![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ কে অপছন্দ করে এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। তাঁর উপন্যাস কে "অপন্যাস" বলা হয়েছিল। শেষ বয়সে শাওন আহমেদ কে জীবন সঙ্গিনী করার জন্যও হুমায়ূন আহমেদ এর কপালে অনেক শাপ শাপান্ত, গালাগালি জুটেছিল। যাঁরা এই শাপ শাপান্ত করেছিলেন তাদের সবাই যে হুমায়ূন ভক্ত ছিলেন তা নয়। এঁদের অনেকেই ছিলেন তাঁরই সমগোত্রীয়। প্রোফেশনাল জেলাসিটা ঝাড়ার এমন মোক্ষম সুযোগটা তাঁরা হাত ছাড়া করতে চাননি। আর বাদ বাকীরা নিতান্তই তাঁর ভক্ত পাঠক কূলের একাংশ। মেয়ের বয়েসী একজনকে বিয়ে করে ফেলায় যেন তাদেরই নাক কাটা গিয়েছিল।
কারণ যাই হোক, এতদিন আমার ধারণা ছিল এই দুই দলের মানুষ হুমায়ূন আহমেদ কে অপছন্দ করে। আজ নিশ্চিত হলাম এর বাইরেও আর এক দল আছে। তারা হল বই বিক্রেতা দল। স্পেসিফিক্যালি বললে বইমেলায় অন্যপ্রকাশ স্টলের সেলস্ম্যানরা। না, তাঁরা হুমায়ূন আহমেদ এর বই-ই বিক্রি করেন। অন্যপ্রকাশ থেকেই সবচেয়ে বেশী হুমায়ূন আহমেদ এর বই প্রকাশিত হয়। প্রতি বছর যুদ্ধ করে এই স্টলের কাছাকাছি পৌঁছাতে হয়। ব্যাগ ভর্তি করে বই কিনে এক একজন যখন ঘেমে গোসল হয়ে দাঁত বের করে স্টল থেকে বেরিয়ে আসে তখন তাদের দেখলে মনে হয় ডব্লু-ডব্লু-ই চ্যাম্পিয়নশিপে এইমাত্র স্ল্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতে রেসলিং রিং থেকে বের হয়ে এল।
আজকে যথারীতি বইমেলায় যুদ্ধ করে অন্যপ্রকাশের স্টলে ঢুকেছি। আমি যে বইগুলো চাচ্ছি তা একজন এনে দিচ্ছে। তিনবার করে বলতে হচ্ছে প্রতিটা বইয়ের নাম। সিনিয়র সেলস্ম্যান ভদ্রলোক হয় কানে খাটো না হয় মানুষের চীৎকারে সাময়িক বধিরতায় আক্রান্ত। আমার পাশ থেকে এক মেয়ে ধাক্কা দিয়ে ঢুকে পড়েছে।
- "আঙ্কেল, হুমায়ূন আহমেদ এর দোয়েল টা দ্যান"।
- "কোন বইটা?"
- "ওই-যে দোয়েল নামে একটা বই বের হয়েছে না?"
কনফিউজ্ড সেলস্ম্যান আরো কয়েকবার দোয়েল শুনে বলে, "আপনি কি দেয়াল চাইতেছেন?"
- "হ্যাঁ হ্যাঁ দেয়াল...দেয়াল! স্যরি, মানুষের চাপাচাপিতে নাম ভুলে গিয়েছিলাম!"
বই নেয়া শেষ করে একজনকে দাম হিসাব করতে বললাম। সে হিসেব করতে করতে আরেক খদ্দেরের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেল। তিনবারের চেষ্টায় হিসাব শেষ হবার পর এক জুনিয়র সেলস্ম্যানকে বললাম বইগুলো প্যাকেট করে দিতে। সে শূন্য দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। যেন আমি তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল গাণিতিক সমীকরণ সমাধান করতে দিয়েছি। বই, প্যাকেট এগুলো সব হল ভেরিয়েবল। সমীকরণে এগুলো কিভাবে ব্যবহার করতে হবে সে বুঝে উঠতে পারছেনা। আমি ধৈর্য্য হারা হয়ে উঁচু স্বরে আবার বইগুলো প্যাকেট করে দিতে বলায় তার সম্বিত ফিরল। সিনিয়র সেলস্ম্যান বলল, "ভাই রাগ কইরেন না। সকাল আটটা থেইকা এই ঘ্যানঘ্যানানি শুনতেছি। মাঝে মাঝে মাথা কাজ করে নারে ভাই।" জুনিয়র সেলস্ম্যান বইগুলো প্যাকেট করে বিরক্তমুখে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। আমি সব সেলস্ম্যানের চোখেমুখে জিঘাংসা দেখতে পেলাম। রাগী রাগী চোখে তারা খদ্দেরদের দিকে তাকাচ্ছে। আজ একুশে ফেব্রুয়ারীতে সবাই দল বেঁধে সেজেগুজে ঘুরছে। আর তারা পুরোটা মাস হুমায়ূন আহমেদ এর বই বিক্রি করতে করতে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। হুমায়ূন আহমেদকে এদের পছন্দ করার কোন কারণ নেই।
যুদ্ধ জয় করে বইগুলো কিনে বের হলাম। স্টলের উপরে কার্ডবোর্ডের জানালায় বসা হুমায়ূন আহমেদ এর মুখে মনে হল একটা হালকা বিদ্রুপের হাসি। মনে হচ্ছে তিনি বলছেন, "কি ভাবতেছ তোমরা? আমি নাই তাই খেলা শেষ? খেলাতো সবে শুরু। আইজ পাশা খেলব রে শাম!"
ফুটনোটঃ অন্যপ্রকাশের কেউ যেন ভেবে না বসেন তাঁদেরকে হেয় করার জন্য এটা লিখেছি। প্রতিবছর বইমেলার সময় তাঁরা হুমায়ূন আহমেদ ও অন্যান্য লেখকের বই আমাদের কাছে পরিবেশন করেন। যে পরম মমতায় এবং অপরিসীম পরিশ্রমে এই কাজটা তাঁরা করেন তার জন্য "ধন্যবাদ" একটা বাংলা শব্দ যা তাঁদের প্রাপ্য তো বটেই কিন্তু যথার্থ বলে মনে হয় না।
©somewhere in net ltd.