নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অপরিকল্পিতভাবে যেমন সুন্দর বাগান তৈরী সম্ভব নয়,\nতেমনি অপরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে একটা সুন্দর জাতী তৈরী সম্ভব নয়।\nআগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়- কর্মমুখী,নৈতিকতা সমৃদ্ধ ও যুগোপযোগী শিক্ষা চাই,\nবর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় জাতির বোঝা তৈরী হয়, সম্পদ নয়।\n\

সামিউল ইসলাম বাবু

যেটুকু পাও ছোট্ট সময়/কাজ করে যাও রবের তরে/ক্ষনিক সময় বিস্রাম নিও/ঘুমিও না তুমি অলসতা ভরে//

সামিউল ইসলাম বাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে জানুন

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪০

গ্রামের অবস্থা দেখলে ভয় লাগে।বিশেষ করে গ্রামের ডাক্তাররা(কুয়াক ডাক্তার) যে ভাবে এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার করছে তা দুঃখজনক। এভাবে চলতে থাকলে বাংদেশের মানুষ বড় ধরনের বিপদে পড়তে যাচ্ছে...

এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স কি?
(আসুন_নিজে_সচেতন হই,
অন্যকে সচেতন করি)




এন্টিবায়োটিক হচ্ছে সেইসব ওষুধ- যা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা পরজীবী ধ্বংস করে। এখন এই ওষুধ যদি সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করা না হয় তাহলে এক পর্যায়ে ওই জীবাণু সেই ওষুধের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করে। ফলে সেই ওষুধে আর কোনো কাজ হয় না। একেই বলে 'এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স'। অর্থাৎ যখন ব্যাকটেরিয়ার ধ্বংস করার ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা থাকে না।

শিশুরা কেন এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্ট হয়?

আইসিডিডিআর,বি-র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মনিরুল আলম জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি আসা রোগীদের একটি বড় অংশের মধ্যেই এই সমস্যা দেখা যায়। আমরা এরকম শিশুদের পরীক্ষা করেছি, যারা আমাদের কাছে আসার তিন মাস আগেও কোনো এন্টিবায়োটিক খায়নি। অথচ তাদের শরীরের ব্যাকটেরিয়াগুলো মাল্টিপল ড্রাগ রেজিস্টেন্স। এর মানে শিশু এন্টিবায়োটিক না খেলেও প্রকৃতি-পরিবেশের কারণে তাদের শরীরে ওষুধ কাজ করছে না। অর্থাৎ আমরা কেউই এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স নই। শিশুরা তো নয়ই।

বর্তমান পরিস্থিতিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে বড় ধরনের অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান। তিনি জানান, বিশ্বে যে হারে নতুন এন্টিবায়োটিক তৈরি করা হচ্ছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হারে বাড়ছে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স। যার ফলে অদূর ভবিষ্যতে সামান্য হাঁচি-কাশি-জ্বরেও মানুষের মৃত্যুঝুঁকি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

তিনি জানান, একটা এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করতে লাগে ১৫ বছর, ওটার বিপরীতে ব্যাকটেরিয়া রেজিস্টেন্স হতে লাগে এক বছর। আগামী সাত বছরে দুইবারের বেশি এন্টিবায়োটিক আসার সম্ভাবনা নেই। এক সময় দেখা যাবে, রোগের জীবাণুকে কোনো ওষুধ দিয়েই ধ্বংস করা যাচ্ছে না।

পরিবেশে এই রেজিস্টেন্স কীভাবে তৈরি হয়?

শিশুদের এমন এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স হওয়ার পেছনে জেনেটিক বা বংশগত কোনো কারণ না-ও থাকতে পারে। তবে আমরা যেসব প্রাণীর মাংস বা শাকসবজি খাই সেইসব প্রাণীর শরীরে বা সবজির উৎপাদনে যদি এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, সেগুলো রেজিস্টেন্স তৈরি করে, যার প্রভাব মানুষের ওপর পড়ে।

অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান জানান, মানুষের প্রোটিনের জন্যে যেহেতু, মাছ, মুরগি, গরু দরকার এবং সেগুলোকে সস্তায় বাঁচানোর জন্যে এন্টিবায়োটিক দরকার। অর্থাৎ মানুষকে তার প্রোটিনের জন্যে ভবিষ্যতকে ঝুঁকিগ্রস্ত করা হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতাল থেকে শুরু করে রেজিস্টেন্ট ব্যক্তির হাঁচি-কাশি মল-মূত্র থেকেও তা ছড়াতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

করণীয় কি?

