![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে ,সব সংগীত গেছে ইংগিতে থামিয়া - তবু বিহঙ্গ ওরে বিহঙ্গ মোর এখনি অন্ধ বন্ধ করনা পাখা-----
এ পর্বে যাদের কবিতা রয়েছে - সুধীন্দ্রনাথ দত্ত , সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য, জসীম উদ্দিন।
শাশ্বতী-সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
শ্রান্ত বরষা অবেলার অবসরে
প্রাঙ্গণে মেলে দিয়েছে শ্যামল কায়া ;
স্বর্ণ সুযোগে লুকাচুরি-খেলা করে
গগনে-গগনে পলাতক আলোছায়া |
আগত শরৎ অগোচর প্রতিবেশে ;
হানে মৃদঙ্গ বাতাসে প্রতিধ্বনি :
মূক প্রতীক্ষা সমাপ্ত অবশেষে
মাঠে, ঘাটে, বাটে আরব্ধ আগমনী |
কুহেলিকলুষ দীর্ঘ দিনের সীমা
এখনই হারাবে কৌমুদীজাগরে যে ;
বিরহবিজন ধৈর্যের ধূসরিমা
রঞ্জিত হবে দলিত শেফালি শেজে |
মিলনোত্সবে সেও তো পড়েনি বাকি,
নবান্নে তার আসন রয়েছে পাতা :
পশ্চাতে চায় আমরই উদাস আঁখি ;
একবেণী হিয়া ছাড়ে না মলিন কাঁথা ||
একদা এমনই বাদলশেষের রাতে---
মনে হয় যেন শত জনমের আগে---
সে এসে সহসা হাত রেখেছিল হাতে,
চেয়েছিল মুখে সহজিয়া অনুরাগে ;
সে-দিনও এমনই ফসলবিলাসী হাওয়া
মেতেছিল তার চিকুরের পাকা ধানে ;
অনাদি যুগের যত চাওয়া, যত পাওয়া
খুঁজেছিল তার আনত দিঠির মানে |
একটি কথার দ্বিধাথরথর চুড়ে
ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী ;
একটি নিমেষ দাঁড়ালো সরণী জুড়ে,
থামিল কালের চিরচঞ্চল গতি ;
একটি পণের অমিত প্রগল্ ভতা
মর্ত্যে আনিল ধ্রুবতারকারে ধ'রে
একটি স্মৃতির মানুষী দুর্বলতা
প্রলয়ের পথ দিল অবারিত ক'রে ||
সন্ধিলগ্ন ফিরেছে সগৌরবে ;
অধরা আবার ডাকে সুধাসংকেতে,
মদমুকুলিত তারই দেহসৌরভে
অনামা কুসুম অজানায় ওঠে মেতে |
ভরা নদী তার আবেগের প্রতিনিধি,
অবাধ সাগরে উধাও অগাধ থেকে ;
অমল আকাশে মুকুলিত তার হৃদি
দিব্য শিশিরে তারই স্বেদ অভিষেকে |
স্বপ্নালু নিশা নীল তার আঁখিসম ;
সে-রোমরাজি কোমলতা ঘাসে-ঘাসে ;
পুনরাবৃত্ত রসনায় প্রিয়তম ;
আজ সে কেবল আর কারে ভালবাসে |
স্মৃতিপিপিলিকা তাই পুঞ্জিত করে
অমার রন্ধ্রে মৃত মাধুরীর কণা ;
সে ভুলে ভুলুক, কোটি মন্বন্তরে
আমি ভুলিব না, আমি কভু ভুলিবো না ||
মে দিনের কবিতা-সুভাষ মুখোপাধ্যায়
প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,
চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য
কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া।
চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ,
গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে,
তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য
