নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এখন অবাক হই না...

গলায় ব্যাথা!! আওয়াজ তুলতে পার্তাসি না!!

নীল কাব্য

তারছিড়ার ব্লগে স্বাগতম। জীবনের প্রয়োজনে সময়ের স্রোতে মানুষ থেকে তাছিড়ায় রুপান্তর হলাম...................

নীল কাব্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার ভালবাসা

২৪ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮

প্রচন্ড শীত, ঘন কুয়াশা ভেদ করে হনহনিয়ে হাটছি! জ্যাকেটের ভেতরের দিকে একটা পকেট আছে, সেই পকেটে একটা কাগজ ভাজ করা! কাগজ বললে ভুল হবে, ওটা আসলে একটা প্রেম পত্র, গোটা হাতের লেখা আস্ত একটা চিঠি! এক টাকা দামের প্যাড কাগজের দুই পাশে হিজিবিজি করে লেখা একটা চিঠি। ডায়েরী লেখার অভ্যাস আমার নেই। তাই দোকান থেকে কাজগ কিনে চিঠি লিখছি, আমার ঘরে যতগুলা খাতা আছে তার সব গুলাই মার্জিন ছাড়া অংক খাতা!! মার্জিন ছাড়া খাতায় লিখতে গেলে প্রত্যেকটা লাইন একে অপরের থেকে কৌনিক দুরত্ব সৃষ্টি করে!! বোঝা মুশকিল সেই লেখা!! পরীক্ষার খাতায় লাইন বাকা হলেও সমস্যা নেই, পাশ করে যাই! কিন্তু প্রেমের খাতায় বাকা লাইনের লেখা মানেই লজ্জা!! পাশাপাশি ফেল করারও সমুহ সম্ভবনা থাকে। নাবিলাকে নিয়ে কোন প্রকার রিস্ক নিতে চাইনা! টমবয় টাইপের এই মেয়টার সাথে সেই ক্লাশ টু থেকেই সখ্যতা আমার, ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব! প্রতিদিনই ওর সাথে আমার ঝগড়া হত, নাবিলার জায়গায় কাবিলা বলে ওকে ডাকতাম! ব্যাস! ধুমধুমার কিল খেতে খেতে আমার দিন কেটে যেত! এত মার খাবার পরেও কিভাবে মেয়েটার প্রেমে পড়লাব বুঝতে পারছি না। আমি নিশ্চিত ও আমার বউ হলে মার খেতে খেতে আমার জীবন পার করতে হবে! অথচ ওসব কোন কিছুই আমার মাথায় আসছে না। সাড়ে সাতটা বাজে, নাবিলা এখন বাসা থেকে বের হয়ে স্কুল ভ্যানে উঠবে! এই সুযোগ, ওর হাতে চিঠিটা দেয়ার।



গলির মুখে দাড়িয়ে আছি প্রায় পাচঁ মিনিট! দীর্ঘ সময়, শীতের মধ্যেও আমার হাতের তালু ঘামছে! পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাড়িয়ে আছি, পাশের বাড়ীর কার্নিশে একটা বিড়াল, এক দৃষ্টিদে আমার দিকে তাকিয়ে আছে!! আমিও বিড়ালটার দিকে তাকালাম ওর চোখে চোখ রাখলাম, মনে হচ্ছে সে আমাকে কিছু বলছে:

- এই শীতে দাড়িয়ে আছো কেন?

প্রেমিকার জন্য, তাকে দেখতে এসেছি,

- সে তোমার জন্য দাড়িয়ে থাকে?

নাহ, সে জানেই না যে আমি তাকে ভালবাসি

- বলছো না কেন?

ভয়ে

- কিসের?

প্রত্যাখ্যানের

- বলে ফেল

হুমম, তাই চিঠি লিখে এনেছি

- ওটা দিও না, মুখেই বলো

কিভাবে?

- যেভাবে সবাই বলে!!



-কিরে গাধা? বিড়বিড় করে কি বলছিস?

ধ্যান ভেঙ্গে তাকালাম, নাবিলা! সবুজ ও সাদা রংয়ের স্কুল ড্রেস পরিহিত অসম্ভব সুন্দর ও রাগী একটা পুতুল! এই মুহুর্তে আমার সামনে!