চারটি প্রাথমিক সচেতনতা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে বলে জানান ড. সায়েদুর রহমান।

প্রথমত, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক কেনা/বিক্রি বন্ধ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, সব এন্টিবায়োটিক ওষুধের প্যাকেটের রং লাল করতে হবে এবং অন্যান্য ওষুধ থেকে আলাদা রাখতে হবে, যেন মানুষ সহজেই পার্থক্য করতে পারে।

তৃতীয়ত, এন্টিবায়োটিকের ডোজ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না, ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে এবং নিয়ম মেনে খেতে হবে।

চতুর্থত, জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়া এই চারটি রোগ সারাতে এন্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজন নেই। তাই চিকিৎসককে এই চারটি কন্ডিশনে এন্টিবায়োটিক দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, ওষুধ সেবন করার বিষয়ে যথার্থ জ্ঞান ও তার প্রয়োগের মাধ্যমে এই ভয়াবহ অভিশাপ ঠেকানো সম্ভব।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে জানুন। ডাক্তার এর পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক কে না বলুন।

ব্লাড কালচার। যখন কোন রোগ সনাক্ত করবার পরেও ঔষুধে ভালো হয় না, তখন আমরা ব্যাকটেরিয়াসমৃদ্ধ রক্তকে ল্যাবরেটরিতে পাঠাই। উদ্দেশ্য হল- কেন অতি সাধারণ একটা অসুখও ঔষুধ দিয়েও রোগ ভালো হচ্ছে না।

ল্যাবে মাইক্রোবায়োলজিস্টরা সেই রক্তকে কয়েকদিন চাষ করেন। সেখানকার ব্যাকটেরিয়াদের উপর বিভিন্ন প্রকার এন্টিবায়োটিক দিয়ে দেখেন, সেই এন্টিবায়টিক ব্যাকটেরিয়াগুলোক মেরে ফেলতে সক্ষম কী না!
যদি মারতে পারে তখন সেই এন্টিবায়োটিকের পাশে লেখা হয়- S (S for Sensitive). সেন্সিটিভ শব্দের অর্থঃ ঐ এন্টিবায়োটিকটি ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সক্ষম।

যদি না পারে তখন আমরা লিখি- R (R for Resistant). অর্থঃ এখন আর এই এন্টিবায়োটিকটি ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সক্ষম নয়। আগে কাজ করলেও ব্যাকটেরিয়া নিজেকে বদলে ফেলেছে। ফলে একই অস্ত্র (এন্টিবায়টিক) দিয়ে ব্যাকটেরিয়াটিকে মেরে ফেলা যাচ্ছে না।

এতে কী দাঁড়ায়?

অতি সাধারণ রোগও আর এন্টিবায়োটিক দিয়ে সারবে না। রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়াটি এখন ইচ্ছেমত বাচ্চাকাচ্চা দিতে পারবে। আপনার শরীরে রোগ সৃষ্টি করে বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকবে। আপনি আমি শুধু দেখব দর্শক হয়ে দেখব। এরপর সব সাঙ্গ হবে. একদিন সেই ছোট্ট অসুখটা নিয়েই মানুষটা মারা যাবে।


ঘটনা শুনলে চমকে যাবেন।

বয়স মাত্র ৪ বছর।

অথচ সব এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট। অর্থাৎ ছেলেটা নিরীহ একটা রোগ নিয়ে এসেছে। ঔষুধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রোগ সারছে না।

এখন কী ঘটবে?

আমরা তাকে আর বাঁচাতে পারব না। ছেলেটা নিশ্চিত মারা যাবে। অথচ আমাদের হাতে শতশত এন্টিবায়োটিক। আমরা চাইলেও প্রয়োগ করে আর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মারতে পারব না।

দায়ী কারা?

-আমরা।
আমাদের সামান্য জ্বর হয়। ফার্মেসীতে গিয়ে দুটো জিম্যাক্স (অ্যাজিথ্রোমাইসিন) খেয়ে ফেলি। একশ ব্যাকটেরিয়াকে মারার জন্য যদি সাত দিনের ডোজ লাগত, আমরা দুইদিন পর ভালো হলে আর ডোজটা পুর্ণ করি না। ৭০ টা ব্যাকটেরিয়া মরলেও বেঁচে থাকা বাকী ৩০ টি ব্যাকটেরিয়া জি-ম্যাক্সকে চিনে ফেলে। ফলে তারা নিজেদের গঠন দ্রুত বদলে ফেলে। তখন আর জি-ম্যাক্স দিয়েও পরেরবার আমরা রোগ সারাতে পারব না। কারণ জি-ম্যাক্সের বিরুদ্ধে সব ধরণের স্থায়ী ব্যবস্থা ব্যাকটেরিয়া নিয়ে ফেলেছে।
.

শুধু জি-ম্যাক্স কেন?

আমাদের কেউকেউ অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্য এন্টিবায়োটিক খাবে। আরেকটি ঔষুধের রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া তৈরি করবে। সে রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া ভাগাভাগি করবে সারাদেশের মানুষের সাথে।

আপনি একজন এইডস আক্রান্ত রোগীকে আইসোলেট করলেই সে এইডস ছড়াতে পারবে না। কিন্তু একজন রেজিস্ট্যান্ট লোককে আপনি কীভাবে আইসোলেট করবেন? ব্যাকটেরিয়া শুধু হাঁচিতে ছড়ায় না। প্রস্রাবে ছড়ায়-পায়খানায় ছড়ায়, স্পর্শের ছড়ায়। তারা পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। স্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তারা মাটিতে থাকে। বাসের সিটে থাকে। রেস্টুরেন্টের গ্লাসে থাকে। ক্লাশের চেয়ারে থাকে। বন্ধুর কলমে থাকে, তারা বাতাসে ভেসে থাকে। মাটিতে পড়ে থাকে। মাটির নিচে কলোনি করে থাকে। আপনি কোথায় গিয়ে বাঁচবেন?

