নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভীষণ কঠিন পোড়ামাটিকে আবার সেই কাদামাটিতে ফিরিয়ে আনা,ভীষণ কঠিন আঘাত দেয়া শব্দমালা গুলো ফিরিয়ে নেয়া।ভীষণ কঠিন নিজের সম্পর্কে কিছু বলা।যে চোখ দেখিনি সে চোখ কেমন করে বিশ্বাস করবে জানি না।যে কখনো রাখিনি হৃদয়ের উপর হৃদয়;সে কেমন করে বুঝবে আমায়!

নীল মনি

শিশুর মত চোখ দিয়ে দেখি আমার এই বিশ্ব।মানুষ স্বপ্নের কাছে হেরে যায় না, হেরে যায় নিজের প্রত্যাশার কাছে। প্রত্যাশা থাকে আকাশচুম্বী অথচ প্রচেষ্টায় থাকে শুধুই স্বপ্ন।

নীল মনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

#স্বচ্ছ ডানায় আকাশ দেখি!

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৪

#শিশুদের জন্য;বড়দের পড়ার জন্য

আয়াতের স্কুল ছুটি দিয়েছে তিনদিনের।বাসায় এসে আয়াত তার বোন'কে কানে কানে কী কী যেন বলল।এরপর বিকাল থেকে এলিসার এক কথা।

"নানাবাড়ি যাব।নানাবাড়ি যাব।"

এলিসাদের বাড়ি থেকে নানাবাড়ি মাত্র আধা ঘন্টার পথ।বাচ্চাদের ঘুরে ফিরে এক কথা নানাবাড়ি যাবে।তারপর ওদের জেদের কাছে আম্মু পরাজিত হল।বলল ঠিক আছে কাল সকালে আমরা নানা বাড়ি যাব।

আয়াত তার বন্ধুর কাছে কাগজের প্লেন বানানো শিখেছে। আয়াতের ইচ্ছা নানী বাড়ির ছাদে উঠে সে অনেক প্লেন আকাশে উড়িয়ে দিবে।
আর সে চেয়ে চেয়ে দেখবে সেই প্লেনগুলোর উড়ে যাওয়া।

আয়াত আগের রাতে বসে বসে অনেক গুলো প্লেন বানিয়েছে।প্লেন বানিয়ে রাতে ঘুমাতে বেশ দেরি হয়েছে।সকালে ওঠে দেখে নয়টা বাজে। বাহিরে ঘোর অন্ধকার,অবস্থা এমন যেন রাত্রি নামছে।আকাশের এমন গোমড়া মুখ দেখে ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল আয়াতের;তবে কী নানা বাড়ি আজ আর যাওয়া হচ্ছে না!

আয়াত ধীরে ধীরে মা'য়ের কোল ঘেষে দাঁড়ায়।মায়ে'রা অদৃশ্য শক্তি নিয়ে জন্ম নেয়,সন্তানের মনের কথা এক নিমিষে সব পড়ে নেয়।"আয়াত! মন খারাপ কর না! তোমার নানা বাড়ি যাব।বৃষ্টি একবার হয়ে যাক।তারপর বের হব।"
আয়াত খুশি মনে নাশতা করে নেয়। আজ নানী বাড়ি যাব।

আয়াত ও এলিসা নানী বাড়ি এসেছে।এলিসা একা একা পুতুল খেলছে। আয়াতের মন ভীষণ খারাপ।কারণ এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে;অথচ বৃষ্টি থামার কোন নাম নেই।বৃষ্টি হচ্ছে তো হচ্ছে।আয়াতের পরিকল্পনা ছিল সে প্লেন উড়াবে আকাশে।আকাশের মত করে আয়াতেরও কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

সারারাত বৃষ্টি হল। আয়াত সকালে ঘুম থেকে জেগে বাহিরে তাকিয়ে দেখে তখনো বৃষ্টি হচ্ছে।মনটা আর কিছুতেই ভালো হল না।আচ্ছা,এই বৃষ্টি হলে আমরা তো ঘরে থাকি;পাখিরা কোথায় থাকে? ভিজে গেলে
পাখিদেরও ঠান্ডা লাগে না বুঝি!

নানাবাড়ির জানালার ধারে বাহিরে দিকে তাকায়।পেছনে বেশ জল জমেছে;সেই জলে অনেক কুচুরিপানা।অদূরে সাদা সাদা বকের সারি;যেন মাছ খাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।জানালার পাশেই ছোট্ট একটা পেয়ারার গাছ।বৃষ্টির পানি পড়ছে পাতার উপরে।একটা ছোট্ট শুকনো দল;সেই ডালে শক্ত করে একটা ফড়িং দাঁড়িয়ে আছে।ভিজছে বৃষ্টিতে।আর খুব যখন পানি পড়ছে তখন সে মাথাটা কেমন করে ঘুরিয়ে নিচ্ছে। আয়াত একমনে বাহিরে ফড়িঙের কান্ড দেখছে।ফড়িঙের ডানা দুটো ভীষণ সুন্দর।স্বচ্ছ, অদ্ভুত স্বপ্নের মত।যে ডানা দিয়ে আকাশ দেখা যায়।মায়াময় কাঁচের ডানা,খুব ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দিতে।হাত বাড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে আয়াতের।কিন্তু ছুঁতে গেলেই তো উঁড়ে যাবে।আয়াতের বয়স মাত্র সাত বছর। এই টুকু বয়সে
খুব বেশি বোঝে না ও।ওর খুব মায়া লাগে ফড়িঙটার জন্য।এই বৃষ্টিতে ওর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।বেশি বাতাস হলে ও তো বাতাসে উড়ে যাবে।
কিন্তু যত বাতাস হোক বাতাসের সাথে সাথে ফড়িং দুলছে।কিন্তু মজার ব্যাপার হল ফড়িং পড়ে যাচ্ছে না।ও যেন শক্ত করে ধরে রেখেছে।

রাতে আয়াত তার নানাভাইয়ের কাছে ঘুমিয়েছে।আয়াতের নানা ভাই হলেন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা নানা ভাই আয়াতকে প্লেনের গল্প শুনিয়েছে,শত্রুর গল্প শুনিয়েছে।এত সব গল্প শোনার পরও আয়াতের মন খারাপ।নানাভাই শুনেছে কেন নানুর মন ভালো নেই। চলে যাবার সময় হয়ে এসেছে অথচ প্লেনগুলো আয়াত আকাশে ওড়াতে পারিনি। কারণ বৃষ্টি থামেনি।
আর একটু পর আয়াত চলে যাবে।আবার কবে আসবে না জানে না।নানা ভাই আয়াতকে কাছে ডেকে নিয়েছে।
নানাভাই বলছে,"আয়াত! প্লেন নিয়ে যুদ্ধ হয়নি বলে কি নৌকা দিয়ে হবে না! চলো যুদ্ধ হবে নৌকা দিয়ে।ঢিস ঢিস"

আয়াত নানাভাইয়ের কথা কিছু বুঝতে পারছে না।সে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।নানা ভাই আয়াতের হাতে মস্ত বড় কাগজের নৌকা বানিয়ে দিয়েছে।এখন নানা ভাই আর আয়াত ছাতা মাথা'য় দিয়ে বাড়ির পেছনের ডোবায় নৌকা ভাসিয়ে দিয়েছে।আয়াত এখন খুব খুশী। প্লেন উড়েনি তাই কি নৌকা তো ভেসেছে।

রুবাইদা গুলশান

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.