নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"যুদ্ধ ছাড়া কোনো জাতিকে ধ্বংস করে দিতে চাও, তবে ঐ জাতির তরুণদের মাঝে অশ্লীলতা বেহায়াপনা ছড়িয়ে দাও।\" সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী (রহ:)

সামিউল ইসলাম বাবু

যেটুকু পাও ছোট্ট সময়/কাজ করে যাও রবের তরে/ক্ষনিক সময় বিস্রাম নিও/ঘুমিও না তুমি অলসতা ভরে//

সামিউল ইসলাম বাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাদকাতুল ফিতর

২৩ শে মে, ২০২০ রাত ১১:২২

চোখের যিনা
রাত জাগার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টি ভঙ্গি
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
নসিহাত ০১
নসিহাত ০২

সাদক্বাতুল ফিতর আদায় করা খুবই জরুরি। এর হুকুম নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও মোটামোটা ভাবে হাদীস গুলো পড়লে মনে হবে এটা আল্লাহ তাআলা আবশ্যক করে দিয়েছেন। ইবনে উমারের (রা) এর হাদীসে "ফারাদ্বা রাসূলুল্লাহ" শব্দটা অনেক শক্ত, ফলে অধিকাংশ উলামার এইটাকে ফরয বলার পেছনে অনেক সুন্দর যুক্তি মেলে।

আমাদের নবী (সা) এটা আদায় করতে যে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তাতে খাদ্য দ্রব্যের নাম নিয়েছেন। সেখানে আটা, খেজুর, গম ইত্যাদির কথা বলেছেন।

এখন এই সাদাক্বাহ আদায় করতে যেয়ে খাদ্যের দাম দিলে আদায় হবে কিনা এই নিয়ে আলিমগণের মাঝে দ্বিমত চলে আসছে সেই সালাফের যুগ থেকেই। এ সম্পর্কে ৩টি মতই প্রসিদ্ধঃ

১- খাদ্য দ্রব্যই দিতে হবে, এর মূল্য দিলে আদায় হবে না। এই মতটা অধিকাংশ ফাক্বীহগণের সিদ্ধান্ত। এই ব্যপারে মালেকি, শাফেঈ ও হানবালী আলিমগণ মোটামুটি একমত।

২- খাদ্য দ্রব্য দেয়া ভালো। তবে এর অর্থ দিলেও আদায় হবে। এটা হানাফী মাযহাবের সর্বসাকুল্য রায়। এমনকি ইমাম শাফেঈ থেকেও এমন একটা মত আছে। ইমাম আহমদের ও একটা মত এমন ছিলো।

৩- এই দুই প্রান্তিকতার মাঝখানে আছেন ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ। তিনি বলেছেন, খাদ্য দ্রব্য দিয়ে সাদক্বাতুল ফিতর আদায় করাই হলো মৌলিক নির্দেশ। তবে যদি কোন প্রয়োজন দেখা দেয়, অথবা টাকা দিলে ভালো মনে হয় তাহলে টাকা দিলেও আদায় হবে।

আমাদের শুয়ুখগণ মদীনাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মতটাই গ্রহন করে অন্য কোন মতের দিকে দৃষ্টি দেননি। অনেক শুয়ুখ তো বলেই দিয়েছেন যে, যদি কেও টাকা দিয়ে সাদক্বাতুল ফিতর আদায় করে তাহলে তা আদায় হবে না।

আমার মনে আছে, মদীনায় এই মাসআলাটা বিদায়াতুল মুজতাহিদ পড়ানোর সময় আমাদের শায়খ খুব বিপদে পড়েছিলেন। প্রায় ৯০% ছাত্ররা ছিলো টাকা দেয়া উত্তমের পক্ষে। তখন যে সব কথা গুলো এসেছিলো তা আমার বেশ ভালো লাগে।

১- আমাদের নবী (সা) সাদাক্বাতুল ফিতর আদায় করার জন্য কিছু খাদ্যের নাম বলেছিলেন। যেমন, যব, গম, আটা, কিসমিস, খেজুর ইত্যাদি। এখন যদি আপনি বলেন যেহেতু আমাদের নবী (সা) খাদ্যের নাম করেছেন, তাই খাদ্যই দিতে হবে অর্থ নয়, তা হলে দুইটা প্রশ্ন আসবেঃ

এক- তিনি তো সব খাদ্যের নাম বলেননি, মাত্র কয়েকটির নাম বলেছেন। এখন কোন দেশে ঐ খাদ্য যদি না খাওয়া হয়, অথবা খেলেও যদি সম্মানিতদের খাদ্য মনে করা না হয়, তখন কি করা হবে?