.
এইডসে পৃথিবী বিলুপ্ত হবে না। সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লুতে মানবজাতি নিশ্চিহ্ন হবে না কিন্তু এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস পড়া শেষ হবার সাথে সাথে যদি আপনি বুকে হাত বাদ দিয়ে নিজের ধর্মগ্রন্থের উপর হাত রেখে প্রতিজ্ঞা না করেন, তাহলে মনে রাখবেন আপনি বেঁচে থাকবেন না আগামী পঞ্চাশ বছরে। আপনার অনাগত সন্তান বেঁচে থাকবে না ২০৭০ সাল দেখবার জন্য।

*************

এন্টিবায়োটিক ও অনাচারঃ

এন্টিবায়োটিক এর মত অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি ঔষধ এর যথেচ্ছ ব্যবহার চলছে এই দেশের আনাচে কানাচে যা আমার কাছে এক ধরনের অনাচার মনে হচ্ছে।।
একটা বিভীষিকাময় সময় আমাদের খুব সন্নিকটে যখন সকল এন্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলবে।।লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে, চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।
এর জন্য দায়ী করবো, আপ্নাকেই।
আপনার অসচেতনতাই আপনাকে সেই বিপর্যয়ের মুখোমুখি করে দিবে বা দিচ্ছে।।
দেশে প্রচুর এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স পাওয়া যাচ্ছে।।
এন্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহ পালন হচ্ছে কিন্ত এন্টিবায়োটিক এর এই অযাচিত ব্যবহার ও বিক্রি প্রতিরোধ করা যাচ্ছেনা।।

আমাদের মত রেজিস্টার্ড চিকিৎসক এর কাছে আসার আগেই এক দুই দিনের জ্বরে আপনি যখন একজন ঔষধ বিক্রেতাকে ডাক্তার মেনে ফার্মেসী থেকে এন্টিবায়োটিক খেয়ে আসেন,তখন অসহায় এর মত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই আমাদের।

ইদানিং ঔষধ কোম্পানি নেমেছে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায়। তারা বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে পল্লী চিকিৎসকদের পিসি কনফারেন্স করে মক্সিফক্লাসিন,সেফটিবিউটেন এর মত পাওয়ারফুল এন্টিবায়োটিক বিক্রিতে উৎসাহ দিচ্ছেন
ইতিমধ্যেই মারাত্মক আকার ধারণ করছে।।
অনেক কোম্পানি যত বেশি এন্টিবায়োটিক চালাতে পারবে, তার জন্য বিভিন্ন মাসোহারা ও উপহার দিয়ে ফার্মেসীর মেডিসিন বিক্রেতাদের লোভী করে তুলছেন।
সরকারি হসপিটাল, ইউনিয়ন সাব সেন্টার, কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতে ফ্রি ঔষধ এর জন্য মানুষ ভীড় করে,সেখান থেকে পূর্ণ কোর্স এন্টিবায়োটিক না দিয়ে দুই বা তিন দিনের এন্টিবায়োটিক সরবরাহ করা হয় যা এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স এর অন্যতম আরেকটা কারণ। রুগী কিন্ত নিজের টাকায় সেই এন্টিবায়োটিক এর কোর্স এর বাকী মেডিসিন গুলো কিনে খায়না।

অনেক রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ও অনেক অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক লিখে থাকেন যা চুড়ান্ত হতাশাজনক।।

অনেক রুগী আছেন এমন ভাবেন,আরে এত সামান্য জ্বর সর্দি, এর জন্য ডাক্তার দেখিয়ে ভিজিট দিবো কেন??
ফার্মেসী থেকে বলে মেডিসিন খেলেই ত হয়।
আপনি যখন ফার্মেসী তে যাচ্ছেন, উনি আপনাকে ম্যাজিক দেখানোর জন্য এজিথ্রোমাইসিন,মক্সিফক্লাসিন,সেফটিবিউটেন,সেফিক্সিম দেওয়া ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারেন না।
অথচ একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ভাইরাল ফিভারে আপনাকে কখনোই এন্টিবায়োটিক দিত না।

