নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিভৃতা। ভালোবাসি পড়তে। একটু আধটু লেখালেখির অপচেষ্টা চলে মাঝেমাঝে।

নিভৃতা

সামুতে আট বছর আগে কোনভাবে যুক্ত হলেও আমার ব্লগিং জীবন আসলে শুরু জানুয়ারি, ২০২০ থেকে।

নিভৃতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিনি ও কয়েকটি বেলি ফুল

২২ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩৫






এক


বেলি ফুলের গাছটা ফুলে ফুলে সাদা হয়ে গেছে। স্নিগ্ধতায় ভরপুর টাটকা একেকটা ফুল। বৃষ্টির ছাটে গোসল করে যেন আরো মোহনীয় রূপ ধারণ করেছে। গতকাল সারারাত কালবৈশাখী ঝড় হয়ে গেলো। তবে কি কালবৈশাখী,সব দীনতা, সব রিক্ততা ধুয়ে মুছে নিয়ে গেলো সাথে করে? সারা ব্যালকনি বেলির সুবাসে মাতোয়ারা। ফুলগুলো দেখে চমকে উঠলো রিনি। অনেকদিন হলো গাছটা লাগিয়েছে ও। প্রতিদিন যত্ন করে পানি দিতো। মাঝে মাঝে সারও দিতো। গাছটা ধীরে ধীরে কী সুন্দর বেড়ে উঠছিলো। তারপর হঠাৎই কী যে হলো। গাছটার কথা বেমালুম ভুলে গেলো ও। গাছে পানি দেয়া তো দূরের কথা। ব্যালকনিতে আসাটাও বন্ধ হলো।

শুধু কি ব্যালকনি? কত কী যে জীবনের বন্ধ হয়ে গেলো। ফেবুতে যাওয়া হয় না। ব্লগে যাওয়া হয় না। ডায়রি লিখা হয় না। সব প্রিয় কাজগুলো ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে শুরু করলো। বাচ্চাগুলোর সাথে সারাদিন ক্যাটক্যাট করতো। ওর মত শান্ত একটা মহিলার মেজাজ কী যে তিরিক্ষি রূপ ধারণ করলো। ঘরের সবাই ওর সাথে কথা বলতে ভয় পেতো।

এমন অবস্থা শুধু যে ওর, তা না। সবারই। বাচ্চাগুলোও ঝগড়া করতে করতে ক্লান্ত। পৃথিবীতে সবাই সবার সাথে ঝগড়া করতে করতে ক্লান্ত। বাবার সাথে ছেলের কথা বন্ধ। মায়ের সাথে মেয়ের কথা বন্ধ। স্বামী স্ত্রী একে অপরের দিকে পেছন ফিরে শোয়। মাঝখানে থাকে কোলবালিশ। বন্ধুর সাথে বন্ধুর যোগাযোগ বন্ধ। কারণ বাকবিতণ্ডা।

ঘরে ঘরে এখন নিস্তব্ধতা। শহরে শহরে নিস্তব্ধতা। দেশে দেশে নিস্তব্ধতা। পৃথিবীটাই এখন নিস্তব্ধতা। কথাবিহীন নিস্তব্ধতা। যান্ত্রিক নিস্তব্ধতাও ছিল কিছুদিন আগে। তবে এখন শুধু কথাহীন নিস্তব্ধতা। পৃথিবীর সব মানুষ কথা বলতে ভুলে গেছে। হাসতে ভুলে গেছে। শুধু আছে কাজ। হাসিবিহীন, কথাবিহীন কাজ। যে যার কাজ করে। জরুরী কথা সব হয় ম্যাসেজে, এস এস এস এ।

বহুদিন কোন ফুল, কোন পাখি, কোন গান মনে সাড়া জাগায়নি। আজ কী যে হলো। এই বেলি ফুল মনে কী যেন এক বার্তা পৌঁছে দিলো। বার্তাটা খুশির নাকি বিষাদের ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না রিনি। ঠোঁটের দুই কোণে একটা কিছুর অস্তিত্ব টের পাওয়া গেলো। রিনি নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে কিছু একটা বুঝার চেষ্টা করলো। ঠোঁটটা কি একটু প্রসারিত হয়েছে? রিনি কিছু একটার প্রয়োজন অনুভব করলো। কী সেটা? মনের ভেতরটা হাতড়াতে লাগলো ও পাগলের মত। কী সেই জিনিস। কী? কী? কী?