জীবনকে চায় ভালবাসতে।
প্রণয়ের যৌতুক দাও প্রতিবন্ধে,
মারণের পণ নখদন্তে;
বন্ধন ঘুচে যাবে জাগবার ছন্দে,
উজ্জ্বল দিন দিক্ -অন্তে।
শতাব্দীলাঞ্ছিত আর্তের কান্না
প্রতি নিঃশ্বাসে আনে লজ্জা;
মৃত্যুর ভয়ে ভীরু বসে থাকা, আর না
পরো পরো যুদ্ধের সজ্জা।
প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা,
দুর্যোগে পথ হয় হোক দুর্বোধ্য
চিনে নেবে যৌবন-আত্মা।।
ফুল ফুটুক না ফুটুক-সুভাষ মুখোপাধ্যায়
ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত
শান-বাঁধানো ফুটপাথে
পাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছ
কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে
হাসছে।
ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।
আলোর চোখে কালো ঠুলি পরিয়ে
তারপর খুলে
মৃত্যুর কোলে মানুষকে শুইয়ে দিয়ে
তারপর তুলে
যে দিনগুলো রাস্তা দিয়ে চলে গেছে
যেন না ফেরে।
গায়ে হলুদ দেওয়া বিকেলে
একটা দুটো পয়সা পেলে
যে হরবোলা ছেলেটা
কোকিল ডাকতে ডাকতে যেত
তাকে ডেকে নিয়ে গেছে দিনগুলো।
লাল কালিতে ছাপা হলদে চিঠির মত
আকাশটাকে মাথায় নিয়ে
এ-গলির এক কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়ে
রেলিঙে বুক চেপে ধরে
এই সব সাত-পাঁচ ভাবছিল
ঠিক সেই সময়
চোখের মাথা খেয়ে গায়ে উড়ে এসে বসল
আ মরণ ! পোড়ারমুখ লক্ষ্মীছাড়া প্রজাপতি !
তারপর দাড়ম করে দরজা বন্ধ হবার শব্দ।
অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে
দড়িপাকানো সেই গাছ
তখন ও হাসছে।
নতুন বছরে -সুভাষ মুখোপাধ্যায়
সোনা আমার, মানিক আমার
বাছা রে,
কী পেলে তুই খুশি হবি,
কী নিবি
নতুন এই বছরে ?
আমাকে দিও খেতে
এক বাটি দুধ দিনে
মাটির দুটো খেলনা দিও কিনে
বরং
এক বাক্স রং
আকাশে দিও ঢেলে
এবং
বালাই মুছে মাটিতে দিও পেতে
অফুরন্ত স্বপ্ন দেখার
শান্তির পৃথিবী ।
চিল্কায় সকাল -বুদ্ধদেব বসু
কী ভালো আমার লাগলো আজ এই সকালবেলায়
কেমন করে বলি?
কী নির্মল নীল এই আকাশ, কী অসহ্য সুন্দর,
যেন গুণীর কণ্ঠের অবাধ উন্মুক্ত তান
দিগন্ত থেকে দিগন্তে;
কী ভালো আমার লাগলো এই আকাশের দিকে তাকিয়ে;
চারদিক সবুজ পাহাড়ে আঁকাবাঁকা, কুয়াশায় ধোঁয়াটে,
মাঝখানে চিল্কা উঠছে ঝিলকিয়ে।
তুমি কাছে এলে, একটু বসলে, তারপর গেলে ওদিকে,
স্টেশনে গাড়ি এসে দাড়িয়েঁছে, তা-ই দেখতে।
গাড়ি চলে গেল!- কী ভালো তোমাকে বাসি,
কেমন করে বলি?
আকাশে সূর্যের বন্যা, তাকানো যায়না।
গোরুগুলো একমনে ঘাস ছিঁড়ছে, কী শান্ত!
-তুমি কি কখনো ভেবেছিলে এই হ্রদের ধারে এসে আমরা পাবো
যা এতদিন পাইনি?