বাচ্চাদের জ্বর হলেই মা বাবা অস্থির হয়ে যান।
এক বেলা মেডিসিন খাওয়াতেই জ্বর ভালো হয়ে যেতে হবে।ধৈর্য্য বলে কিছুই নেই উনাদের।
আমি একবার এক বাচ্চা রুগী পেলাম যার মা সেই বাচ্চাকে এক দিনে তিনজন ডাক্তার দেখিয়েছেন।
আমি হা হয়ে তাকিয়ে ছিলাম সেই মা এর দিকে।
আমি ছিলাম চতুর্থ ডাক্তার।।
আমার কাছে আসার আগেই এজিথ্রোমাইসিন সকালে,বিকালে সেফিক্সিম ও রাতে সেফট্রিয়াক্সন ইঞ্জেকশান মেরে আসছে।
একদিনের জ্বরে তিনটা এন্টিবায়োটিক।
অথচ এটা ছিল ভাইরাল ফিভার।
মা এর অশান্তিতে কিছু কিছু রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ও রুগী হাতছাড়া হবার ভয়ে অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন।
আপনার তিন বার পাতলা পায়খানা হলেই আপ্নি একটা ফিলমেট,একটা সিপ্রোসিন, দুইটা এজিথ্রোমাইসিন খেয়ে ফেলছেন নিজে নিজেই বা ফার্মেসীর বিক্রেতার পরামর্শে।।
ডায়ারিয়াতে মুল চিকিৎসা খাবারের স্যালাইন। কিন্ত অনেক মা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে আমাদের কাছে আসেন যেখানে সেই স্যালাইন টা না খাওয়াইয়া একগাদা এন্টিবায়োটিক খাওয়াইয়া আসেন।
যদি জিজ্ঞেস করি,স্যালাইন খাওয়াইছেন,তখন বিরস মুখে উত্তর দেন,বাচ্চা স্যালাইন খায়না।
ওকে মুখে না খেলে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে যখন বলি, তখন মামাবাড়ির আবদার করে বসেন,আপনি এন্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন দিয়ে দেন।।

দুই দিন আগে স্থানীয় একজন ঔষধ বিক্রেতা উনার ৯ মাসের বাচ্চা কে নিয়ে রাত ১২ টায় আমার চেম্বারে আসলেন।জ্বর কাশি,ব্রিদিং ডিফিকাল্টি নিয়ে।
Acute bronchiolitis এর রুগী।
আমি যখন জানতে চাইলাম কি মেডিসিন খাওয়াচ্ছেন,উত্তর সেফিক্সিম চলছে স্যার কিন্ত জ্বর কমছেনা। ৭ দিন আগে আবার সেফট্রিয়াক্সন দিছি।
এখন আপনার কাছে আসছি।
আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম।।

কিছুদিন আগে আরেকটা অদ্ভুত প্রেসক্রিপশান ফেলাম।
রুগীর একদিনের জ্বর।
এক ডোজ সেফট্রিয়াক্সন ২ গ্রাম ইঞ্জেকশন দিয়ে পরে
তিন দিনের এজিথ্রোমাইসিন দেওয়া।।
কিছু কোম্পানি এন্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন এ বিশেষ ছাড় দেয়,লোভনীয় অফার দেয়,এক শ্রেণীর ফার্মেসীর
বিক্রেতারা যাদের আপনি ডাক্তার বানিয়েছেন, সেই সুযোগ এর উত্তম ব্যবহার করছেন।।

প্রেসক্রিপশান ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে মহামান্য হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
কিন্ত আপনি যদি নিজে সচেতন না হউন,আপনি যদি নিজেকে না ভালোবাসেন, তাহলে আইন করে কি এন্টিবায়োটিক এর যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ করা সম্ভব কিনা তা আমি সন্ধিহান।।

একমাত্র এবং একমাত্র আপনার সচেতনতাই পারে এই এন্টিবায়োটিক এর অপব্যবহার ও এন্টিবায়োটিক নিয়ে অনাচার রোধ করতে।।
আসুন নিজে সচেতন হই।
আগামী প্রজন্ম কে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স এর ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করতে আজই নেমে পড়ি।।
রেজিস্টার্ড চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসী থেকে এন্টিবায়োটিক খাওয়ার ভয়ংকর বদ অভ্যাস পরিত্যাগ করুন।।
পুর্ন মেয়াদে এন্টিবায়োটিক খাবেন।।
তবে সবার আগে কে ডাক্তার সেটা জেনে নিবেন।।

আপনার সচেতনতাই আপ্নাকে ও আপনার প্রিয়জন কে নিরাপদ রাখতে পারে।।
**** ***** ******
পৃথিবীতে যতগুলো এন্টিবায়োটিক আবিস্কার হয়েছে তার মধ্যে মেরোপেনেম, ইমিপেনেম গ্রুপ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর ও দামী।

সব এন্টিবায়োটিক যখন অকার্যকর হয়ে যায় তখন এই গ্রুপ ব্যবহার করা হয় অনেক চিন্তা ভাবনা করে।

উন্নত হাসপাতালে মাইক্রোবায়োলজিস্ট এর পরামর্শ সাপেক্ষে অনেক সময় বিশেষজ্ঞদের বোর্ড করে এ এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়।

আমার ডাক্তারি জীবনে আমি একবার মাত্র ব্যবহার করেছিলাম, কারন তখন কোন অস্ত্রই ওই মৃতপ্রায় রোগীর উপর কাজ করছিলনা।

এটা ডাক্তারদের, বিশেষ করে সার্জনদের সর্বশেষ শক্তিশালী ক্ষেপনাস্ত্র এই সময়ে।

এই গ্রুপগুলো যদি অকার্যকর হয়ে যায় তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নামবে ভয়াবহ কালো রাত। সার্জনরা কেউ আর অপারেশন করবেনা।কারন ইনফেকশানেই সব রোগী মারা যাবে।

এর মধ্যে এন্টিবায়োটিক এর যথেচ্ছ ব্যবহারে অধিকাংশই অকার্যকর। নতুন গ্রুপ এর কার্যকর এন্টিবায়োটিক আসার কোন সম্ভাবনা আগামী ১০-২০ বছরে নেই(WHOএর ভাষ্যমতে)

