নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এক নীলান্জনার খোজে

ট্রাভেলার

এক নীলান্জনার খোজে › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধ্বংসস্তূপের নগরী সিলেটে দিনভর গুজব ও আতঙ্ক

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১১

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে: সিলেট এখন ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে। নগরজুড়ে তাণ্ডবের চিহ্ন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। গোটা নগরীতে জামায়াতের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো ভাঙাচোরা। জামায়াতের নয়- এমন প্রতিষ্ঠানেও করা হয়েছে লুট। গতকালও বিভিন্ন স্থানে হয়েছে হামলা-পাল্টা হামলা। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির টহলে সিলেটের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হলেও দিনভর ছিল নানা গুজব। এ কারণে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নগরীতে হুড়োহুড়ি, দৌড়াদৌড়ির অন্ত ছিল না। সিলেটবাসীর দিন কাটছে আতঙ্কের মধ্যে। কখন, কোথায় হামলা ও পাল্টা হামলা হয়- এ আশঙ্কা ছিল সাধারণ মানুষের মনে। গোয়েন্দারা আগেই আশঙ্কা করেছিলেন, সিলেটে সুযোগ নিতে পারে জামায়াত ও শিবির। এ কারণে তারা নিরাপত্তা জোরদারের পক্ষে মতামত দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটেছে তার উল্টো। স্বল্পসংখ্যক পুলিশ মাঠে থাকায় সিলেটে ইসলামী দলগুলোর মিছিল থেকে আঘাত করা হয়েছে শহীদ মিনারে। শুক্রবার বাদ জুমা ওই হামলা চালানো হয়। শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়। বেদিতে দেয়া হয় আগুন। এ ঘটনার পর পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। ঘটনার প্রতিবাদে সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে মিছিল বের করে ছাত্রলীগ রাত ১০টা পর্যন্ত নগরীতে টানা তাণ্ডব চালায়। ইসলামী দলগুলোর কর্মীরা শহীদ মিনারের পাশের ট্রাস্ট ব্যাংক, বিএমএ ভবন, রেড ক্রিসেন্টের কার্যালয় ভাঙচুর করে। পরে ছাত্রলীগ নগরজুড়ে তাণ্ডবের অংশ হিসেবে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত নগরীর আল হামরা মার্কেট, উইমেন্স কলেজ, ইবনে সিনা, রেটিনা কোচিং সেন্টার, ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথ সহ কমপক্ষে ১৫টি স্থানে হামলা চালায়। এর বাইরেও সিলেট জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি দিলদার হোসেন সেলিমের বাসা, রয়েল সিটি, রেইনবো চাইনিজ, বনফুল মিষ্টির দোকানের তিনটি শাখায় হামলা চালায়। এসব স্থানে তারা ব্যাপক লুটপাট চালায়। একই সঙ্গে তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে ৫ জন সাংবাদিকের মোটরসাইকেল। এ অবস্থায় রাতে জননিরাপত্তা ব্যাহত হয়ে পড়লে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে বাসা-বাড়িতে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। শুক্রবার তাণ্ডব পাল্টা তাণ্ডবের ঘটনায় শনিবার ভোর হয় আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। জামায়াত নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান আল হামরা ভাঙচুরের ঘটনায় সকাল ১১টার দিকে রাস্তায় নেমে আসেন ব্যবসায়ীরা। জিন্দাবাজার এলাকায় ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। ওদিকে, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় সিলেটের সর্বস্তরের সাংবাদিকরা অবস্থান নেন নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায়। তারা হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। শুক্রবার উভয় পক্ষ দ্বারাই আক্রান্ত হয়েছিলেন সাংবাদিকরা। এ কারণে সাংবাদিকরা নিরাপত্তা চেয়ে ওই মানববন্ধন করেন। দুপুরে আল হামরা ও ইবনে সিনা হাসপাতালে ছাত্রলীগ চালিয়ে ভাঙচুর করে। এছাড়া নগরীর আম্বরখানাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়ও চোরাগোপ্তা হামলা ও পাল্টা হামলা হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে নগরীর লামাবাজার এলাকায় মদন মোহন ছাত্রলীগের সভাপতি অরুণ দেব নাথ সাগরকে কোপানো হয়। ছাত্রলীগ এ ঘটনার জন্য শিবিরকে দায়ী করে গতকাল প্রতিবাদ জানিয়েছে।