রূপোলি জল শুয়ে-শুয়ে স্বপ্ন দেখছে; সমস্ত আকাশ
নীলের স্রোতে ঝরে পড়ছে তার বুকের উপর
সূর্যের চুম্বনে।-এখানে জ্বলে উঠবে অপরূপ ইন্দ্রধণু
তোমার আর আমার রক্তের সমুদ্রকে ঘিরে
কখনো কি ভেবেছিলে?
কাল চিল্কায় নৌকোয় যেতে-যেতে আমরা দেখেছিলাম
দুটো প্রজাপতি কতদূর থেকে উড়ে আসছে
জলের উপর দিয়ে।- কী দুঃসাহস! তুমি হেসেছিলে আর আমার
কী ভালো লেগেছিল।
তোমার সেই উজ্জ্বল অপরূপ মুখ। দ্যাখো, দ্যাখো,
কেমন নীল এই আকাশ-আর তোমার চোখে
কাঁপছে কত আকাশ, কত মৃত্যু, কত নতুন জন্ম
কেমন করে বলি।
অভিশাপ - কাজী নজরুল ইসলাম
যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সদিন বুঝবে
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
ছবি আমার বুকে বেধে
পাগল হয়ে কেদে
ফিরবে মরু কানন গিরি
সাগর আকাশ বাতাশ চিরি
সেদিন আমায় খুজবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
স্বপন ভেঙ্গে নিশুত রাতে, জাগবে হঠাৎ চমকে
কাহার যেন চেনা ছোয়ায় উঠবে ও-বুক চমকে-
জাগবে হঠাৎ চমকে,
ভাববে বুঝি আমিই এসে
বসনু বুকের কোলটি ঘেষে
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শুন্য শয্যা মিথ্যা স্বপন
বেদনাতে চোখ বুজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে
গাইতে গিয়ে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না
বলবে সবাই- সেই যে পথিক তার শোনানো গান না?-
আসবে ভেঙ্গে কান্না,
পড়বে মনে আমার সোহাগ
কন্ঠে তোমার কাদবে বেহাগ
পড়বে মনে আমার ফাকি
অশ্রুহারা কঠিন আখি
ঘন ঘন মুছবে,
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আবার যেদিন শিউলী ফুলে ভরবে তোমার অঙ্গন
তুলতে সে ফুল গাথতে মালা, কাপবে তোমার কঙ্কণ
কাদবে কুটির অঙ্গন,
শিউলী ঢাকা মোর সমাধি
পড়বে মনে উঠবে কাদি
বুকের জ্বালা করবে মালা
চোখের জলে সেদিন বালা
মুখের হাসি ঘুচবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আসবে আবার আশিন হাওয়া, শিশির ভেজা রাত্রি
থাকবে সবাই- থাকবে না এই মরন পথের যাত্রী
আসবে শিশির রাত্রি,
থাকবে পাশে বন্ধু সুজন
থাকবে রাত বাহুর বাধন
বধুর বুকের পরশনে
আমার পরশ আনবে মনে
বিষিয়ে ও বুক উঠবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আসবে তোমার শীতের রাতি, আসবে নাকো আর সে
তোমার সুখে পড়তো বাধা থাকলে যে জন পার্শ্বে
আসবে নাকো আর সে,
পড়বে মন মোর বাহুতে
মাথা থুয়ে যেদিন শুতে
মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়
সেই স্মৃতি নিত বিছানায়
কাটা হয়ে ফুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আবার গাঙ্গে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে
সেই তরীতে হয়তো কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে
দুলবে তরী রঙ্গে,