গ্রাম বাংলার হাজার হাজার হাতুড়ে ডাক্তার এই শেষ অস্ত্রটি লিখছে সমানে। যে ঔষধ, বিশেষজ্ঞরা লিখতে দুবার চিন্তা করে। কেউ দেখার নেই।

উন্নত দেশ হলে ফাঁসি, অথবা ১৪ বছরের জেল হয়ে যেত।

মানুষের জীবন নিয়ে এই তামাশায় সবাই কেন জানি দিনের পর দিন নীরব।

**** ******* ******
এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছিলেন স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। ফ্লেমিং স্যার বলেছিলেন, "এই এন্টিবায়োটিকের কারণে আজ কোটি কোটি লোক বেঁচে যাবে। অনেক বছর পর এগুলো আর কাজ করবেনা। তুচ্ছ কারণে কোটি কোটি লোক মারা যাবে আবার।''
:

আমরা খুব ভয়ংকর একটা সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি দ্রুত। ব্যাকটেরিয়া আর তাদের বিভিন্ন 'জ্যাকেট'এর তুলনায় এন্টিবায়োটিকের সংখ্যা খুব বেশি না। অনেক এন্টিবায়োটিক এখন আর কাজ করেনা, বাকিগুলোর ক্ষমতাও কমে আসছে। আমাদের বড় বড় হসপিটাল থাকবে, সেখানে এফসিপিএস, এমডি, পিএইচডি করা ডাক্তাররা থাকবেন কিন্তু কারোরই কিছু করার থাকবেনা। সামান্য সর্দীতেই রোগী মরে সাফ হয়ে যাবে।
:
উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা ব্যবস্থা আলাদা। তারা নিয়ম মেনে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খায়। বিপদে আছি আমরা। 'মেডিসিনের বাইবেল' নামে পরিচিত ডেভিডসের বইয়েও আমাদের এই উপমহাদেশের উল্লেখ আছে আলাদা করে। অনেক ট্রিটমেন্টে বলা হয়েছে,
"This organism is registrant against this Drugs in Indian subcontinent''
:
টিভি পত্রিকায় নানান বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা হয়। বাথরুম করে হাত ধুতে হবে, কাশি হলে ডাক্তার দেখাতে হবে, নিরাপদ পানি খেতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এন্টিবায়োটিক নিয়ে কোনো কিছু আজও চোখে পড়েনি। অথচ এটা অন্যগুলোর চেয়েও জরুরী। এন্টিবায়োটিক কাজ না করলে এত সচেতনতা দিয়েও আর লাভ হবেনা।
:
চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে এখনই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা উচিত। ফার্মেসিওয়ালা কর্তৃক ওষুধ দেয়া বন্ধ করতে হবে, এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নাহলে আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার।

**** ****** *****
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। এই প্রতিষ্ঠানের আইসিইউতে মারা যাওয়া রোগীদের ৮০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হলো সুপারবাগ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, মাত্রাতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সুপারবাগ হলো অ্যান্টিবায়োটিক সহনশীল ব্যাকটেরিয়া। এসব ব্যাকটেরিয়াকে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে ঠেকানো যায় না। বিএসএমএমইউর আইসিইউতে মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে এই সুপারবাগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউয়ের চিকিৎসক সায়েদুর রহমানের কথায় উঠে এসেছে এই মৃত্যুঝুঁকির কথা। তাঁর মতে, ২০১৮ সালে বিএসএমএমইউর আইসিইউতে ভর্তি হওয়া আনুমানিক ৯০০ রোগীর মধ্যে ৪০০ জনই মারা গেছেন। আর এর পেছনে অন্যতম বড় কারণ হলো অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার।

মানবদেহে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আবিষ্কার করা হয়েছিল অ্যান্টিবায়োটিক। চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে যুগান্তকারী হিসেবেই ধরা হয়েছিল অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কারকে। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে সেই অ্যান্টিবায়োটিক এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে।

দ্য টেলিগ্রাফের এই প্রতিবেদনটি গতকাল সোমবার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৫ সালে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব সায়েন্টিফিক রিসার্চের এক গবেষণার বরাত দিয়ে তাতে বলা হয়েছে, ওই জরিপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি রোগীদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেছেন।

বিএসএমএমইউর মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের প্রধান আহমেদ আবু সালেহ বলছেন, বাংলাদেশের সব আইসিইউতে মারা যাওয়া মোট রোগীর ৭০ শতাংশের মৃত্যুর পেছনে সুপারবাগের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। অথচ ১০ বছর আগেও পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ ছিল না। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, ভবিষ্যতে ব্যবহার করার মতো কার্যকর কোনো অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের হাতে নেই। বর্তমানে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এ কারণে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে।’

Eprothom Alo
চিকিৎসক সায়েদুর রহমান বলছেন, ‘নজরদারি আরও জোরদার করতে হবে। যেখানে সেখানে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে হবে। কেবল নিবন্ধিত হাসপাতালগুলো থেকে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ীই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।’

২০১৬ সালে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সুপারবাগ দিন দিন এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠছে, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতিবছর ১ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে এটি! গত বছর ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও ডায়রিয়ায় মারা যাওয়া রোগীর সম্মিলিত সংখ্যার চেয়েও বেশি এই সংখ্যা!

