নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকঃ ওসমান আহমেদ সাকিব

"" It is a difficult thing to tell the story of a life;and yet more difficult when that life is one's own. ""

নীল_সুপ্ত

সাহিত্যে ব্যাপক আগ্রহ, আমি কবিতা পড়তে (কদাচিৎ লিখতেও) পছন্দ করি। ইতিহাস আমাকে আলোড়িত করে... আর রাজনীতি আমাকে দর্শন শেখায়।

নীল_সুপ্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছয় দফার প্রণয়ণ এবং পর্দার আড়ালের প্রণেতা... ...

০৭ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৮

আইইউব বিরোধী একটি একক ডানপন্থী বিরোধীদলীয় জোট গঠনের লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে একটি জাতীয় সম্মেলনের আহ্বান করা হয়।সম্মেলনে নুরুল আমিনের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(এনডিএফ),মুসলিম লীগ,জামায়াতে ইসলামী,নেজামে ইসলাম, আওয়ামী লীগ অংশ নেয়।

আওয়ামীলীগের পূর্ব প্রাদেশিক কমিটির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেনঃ

জহির উদ্দিন,নুরুল ইসলাম চৌধুরী,হাফেজ হাবিবুর রহমান,তাজউদ্দীন আহমেদ,আব্দুল মালেক উকিল,মিজানুর রহমান চৌধুরী, ইউসুফ আলী,এএইচএম কামরুজ্জামান ও এবিএম নুরুল ইসলাম।
তাদের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। আর এই সম্মেলনেই তুলে ধরা হয় বাঙ্গালীর প্রাণের দাবী ছয় দফা।

ছয় দফার প্রণয়ণ এবং লাহোরে অনুষ্ঠিত ডানপন্থী পাঁচ পার্টির জাতীয় সম্মেলনে এর উপস্থাপনা নিয়ে রহস্যের দানা বাঁধে। রহস্য সৃষ্টি করেন স্বয়ং শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ,উপস্থাপনার আগ পর্যন্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী কেউই জানতেন না যে, শেখ মুজিবুর রহমান এ ধরনের একটি প্রস্তাব সম্মেলনে তুলে ধরবেন। সম্মেলন কক্ষে প্রবেশের আগ মুহূর্তেও এ সম্পর্কে তাঁর মুখ থেকে ছিটেফোটাও শোনা যায়নি।



দৈনিক আজাদের ৫ ফেব্রুয়ারি,১৯৬৬ এর একটি সংবাদ থেকে জানা যায় যে, সম্মেলনে যোগদানের লক্ষ্যে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে শেখ মুজিব ৪ফেব্রুয়ারি,১৯৬৬ সালে এক বিবৃতিতে বলেন, “একমাত্র লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ সায়ত্বশাসন প্রবর্তনের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা দ্বারা এবং অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক ও দেশরক্ষার দিক হইতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বয়ং সম্পূর্ণতা বিধানের দ্বারাই দেশের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা যাইতে পারে। ”

লাহোরের সম্মেলনে ছয় দফা উত্থাপনের পর এ প্রস্তাবকে এক প্রকার উপেক্ষা করা হয় এবং এ নিয়ে শেখ মুজিবকে কোন আলোচনার সুযোগ ই দেয়া হয়নি। তাই সম্মেলন শেষে সারা পাকিস্তানের বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের সামনে ছয় দফাকে তুলে ধরার জন্য একটি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন এবং ঢাকায় এসেও সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে ব্রিফিং দেন।

ঐ বছরই ৭ জুনকে ছয় দফা দিবস ঘোষণা করেন এবং এর বাস্তবায়নে সারা পূর্ব বাংলায় হরতাল পালনের আহ্বান জানান।

২০ফেব্রুয়ারি,১৯৬৬ তে অনুষ্ঠিত আওয়ামীলীগের ওয়ার্কিং কমিটির অধিবেশনে এবং ১৯ মার্চে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে ছয় দফা অনুমোদন করিয়ে নেন।