পড়বে মনে সে কোন রাতে
এক তরীতে ছিলে সাথে
এমনি গাঙে ছিল জোয়ার
নদীর দুধার এমনি আধার
তেমনি তরী ছুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা বন্ধ
আমার মত কেদে কেদে হয়তো হবে অন্ধ
সখার কারা বন্ধ,
বন্ধু তোমার হানবে হেলা
ভাঙ্গবে তোমার সুখের খেলা
দীর্ঘ লো কাটবে না আর
বইতে প্রাণ শ্রান্ত এ ভার
সরন মনে যুঝবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
ফুটবে আবার দোলন চাপা, চৈতি রাতের চাদনী
আকাশ ছাওয়া তারায় তারায় বাজবে আমার কাদনি
চৈতি রাতের চাদনী
ঋতুর পরে ফিরবে ঋতু
সেদিন হে-মোর সোহাগ ভীতু
চাইবে কেদে নীল নভোগায়
আমার মত চোখ ভরে চায়
যে তারা, তায় খুজবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আসবে ঝড়ি, নাচবে তুফান টুটবে সকল বন্ধন
কাপবে কুটির সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন
টুটবে যবে বন্ধন,
পড়বে মনে নেই সে সাথে
বাধতে বুকে দুঃখ রাতে-
আপনি গালে যাচবে চুমা
চাইবে আদর মাগবে ছোওয়া
আপনি যেচে চুমবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আমার বুকের যে কাটা ঘা, তোমায় ব্যাথা হানত
সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়তো হয়ে শ্রান্ত
আসব তখন পান্থ,
হয়তো তখন আমার কোলে
সোহাগ লোভে পড়বে ঢোলে
আপনি সেদিন সেধে-কেদে
চাপবে বুকে বাহুয় বেধে
চরন চুমে পূজবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
ফাল্গুনী - কাজী নজরুল ইসলাম
সখি পাতিসনে শিলাতলে পদ্মপাতা,
সখি দিসনে গোলাব-ছিটে খাস লো মাথা!
যার অন্তরে ক্রন্দন
করে হৃদি মন্থন
তারে হরি-চন্দন
কমলী মালা-
সখি দিসনে লো দিসনে লো, বড় সে জ্বালা!
বল কেমনে নিবাই সখি বুকের আগুন!
এল খুন-মাখা তূণ নিয়ে খুনেরা ফাগুন!
সে যেন হানে হুল-খুনসুড়ি,
ফেটে পড়ে ফুলকুঁড়ি
আইবুড়ো আইবুড়ো
বুকে ধরে ঘুণ!
যত বিরহিণী নিম-খুন-কাটা ঘায়ে নুন!
আজ লাল-পানি পিয়ে দেখি সব-কিছু চুর!
সবে আতর বিলায় বায়ু বাতাবি নেবুর!
হল মাদার আশোক ঘাল,
রঙন তো নাজেহাল!
লালে লাল ডালে-ডাল
পলাশ শিমুল!
সখি তাহাদের মধু ক্ষরে-মোরে বেঁধে হুল !
নব সহকার-মঞ্জরী সহ ভ্রমরী!
চুমে ভোমরা নিপট, হিয়া মরে গুমরি ।
কত ঘাটে ঘাটে সই-সই
ঘট ভরে নিতি ওই,
চোখে মুখে ফোটে খই,-
আব-রাঙা গাল,
যত আধ-ভাঙা ইঙ্গিত তত হয় লাল!
আর সইতে পারিনে সই ফুল-ঝামেলা!
প্রাতে মল্লী চাঁপা, সাঁজে বেলা চামেলা!
হের ফুটবো মাধী হুরী
ডগমগ তরুপুরী,
পথে পথে ফুলঝুরি
সজিনা ফুলে!
এত ফুল দেখে কুলবালা কূল না ভুলে!
সাজি বাটা-ভরা ছাঁচিপান ব্যজনী-হাতে
করে স্বজনে বীজন কত সজনী ছাতে!
সেথা চোখে চোখে সঙ্কেত
কানে কথা-যাও ধেৎ,-
ঢলে-পড়া অঙ্কেতে
মন্মথ-ঘায়!
আজ আমি ছাড়া আর সবে মন-মত পায়।
সখি মিষ্টি ও ঝাল মেশা এল এ কি বায়!
এ যে বুক যত জ্বালা করে মুখ তত চায়!