অন্যদিকে মানুষের রোগ নিরাময়ের জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক বানানো হয়েছিল, অতিরিক্ত লাভের আশায় সেগুলো এখন পশুপাখিদের দ্রুত বর্ধনশীল করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে, শহরের অর্ধেকেরও বেশি পোলট্রি মুরগির শরীরে এসব অ্যান্টিবায়োটিক ঢোকানো হচ্ছে। এই পোলট্রি মুরগি খেয়ে ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষও।

শুধু বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, এই ভয়াবহতা থেকে মুক্ত নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোও। ২০১৭ সালের এক গবেষণা জানাচ্ছে, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ আরও অনেক দেশ সুপারবাগের ঝুঁকিতে রয়েছে।

সূত্রঃ প্রথম আলো

**** ***** ******
শরীরে ব্যাকটেরিয়া জনিত কোন রোগ দেখা দিলে সাধারণত চিকিৎসকেরা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।

শুধুমাত্র রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকদের পরামর্শেই এন্টিবায়োটিক খাওয়ানোর নির্দেশনা থাকলেও যাচ্ছেতাইভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হচ্ছে।

এখন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে চিকিৎসকদের প্রেশক্রিপশনের প্রয়োজন পড়ছে না।পাড়া বা মহল্লার ঔষধের দোকানদার থেকে শুরু করে টেকনিশিয়ান,হেলথ ওয়ার্কার,হেলথ এসিসট্যান্ট,কোয়াক ডাক্তার, ভূয়া ডাক্তার সবাই এখন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা।

এন্টবায়োটিক অপব্যবহারের নমূনাঃ

গতকাল আমার চেম্বারে দেড় বছরের একটা বাচ্চাকে নিয়ে তার মা এসেছে।বাচ্চার দুইদিন ধরে জ্বর ও সর্দিকাশি। জ্বর কমছে না তাই এক দোকানদার দিয়েছে সিরাপ ফিক্স -এ, তার পরেরদিন আরেক দোকানদার দিয়েছে সিরাপ ওরসেফ।এরপর রাতে এসেছে আমার চেম্বারে।
এবার দেখুন, যেখানো কোনো এন্টিবায়োটিকেরই প্রয়োজন নাই সেখানে কী অবস্হা।

আশ্চর্যের বিষয় গতকাল আরেকটা এক বছরের বাচ্চা দেখলাম যে ৪ দিন ধরে ভাইরাল ফিভারে ভূগছে তাকে এক কোয়াক দিয়েছে সিরাপ সেফ-৩,আরেক কোয়াক দিয়েছে সিরাপ ভ্যানপ্রক্স আর স্যাকমো দিয়েছে সিরাপ জিথ্রিন।

তৃতীয় আরেকটাআট মাসের বাচ্চা গত তিনদিন ধরে পাতলা পায়খানা।তাকে এরই মধ্যে খাওয়ানো হয়েছে সিরাপ জক্স,সিরাপ ফিলমেট,সিরাপ এজিথ্রোসিন ও সিরাপ সিপ্রোসিন।
আমিতো হতবাক!
আমার আর কিছুই বলার নাই।

পরিণতিঃ

আমরা যে শুধু আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের ক্ষতি করছি তা নয় অনেক গবেষনার ফলে ভয়ানক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী যে সব এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার হচ্ছে সেগুলোর কার্যকারিতাকেও নষ্ট করে দিচ্ছি এবং এন্টবায়োটিক রেজিস্টান্ট ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি করে দিচ্ছি।
আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছি।আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রোগ জীবানুর ভয়াবহ অভয়ারণ্য তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছি যেখানে যুদ্ধ ক্ষেত্রে কার্যকরী অস্ত্র এন্টিবায়োটিকগুলোকে ভোঁতা ও অকার্যকর করে রেখে যাচ্ছি।

অ্যান্টিবায়োটিক সেবন বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ

০ সাধারন সর্দি, কাশি,জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে এন্টবায়োটিকেরর প্রয়োজন নেই।

০ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করা। কারণ কোন রোগের ক্ষেত্রে কোন অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে তা কেবলমাত্র একজন চিকিৎসকই ভালো বলতে পারবেন

০ অ্যান্টিবায়োটিক কেবলমাত্র ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ নিরাময়ে কাজ করে। অনেকে মনে করেন ভাইরাল ইনফেকশনেও অ্যান্টিবায়োটিক ভালো কাজ দেয়। একথা কিন্তু ঠিক নয়

০ অ্যান্টিবায়োটিকের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যেমন, ডায়ারিয়া, ত্বকের রোগ, বমি,ক্ষুধামন্দা,মুখে ও জিহ্বায় ঘাঁ,পেটে ব্যথা, ঠোঁট ফুলে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, চুলকানি,দুর্বলতা,মাথা ঘুরানো ইত্যাদি।

