নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নুর হাসান সন্দ্বীপী ব্লগার...আধুনিক বাংলাদেশী ব্লগার...

নুর হাসান সন্দ্বীপী ব্লগার

আমি একজন বিনোদন প্রেমি মানুষ, অনেক আগ থেকে ব্লগ লিখছি...

নুর হাসান সন্দ্বীপী ব্লগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতিরিক্ত কাবিননামা একটি জঘন্য প্রথা

২৭ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৭

[সকলের কাছে অনুরোধ সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।]

কাবিননামা বলতে বিবাহ সম্পাদনের লিখিত চুক্তি বোঝায়। একে নিকাহনামা বলেও উল্লেখ করা হয়। বিবাহ সম্পাদনের জন্য বা বিবাহ বৈধ হওয়ার জন্য ‘কাবিননামা’ অপরিহার্য নয়। কাবিননামা একটি আইনি বাধ্যবাধকতা। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সরকার কর্তৃক মনোনীত কাজী সরকার নির্ধারিত ছকে কাবিননামা সম্পাদন করে থাকেন। স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহর আদায়, স্ত্রীর ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, সন্তানের পিতৃত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথাযথভাবে নিবন্ধিত কাবিননামা একটি আইনি দলিল।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন ১৯৭৪ মোতাবেক অনুযায়ী প্রতিটি বিবাহ নিবন্ধন করতে হবে। উক্ত আইনে বিবাহ নিবন্ধন না-করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সরকার নির্ধারিত কাজী সরকার নির্ধারিত ছকে বিবাহের নিবন্ধন করবেন। যে কাগজে এই নিবন্ধন করা হয় তা-ই কাবিননামা নামে পরিচিত। কাবিননামায় যা অবশ্যই থাকবে তা হলো: বিবাহের ও নিবন্ধনের তারিখ, স্বামী ও স্ত্রীর নাম, পরিচয় ও বয়স, বিবাহের সাক্ষীদের নাম ও পরিচয়, বিবাহের দেনমোহরের পরিমাণ এবং তা আদায়ের ও বাকীর পরিমাণ, কাজীর সাক্ষর ও সিলমোহর ইত্যাদি।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন ১৯৭৪ মোতাবেক অনুযায়ী প্রতিটি বিবাহ নিবন্ধন করতে হবে। সরকার নির্ধারিত কাজী বিবাহের নিবন্ধন করবেন। বিবাহ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বরপক্ষ নিবন্ধন ফি প্রদান করবে। বিয়ে নিবন্ধনের পর কাজী তথা নিকাহ রেজিষ্টার স্বামী ও স্ত্রীকে কাবিননামার সত্যায়িত কপি প্রদানে বাধ্য। নিবন্ধনের সময় কাজী যাচাই করবেন (ক) স্বামীর বয়স কমপক্ষে ২১ এবং স্ত্রীর বয়স কমপক্ষে ১৮ হয়েছে কিনা, বিবাহে স্বামী ও স্ত্রী’র পূর্ণ সম্মতি রয়েছে কি-না, (গ) বিয়ের সাক্ষীগণ উপস্থিত কি-না এবং (ঘ) দেমমোহরের পরিমাণ যথাযোগ্য কি-না এবং তার কত অংশ আদায় করা হয়েছে। এ সমব বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে কাজী নিবন্ধনে অগ্রসর হবেন।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া


বাংলাদেশের আনাচেকানাচে বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত কাবিননামার প্রচলন দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রতিনিয়ত মেয়েদের পরিবার অতিরিক্ত কাবিননামা করার একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছে বলা যায়। বর্তমান সময়ে কোন মেয়ে যদি একটু ভালো পড়াশোনা করে ডাক্তার, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার সহ অন্য কোন ভালো পেশায় থাকে তাহলে তার বিয়ের সময় অতিরিক্ত কাবিননামা করা দোষের কিছুই নয় বলে মনে করা হয়।

বর্তমান সময়ে গ্রামে গঞ্জের বিয়ে গুলোতেও কাবিননামা মধ্যবিত্ত বা নিন্মবিত্ত দেখে হয় না। কাবিননামা নির্ধারণ হয় মেয়ের পড়াশোনা ও রূপ এবং পরিবারের উপর ভিত্তি করে। যে মেয়ে যতবেশি শিক্ষিত বা সুন্দর বা পরিবার সমাজের চোখে যত টাকাপয়সার মালিক সেই মেয়ের কাবিননামা ততবেশি। বিগত কয়েকবছরের কাবিননামার চিত্র গুলো তদন্ত করে প্রকাশ করলে দেখা যাবে শতকরা ৭০ শতাংশ মেয়েদের কাবিননামা ৫-৭লক্ষ বা ৮-১০লক্ষ অথবা তার চেয়ে বেশি।

তবে এই কাবিননামা নিয়ে ইসলাম কি বলে দেখুনঃ

ইসলামিক শরিয়ামতে সামর্থ্যবান প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারীর উভয়ের জন্য বিবাহ ওয়াজিব বা আবশ্যক। বিবাহ সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, "তোমরা নারীদের মধ্য হতে পছন্দমতো বিবাহ কর। দুই, তিন, চার, যদি তাদের সকলের প্রতি ইনসাফ করতে পার। অন্যথায় একটাই।" (সূরা নিসা, আয়াত- ৩)