দু দুটো কমিটিতে অনুমোদন হয়ে যাবার পরও একটি বিষয় সবার অজ্ঞাত থেকে যায় যে “এর প্রণেতা কে বা কারা?” শেখ মুজিব দুটো অধিবেশনের কোনটিতেই এ সম্পর্কে কোন আভাস দেন নি।

তৎকালীন পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার এক পদস্থ কর্মকর্তা এবিএস সফদার সাংবাদিক মাসুদুল হককে এক সাক্ষাৎকারে জানান, “শেখ মুজিব আমাকে ঐ সময় বলেছিলেন যে তেজগাঁও বিমানবন্দরে লাহোরগামী বিমানে উঠার আগে ছয় দফা প্রস্তাবের একটি টাইপ করা কপি রুহুল কুদ্দুস তাঁর হাতে তুলে দেন। তিনি ছিলেন মুজিবের ইনার সার্কেল।”



এ তথ্যের সত্যতা প্রমাণিত হয় লাহোরের সম্মেলনে আওয়ামীলীগের প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য আব্দুল মালেক উকিলের সাপ্তাহিক মেঘনা’র ১৯৮৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেয়া এক সাক্ষাৎকারে, “ছয় দফা আমি প্রথম দেখি একটি টাইপ করা কাগজে শেখ সাহেবের পকেটে ১৯৬৬ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় কনভেনশনে যাবার পথে।”

প্রতিনিধিদলের আরেকজন সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিক মাসুদুল হককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, “প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বাইরে শেখ মুজিবের একটি ইনার সার্কেল ছিল। কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে তিনি ঐ সার্কেলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতেন বলে আমরা ধারণা করতাম। রুহুল কুদ্দুস ও আহমেদ ফজলুর রহমান (দুজনেই সিএসপি ও আগারতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত আসামী) ছিলেন তাঁর ঐ ‘ইনার সার্কেল’- এর লোক। আমার ধারণা, ঐ দুজনেই ছয় দফা তৈরি করেন।”

ছয় দফার প্রণয়ণ সম্পর্কে শেখ মুজিব সর্বপ্রথম মুখ খুলেন ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যাবার পথে বিমানে বসে। তিনি আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে বলেন, “ছ’দফার কথা বলি। একজন তাজউদ্দিন এবং অন্যজন রুহুল কুদ্দুস। অত্যন্ত গোপনে আমরা একাজ সেরেছি।প্রথমে ছিল এগার দফা। পরে সেটিকে ছাঁটকাট করা হয়। হানিফকে তোমরা চেনো। এখন আমার সঙ্গে আছে। আমার প্রতি ওদের আনুগত্য ও ভালোবাসার কথা ভুলতে পারিনা। এই হানিফকে দিয়েই প্রথমে ছ’দফার খসড়া টাইপ করানো হয়েছিল।”

এটি প্রকাশিত হয় দৈনিক জনপদে ১৫ সেপ্টেম্বর,১৯৭৩।



ছয় দফার প্রণয়ণ নিয়ে রুহুল কুদ্দুস সাংবাদিক মাসুদুল হককে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “ছয় দফার শতকরা একশ ভাগ আমারই তৈরি। প্রথমে ছিল সাত দফা। খসড়া তৈরির পর আমি সেটা দেখাই তাজউদ্দীন আহমেদকে। এরপর শেখ মুজিবসহ আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি দফা বাদ দেয়া হয়। ঐ দফাটিতে ছিল ‘প্রাদেশিক গভর্ণরের নিযুক্তি হবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের ভোটে।’ কপিটি আমি টাইপ করাই তৎকালীন ইউনাইটেড ব্যাংক অব পাকিস্তানের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আমার বন্ধু খায়রুল কবিরের অফিস থেকে। আমি তখন কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের ফাইন্যান্স ডিরেক্টর।”



তাকে সাংবাদিক মাসুদুল হক প্রশ্ন করেন যেঃ " ছয় দফার রচয়িতা একা আপনি, একথা শেখ মুজিব কখনো বলেননি।"