০ চিকিৎসক যদি কোন অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করেন তবে তা কোর্স পূর্ণ করা একান্ত জরুরী। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক যদি কোর্স পূর্ণ না করে মাঝপথে থামিয়ে দেয়া হয় তবে রোগ তো সারবেই না, বরং শরীরে আরও নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বাড়বে এবং এন্টিবায়োটিক রেসিস্টানস ডেভেলপ করবে।

০ অ্যান্টিবায়োটিক চলাকালীন সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন। কারণ এমনটা করলে শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।

সর্বশেষঃ

# মশা মারতে কামান ব্যবহার করবেন না।
# চোর ধরতে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করবেন না।
# মনে রাখবেন বাচ্চা আপনার,সুতরাং আপনাকেই আগে সচেতন হতে হবে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
# চিকিৎসকের উপর আস্হা রাখুন এবং ধৈর্য ধরুন।

***************************************
লাইভস্টকে এবং যথেচ্ছা এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার আপনার ক্ষতি হচ্ছে। এইকথা আমরা জানি সবাই কম বেশি কিন্তু মানি না।

মজার একটা জিনিস দেখলাম মাইক্রোবায়োলজির একজন স্যার শেয়ার করেছেন।

মনে করেন আপনার জ্বর হল, আপনার বন্ধুকে বললেন। সে এন্টিবায়োটিক সচেতন তাই আপনাকে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বললেন।

কিন্তু আপনি সরকারি হাসপাতালে লাইন এবং হ্যাসেলের ভয় পান। আবার সামান্য জ্বরের জন্য প্রাইভেটে কাউকে পরামর্শ ফি দিতে চান না বা আপনার মাসিক বাজেট অনুযায়ী এটা অতিরিক্ত খরচ। তাই দোকানদারের কথামত এন্টিবায়োটিক খেলেন।
আপনার বন্ধু রাগ করলেন। মনে মনে বললেন, "তুই রেজিস্ট্যান্ট হয়ে মরবি, আমি বাবা খাব না সেফ থাকি তাইলেই হল।"

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, দুই বছর পর আপনার বন্ধুর জ্বর হল, ব্লাড কালচার করে দেখা গেল সব এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট। হয়ত মারাও গেলেন।

এই ঘটনার পিছনে আপনিও দায়ী।

একটা উদাহরণ দেয়া যায়, আগে এরোসল স্প্রে করলে মশা মরে যেত। এখন তাদের একটু নেশার মত হয় কিছুক্ষণ পর ভাল হয়ে যায়, অথবা কাজ ও হয় না। কেন এমন হয় প্রশ্ন জাগেনাই? যাইহোক।

আসলে রেজিস্ট্যান্ট হয় ব্যাকটেরিয়াতে আপনার শরীরে না।
মনে করেন ২ লাখ জীবানু ঢুকলো। আপনি এমন এন্টিবায়োটিক খেলেন যার থেকে আগের জেনারেশন এর ওসুধ খেলেও হত বা যে জীবানু গেছে তার জন্য যেটা ভাল কাজ করে সেটা গ্রহন করতে হত,কিন্তু আপনি না জেনে নতুন এন্টিবায়োটিক খেলেন এবং ১ লাখ ৯০ হাজার মেরে দিলেন। কিন্তু বাকি দশ হাজার এন্টিবায়োটিক এর বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুললো তার ডি এন এ তে। আপনি সুস্থ হলেন। দোকানদারের সুনাম করলেন। তার ব্যাবসা বাড়লো। আরো দশজন কে কারণ ছাড়া দিল।

ওই দশ হাজার মিউট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া আপনার আমার মত বকলুদের থেকে আপনার বন্ধুর শরীরে গেল যিনি কারণ ছাড়া এন্টিবায়োটিক খান না। দশ লাখ বাচ্চা দিল যেগুলার উপর আপনার সেবন করা এন্টিবায়োটিক যেটা খেয়ে আপনি সুস্থ হন সেটা আর আপনার বন্ধুর কাজ করবে না। নতুন গ্রুপের ওষুধ তখন রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গেছে। মানে বাজারের কোন ওষুধ আর কাজ করছে না।

এভাবে অবিবেচকের মত আমরা দেশের, এমন কি পরবর্তী প্রজন্ম কে বিপদে ফেলে দিচ্ছি।
তাই আমি খাচ্ছিনা বলে আমি নিরাপদ তা না।
তাই সবাইকে সচেতন করুন। জীবনের মূল্য অনেক বেশি।


**এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক নয়।

**৭ দিনের জ্বর না হলে এন্টিবায়োটিক খেলে মৃত্যুঝুকি_বাড়ে।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫৮

আমি সাজিদ বলেছেন: দারুন দরকারি পোস্ট। দুবার এসেছে লেখগুলো। এডিট করে নিন। এই পোস্ট স্টিকি করা দরকার। এই করোনা কালে যেহারে মানুষ এন্টিবায়োটিক খাচ্ছে তাতে বিপদ আরও ঘনীভূত। মেক্রোলিডগুলো এতো কাজের সবই বোধহয় রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাবে। আমি এক সিনিয়র ব্লগারের পোস্টে গতকাল এটা নিয়ে মন্তব্য করলাম, তিনি শুধু আমরা আগে থেকেই বেশী এন্টিবায়োটিক খাই বলে আমাকে ও এই করোনাকালীন সময়ে ইচ্ছে মতো এন্টিবায়োটিক খাওয়াকে এভয়েড করার চেষ্টা করলেন। সে যাই হোক, আমি আমার রোগীকে বলি অন্তত তিন দিনের জ্বরে এন্টিবায়োটিক নয়। এরপর যদি না সারে জ্বর তবে চতুর্থ দিন আপনি রেজিস্টার চিকিৎসকের কাছে যান, উনার সিদ্ধান্ত মেনে নিন। আমার সাথেও প্রায় এমন ঘটে থাকে, একটু জেলা শহরের বাইরের রোগীরা আগে ফার্মেসীতে গিয়ে তিন চার দিন কোয়াকের প্রেসক্রাইব করা মেডিকেশন খেয়ে এরপর আসে ডাক্তারের কাছে। বিষয়গুলোতে খুব বিরক্ত লাগে।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০২

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব,

শুভেচ্ছা নিরন্তর

২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১২

রাজীব নুর বলেছেন: আমি গ্যাস্ট্রিক এর ওষধ ছাড়া আর কিচ্ছু খাই না।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১৯

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: কিন্তু অনেক প্যাশেন্ট চেয়ে এন্টি বায়োটিক খায়, যা সবার জন্য হুমকি

৩| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১৮

আমি সাজিদ বলেছেন: @রাজিব ভাই কারন ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। বন্ধ করে দিন। লম্বা সময় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ মাত্র ২/৩ টি রোগে দেওয়া হয়৷ অথচ আমরা বছরের পর বছর খাই।

২১ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৪

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: সুন্দর বলেছেন।

গ্রামে যারা৷ ফার্মাসিস্ট কাম গ্রাম্য ডাক্তার তারা যেকোন ঔষধ এর সাথেই গ্যাস্টিক এর ঔষধ দিয়ে দিয়ে দেয়। কারণ বেচলেইতো লাভ

৪| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ভালো পোস্ট তবে দুইবার কপি-পেস্ট হয়েছে। কোন কোন রোগে অ্যান্টিবাইওটিক লাগে?

২১ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৩

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: সবসমস্যায় এন্টিবায়োটিক লাগেনা। ৬-৭ দিন অপেক্ষা করলেই ভাল হয়ে যায়৷ কিন্তু মানুষতো ধৈর্য ধরতে চায়না। তার সঙ্গে সঙ্গে ভাল হওয়া চাই।

ভাইরাস জ্বরে এন্টিবায়োটিক লাাগে না। কিন্তু গ্রামের ঔষধের দোকানদার রোগি পেলেই এন্টিবায়োটিক মেরে দেয় এতে লাাভটা ভালো হয়।


যেখানে এন্টিবায়োটিক লাগেঃ
♥টায়ফায়েড জ্বরে
♦কাটা ছেড়ায়
♥ ইনফেকশানে
♥বড় ধরণের সমস্যায়...

৫| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০০

আহমেদ জী এস বলেছেন: সামিউল ইসলাম বাবু ,




সুন্দর ও দরকারী একটি পোস্ট হয়েছে।

এন্টিবায়োটিক ও রেজিস্ট্যান্স নিয়ে আমার ৪পর্বের লেখা আছে ব্লগে। আপনার এই পোস্টের পাঠকদের আরও কিছু বোঝার সুবিধার্থে লিংক দিলুম --The world is running out of antibiotics... Why? এন্টিবায়োটিকের কথা।

২১ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৩

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: Thanks

৬| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:৫৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার ,শিক্ষণীয় I সচেতনতামূলক পোস্ট।

২১ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৪

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: Thanks via

৭| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:২৩

পদ্মপুকুর বলেছেন: শেষে লিখেছেন এমবিবিএস ডাক্তারের পড়ামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক নয়....

দুঃখের কথা কি বলবো, হঠাৎ আমার পরিবারে একজনের ইউটিআই দেখা দিলো, মহল্লার এক বিসিএস করা ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে গেলাম, কিছু এন্টিবায়োটিক দিয়ে দিলেন... তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা কমলেও দুই চারদিন পর আবার একই সমস্যা দেখা দিলে আবার নিয়ে গেলাম ওই ডাক্তারের কাছে, কোনো পরীক্ষা নীরিক্ষা না করেই তিনি কি এক এন্টিবায়োটিকের আইভি ইনজেকশনের ৭ দিনের এক কোর্স দিয়ে দিলেন... এখন রোগীর অবস্থা অনেকটা ওই ৪ বছরের বাচ্চার মতই!!!

২১ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৭

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: ভাই ইনজেকশন ফরমেট বিক্রি করতে পারলে সবারই লাভ। এজন্য ইনজেকশন বেশি বিক্রি করে। তবে রোগীর জন্য ক্ষতিকর। তবে এমন কিছু সময় থাকে যখন হাই রিস্ক ছাড়া কাজ হয়না। তখন ডাক্তার ডাক্তার ইনজেকশন দেন

৮| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২৩

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

আমি চেষ্টা করেছি সবটুকু দেবার। আপনার লিংক পাঠকের তথ্য পেতে সাহায্য করবে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.