এযে শরাবের মতো নেশা
এ পোড়া মলয় মেশা,
ডাকে তাহে কুলনাশা
কালামুখো পিক।
যেন কাবাব করিতে বেঁধে কলিজাতে শিক্ !
এল আলো-রাধা ফাগ ভরি চাঁদের থালায়
ঝরে জোছনা-আবীর সারা শ্যাম সুষমায়!
যত ডাল-পালা নিম্ খুন,
ফুলে ফুলে কুঙ্কুম্ ,
চুড়ি বালা রুম্ ঝুম,
হোরির খেলা,
শুধু নিরালায় কেঁদে মরি আমি একেলা!
আজ সঙ্কেত-শঙ্কিত বন-বীথিকায়
কত কুলবধূ ছিঁড়ে শাড়ি কুলের কাঁটায়!
সখি ভরা মোর এ দু কুল
কাঁটাহীন শুধু ফুল!
ফুলে এত বেঁধে হুল?
ভালো ছিল হায়,
সখি ছিঁড়িত দুকূল যদি কুলের কাঁটায়!
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে - কাজী নজরুল ইসলাম
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।
আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে
বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার ভাঙা কল্লোলে।
আসল হাসি, আসল কাঁদন
মুক্তি এলো, আসল বাঁধন,
মুখ ফুটে আজ বুক ফাটে মোর তিক্ত দুখের সুখ আসে।
ঐ রিক্ত বুকের দুখ আসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আসল উদাস, শ্বসল হুতাশ
সৃষ্টি-ছাড়া বুক-ফাটা শ্বাস,
ফুললো সাগর দুললো আকাশ ছুটলো বাতাস,
গগন ফেটে চক্র ছোটে, পিণাক-পাণির শূল আসে!
ঐ ধূমকেতু আর উল্কাতে
চায় সৃষ্টিটাকে উল্টাতে,
আজ তাই দেখি আর বক্ষে আমার লক্ষ বাগের ফুল হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ হাসল আগুন, শ্বসল ফাগুন,
মদন মারে খুন-মাখা তূণ
পলাশ অশোক শিমুল ঘায়েল
ফাগ লাগে ঐ দিক-বাসে
গো দিগ বালিকার পীতবাসে;
আজ রঙ্গন এলো রক্তপ্রাণের অঙ্গনে মোর চারপাশে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!
আজ কপট কোপের তূণ ধরি,
ঐ আসল যত সুন্দরী,
কারুর পায়ে বুক ডলা খুন, কেউ বা আগুন,
কেউ মানিনী চোখের জলে বুক ভাসে!
তাদের প্রাণের বুক-ফাটে-তাও-মুখ-ফোটে-না
বাণীর বীণা মোর পাশে
ঐ তাদের কথা শোনাই তোদের
আমার চোখে জল আসে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!
আজ আসল ঊষা, সন্ধ্যা, দুপুর,
আসল নিকট, আসল সুদূর
আসল বাধা-বন্ধ-হারা ছন্দ-মাতন
পাগলা-গাজন-উচ্ছ্বাসে!
ঐ আসল আশিন শিউলি শিথিল
হাসল শিশির দুবঘাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ জাগল সাগর, হাসল মরু
কাঁপল ভূধর, কানন তরু
বিশ্ব-ডুবান আসল তুফান, উছলে উজান
ভৈরবীদের গান ভাসে,
মোর ডাইনে শিশু সদ্যোজাত জরায়-মরা বামপাশে।
মন ছুটছে গো আজ বল্গাহারা অশ্ব যেন পাগলা সে।
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!!
কান্ডারী হুঁশিয়ার! - কাজী নজরুল ইসলাম
১
দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার!
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভূলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার!!
২
তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান!
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে, নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার!!
৩
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানেনা সন্তরণ,
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ!
হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার!