মৃদু একটা ধাক্কা খেলাম, সামনে থাকা এই দস্যি মেয়েটা ধুম করে একটা কিল মেরে দিল! সাত সকালে মার খাওয়ার ইচ্ছা নেই। চিঠিটা তাই পকেটেই রেখে দিলাম। টুকটাক কথা বলে ওকে বিদায় দিয়ে দিলাম। ধিরে ধিরে আমার পুতুলটা কুয়াশার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে, ঘোর লাগা এক সৌন্দর্য! স্বর্গ থেকে নেমে আসার পরীর চলে যাওয়া দেখছি মনে হয়।



বাসায় ফিরে চুপচাপ ছাদে উঠে, নিজের লেখা চিঠি নিজেই পড়তে শুরু করলাম!! প্রথমেই বানান ভুল!! নাবিলার স্থলে কাবিলা লিখেছি!!! মনে মনে নিজেই নিজেকে ধন্যবাদ দিলাম! এ যাত্রায় বেচে গেলাম। চিঠিটা ভাজ করে পকেটে রেখে দিলাম। কুয়াশা ধিরে ধিরে কেটে যাচ্ছে, মিষ্টি রোদ এসে গায়ে লাগছে! মাঝে মাঝে কিছু অলুক্ষুনে মেঘ এসে সূর্যটাকে আড়াল করে দিচ্ছে। সূর্য ও মেঘের লুকোচুরি দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে এল। ঘরে চলে গেলাম।



বিকেলে বারান্দায় দাড়াতেই নীচ থেকে নাবিলার হাঁক! গাধা! এই গাধা!! আমার বাসার সবাই এই হাঁকের সাথে পরিচিত! ওর ডাক শুনে নীচে নেমে এলাম।

ওই, আমি গাধা নই! আমার একটা নাম আছে, বাবা-মা আকিকা দিয়ে নামটা রেখেছেন! নাম ধরে ডাক

- এ্যাহ! যাহ গাধা, তোর সাথে অত সুন্দর একটা নাম কিছুতেই যায় না, তুই কি কবিতা লিখিস? কবিতার কিছূ বুঝিস? কাব্য নামটা তোর জন্য না, তুই গাধা, আস্ত একটা গাধা!!

এক নাগারে বকে যাচ্ছে নাবিলা, আমি নির্বিকার, পাশের বাড়ির পাচিলে জন্মানো একটা পাকুর গাছের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি, শত প্রকিতুলতার মাঝে গাছটা ঠায় দাড়িয়ে আছে, প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য। এই মুহুর্তে একটা কবিতা লিখতে ইচ্ছে করছে খুব!! কিন্তু ইচ্ছেটাকে গোপনই রাখতে হবে। নাবিলা জানেনা আমি কবিতা লিখতে পারি, ওকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমার মার্জির ছাড়া খাতাতেই বাকা লাইনে লিখে রাখি, অব্যক্ত সব কথাগুলো। ওকে বলেও লাভ নেই, নাবিলা এসবের ধারধারে না, সব সময় কেমন জানি, কিচ্ছু বুঝতে চায় না, নিজের ইচ্ছে মত চলে, ওর এই খামখেয়ালীপনাই আমার সবচে ভাল লাগে।



ধুম, পিঠের মাঝখানে ঠিক মেরুদন্ড বরারব খানিকটা ব্যাথা অনুভব করছি, এই ব্যাথার সাথে আমি আগে থেকেই পরিচিত, হরহামেশাই এরকম দু চারটা কিল আমি খাই। দন্ত বিকশিত করে হাসার চেষ্টা করলাম, হাসি দিয়ে কষ্টটাকে আড়াল করতে হবে। ও যদি বুঝতে পারে আমি ব্যাথা পেয়েছি তাহলে হয়তো একটু দু:খ পাবে, খানিকের জন্য ওর হাসিটা হারিয়ে যাবে, কিন্তু সেটা আমি হতে দিতে পারিনা।



- তুই ক্যাবলার মত হাসবি না, মেজাজ খারাপ লাগে

তাহলে কিসের মত হাসবো?

- তুই হাসবি না, তোর মত গবেটের হাসা উচিত না, তুই হাসলে আমার মেজাজ খারাপ হয়

তোর মেজাজ খারাপ হলে আমার মজা লাগে

- ওই!! তোর লক্ষন তো ভালো নারে!! কি হইসে তোর? প্রেমে পরেছিস?

ধুর কার প্রেমে পড়বো?

- দেখ মিথ্যা বলবি না, ঘাড়ের নীচে দুইটা লাগিয়ে দেব! সকাল বেলা বাসার সামনে কি করছিলি?? নিহা কে প্রপোজ করবি নাকি? শুনলাম ইদানিং বিকেলে তুই ছাদে উঠিস!! কাহিনি কি?

তুই ভাল মতই জানিস বিকেলে আমি ছাদে উঠি, আর সকালে দাড়িয়েছিলাম অন্য একটা কাজে

- কি কাজ?

আমার সাথে একটু ছাদে উঠবি?

- মানে?