স্ত্রীর লজ্জাস্থান হালাল করার জন্য নির্ধারিত পরিমান টাকা বা কোনো কিছু প্রদান করা। মোহর একজন নারীর অধিকার, কোনো উপহার নয় যে মন চাইলে দিব না হলে দিব না।

সূরা নিসার ৩নং আয়াতে আল্লাহ সূবাহানাহু ওয়াতায়ালা বলেন, "আর তোমরা নারীদের মোহর সন্তুষ্টে চিত্তে দিয়ে দাও, আর তারা যদি খুশি হয়ে তোমাদের জন্য কোনো অংশ ছেড়ে দেয় তাহলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে খাও," এছাড়াও পবিত্র কোরআনের সূরা নিসা- ২৪, সূরা মুমতাহিনার ১০নাম্বার আয়াতেও মোহর প্রদানের কথা উল্লেখিত হয়েছে। উল্লেখিত আয়াতের মাধ্যমেই প্রমাণিত হচ্ছে যে বিবাহ শুদ্ধির জন্য মোহর প্রদান আবশ্যক। মোহর একজন নারীর হক, যদি কোনো ব্যাক্তি মোহর অনাদায়ের ইচ্ছা নিয়ে বিয়ে করে তাহলে সে ব্যাভিচারী হবে। সে বিষয়েই রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যা মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি কোনো মেয়েকে মোহরানা দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু মোহরানা দেওয়ার ইচ্ছে নেই, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ব্যাভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।” তাই একজন নারীকে বিবাহ করার পর তার সাথে মিলিত হওয়ার পূর্বেই তার হক তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। মোহরের যে কতটা গুরুতপূর্ণ বিষয়, তা বুখারীর হাদীসই প্রমাণ বহন করে।

ইসলামিক আইনকানুন অনুযায়ী কাবিননামা প্রধান করা বাধ্যতামূলক তবে বর্তমান সময়ে কাবিননামা প্রধান করে কয়জন?

বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত কাবিননামা প্রচলন যেমন রয়েছে ঠিক আমার মতে কাবিননামা সীমিতআকারে বা পুরুষের কর্মক্ষেত্র বিবেচনা করে পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক করা হোক।

আমি বিগত কয়েকবছর ধরে একটু খেয়াল করলাম। দেশের আনাচে-কানাচেতে কাবিননামা নিয়ে ব্যবসা চলছে। কিছুকিছু সুন্দরী শিক্ষিত ও মোটামুটি শিক্ষিত মেয়েরা সমাজের উঁচু মানের ধনীদের বিয়ে করে অতিরিক্ত কাবিননামা করে কিছুদিন পরে ডিভোর্স দিয়ে তার কাছ থেকে কাবিননামা দাবি করে৷ বাংলাদেশের আইনকানুন অনুযায়ী পুরুষ মেয়েকে কাবিননামা দিতে বাধ্য হয়। কিছুকিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় এই কাবিননামা না দিতে পেরে অনেক পুরুষ মানুষ আত্মহত্যা করে।

বিগত কয়েকদিন আগে আমার জানামতে কয়েকটা বিয়ে এই কাবিননামার গরমিলের কারণেই ভেঙ্গে গেছে। ছেলে পক্ষ যদি ৫লক্ষ বলে মেয়ে পক্ষ তার বেশি ছাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টায় থাকে।

বাংলাদেশের বর্তমান সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ যদি খুজতে যাওয়া হয়। তাহলে অধিকাংশ বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হলো অতিরিক্ত কাবিননামা। মেয়ে চাইলে পুরুষকে যে কোন মুহূর্তে ডিভোর্স দিয়ে দিতে পারে পাশাপাশি মামলা করে সেই কাবিনের টাকা উশুল করে। আপনি যদি বাংলাদেশের আদালত গুলোর প্রাঙ্গনে একটু ঘুরে আসেন তাহলে দেখবেন কিছুকিছু মেয়েরা কাবিননামার লোভে সোনার সংসারকে কোন একটা অজুহাত দিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে স্বামীর নামে মামলা করে কাবিনের টাকা উসুল করার জন্যে কোটের এই বারান্দা থেকে ঐ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আছে। উঁকি ঝুঁকি মারছে ব্যারিস্টারদের অফিস কক্ষে—

আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি অতিরিক্ত কাবিননামা আইনকানুন বা নিজনিজ দিক থেকে সচেতন হয়ে বন্ধ করা উচিত। বিয়ের আগে যেমন ছেলে অথবা মেয়ের খোঁজখবর নেওয়া হয়। ঠিক তেমনি ছেলের কর্মক্ষেত্র অনুযায়ী কাবিননামা নির্ধারণ করে তা পরিশোধ করার জন্যে একটা সময় জুড়ে দেওয়া উচিত। তাহলে অন্তত একটু হলেও কাবিন নির্যাতন থেকে পুরুষজাতি মুক্তি পাবে।

আমি আপনি আমরা আজ থেকে মনে মনে শপথ করি। অতিরিক্ত কাবিননামায় বিয়ে নয় সাধ্যের মধ্যে যেন কাবিন হয়। মেয়েদের দেওয়া দেনমোহর চাই না চাই না। কাবিননামা পরিশোধ করবো ইসলামিক আইনকানুন মেনে চলবো।

উল্লেখ্যঃ আমার লেখায় কোন প্রকার ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.