৪
গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ
কান্ডারী! তুমি ভূলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চল টানি, নিয়াছ যে মহাভার!
৫
কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙ্গালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।
৬
ফাঁসির মঞ্চে যারা গেয়ে গেল জীবনের জয়গান,
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রান?
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুঁশিয়ার!
নারী - কাজী নজরুল ইসলাম
সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
নরককুন্ড বলিয়া কে তোমা করে নারী হেয়-জ্ঞান?
তারে বলো, আদি পাপ নারী নহে, সে যে নর-শয়তান।
অথবা পাপ যে-শয়তান যে-নর নহে নারী নহে,
ক্লীব সে, তাই সে নর ও নারীতে সমান মিশিয়া রহে।
এ-বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল,
নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল।
তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছে যত ফল,
অন্তরে তার মোমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।
জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্য লক্ষ্মী নারী,
সুষমা-লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি।
পুরুষ এনেছে যামিনী-শানি-, সমীরণ, বারিবাহ!
দিবসে দিয়াছে শক্তি সাহস, নিশীতে হয়েছে বধূ,
পুরুষ এসেছে মরুতৃষা লয়ে, নারী যোগায়েছে মধু।
শস্যক্ষেত্র উর্বর হল, পুরুষ চালাল হল,
নারী সেই মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল।
নর বাহে হল, নারী বহে জল, সেই জল-মাটি মিশে
ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে।
স্বর্ণ-রৌপ্যভার,
নারীর অঙ্গ-পরশ লভিয়া হয়েছে অলঙ্কার।
নারীর বিরহে, নারীর মিলনে, নর পেল কবি-প্রাণ,
যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।
নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে
জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে!
জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান,
মাতা ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান্ ।
কোন্ রণে কত খুন দিল নর লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে।
কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি কত বোন দিল সেবা,
বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোনো কালে একা হয়নি ক জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয় লক্ষ্মী নারী।
রাজা করিতেছে রাজ্য-শাসন, রাজারে শাসিছে রাণী,
রাণীর দরদে ধুইয়া গিয়াছে রাজ্যের যত গ্লানি।
পুরুষ হৃদয়-হীন,
মানুষ করিতে নারী দিল তারে আধেক হৃদয় ঋণ।
ধরায় যাঁদের যশ ধরে নাক অমর মহামানব,
বরষে বরষে যাঁদের স্মরণে করি মোরা উৎসব,
খেয়ালের বশে তাঁদের জন্ম দিয়াছে বিলাসী পিতা,-
লব-কুশে বনে ত্যজিয়াছে রাম, পালন করেছে সীতা।
নারী সে শিখাল শিশু-পুরুষেরে স্নেহ প্রেম দয়া মায়া,
দীপ্ত নয়নে পরাল কাজল বেদনার ঘন ছায়া।
অদ্ভুতরূপে পুরুষ পুরুষ করিল সে ঋণ শোধ,
বুকে করে তারে চুমিল যে, তারে করিল সে অবরোধ!
তিনি নর-অবতার-
পিতার আদেশে জননীরে যিনি কাটেন হানি কুঠার।
পার্শ্ব ফিরিয়া শুয়েছেন আজ অর্ধনারীশ্বর-
নারী চাপা ছিল এতদিন, আজ চাপা পড়িয়াছে নর।
সে যুগ হয়েছে বাসি,
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক , নারীরা আছিল দাসী!
বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি,
কেহ রহিবে না বন্দী কাহারও , উঠিছে ডঙ্কা বাজি।
নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে
আপনারি রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে!
যুগের ধর্ম এই-
পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই।
শোনো মর্ত্যের জীব!
অন্যেরে যত করিবে পীড়ন, নিজে হবে তত ক্লীব!
স্বর্ণ-রৌপ্য অলঙ্কারের যক্ষপুরীতে নারী
করিল তোমায় বন্দিনী, বল, কোন সে অত্যাচারী?
