নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিস্তি:: ৯০::
ইত্তেফাকের তারুণ্য পেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয ভর্তির কানুনটা কেটে রেখেছিলাম। সেটা সম্ভবত ১৯৯৫ সালের কথা। তার পর মনে ভেবে রেখেছি-এ ক্যাম্পাসে পড়তে আসবো।
১৯৯৮ সালের শীতকালের এক সকালে ঢাকা আসছি। ইন্টারের রেজাল্টের পর। আব্বা বলে দিলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না হলে ফিরে যেতে হবে নোয়াখালী।
কিছুটা অনিশ্চয়তা নিয়েই ঢাকায় আসা। বিশ্ববিদ্যালয়ে না টিকলে ঢাকায় আমার থাকা হবে বড় জোর মাস চারেক। তারপর ফের নোয়াখালী। যেখানে আমি ফিরতে চাই না। কেনো চাই না এর কোনো উত্তর নেই।
আব্বার যুক্তি- বিশ্ববিদ্যালয় পড়লে ঢাকা। ন্যাশনাল ইউনিভার্সি পড়লে জগন্নাথ, ঢাকা কলেজ যেই নোয়াখালি কলেজও সেই। এখন কথাটা আমার কাছে সত্য মনে হয়। বিশ্বাসও করি।
ঢাকায় এসে সায়েদাবাদ নামার পর মেসে। ভর্তির লড়াই শুরু করতে সময় লাগলো সপ্তাহ দুই। কোচিং করছি। অনেক কিছুই বুঝতে পারছি না।শহরের ছেলে মেয়েরা ইংরেজিতে ভালো। প্রচুর পড়াশোনা করেছে তারা। তাদের সাথে পেরে ওঠা নিয়ে সংশয়। কিন্তু হাল ছাড়তে চাইনি। তাই জিতেছি।
পিতৃ নিষেধ অমান্য করে প্রথম পরীক্ষাটা দিয়েছিলাম জগন্নাথ কলেজে। সেই পরীক্ষার পরে আত্ম বিশ্বাসটা খুব বেড়ে গেছে! মনে হয়েছে, পারবো। আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে না। মাড়াতে হবে না নোয়াখালী কলেজের গেট।
১৯৯৮ সালের নভেম্বরে টিএসসি যাচ্ছিলাাম, বাসে।তখনো জানতাম না, এর অবস্থান। বাসঅলা আমাকে এখনকার কদম ফোয়ার কাছে নামিয়ে দিলো। সেখান থেকে হাইকোর্টের সামনে দিয়ে শিশু একাডেমি। সেখান থেকে টিএসসি আসলাম।
গ্রাম থেকে সদ্য নগরে আসা 'মফিজ' মোরতাজা তখন টিএসসির গেটে। কত রকমের কর্মশালার খবর। কত রকমের আলাপ আলোচনা-আড্ডা। ইত্তেফাক ও ভোরের কাগজের পাঠক হিসাবে সে সময় মঞ্চ নাটক ও আবৃত্তির খবর পড়া হয়েছে অনেক।
ভেবে রেখেছি আবৃত্তি শিখবো। সে জন্যই এসেছি। স্বরশীলনের একটা ফরম তুললাম। এর প্রধান মাসুদ সেজান ভাই। এখন নাট্যকার ও নির্মাতা।
আমার কোচিং সেন্টারে পাঠ নেবার কথা। সেটি পিছিয়ে ব্যাচের পর ব্যাচ বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি টিএসসির আড্ডা-আবৃত্তিতে মগ্ন। নগরে মাস দুয়েক বই নাড়াচাড়ার পর আমি অনেকটা আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছি, আমার জায়গা এ ক্যাম্পাসে হবে।
ফরম তোলার পর জমা দিতে গেলাম কলা ভবনে।কলা অনুষদের অফিসের নীচতলায় লম্বা লাইন দিয়ে ফরম জমা দিয়ে শহীদ ফারুক রোড়ের মেসে ফিরে এলাম। পরীক্ষা হলো। টিকে গেলাম।
তারপর ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৬। টানা ৮ টি বছর এ ক্যাম্পাসে ছিলাম। এখনো যাই। আড্ডা, আনন্দে এ ক্যাম্পাস আমার জীবনকে পরিপূর্ণ করেছে। গ্রামীন মধ্য বিত্ত পরিবারের কড়া শাসনে থাকা এই ঢাকায় ফেরার পর মুক্ত। সে মুক্তির স্বাদ আমি নির্মল আবহে নিয়েছি।
নিজের জন্য একটা নিশ্চিত ভবিষ্যত আমি চাইনি ঠিকই; তবে আনন্দে কাটাতে চেয়েছি প্রতিক্ষণ।
জীবনের প্রতিটি কাজ আমি উপভোগ করেছি। অপমান, অসম্মান আর অবহেলা আমাকে কষ্ট দেয়, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পা রাখলে সব ভুলে যাই।
এ ক্যাম্পাসের প্রতিটি বাঁকে জীবনের যে উৎসব আমাকে পূর্ণ করেছে, আমার জীবনের অভিজ্ঞতার আলোয় আলোকিত করেছে, সেটি আমি জীবনে দ্বিতীয়বার কোথাও থেকে পাইনি। পাওয়া সম্ভব নয়।
তার ওপর ক্যাম্পাসে ছাত্র হিসাবে থাকার সাথে সম্বাদিকতা আমাকে অধিকার নিয়ে, সম্মান নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত থাকতে সহায়তা করেছে।
আমি যখন যেখানে থাকি, সেখানে সব কিছু নিজের মত করে গড়ে নেয়ার চেষ্টা করি। অক্ষম হলে সে স্থান ত্যাগ করি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো কিম্বা খারাপ দিক।
আমি ভবিষ্যত দ্রষ্টা নই। সামনে কী হবে, তা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। তবে চলমান সময়কে আমি আনন্দময় করতে জানি। অতীত আমাকে টানে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে আমি অতীত মনে করি না। চলমান বলেই বিশ্বাস করি।
এ ক্যাম্পাসের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন মানে আমার মানসিক মৃত্যু। জীবনের প্রতি বাঁকের পরিপূর্ণতা দিয়ে এ ক্যাম্পাস। আমার ভালোলাগা, ভালোবাসা এবং আনন্দ অনুভূতির সর্বোচ্চ জায়গা এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
©somewhere in net ltd.