আমরা বাংলাদেশের ছেলেরা বলেছিলাম, আমাদের দেশে ঈদের দিনে কেও গম, যব, বা আটার চেয়ে ভাত খেতে পছন্দ করে। আমাদের উস্তায বলেছিলেন, হাঁ, ভাত (উরুযয) এর মধ্যে আসবে। তখন এক মুখরা ছাত্র বলে উঠলো, তা কেন? ভাতের কথা তো হাদীসে নেই। তাহলে বাংলাদেশের এক লোক যদি গম পাওয়ার পর তা বিক্রী করে চাউল কেনে, এটা জায়েয হবে কিনা? উস্তায বললেন, হাঁ। তখন শুরু হয় হট্টোগোল তাই তো করা হয় টাকাতে। একজনকে বলা হয় এবারের ফিতরার মূল এইটা হয়, তুমি এইটাকা দিয়ে খাদ্য কিনে নিয়ো।

তখন আরেক প্রশ্ন দেখা দেয়, মদীনায় ঈদের দিনে দেখতাম গরিব ছেলেমেয়েরা বসে আছে, আর সৌদীরা গম কিনে তাদের কাছে দিচ্ছে, অমনি তারা ছুটে যেয়ে পাশের হকার দোকানদারের কাছে দিয়ে আসতো। কারণ অতো গম ওর লাগবেনা। কাজেই সে বিক্রি করে টাকা বানাতো। এটা ছিলো মানুষের সামনে ঘটা বিষয়।

উস্তায চুপ করে গেলেন, কারণ প্রকারন্তরে তাদের তো টাকাই দেয়া হলো।

দুই- আরেকটা বিষয় ছিলো হাদীসে সাদক্বাতুল ফিতর দেয়ার সময় আমাদের নবী (সা) অর্থ দিলে হবেনা, এই কথা বলেন নি। কাজেই এটা যদি হারাম হয়, বা টাকা দিলে আদায় না হয় তা হলে তো নিশ্চয় বলা হতো। বলা যেহেতু হয়নি কাজেই দিলে আদায় হয়ে যেতে পারে।

২- যদি এই কথা আসে যে, যেহেতু খাদ্যের কথা বলা হয়েছে, কাজেই তার বাইরে দিলে আদায় হবেনা। তাহলে কিছু কিছু সালাফের একটা আমল এই কথার বিপরীতে চলে যায়। যখন ইসলাম বিভিন্ন দেশে চলে যায়, সেখানে এমন কিছু খাদ্য তারা দেখতে পায় যে গুলো এই হাদীসগুলোতে নেই। সেই ক্ষেত্রে তারা দুইটা কাজ করেনঃ

এক- ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, ইমাম বুখারী সচরাচর আহনাফদের বিপরীতে অবস্থান নিলেও সাদাক্বাতুল ফিতর অর্থ দিয়ে আদায় করার ব্যপারে তাদের মতের সাথে একমত হয়েছেন। এইটা করেছেন যাকাতের ব্যপারে মূল জিনিষ না নিয়ে তার পরিবর্তে অর্থ নেয়ার বৈধতার দলীলকে সামনে এনে। তিনি একটা অধ্যায়ের শীরোনাম ও দিয়েছেন, "বাবুল ইওয়াদ্ব" বা একটার বদলে অন্যটা (দেয়ার বৈধতার বিষয়)। এখানে যে সব হাদীস নিয়ে এসেছেন তার মধ্যে একটা হলো মুয়ায (রা) এর হাদীস। তাকে যখন ইয়েমেন পাঠানো হয়, সে সময় তিনি লোকদের ফসলের ক্ষেত্রে যাকাত নিতে যেয়ে গম বা আটার পরিবর্তে কাপড় জাতীয় জিনিষ দিতে বলেছেন, কারণ হিসেবে বলেছেন এইটা তাদের জন্য সহজ, এবং মদীনায় সাহাবীদের জন্য ভালো। মহানবী (সা) এটা সম্মতি দেন।
এই হাদীসে দেখা যাচ্ছে মুয়ায (রা) যাকাতের ক্ষেত্রে মূল জিনিষ (শস্য) না নিয়ে তার মূল্যের কাপড় নিতে চেয়েছেন। এখন যাকাতে যদি মূল জিনিষের পরিবর্তে অন্য জিনিষ নেয়া যায়, তাহলে যাকাতুল ফিতরে তো অবশ্য সম্ভব। এর দ্বারা সাদাক্বাতুল ফিতরে "তাগায়্যুরুন নাও;" বা মূল জিনিষের পরিবর্তে অন্য জিনিষ নেয়ার বৈধতা প্রমানিত হয়। কাজেই টাকা দিয়েও সাদাক্বাতুল ফিতর আদায় করা যাবে।