হঠাৎ চোখদুটো জ্বলে উঠলো। মনে পড়েছে। হ্যাঁ, মনে পড়েছে, জিনিসটা কী? ছুটে গেলো ও জিনিসটার কাছে। ড্রেসিং টেবিলের আয়না। যার প্রয়োজন, কতকাল যে অনুভব করেনি কে জানে। কখনও যদি আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখাও যেত, সেই প্রতিচ্ছবিটা সচেতনভাবে তাকিয়ে দেখার সাধ কতদিন জাগেনি! আজ সেই প্রয়োজন বোধ করছে ও। আজ সেই সাধ জেগেছে বুকে, অনেক দিন পর।

আয়নার সামনে দাঁড়াতেই নিজের মুখমণ্ডল চোখে পড়লো। নিজের মুখটা দুই হাতে স্পর্শ করলো রিনি। কতদিন পর নিজের চেহারাটা এভাবে দেখছে। ঠোঁটের দুই কোনে ওটা কী দেখা যাচ্ছে? দুই ঠোঁটের এই প্রাসারণকে কী যেন বলে? আহা! মনে পড়ছে না কিছুতেই। কী ওঠা? বড় চেনা সেই নাম। বড় আপন! আবার মনের আনাচেকানাচে পাগলের মত হাতড়াতে থাকে ও।

দুই

একটার পর একটা ফ্লাইট বিদেশীদের নিয়ে হাজির হচ্ছে বাংলাদেশে। চীন, ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মানুষেরা এসে ভরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশে একটা নতুন ভাইরাসের উদ্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের সব মানুষ সেই ভাইরাসের সংক্রমণে সংক্রমিত। শোনা যায়, সেই ভাইরাস নাকি প্রথম সংক্রমিত করে রিনি নামের এক নারীকে। সেই ভাইরাস নাকি ভীষণ ছোঁয়াচে। তার কাছ থেকেই ভাইরাসটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে সবাই ঈদ উৎসবের মত কোলাকুলি করছে। দেশে বিদেশে এই ভাইরাসের খবর ছড়িয়ে যেতেই, সবাই পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। বিদেশীরাও বাংলাদেশীদের সাথে কোলাকুলিতে মেতে উঠছে। কারণ এই ভাইরাসটা এখন সবার খুব প্রয়োজন। করোনা নামক এক ভয়ঙ্কর বিচ্ছিন্নতাবাদি ভাইরাসের ছোবলে পৃথিবীটা একটি বিষণ্ন গ্রহে রূপ নিয়েছিল। যেখানে খুশি নামক অনুভূতিটির চিহ্ন বিলীন হয়ে গিয়েছিল।

এবার হাসি নামক একটি ভাইরাস খুশি বহন করে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বাংলাদেশে। তাই তো সব বিষণ্ন মানুষের দল ছুটছে হাসিখুশির দেশ বাংলাদেশে। আর নয় কোন বিচ্ছিন্নতা। সবখানে এখন শুধুই সংযুক্ততা। সবখানে এখন শুধুই খুশির বার্তা।


©নিভৃতা

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৫৯

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন,করোনা পরীক্ষার জন্য যেকোন সময় চায়না থেকে ১০ হাজার ম্যাডিকেল কিট আনা হবে।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১২:২২

নিভৃতা বলেছেন: আল্লাহ সহায়।

২| ২২ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:২১

রাজীব নুর বলেছেন: বেলি ফুল আমার ভীষন প্রিয়।
গতকাল আসলেই ঝড় হয়েছে।
বেলকনি থেকে সুরভির সব গাছটাস পড়ে গেছে।
আপাতত এয়ারপোর্ট বন্ধ।

