্যজাত শিশুর প্রতিভা-মেধা-মননের বিকাশের পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছি এই আমরাই; নিজেদের অজান্তেই।
আমি নগর পরিকল্পনা বিশারদ নই, আমি এই সমস্যার সমাধান জানি না। জানতে চাই ও না। আমি শুধু একটি জিনিস ই জানি যে আমি চাই আমার ছোট ভাই-বোন কিংবা আপনার ছট-বোন কিংবা আমাদের ছোট ভাই-বোন, আমাদের অনাগত সন্তানেরা আমাদের মতো করেই বড় হোক; হেসে-গেয়ে-খেলে... ...
সুফিয়া কামালের “আজিকার শিশু” কবিতাটি ই তাই আমার সম্বলঃ
আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা
তোমরা এ যগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেল।
আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি
তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।
উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু সব তোমাদের জানা
আমরা শুনেছি সেখানে রয়েছে জিন ,পরী, দেও, দানা।
পাতালপুরীর অজানা কাহিনী তোমরা শোনাও সবে
মেরুতে মেরুতে জানা পরিচয় কেমন করিয়া হবে।
তোমাদের ঘরে আলোর অভাব কভূ নাহি হবে আর
আকাশ-আলোক বাঁধি আনি দূর করিবে অন্ধকার।
শস্য-শ্যামলা এই মাটি মা’র অঙ্গ পুষ্ট করে
আনিবে অটুট স্বাস্থ্য, সবল দেহ-মন ঘরে ঘরে।
তোমাদের গানে, কল-কলতানে উছসি উঠিবে নদী-
সরস করিয়া তৃণ ও তরুরে বহিবে সে নিরবধি
তোমরা আনিবে ফুল ও ফসল পাখি-ডাকা রাঙা ভোর
জগৎ করিবে মধুময়, প্রাণে প্রাণে বাঁধি প্রীতিডোর।
০৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:৫০
নীল_সুপ্ত বলেছেন: আসলে দিদি, হয়েছে কি জানেন? কে জানি বলেছিলেন, "সময় অতি মূল্যবান।" আর এই কথাটি আমার শুধুমাত্র তখনি মনে পড়ে যখন আমি একটি লেখার মাঝপ্রান্তে চলে আসি... এ এক দুরন্ত বাতিক
ওষুধ খুঁজছি। পারলে নির্দ্বিধায় সাহায্য করুন।
আর হ্যাঁ, হুড়োহুড়িটা ধরিয়ে দেয়ায় ধন্যবাদ অনেক।
২| ০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:১৭
মায়াবতী নীলকন্ঠি বলেছেন: কিছু**
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:১৬
মায়াবতী নীলকন্ঠি বলেছেন: ভালো...তবে কিচু জায়গায় তাড়াহুরো করেছেন..