দুই - যেহেতু খাদ্য সমূহের পরিমান নির্ধারণ করতে যেয়ে মহানবী (সা) খাদ্যের মূল্যের দিকে নযর রেখেছেন, যেমনঃ তিনি কিছু খাদ্যে এক সা' দিতে বলেছেন, আর কিছু খাদ্যে দিতে বলেছেন অর্ধ সা', কাজেই এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায় খাদ্য বস্তুর মত টাকা ফিতরায় ধর্তব্য। বুখারীতে উল্লেখ করা হয়েছে, (১৫০৮), আমীর মুয়াওয়িয়া একবার মক্কায় এলে বলেন, আমার মনে হয় সিরিয়ার গমের দুই মুদ্দ খেজুরের এক সা' এর সমান হবে। তার এই বক্তব্য সাধারণ্যে গৃহিত হয়। এতে দেখা যাচ্ছে খাদ্যের মূল্যমান ও সাহাবাগণের নজরে থাকতো। এতে করে খাদ্যের পরিবর্তে টাকা দিলে আদায় হবে তা সন্দেহ থাকেনা।

৩- টাকা দেয়ার ব্যাপারে শুধু আবু হানীফা ইতিবাচক মত দিয়েছেন এমন না। বরং প্রসিদ্ধ তাবেঈ আতা, হাসান বসরী, সাওরী প্রমুখ ও টাকা দিলে আদায় হবে এই মতের পক্ষে। মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বাহ তে অনেক গুলো আসার বর্ণিত হয়েছে, যেখানে আমরা সালাফের বেশ কয়েকজন প্রসিদ্ধ জনকে এই মতের অনুকুলে দেখি।

আবু ইসহাক আস সুবাইয়ি বলেন, আমি তাদের (সাহাবা) অনেককে দেখেছি, রামাদানে তারা খাদ্যের মূল্যে টাকা দিতেন।

হাসান বসরী বলতেন, সাদাক্বাতুল ফিতরে তুমি দিরহাম দিলে সমস্যা নেই। উমার ইবন আব্দুল আযীয যখন খলীফা ছিলেন, সে সময় বসরায় তার গভর্ণরের কাছে চিঠি লিখেন, তাতে টাকার কথা উল্লেখ আছে। উল্লেখ্য উমার ইবন আব্দুল আযীযের সময় ৩ হাজার সাহাবী জীবিত ছিলেন, অথচ এই ব্যাপারে কেও "না" করেন নি। সায়্যিদুনা আবূ বকর (রা) আবুসাঈদ খুদরীর কাছে লিখেছিলেনঃ "যার যাকাত দিতে হবে বিনতে মাখাদ্ব (এমন উটনী যার বয়স এক বছর পেরিয়ে দ্বিতীয় বছরে পড়েছে) তার কাছে যদি বিনতে লাবূন ( যে উটনির বয়স দুই বছর) ছাড়া না থাকে তা হলে তাকে দামের পার্থক্য বিশ দিরহাম ও একটা ছাগল দাও। এখানে যাকাতে মূল্যের বিষয় পাওয়া যায়। এই সব গুলোই ইবন আবী শায়বাহ সহীহ সনদে নিয়ে এসেছেন। এসব থেকে বুঝা যায় যাকাত, যাকাতুল ফিতর ইত্যাদিতে মূল্য ধরা যায়। আর এই জন্য ইবনে আবী শায়বাহ তার গ্রন্থে একটা চ্যাপ্টার লিখেছেন, যেখানে তিনি শীরোনাম দিয়েছেনঃ যাকাতুল ফিতর দিরহাম দিয়ে আদায় করা জায়েয প্রসংগে।

