![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গতকাল সন্ধ্যায় খালার বাসায় গিয়েছিলাম। যাবার সময়ই আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। তখনও ভাবিনি বৃষ্টি এসে পড়বে। খালার বাসায় গিয়ে বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই মোটামুটি ভাল বৃষ্টি শুরু হল। সেই সাথে ঝড়ো হাওয়া আর বিদ্যুতের চমক। আমার খালাতো বোনের এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সবাই মিলে গল্প করছি। হঠাৎ বাইরে একটা বিদ্যুৎ চমকের সাথে সাথে কারেন্ট চলে গেল। খালাদের এই বাসাটায় এখনও জেনারেটর লাগানো হয়নি। আইপিএসটাও নষ্ট হয়ে আছে। তাই মোমবাতি আর মোবাইল ফোন জ্বালিয়ে গল্প চালিয়ে গেলাম। ভালই লাগছিল। কখন যে দশটা বেজে গেছে টের পাইনি। বৃষ্টি তখনও পড়ছে। আমার বাসা থেকে খালার বাসা হাঁটা দূরত্ব। তারপরও রাত দশটার বেশী এখানে আমি থাকিনা। এর বেশী সময় থাকলেই খালা খেয়ে যাবার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করবেন। তার থেকেও বড় কথা আমার খালাত ভাই রাতুল একটা ভয়ংকর খবর দিল। এই গলিতে নাকি এক পাতি মাস্তান এসেছে। কয়েকদিন আগে এরকম অন্ধকার রাতে সে একজনের মানিব্যাগ আর মোবাইল রেখে দিয়েছে। চলে যাবার সময় আবার কি মনে করে মানিব্যাগটা ফেরত দিয়ে দিয়েছে। তবে মোবাইল ফেরত দেয়নি। আজকে খালা নিজে থেকে আমাদের চলে যাবার জন্য তাড়া দিলেন। বাইরে তুমুল বৃষ্টি। বহ্নির ব্যাগে একটা ছাতা থাকে জানি। আমাদেরকে দেবার জন্য আরেকটা ছাতা খোঁজাখুঁজি শুরু হল। এ বাড়ীতে দরকারের সময় কিছুই পাওয়া যায়না। তার উপর কারেন্ট নেই। আমার আব্বা যথারীতি হইচই শুরু করলেন। আমার আব্বা কখনোই বাসার কোন কিছুর খবর রাখেন না। তবে কোন বিষয় নিয়ে কাউকে বকাবকি করার সুযোগ তিনি কখনোই হাতছাড়া করেন না। আমরা কেউই এ ব্যাপারটাকে পাত্তা দেইনা। তিনি নিজেও সেটা জানেন। তারপরও ছাতা না পাওয়া যাওয়াতে তিনি পাশের রুম থেকে অগ্নি উদ্গীরন করতে লাগলেন।
ছাতা লাগবেনা বলে বেরিয়ে গেলাম। অন্ধকার গলি দিয়ে আমি আর বহ্নি হাঁটছি। একটা মাত্র ছাতা। দুজন মিলে সেটা শেয়ার করছি। রাস্তা ভেসে গেছে বৃষ্টির পানিতে। পুরো গলি অন্ধকার। একটু আতঙ্কিত বোধ করছি। সেই মাস্তানের সাথে সাক্ষাত হয়ে যাক চাইছিনা। গলি থেকে বেরিয়েই রিকশা নেব। এই গলিটার প্রথম বাসাটায় আবার এক পাগল থাকে। একে নিয়েও একটু টেনশন হচ্ছে। তার গল্প আরেকদিন করা যাবে। আমরা হাঁটছি। বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য যতটুকু সম্ভব কাছাকাছি থেকে একই গতিতে হাঁটার চেষ্টা করছি। তবে বহ্নির হাঁটার স্পীড তার মেজাজের ব্যাস্তানুপাতিক। মেজাজ ভাল থাকলে সে খুব