ইতালি সরকার করোনায় মৃত্যু ঠেকাতে ব্যার্থ হলেও শেখ হাসিনার সরকার মৃত্যু ঠেকিয়ে যাচ্ছেন মহান আল্লার রহমতে। মৃত্যু মাত্র দুইজনের। লোকসংখ্যা ১৮ কোটি। ইটালির চাইতে বহুগুন বেশী।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১২:২২

নিভৃতা বলেছেন: আমাদের এখানেও ঝড় হয়েছে খুব।

৩| ২২ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:২৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: করুণাময় । এই মরণ ব্যাথি থেকে আমাদের সকলকে নিরাপদ রাখো

২৩ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১২:২৩

নিভৃতা বলেছেন: আমিন

৪| ২২ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৯

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনির গল্প বাস্তক হোক।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১২:২৪

নিভৃতা বলেছেন: ভালো থাকবেন সবাইকে নিয়ে, দোয়া রইল।

৫| ২২ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৩

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: পোস্টে বিষণ্ন ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।
আমরা যে যেখানে থাকি না কেন, খুব দরকার না পড়লে বাইরে বের হবো না।
দু-তিন ঘণ্টা পরপর হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত মুখ ধোয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ রইল। গ্যাদারিং অ্যাভয়েড করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। সজাগ ও পরিচ্ছন্নতা একমাত্র কাম্য। বাকিটা উপরওয়ালা সহায়।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১২:২৫

নিভৃতা বলেছেন: জ্বী, সতর্কতা এবং সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসাই এখন একমাত্র উপায়। ভালো থাকবেন সবাইকে নিয়ে। এই দুর্দিনের অবসান ঘটুক।

৬| ২২ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৩৫

করুণাধারা বলেছেন: ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১২:২৬

নিভৃতা বলেছেন: ভালো থাকুন সবাইকে নিয়ে, এই দোয়া করি।

৭| ২২ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৩৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: নিভৃতা,




আশাবাদী হওয়াও ইমিউন সিষ্টেমের জন্যে একটি প্রনোদনা।

উত্তরা গণভবনে কিন্তু সুগন্ধি ছড়াচ্ছে হৈমন্তী ফুল। মৃতপ্রায় হৈমন্তী ফুল গাছটি বেঁচে উঠেছে আবার!
সুগন্ধি হাসিও ছড়িয়ে যাক সবখানে।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১২:২৮

নিভৃতা বলেছেন: আশা ছাড়া যে আর কোন পথ খোলা নাই।
মেঘ কেটে গিয়ে আলো আসবেই, ইনশাআল্লাহ।
দোয়া করি যেন ভালো থাকেন সবাইকে নিয়ে।

৮| ২৩ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৭:১৩

ইসিয়াক বলেছেন: ফুলে ফুলে পাখির গানে ,
মানব মানবীর মৌন মুখর কলতানে আবার ভরে উঠুক পৃথিবী।
শুভেচ্ছা সহ শুভকামনা রইলো আপু।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:০১

নিভৃতা বলেছেন: ভালো থেকো ভাই। সবাই ভালো থেকো। আল্লাহ সহায় হোন সবার।

৯| ২৩ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: আমাদের এখানেও ঝড় হয়েছে খুব।

আক্রান্ত ৩৩ জনের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৯ জন। কারো নিস্তার নেই ।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:০১

নিভৃতা বলেছেন: ভালো লাগছে না কিছুই। অসহায় বোধ করছি খুব।

১০| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৫

অধীতি বলেছেন: শুরু থেকে শেষ,লিখেছেন বেশ

১১| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১২

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: আরো আরো লিখুন।

১২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:১১

খায়রুল আহসান বলেছেন: দশ মাসেরও বেশি পরে আপনার এ পোস্টটি পড়লাম। তবুও লেখার গুণে টাটকা বেলি ফুলের সুবাস পেলাম।
আপনার প্রথম পোস্টে (ভয়-১) বেশ কিছুদিন আগে একটি মন্তব্য রেখে এসেছিলাম। আশাকরি, সময় করে একবার সেটা দেখে নেবেন।
পোস্টে পঞ্চম ভাল লাগা + +।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.