নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অপরিকল্পিতভাবে যেমন সুন্দর বাগান তৈরী সম্ভব নয়,\nতেমনি অপরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে একটা সুন্দর জাতী তৈরী সম্ভব নয়।\nআগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়- কর্মমুখী,নৈতিকতা সমৃদ্ধ ও যুগোপযোগী শিক্ষা চাই,\nবর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় জাতির বোঝা তৈরী হয়, সম্পদ নয়।\n\

সামিউল ইসলাম বাবু

যেটুকু পাও ছোট্ট সময়/কাজ করে যাও রবের তরে/ক্ষনিক সময় বিস্রাম নিও/ঘুমিও না তুমি অলসতা ভরে//

সামিউল ইসলাম বাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মহত্যা

২৬ শে আগস্ট, ২০২১ ভোর ৫:৪২



আজকাল আত্মহত্যা একটা কমন নিউজ। এর বেশির ভাগই টিনএজের ছেলে মেয়ে। এর অনেক নিউজ পত্রিকায় আসছে নিয়মিত। আবার মিডিয়ায়ও আসছেনা অনেক...।
এরজন্য টিভি সিরিয়াল ও সিনেমা অনেকাংশে দায়ী। সিনেমা নাটক গুলো আত্মহত্যা করা শেখায়। কিভাবে স্ট্রাগল করে বেঁচে থাকতে হয় সেটা শেখায় না। এর ফলে টিজাররা সেটায় বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটায়। সে আমারে নেগলেট করলো, আমার আর বেঁচে কি হবে! এই পৃথিবীতে আর থাকবো না, ইত্যাদি ইত্যাদি...

বেশ ক'দিন আগের কথা। ঘটনাটি আমাদের পাশের গ্রামের। একটা লাশ দেখতে যাচ্ছি। কোনো স্বাভাবিক লাশ না, আত্মহত্যা করা লাশ। ওই লাশের বাড়িতে যেতে যদিও খুব অস্বস্তি হচ্ছে, কিন্তু তারপরও যাওয়া দরকার!

তখন রাত দশটা! আম্মাকে বললাম, ‘লাশ দেখতে যাচ্ছি, আজ হয়তো বাড়িতে ফিরবো না।’
আম্মা চোখ জোড়া কপালে তুলে বললেন, ‘তুই তো পাশের বাড়িতেও কেউ মারা গেলে ভয়ে কোনোদিন লাশ দেখতে যাস না, আজ আবার আত্মহত্যা করা লাশ দেখতে যাচ্ছিস! একাই যাচ্ছিস?
বললাম, ‘একা যাওয়ার সাহস নেই, আম্মা! ইবরামকে সাথে নিয়ে নিয়ে যাবো। আসলে ইবরামের জন্যই লাশটা দেখতে যাচ্ছি!’

ইবরাম আমাদের প্রতিবেশি। আমার চেয়ে প্রায় ৫ বছরের ছোট। বয়সে ছোট হলেও আমরা বন্ধুর মতই ঘোরাফেরা করি।

আমি আর ইবরাম বাইকে চেপে দুই কিলোমিটার ‍দূরের লাশের বাড়িতে গেলাম। তখনও লাশ এসে পৌঁছায়নি। পুলিশি ঝামেলা শেষ করে রাত বারোটার সময় লাশ এসে পৌঁছালো।

লাশটা ভ্যান থেকে নামানো মাত্রই মানুষ হুড়োহুড়ি করে লাশ দেখতে গেল। আমি আর ইবরামও দেখতে গেলাম। লাশের ‍মুখটা দেখা মাত্রই আমার বুকটা ‘ধক’ করে উঠল, ভয়ে পুরো শরীর শিঁউরে উঠল। টিনএজার একটা মেয়ে; গলায় দড়িয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গলায় দড়ি দেওয়ার কারণে মুখের শিরাগুলো টান টান হয়ে আছে, আর চোখগুলো মনে হচ্ছে কুঠরি থেকে বেরিয়ে আসবে। দেখতে ভীষণ ভয়ংকর লাগছিলো!

ইবরাম লাশটা দেখে একদম নীরব হয়ে গেল। তারপর সে জিজ্ঞেস করলো, ‘ভাই, এই বাচ্চা মেয়েটা নিজের এতোবড়ো সর্বনাশ কেন করলো?’
‘বললাম, বাড়িতে নাকি মায়ের সাথে কি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিলো। কথা কাটাকাটির জেরে ওর মা একটা থাপ্পড় দিয়েছিলো। সেই অভিমানে ও গলায় ফাঁস দিয়েছে।’

এবার লাশটা গোসল দেওয়ার পালা। কিন্তু লাশ গোসল দেওয়ার জন্য সেরকম জানাশোনা কোনো মহিলা পাওয়া যাচ্ছে না। যারা আছে তারা কেউই তাকে গোসল করানোর সাহস পাচ্ছে না। লাশের চেহারা দেখেই সবাই ভয় পাচ্ছে। এরপর অদূরের একটা গ্রাম থেকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে দু’জন মহিলাকে নিয়ে আসা হলো! তারা লাশ গোসল দেওয়ার আগেই ৫ হাজার টাকা গুনে নিলো!