রুহুল কুদ্দুসঃ কারো কারো সামনে তিনি বলেছেন। বলেছেন এইভাবে যে, "এই যে ইনি ই ছয় দফা তৈরি করেছিলেন", আদতে অন্যের অবদানকে স্বীকৃতি দেবার উদারতার অভাব ছিল শেখ মুজিবের মানসিকতায়। তার অবর্তমানে দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে, এটা তিনি মেনে নিতে পারেন নি। তা কখনো তিনি একবারও আমাকে জিগ্যেস করেন নি কী কষ্ট আমরা করেছি। কী যন্ত্রণা আমরা সয়েছি অথবা কিভাবে আমরা যুদ্ধ করেছি। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও আমাকে বলেছেন, তার কাছেও স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে কিছুই জানতে চাননি শেখ মুজিব। অন্যের অবদানকে স্বীকৃতি দেবার বিষয়টি তিনি সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। ১৯৬৯ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের পর রেসকোর্সের ময়দানের সংবর্ধনা সভায় মামলায় অভিযুক্ত আসামীদের মঞ্চে তুলে পরিচয় করিয়ে দিতে পারতেন । তা করেননি তিনি একই কারণে। অন্যদিকে ১৯৭২ সালে পাকিস্তান জেল থেকে মুক্ত হয়ে ঢাকা ফেরার কয়েকদিন পরই তিনি সোজা চলে যান ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিদের দুঃখ-দুর্দশার খোঁজ খবর করতে। এ ব্যাপারটি আমাদেরকে তখন বিক্ষুদ্ধ করে তোলে দারুণভাবে।"



খায়রুল কবির সাংবাদিক মাসুদুল হককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “রুহুল কুদ্দুস ই ছয় দফা প্রণয়ণ করেন। আমাকে তিনি খসড়াটি দেখান এবং টাইপ করিয়ে দিতে বলেন। টাইপ করতে দেয়ার সময় তাৎক্ষনিকভাবে প্রাদেশিক গভর্নরের নিযুক্তির বিষয়টি আমার মাথায় এসে যকায় এবং সেটা ঢুকিয়ে দেই। ছয় দফার ঐ খসড়া কপিটি টাইপ করেন আমার ব্যক্তিগত সহকারী আজিম। তিনি অবাঙালী। আমার প্রতি অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন। বিষয়টি তিনি গোপন রাখেন, টাইপ করতে দেয়ার আগে মোতাহের হোসেন সিদ্দিকীর সাথে আমার অফিসে আসেন, কেবল গভর্নর নিযুক্তির প্রস্তাব নিয়ে আমি তাঁর সাথে আলোচনা করি।”



মোতাহের হোসেন হোসেন সিদ্দিকী মাসুদুল হককে দেয়া সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন যে খায়রুল কবির তার সঙ্গে ঐ প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।



অতএব এটা স্পষ্ট যে ছয় দফা তৈরি করেছেন রুহুল কুদ্দুস। পরে শেখ মুজিবের ইনার সার্কেলে এটা আলোচিত হয়ে চূড়ান্ত হয়।



তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে র এবং সিআইএ-মাসুদুল হক



পৃষ্ঠাঃ ২৮,২৯,৩০,৩১,১৪৭

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:১৬

সরলপাঠ বলেছেন: ইতিহাসের অনেক কিছুই জানতে পারলাম। ধন্যবাদ তথ্যবহুল এই পোষ্টের জন্য।

০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪১

নীল_সুপ্ত বলেছেন: পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:৪৬

নেয়ামূল হক বলেছেন: পাব্লিকের সাফল্য ছিনতাইয়ে আওয়ামী লীগ বরাবরই এগিয়ে।

০৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:১০

নীল_সুপ্ত বলেছেন: আওয়ামী লীগ একইভাবে ছিনিয়ে নিয়েছে ভাসানীর কাছ থেকে প্রকৃত আওয়ামীলীগ... এ বছর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে শেখ মুজিবের নির্দেশে ভাষা আন্দোলন নাকি হয়েছে... ইতিহাস এসবে সাক্ষ্য দিয়ে আসছে... বারংবার...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.