নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রূদ্রনীল আকাশ যদি কালো হয়ে যায়, কি\'ইবা করার আছে, কে\'ইবা করতে চায়!

নিহান ওয়াহিদ

রুদ্রনিল আকাশ যদি কালো হয়ে যায়,

নিহান ওয়াহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাচীনতম এক বিদ্যাপীঠের কথা

১৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:৩৮

বিজনেস ম্যাথ পড়ানোর ফাঁকে হঠাৎ স্যার জিজ্ঞেস করলেন “স্নাতক” শব্দটি কোথা হতে এসেছে তা আমরা জানি কিনা। আমরা হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। যদিও আমরা স্নাতক করছি, হিসাববিজ্ঞান কোথা থেকে এসেছে তার আদ্যোপান্ত জানলেও স্নাতক কোথা থেকে এসেছে তা জানি না। জানার প্রয়োজন ও মনে করি নাই। হয়তো স্যার তা জানতেন, তাই নিজেই উত্তর দিলেন। প্রাচীনকালে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পরে ছাত্রদের স্নান বা গোসল করানো হত। যারা সেই স্নান করতো তাদের বলা হত স্নাতক।
স্যারের কথা শুনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথার ভেতর।
তাহলে সেই ছাত্ররা কি গ্রাজুয়েশনের আগে কোনদিন স্নান করতো না?
অসম্ভব না। অনেক নাগা ঋষি আছেন যারা গোসল করেন না। প্রশ্নটাকে জোর করে মাথা থেকে বিদায় করলাম।
সাথে সাথে আরেকটা প্রশ্ন মাথার ভেতর ঢুকে গেল যা বিদায় করা সম্ভবপর হলো না।
‘গ্রাজুয়েশন করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে হবে। প্রাচীনকালে কি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল?’
উত্তর হল- ছিল।
প্রায় দেড় হাজার বছর আগে বিহারে স্থাপন করা হয় এক বিশ্ববিদ্যালয় যার নাম “নালন্দা”।
সেই সময়ে প্রায় ১৪ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা এক বিশ্ববিদ্যালয়। অনেকে বলে থাকেন খৃষ্টপূর্ব ৩০০ তে সম্রাট অশোক এর বূৎপত্তি করেন। তবে বেশীরভাগ ঐতিহাসিক একমত যে ৮২৭ খৃষ্টাব্দে গুপ্ত বংশের রাজা কুমারগুপ্ত এটা প্রতিষ্ঠীত করেন।

এর স্বর্নযুগে এতে প্রায় ১০,০০০ শিক্ষার্থী শিক্ষালাভ করতো যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসতো চীন, পারস্য, কোরিয়া, জাপান, তিব্বত, ইন্দোনেশিয়া এমনকি গ্রীস থেকেও। মধ্যযুগে যেমন জ্ঞান চর্চার তীর্থস্থান হিসেবে বাগদাদের নাম শুনা যায়, তেমনি নবম শতাব্দীতে এটাও ছিল জ্ঞান অর্জনের কেন্দ্রস্থল। মূলত এটা বৌদ্ধ ধর্মভিত্তিক হলেও এখানে হিন্দু ধর্ম, বেদ, যুক্তিবিদ্যা, ভাষাতত্ব ও ব্যকরণ, চিকিৎসাবিদ্যা, জোতিবিদ্যা ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা হত।

নালন্দা বেশ কয়েকবার আক্রান্ত হয় বহিরাগতদের দ্বারা।
সর্বপ্রথম ৪৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে হানদের দ্বারা।
আবার ৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রাজা শশাঙ্কের দ্বারা।
সর্বশেষ ১১৯৩ সালে তুর্কি সৈনিক বখতিয়ার খিলজী দ্বারা। এর পরে ধীরে ধীরে পতন ঘটে ভারতবর্ষের এক গর্ব “নালন্দা”র।

যুগে যুগে যত যুদ্ধ হয়েছে তাতে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ও দুঃখজনক যেটা হয়েছে তা হলো জ্ঞানের ধ্বংস। প্রতিবার আক্রমনেই নালন্দার অনেক ছাত্র শিক্ষককে হত্যা করা হয়, ধ্বংস করা হয় অনেক স্থাপনা। চিন্তা করেন, সেই সময়েই তিনটি নয়তলা লাইব্রেরি ছিল যাতে ছিল হাজার হাজার বই। বখতিয়ার খিলজির সৈনিকেরা সেগুলো পুড়িয়ে ফেলে। সেই বই গুলো পুড়তে সময় লেগেছিল কয়েক মাস। এর পরে নালন্দার কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। পনেরশো শতকের দিকে এটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নালন্দার কিছু কিছু স্থান এখনো টিকে আছে। প্রায় ১৫,০০০ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে খনন করা হচ্ছে।

মজার ব্যাপার হলো, প্রায় ৭০০ বছর পরে এটা আবার চালু হয়েছে ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে। পাঁচ ছাত্রী সহ মোট পনেরজন শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হয়েছে এক হাজার জন শিক্ষার্থী থেকে। আর রয়েছেন পনেরজন শিক্ষক।

আয়না ভাঙলে জোড়া হয়তোবা লাগানো যায়, কিন্তু তার আগের রূপ ফিরে পাওয়া যায়না। নালন্দা তার আগের রূপ ফিরে পাবে কি না তাই এখন দেখার বিষয়।

