![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনন্ত নিগার
---------------------
দেশের পাড়ায় পাড়ায় সব খালি জমি, মাঠ আর খালি থাকছেনা। জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে এসব জায়গা, জমিতে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে বসতবাড়ি, দানবীয় আকৃতির সব মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং। ফলে পাড়ার ছেলেরা খেলার জায়গা না পেয়ে অবসর সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছে ভিন্ন পথে। যারা ভদ্র ঘরের সন্তান তারা কম্পিউটার বা টিভি জাতীয় যন্ত্র নিয়ে ঘরে বসে হাই তুলছে, অথবা বাপের টাকা আছে বিধায় স্টেডিয়ামে ভর্তি হয়ে হয়তো কোনো ক্রীড়া অনুশীলনে ব্যস্ত হতে পারছে। কিন্তু যারা দরিদ্র, বেকার কিংবা টোকাই টাইপ ছেলে, এরা কোন পথে ব্যয় করছে সময়? বিকেলে আমি রাস্তা দিয়ে বা গলি দিয়ে হাটতে বেরোলে দেখি গলির মোড়ে, কিংবা চায়ের দোকানে বসে সিগ্রেটে দম নিচ্ছে, মানুষকে শুনিয়ে শুনিয়ে বিজ্ঞের মত অশালীন মন্তব্য, কৌতুক বলে আতংক সৃষ্টি করার মত অট্রহাসিতে ফেটে পড়ছে। তার চেয়েও বড় ব্যাপার মেয়েদের নিয়ে তাদের ইভটিজিংয়ের মাত্রা বাড়ছে। রাস্তায় ক্যারম খেলায় ব্যস্ত, কিংবা গলির মোড়ে বসা এক দল ছেলে তাদের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া কোনো মেয়েকে নিয়ে অশালীন কোনো মন্তব্য করছে না, কোনো বিকৃত অঙ্গভঙ্গি বা অশ্লীল কোনো ইঙ্গিত করছে না এরকম দৃশ্য চোখে পড়া এখন একেবারেই বিরল হয়ে উঠেছে । কারণ, বেকার যুবকদের সমস্যা হল তারা কোথাও গিয়ে কোনো মাঠে গিয়ে খেলবে তার সুবিধা নেই, আর নয়তো কায়িক শ্রম করে টাকা উপার্জন করে পরিবারের লাঙ্গল টানা ছাড়া তাদের আর কোনো গত্যন্তর নেই। অথচ হাতে কমদামি চাইনিজ স্মার্টফোন থাকার কারণে তারা খুব সহজেই শিখে নিচ্ছে আধুনিক যুবকের আধুনিক জীবনে কি কি থাকা উচিত। ফ্যাশন, নারী সঙ্গ, স্মার্ট স্টাইলে কথা বলা, বা রং-তামাশা করে নিজেকে স্মার্ট হিসেবে জাহির করার চেষ্ঠা করা এবং সেই সাথে মাদকের নায়কীয় স্টাইল অনুসরণ করা- এসবই তারা তাদের স্মার্টগুরু স্মার্টফোন থেকে শিখে নিচ্ছে। শিখে নিচ্ছে শরীরের রসায়ন অথচ করতে পারছে না প্রবৃত্তির সংবরণ। সস্তা প্রযুক্তি হাতে আসছে অথচ প্রযুক্তি যা দীক্ষা দিচ্ছে তা অনুসরণ করা বা সেই অনুযায়ী জীবন সাজানোর জন্য যা যা প্রয়োজন তা কেনার মত অর্থনৈতিক সামর্থ্য তাদের হচ্ছে না। সুতরাং শিক্ষা কিংবা খেলাধূলা, এই দুটো জিনিসের জায়গা দখল করে নিচ্ছে সস্তা প্রযুক্তির অপব্যবহার, ইভটিজিং আর মাদক প্রবণতা। বাড়ছে বস্তুকেন্দ্রিক জীবনের প্রতি আসক্তি। আর তাতেই বাড়ছে মানুষের বস্তুগত চাহিদা, জৈবিক চাহিদা। এসব মেটানোর ক্ষমতা যাদের নেই তারাও হণ্যে হয়ে উঠছে চাহিদা মেটানোর জন্য। চাহিদা মেটাতে চাই কড়কড়ে কিছু কাগজ। সেই মোহনীয় ঘ্রাণসম্বলিত কাগজ কামাই করতে গিয়ে বাড়ছে অপরাধ। কয়েকবার জেল খেটে সনদ নিয়ে যারা আসছে তাদের অপরাধ করার সাহস আরো বেড়ে যাচ্ছে। আগে ইভটিজিং, আর এখন তারা ধর্ষণ করতেও পিছুপা হচ্ছে না। তাহলে করণীয় কি? দেখা যাচ্ছে, প্রথমে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, চাহিদা মেটাতে গিয়ে জায়গার বিলুপ্তি, কম জায়গায় অধিক ঘনবসতি, পরিবেশ দূষণ, খেলাধুলার অভাবে যুবক-ছেলেদের মন-মগজ দূষন, তারপর অপরাধ...তারপর...আরো লিখব? নাহ! আর লিখতে ভাল্লাগছে না। তবে একটা প্রশ্ন দিয়ে শেষ করি। প্রশ্নটা হল- কোনটা আগে প্রয়োজন? আগে প্রযুক্তি নাকি আগে শিক্ষা?
©somewhere in net ltd.