দু’টি মামলা: শুক্রবার সিলেট নগরীতে ব্যাপক তাণ্ডব ও শহীদ মিনার ভাঙচুরের ঘটনায় সিলেটের কোতোয়ালি থানায় দু’টি মামলা হয়েছে। সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশ এ দু’টি মামলা করে। মামলায় আটক থাকা ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় প্রায় ৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। সিলেটের জামায়াত-শিবিরের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। সিলেটের কোতোয়ালি থানার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি আনোয়ার হোসেন মানবজমিনকে জানান, যারা হামলা ও ভাঙচুর করেছে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। ছবি ও ফুটেজের মাধ্যমে আসামিদের সনাক্ত করা হচ্ছে। তিনি জানান, এ ঘটনায় পুলিশ অভিযানে রয়েছে। শহীদ মিনার ভাঙচুরকারীদের ছাড় দেয়া হবে না।

সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদ মিছিল: শহীদ মিনারে ভাঙচুরের ঘটনায় সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক ও নাট্যকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করেছেন। ওই মিছিল থেকে শহীদ মিনার ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়। একই সঙ্গে শহীদ মিনারে হামলাকারীদের জামায়াত ও শিবিরকর্মী বলে দাবি করে তারা ঘটনার জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

ছাত্রলীগের অবরোধ: গতকালও সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করেছে ছাত্রলীগ। দুপুরে সিলেট নগরীর তালতলা এলাকার ভিআইপি সড়কে অবরোধ করা হয়। এ সময় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে তারা বিক্ষোভ করে এবং শহীদ মিনারে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগ অবরোধ করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানায়।

বিএনপি’র নিন্দা: সিলেটে শহীদ মিনার ভাঙচুর ও পরবর্তীকালে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি। গতকাল দুপুরে সিলেট নগরীর লামাবাজারস্থ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি দিলদার হোসেন সেলিমের বাসায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে দিলদার হোসেন সেলিম জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে তার বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। নগরজুড়ে থাকা এম ইলিয়াস আলীর বিলবোর্ড ভাঙচুর করেছে। তিনি জানান, যারা শহীদ মিনার ভেঙেছে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। আবার যারা সাধারণ মানুষের স্থাপনায় হামলা করেছে তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। সংবাদ সম্মেলনে সিলেট মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ূম জালালী পংকি, বিএনপি নেতা এডভোকেট নুরুল হক, আলী আহমদ, মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, রেজাউল হাসান কয়েস লোদিসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেন। এদিকে, উইমেন্স মেডিকেল কলেজে হামলার ঘটনায়ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ নিন্দা জানিয়ে বলেছে, হামলাকালে রোগীরা তটস্থ ছিল।

নিহত তাহমিদ এমসি কলেজের ছাত্র: সিলেটে গুলিতে নিহত তাহমিদ এমসি কলেজের ছাত্র। সে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নয় বলে জানিয়েছে তার পরিবার। তাহমিদ সিলেট নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা।

তার পিতা নুরুল মোস্তাফা মিঠু সিলেটের জালালাবাদ গ্যাসের কর্মকর্তা। শুক্রবার সে পাড়ার মানুষের সঙ্গে মিছিলে এসেছিল। আর মিছিলে এসেই গুলিবিদ্ধ হয়। সন্ধ্যার পর তার পিতা মিঠু হাসপাতালে গিয়ে ছেলের লাশ সনাক্ত করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদি। এদিকে, গতকাল বাদ আসর নগরীর নয়া সড়ক জামে মসজিদে জানাযার নামাজের পর মানিকপীর (রহ.) কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়েছে।

গোয়েন্দা রিপোর্টে পাত্তা দেয়নি পুলিশ: শুক্রবার সিলেটে নাশকতার আশঙ্কা আগেই করেছিল গোয়েন্দারা। সে কারণে নগরীর বিভিন্ন স্থাপনাসহ কেপিআই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের মতামত দিয়েছিল গোয়েন্দারা। কিন্তু সিলেটের পুলিশ প্রশাসন তাদের সেই মতামতের তোয়াক্কা করেনি। এ কারণে গতকাল বাদ জুমা যখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ট্রাস্ট ব্যাংক ও বিএমএ ভবনে হামলা ও ভাঙচুর করা হয় তখন তার আশপাশে কোন পুলিশ ছিল না। বিক্ষোভকারীরা ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন ধরিয়ে দিলেও প্রায় ১৫ মিনিট কোন পুলিশের দেখা মেলেনি। শেষে পুলিশ এসে পরিস্থিতি দেখে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে, সিলেটে শহীদ মিনার ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি বলেন, যারা শহীদ মিনার ভেঙেছে তারা অস্তিত্বে আঘাত করেছে। ওই চক্রের স্থান বাংলার মাটিতে নেই। তাদের ধরে ধরে আইনের আওতার আনা হবে। এ পরিস্থিতিতে সবাইকে ধৈর্য ধারণের আহবান জানান তিনি

Sorch

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.