শুরু করেছিলাম বিজনেস ম্যাথ দিয়ে। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে স্যারের কাছ থেকে জানা অজানা অনেক কিছু মাথায় ঢুকালেও ম্যাথ মাথায় ঢুকেনি কিছুই। তাই পরিক্ষা শেষ হলেও এই সাবজেক্টটা নিয়ে বিশেষ চিন্তিত আছি।



মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:১৩

সেলিনা জাহান প্রিয়া বলেছেন: বখতিয়ার খিলজির সৈনিকেরা সেগুলো পুড়িয়ে ফেলে। সেই বই গুলো পুড়তে সময় লেগেছিল কয়েক মাস। এর পরে নালন্দার কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। পনেরশো শতকের দিকে এটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।--- এই তথ্য সূত্র দেন । না হয় আপনার
এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে ।।

১৮ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৪৩

নিহান ওয়াহিদ বলেছেন: পুরো লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ আপনার এগ্রেসিভ কমেন্টের জন্যও। প্রথমেই বলে রাখি, আমি বখতিয়ায়ের সাথে ছিলাম না তখন, অথবা ছিলাম না সেই মঠেও। তাই সত্যি সত্যি কি ঘটেছিল বলা মুশকিল। যা জানি তা বিভিন্ন বই আর ইন্টারনেট সাইট থেকে।
খিলজীর আক্রমনের সাথে ইসলাম প্রচারের সম্পর্ক নিয়ে আমি সন্দিহান। কারন তিনি রাজ্য বিস্তার করেছেন, ইসলাম প্রচার নয়। তাই নালন্দার ধ্বংসের জন্য ইসলামকে দায়ী করাটা যুক্তিযুক্ত হবেনা।
দ্বিতীয়ত, অনেকেই বলে থাকেন খিলজী বুদ্ধদের সম্পর্কে ছিলেন অজ্ঞ। তিনি মনে করেছিলেন এরা রাজপুত। আর নালন্দাকে মনে হয়েছিল চারপাশ ঘেরা এক দূর্গ। তাই সেটা ধ্বংস করা ছিল স্বাভাবিক।
তৃতীয়ত, নালন্দা কেবল মুসলিমদের দ্বারাই আক্রান্ত হয়নি। এর আগে রাজা শশাঙ্ক দ্বারা অনেক বুদ্ধকে হত্যা করা হয়। বুদ্ধগয়া উপরে ফেলা হয়। সেই রাজা শশাঙ্ক ছিলেন বাঙালি এবং হিন্দু।
চতুর্থত, ভারতে বৌদ্ধধর্মের পতনের জন্যও যারা মুসলিমদের দোষারোপ করে তাদের স্বরন করা উচিৎ কি পরিমাণ নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ হিন্দুরা চালিয়েছিল তাদের উপর।
পঞ্চমত, লাইব্রেরী শুধু মুসলিমরাই ধ্বংস করেছেন বলে যারা অভিযোগ করেন তাদের জ্ঞানের সীমা নিয়ে আমার আফসোস হবে। কারন আলেকজান্দ্রিয়ার অথবা গ্রানাডার লাইব্রেরী কি মুসলিমরা ধ্বংস করেছিল??
যুদ্ধ করেনি এমন সম্প্রদায় পাওয়া মুশকিল। যত শক্তিশালী সম্প্রদায়, তত ভয়ংকর যুদ্ধ, সেখানে অন্যান্য জিনিসের মত ধ্বংস হবে জ্ঞানেরও। এটার জন্য কোন বিশেষ ধর্মকে ব্লেইম করা উচিৎ না। (অন্যভাবে বলতে গেলে "এই নিয়ে রায়য়য়য়জনীতি করার কিছু নেই)
আবারো বলছি, ভুল হলে ক্ষমা করবেন। ইতিহাস বিকৃতি মানুষের চিরন্তন স্বভাব। মানুষ তার সুবিধামত ইতিহাস বিকৃত করে। পরবর্তী প্রজন্ম সেই বিকৃত ইতিহাস নিয়ে বেড়ে উঠে। হয়তো আমরাও বেড়ে উঠছি

২| ১৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:১৭

সেলিনা জাহান প্রিয়া বলেছেন: ১১৯৩ সালে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী নালন্দ মহাবিহার ধ্বংস করে ফেলেন;[২১] এই ঘটনাটি ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের পতনের সূচক হিসেবে গণ্য করা হয়। পারস্যের ইতিহাসবিদ মিনহাজ তার তাবাকাতে নাসিরি গ্রন্থতে লিখেছেন যে হাজার হাজার বৌদ্ধ পুরোহিতকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় কিংবা মাথা কেটে ফেলা হয়; খিলজি এভাবে এই অঞ্চল থেকে বৌদ্ধধর্ম উৎপাটন করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন,[২২] মহাবিহারের গ্রন্থাগারটি মাসের পর মাস ধরে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়।---
এটা মিথ্যা প্রচার । তারা তা প্রামান করতে পারে নাই । ভারতে মুসলিম দের ছোট করার জন্য এটা অপ প্রচার । তখন তা হিন্দুরা পুড়ে আমার কাছে তাঁর তথ্য আছে দিব ।। আপনাকে

৩| ১৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:৪৪

গেম চেঞ্জার বলেছেন: এইগুলো এখন শুধুই স্মৃতি!!

১৮ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৪৬

নিহান ওয়াহিদ বলেছেন: হ ভাউ, মানুষের স্মৃতির শ্যাষ নাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.