গোসল দেওয়া শেষ হলে রাত তিনটার সময় জানাজার নামাজের ব্যবস্থা করা হলো। মেয়েটার বাবা চাচ্ছিলো, ফজরের আগেই সমস্ত ঝামেলা শেষ করতে! জানাজার জন্য সবাই দাড়িয়ে আছে, কিন্তু ইমাম সাহেব নেই। নিকটস্থ মসজিদের ইমাম সাহেব মসজিদেই থাকেন। তাকে ডাকতে আরও আগেই লোক পাঠানো হয়েছে, কিন্তু তারা এখনও ফিরে আসেনি। একটু পর জানা গেল, ইমাম সাহেব জানাজা পড়াতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। ইমাম সাহেব নাকি বলেছেন, ‘আত্মহত্যা করা লাশের জানাজা পড়া এবং পড়ানো কোনোটাই জায়েজ নেই!’

এ কথা শুনে ইবরাম আমার মুখের পানে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘আসলেই কি জায়েজ নাই?’
আমি বললাম, ‘জানি না রে! এগুলো ইখতিলাফি বিষয়। আলিমরাই ভালো বলতে পারবেন; আমিতো আলিম না!’

এরপর গ্রামেরই এক লোক অনেকটা বাধ্য হয়ে কোনোরকমে জানাজা পড়ালেন! তারপর লাশ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হলো। এবার লাশ কবরে নামানোর পালা!

লাশ কবরে নামাতে গিয়েই বিপত্তিটা বাঁধল! লাশ কবরে রাখার জন্য ‍দু’জনকে তো কবরে নামতে হবে। আর সেই দু’জনকে অবশ্যই মাহরাম হতে হবে। উপস্থিত লোকজন মেয়েটার বাবা আর চাচাকে কবরে নামতে বলল! কিন্তু মেয়েটার চাচা কবরে নামতে নারাজ। তিনি স্পষ্ট করে বলে দিলেন, তিনি এই লাশ ধরতেও পারবেন না, কবরে নামাতেও পারবেন না। এরপর বাধ্য হয়ে ক্লাস সেভেনে পড়া মেয়েটার ছোট ভাইকে কবরে নামতে হলো! তারা মেয়েটার লাশটা কবরে নামিয়েই তড়িৎ গতিতে কবর থেকে উঠে এলো। মনে হলো, তারা দুজনই ভীষণ ভয় পেয়েছে!

ফজরের নামাজ পড়ে যখন বাড়ি ফিরলাম, তখন আম্মা আমাকে চেপে ধরলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুই তো কোনোদিন এরকম লাশের বাড়িতে বসে থাকিস না। আসল ঘটনা কি?’
বললাম, ‘আসল ঘটনা হলো, ইবরাম! আসলে, একবছর আগে করোনায় ইবরামের মা মারা যায়। ওর মা মারা যাওয়ার পর ওদের পরিবাটা অনেকটাই ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। হয়তো পরিবারটাকে ঠিকঠাক রাখতেই ইবরামের বাবা মাস দুয়েক আগে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। আর ইবরাম এই বিবাহটাই মানতে পারছিলো না। আসলে অনার্সে পড়া একটা ছেলের পক্ষে সৎ মা নেওয়াটা সহজও না। এই মেনে নিতে না পারা থেকেই ইবরাম দিনকে দিন হতাশ হয়ে পড়ছিলো। বিগত কয়েকদিন থেকে ইবরামকে খুব বেশি হতাশ মনে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো, ইবরাম হয়তো খারাপ কিছু করে ফেলতে পারে। আর এমন অবস্থায় কোনো কিছু বলে লাভও হয় না। তাই ইবরামকে এমন কিছু দেখাতে চাচ্ছিলাম, যেটা দেখে সে যেন এমন কিছু করার কথা চিন্তাও না করে!’

এর মাস দুয়েক পর ইবরাম আমাকে বলেছিলো, ‘ওই রাতের ঘটনাগুলো যদি আমি নিজের চোখে না দেখতাম, তাহলে হয়তো আমিও আত্মহত্যা করতাম। কিন্তু ওই রাতের ঘটনা দেখে আমার মনে হয়েছে, দুনিয়ার জীবনের সাময়িক কিছু কষ্টের জন্য এমন বিব্রতকর মৃত্যুর কোনো মানে হয় না! যে মৃত্যু দুনিয়ায় লাঞ্জিত করে এবং আখিরাতেও অপমানিত করে।’


লেখকঃ শাহমুন নাকিব ফারাবি
(আংশিক পরিমার্জিত)
ছবিঃ গুগোল (ঘটনার সাথে ছবিটির কোন সম্পর্ক নেই)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.