ছাদে আয় দেখাবো কি কাজ



নাবিলাকে ছাদে পাঠিয়ে আমি আমার রুমে গেলাম, ড্রয়ার থেকে দুইটা মার্জিন ছাড়া খাতা বের করলাম, দুইটার মলাটেই বড় করে লেখা NABILA, খুব ভয় করছে, কপাল থেকে ঘাম ঝরছে, বুঝতে পারছি না কি করতে হবে এখন। ছাদে উঠে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম!



- ওই হাদারাম! খাতা এনেছিস কেন? অংক শেখাবি? চিরচেনা শব্দে খিল খিল হাসি, অবাক হয়ে দেখছি!! এক পা দু পা করে নাবিলা আমার সামনে চলে আসছে! বুকের মধ্যে ধুকধুকানিটা দ্রুত বাড়ছে!! কি করবো বুঝতে পারছি না, পুরো শরীর অসার হয়ে আসছে, আজ যদি ও আমাকে ফিরিয়ে দেয়!! আজকের পর থেকে যদি ও আমার সাথে কথা না বলে!! সব কিছুই গোলমেলে লাগছে! দাড়িয়ে থাকার সর্বশেষ শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছি! ধুপ...........





খুব চেচামেচি শব্দ!! অস্পষ্ট ভাবে কান্নার আওয়াজ কানে আসছে!! চোখ মেলে তাকালাম! মাথার কাছে মা বসে বসে কাঁদছে!! কারণ জিজ্ঞেস করলাম, অত:পর বুঝলাম তখন ভয়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি!! আশেপাশের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে, মা ও বড়পু ছাড়াও, কাজিন মলি, পিংকি ও রুদ্র দাড়িয়ে আছে!! সবাই মুচকি হাসছে!! চিড়িয়া খানার বাদরের খাচার চারপাশে দাড়িয়ে মানুষ যেভাবে হাসছে ঠিক সে ভাবেই সবাই হাসছে!! আশ্চর্য!! এরপর নিজের দিকে তাকালাম! না, গায়ে শার্ট প্যান্ট সবই আছে, তারপরেও কেন হাসছে বুঝতে পারলাম না!! বড়পু কে জিজ্ঞেস করলাম, কিছু বলল না!! সবাই চাপা স্বরে হাসতেই থাকলো!! মেজাজ আমার বিগরে গেল!! বেশ কড়া একটা ঝাড়ি দিলাম! মা সহ অন্যান্যরা চলে গেল রুমের দরজা বন্ধ করলাম! হুট করেই খাতার কথা মনে পড়লো!! মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলাম! আমার এতদিনের অব্যক্ত সব ভালবাসার কথামালা ওই খাতাতেই লেখা ছিল, মুখফুটে হয়তো কখনোই নাবিলাকে কিছুই বলতে পারবো না, তাই খাতা দুটো ওকে দিতে চেয়েছিলাম! কিন্তু কিভাবে যে কি হল! কাউকে জিজ্ঞেস করতেও পারছি না। বসে বসে এখন কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।



বারান্দা থেকে কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ পেলাম!! নাবিলা বারান্দার এক কোনে দাড়িয়ে আছে, ওর ঠিক পায়ের কাছেই পড়ে আছে আমার সেই দুইটা খাতার একটি, আন্যটি ওর হাতে, ওর চোখে চোখ রখতেই বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো!! আমার সমস্ত পৃথীবি ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে! যার হাসিমুখ দেখার জন্য নিরবে নিভৃতে ভালবেসে এসছি আজ তার চোখেই জল!! খুব ইচ্ছে করছে ওর চোখের জল মুছিয়ে দিতে। ওর কান্নার কারনটা কি বুঝতে পারছি না!! আবারও খুব ভয় ভয় লাগছে! স্থির মুর্তি হয়ে দাড়িয়ে আছি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে। দুজনেই নিরব। নীরবতাটা নাবিলাই ভাংলো..........



"তুই আসলে গাধা নস, তুই একটা মহা গাধা, ভালবাসিস অথচ মুখে বলতে পারিস না, বলতেই যদি না পারিস তাহলে ভালবাসিস কেন? ভালবাসলে ভয় পেতে হয় না, কাছে এসে হাত ধরতে হয়"

ওর কথার অর্থটা ঠিক বুঝতে পারলাম না, এর মাধ্যমে হ্যা বা না কি বোঝাতে চাচ্ছে? প্রশ্নটা করার সাহস পেলাম না, ওর চোখ থেকে চোখ নামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম! হাতে নরম কিছুর স্পর্শ পেতেই সামনে তাকালাম, নাবিলার কোমল হাত খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে আমার হাতটি। আবারও কান্নার শব্দ, দুজনেই একসাথে কাদঁতে লাগলাম........

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.