স্বাভাবিক ভাবেই হাঁটবে। মেজাজ খারাপ হলে সে মোটামুটি জেট বিমানের গতিতে হাঁটা শুরু করবে। বৃষ্টি হচ্ছে এতে তার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু তার গায়ে রাস্তার নোংরা পানি লাগবে আর তার মেজাজ খারাপ হবেনা এটা হতে পারেনা। এক পর্যায়ে যথারীতি ধ্যাত বলে সে আমাকে ফেলেই হাঁটা দিল। আমি বেকুবের মত ছাতা হাতে নিয়ে তাকে পাকড়াও করার চেষ্টা করতে লাগলাম। কোন রকম ভাবে গলির মাথায় পৌঁছে একটা রিকশা পেলাম। বৃষ্টির দিনে ঢাকার রিকশাচালকরা ফিলসফারের মত আচরণ করে। একটা অদ্ভুত বৈরাগ্য তাদের উপর ভর করে। জগত সংসার তাদের কাছে তুচ্ছ মনে হয়। এসময় শতকরা ৯৯ ভাগ রিকশাওয়ালা কোথাও যেতে চায়না। তবে ফিলসফারদেরও টাকার প্রয়োজন হয়। অন্য সবার থেকে বেশীই হয়। রিকশাওয়ালাদেরও তাই। যেখানে দশ টাকা দিলে অন্য সময় যাওয়া যায়, বৃষ্টির সময় সেখানে ২৫ টাকা দেওয়া লাগে। তীব্র বৈরাগ্যের সময় জাগতিক কাজ করতে হচ্ছে বলেই তারা এটা করে। এটা আমরা ঢাকাবাসীরা মেনে নিয়েছি। যাই হোক। ২৫ টাকা দিয়েই নিজের বাসা পর্যন্ত এলাম। বাসায় এসে বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিলাম। তারা আমাকে সুখবর দিচ্ছে এমন ভঙ্গি করে জানাল যে কোথাও গ্রিডে সমস্যা হচ্ছে। কখন ঠিক হবে তা বলা যাচ্ছেনা। বাসায় কোন রান্না নেই। আজ সারাদিন বাইরে টো টো করেছি দুজনে। বাইরে বৃষ্টি। কারেন্ট নেই। তবে সুখের বিষয় আইপিএস এ চার্জ আছে। বহ্নির মেজাজ খুব খারাপ। সে কিচেনে ঢুকে গেল। আমি মালয়শিয়ার বিমানের সর্বশেষ খবর ইন্টারনেটে জানার চেষ্টা করছি। যত দিন যাচ্ছে ব্যাপারটা ততই প্রায় এলিয়েন অ্যাবডাকশনের পর্যায়ে পড়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ধ্যানমগ্নভাবে ওয়েবসাইটগুলো দেখে যাচ্ছি। রান্নাঘর থেকে লোভনীয় সুবাস আসা শুরু করতেই ধ্যান ভাঙ্গল। বহ্নি হাসিমুখে উঁকি দিয়ে বলল, খিঁচুড়ি আর বেগুন ভাজা করছি। তোমার জন্য কি ডিম ভাজি করতে হবে? আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। বৃষ্টি পড়ছে। বছরের প্রথম বৃষ্টি। রবীন্দ্রনাথ কি এরকম দিনেই নীপবনে যেতে বলেছেন? ছায়াবীথি হয়ত পাইনি। তবে নবধারা জলে তো ভিজেই এলাম একটু আগে। নিজের অজান্তেই রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছাপূরন করে এলাম। একটু মনে হয় ভুল বললাম। এটা কি আমার নিজের ইচ্ছাও ছিল না? বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ মনে হল জীবনটা বোধ হয় খুব খারাপ না।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৫
মরদেহ বলেছেন: ছিমছাম সুন্দর গল্প। একে একে আপনার সবগুলোই পড়বো।
নিজে ওয়াচ-এ আছি, তাই আপাতত মনটা উদাস।