৪- সাদাক্বাতুল ফিতরে ঈদের দিনে মুসলমানদের স্বচ্ছল করাই থাকে মূল লক্ষ্য। ইমাম মালেক (র) সহীহ সনদে একটা হাদীস উল্লেখ করেছেন, যাতে এই ধরণের ইংগিত দেয়া আছে। তাছাড়া গরীবদের খাইতে দেয়াও থাকে উদ্দেশ্য। মনে রাখতে হবে গরীবদের খাইতে দিলে ভালো মানের খাওয়া দেয়াও এর মধ্যে শামিল হয়। খাইতে দিলে শধু চাউল আর আটা খেয়ে কেও দিন কাটায় না। তরিতরকারীও কিন্তু দরকার হয়, যা শুধু খাদ্য দ্রব্য দিলে হয়না। তখন ওই গরীবটাকে তার খাদ্য বিক্রী করে অন্যান্য সামগ্রী কিনতে হয়।

আমার মনে হয় এই সব কথা মনে করে ইমাম ইবনে তাইমিয়্যার কথাই আমার কাছে বেশি যুক্তি যুক্ত মনে হয়। তিনি বলেছেনঃ

"وأما إخراج القيمة في الزكاة والكفارة ونحو ذلك، فالمعروف من مذهب مالك والشافعي أنه لا يجوز، وعند أبي حنيفة يجوز، وأحمد ـ رحمه الله ـ قد منع القيمة في مواضع، وجوزها في مواضع، فمن أصحابه من أقر النص، ومنهم من جعلها على روايتين. والأظهر في هذا: أن إخراج القيمة لغير حاجة ولا مصلحة راجحة ممنوع منه... إلى أن قال رحمه الله: "وأما إخراج القيمة للحاجة، أو المصلحة، أو العدل فلا بأس به" أ هـ.
আলমাজমূ' ২৫/৮২, যাকাত কাফফারা ইত্যাদির ব্যাপারে প্রসিদ্ধ মত হলো ইমাম মালেক ও শাফেঈ এর মতে অর্থ দিয়ে আদায় করা জায়েজ নেই। ইমাম আবু হানীফার মতে জায়েয আছে। ইমাম আহমাদ কিছু স্থানে মত দেন নি, কিছু স্থানে মত দিয়েছেন। তার অনুসারীরা সেই কথাই টিকিয়ে রেখেছেন, কেও কেও আবার দুই মত ই গ্রহন করেছেন। বেশি ভালো হলো, কোন প্রয়োজন ছাড়া কিংবা অবস্থার আলোকে ছাড়া টাকায় দিয়ে আদায় করলে তা হবেনা। তবে প্রয়োজন হলে এবং অবস্থার আলোকে কিংবা ইনসাফের জন্য টাকা দিয়ে আদায় করলে জায়েয হবে।

গত বছর আমার এক বন্ধু বড় বড় দুটা বস্তা বোঝায় করে গম নিয়ে আসে আমাদের মসজিদে। আমাকে বললো, শায়খ বস্তা দু'টা একটু নামায়ে নিন। আমি বললাম, ঐটা কি। বললো, গম। সাদাক্বাতুল ফিতরের জন্য নিয়ে এসেছি। আমি হতভম্ব হলাম, লন্ডনে মানুষ গম কিভাবে খাবে? কে বা খাবে। বন্ধু মন খারাপ করলো, বললো, আমাদের শায়খগণ বলেছেন, এই সব ছাড়া টাকা দিলে আদায় হবেনা, কাজেই এই গুলোই আমি দেবো। আমি বললাম, দাও, তো সেন্টারে কেন? বললো, এখানে অনেক গরিব লোক আসে তাদের দিও। আমি বললাম, তোমার গম নেয়ার মত গরিব তো আল্লাহ এই দেশে রাখেন নি। পরে বন্ধু অনেকদিন পর্যন্ত আমার সাথে কথা বলেননি। কারণ আমি তার গম নিয়ে সাদক্বাহ আদায়ে সাহায্য করিনি। এই সব দেশের অবস্থা অনুযায়ী আমার তো মনে হয় ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইমাম বুখারী সর্বোপরি ইমাম আবুহানীফার মতটাই বেশি গ্রহনযোগ্য।

Collected

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মে, ২০২০ রাত ১১:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: টাকাই তো নাই জাকাত ফেতরা দিবো কি করে?

২| ২৩ শে মে, ২০২০ রাত ১১:৫৬

নতুন বলেছেন: যারা টাকা দিলে ফিতরা আদায় হবেনা বলে চিল্লাপাল্লা করে তারা মূখ` ছাড়া কিছুই না। বাস্তব সম্পকে পুরাই অজ্ঞ এরা।

৩| ২৪ শে মে, ২০২০ ভোর ৫:৪২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আরব দেশে চাউল ও আটা দেয়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.