রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ''বাঁশী" কবিতা।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:২১

কিনু গোয়ালার গলি

দোতলা বাড়ির লোহার গরাদে দেওয়া

একতলা ঘর।

পথের ধারেই।

লোনাধরা দেয়ালেতে মাঝে মাঝে ধ্বসে গেছে বালি

মাঝে মাঝে স্যাঁত পড়া দাগ।

মার্কিন থানের মার্কা একাখানা ছবি সিদ্বিদাতা

গণেশের দরজার প'রে আটা।

আমি ছাড়া ঘরে থাকে আর একটা জীব এক ভাড়াতেই

সেটা টিকটিকি।

তফাৎ আমার সঙ্গে এই শুধু

নেই তার অন্নের অভাব।

বেতন পঁচিশ টাকা

সদাগরি আফিসের কনিষ্ট কেরানী।

খেতে পাই দত্তদের বাড়ী,

ছেলেকে পড়িয়ে।

শেয়ালদা ইস্টিশনে যাই,

সন্ধেটা কাটিয়ে আসি,

আলো জ্বালাবার দায় বাঁচে।

এন্জিনের ধ্বসধ্বস

বাঁশীর আওয়াজ

যাত্রীর ব্যস্ততা

কূলি হাকাহাকি

সাড়ে দশ বেজে যায়।

তারপরে ঘরে এসে

নিরালা নিঝুম অন্ধকার।

ধলেশ্বরী নদীতীরে পিশিদের গ্রাম,

তার দেওরের মেয়ে অভাগার সাথে তার

বিবাহের ছিল ঠিকঠাক,

লগ্ন শুভ,নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেল,

সেই লগ্নে এসেছি পালিয়ে।

মেয়েটা তো রক্ষে পেল ,

আমি তথৈবচ।

ঘরেতে এলোনা সে তো

মনে তার নিত্য আসা যাওয়া

পরনে ঢাকাই শাড়ী

কপালে সিঁদূর।

বর্ষা ঘনঘোর

ট্রামের খরচা বাড়ে

মাঝে মাঝে মাইনে ও কাটা যায়।

গলিটার কোনে কোনে জমে উঠে

পঁচে উঠে আমের খোসা ও আঠি।

মরা বেড়ালের ছানা,

ছাঁইপাশ আরো কত কী যে

গলির মোড়েই থাকেন কান্তবাবু,

যত্নে পাট করা লম্বা চুল

বড় বড় চোখ শৌখিন মেজাজ

কর্ণেট বাজানো তার শখ,

মাঝে মাঝে সূর জেগে ওঠে

এ গলির বীভৎস বাতাসে।

কখনো গভীর রাতে,

ভোর বেলা আধো অন্ধকারে।

কখনো ৈব্কালে,

ঝিকিমিকি আলোয় ছায়ায়,

হঠাৎ সন্ধ্যায় ।

সিন্ধু বারোয়ায় লাগে তান।সমস্ত আকাশে বাজে অনাদি কালের

বিরহ বেদনা

তখনি এ গলিটা মনে হয়,ঘোর মিছে

দূর্বিষহ মাতালের প্রলাপের মতন।

হঠাৎ খবর পাই মনে

আকবর বাদশার সংগে

হরিপদ কেরানীর কোন ভেদ নেই

বাঁশির করুন ডাক বেয়ে

ছেঁড়াছাতা রাজছত্র মিলে চলে গেছে

এক বৈকুন্টের দিকে।

এ গান যেখানে সত্য

অনন্ত গোধূলী লগ্নে

সেইখানে বহি চলে ধলেশ্বরী,

তীরে তমালের ঘন ছায়া

আঙিনাতে।

যে আছে অপেক্ষা করে তার

পরনে ঢাকই শাড়ী

কপালে সিদূর।

(পরিশিস্ট)



বি:দ্র:- ব্লগারদের প্রতি অনুরোধ ,অনেক আগে পড়েছিলাম "বাঁশী" কবিতাটি যা মনে আছে তা শুদ্ব করে লেখার চেষ্টা করেছি।ভুল নিজ গুনে ক্ষমা করবেন, দয়া করে।

৩ টি +০/-০