আপনারে আজ প্রকাশের তব নাই সেই ব্যাকুলতা,
আজ তুমি ভীরু আড়ালে থাকিয়া নেপথ্যে কও কথা!
চোখে চোখে আজ চাহিতে পার না; হাতে রুলি, পায় মল,
মাথার ঘোমটা ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙে ফেল ও-শিকল!
যে ঘোমটা তোমা করিয়াছে ভীরু, ওড়াও সে আবরণ,
দূর করে দাও দাসীর চিহ্ন, যেথা যত আভরণ!
ধরার দুলালী মেয়ে,
ফির না তো আর গিরিদরীবনে পাখী-সনে গান গেয়ে।
কখন আসিল যমরাজা নিশীথ-পাখায় উড়ে,
ধরিয়া তোমায় পুরিল তাহার আঁধার বিবর-পুরে!
সেই সে আদিম বন্ধন তব, সেই হতে আছ মরি
মরণের পুরে; নামিল ধরায় সেইদিন বিভাবরী।
ভেঙে যমপুরী নাগিনীর মতো আয় মা পাতাল ফুঁড়ি!
আঁধারে তোমায় পথ দেখাবে মা তোমারি ভগ্ন চুড়ি!
পুরুষ-যমের ক্ষুধার কুকুর মুক্ত ও পদাঘাতে
লুটায়ে পড়িবে ও চরণ-তলে দলিত যমের সাথে!
এতদনি শুধু বিলালে অমৃত, আজ প্রয়োজন যবে,
যে-হাতে পিয়ালে অমৃত, সে-হাতে কূট বিষ দিতে হবে।
সেদিন সুদূর নয়-
যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়!
সাহেব ও মোসাহেব- কাজী নজরুল ইসলাম
সাহেব কহেন, চমৎকার ! সে চমৎকার !
মোসাহেব বলে, চমৎকার সে হতেই হবে যে !
হুজুরের মতে অমত কার ?
সাহেব কহেন, কী চমৎকার,
বলতেই দাও, আহা হা।
মোসাহেব বলে, হুজুরের কথা
শুনেই বুঝেছি, বাহাহা বাহাহা বাহাহা !
সাহেব কহেন, কথাটা কি জান ? সেদিন ?
মোসাহেব বলে, জানি না আবার ?
ঐ যে, কি বলে, যেদিন
সাহেব কহেন, যেদিন বিকেলে বৃষ্টিটা ছিল স্বল্প।
মোসাহেব বলে, আহা হা, শুনেছ ?
কিবা অপরূপ গল্প !
সাহেব কহেন আরে মলো ! আগে
বলতেই দাও গোড়াটা !
মোসাহেব বলে, আহা-হা গোড়াটা !
হুজুরের গোড়া ! এই, চুপ, চুপ ছোঁড়াটা !
সাহেব কহেন, কি বলছিলাম,
গোলমালে গেল গুলায়ে !
মোসাহেব বলে, হুজুরের মাথা ! গুলাতেই হবে !
দিব কি হস্ত বুলায়ে !
সাহেব কহেন, শোনো না। সেদিন
সূর্য উঠেছে সকালে !
মোসাহেব বলে, সকালে সূর্য ?
আমরা কিন্তু দেখি না কাঁদিলে কোঁকালে
সাহেব কহেন, ভাবিলাম, যাই,
আসি খানিকটা বেড়ায়ে,
মোসাহেব বলে, অমন সকাল ! যাবে কোথা বাবা,
হুজুরের চোখ এড়ায়ে !
সাহেব কহেন, হল না বেড়ানো,
ঘরেই রহিনু বসিয়া !
মোসাহেব বলে, আগেই বলেছি ! হুজুর কি চাষা,
বেড়াবেন হাল চষিয়া ?
সাহেব কহেন, বসিয়া বসিয়া
পড়েছি কখন ঝিমায়ে !
মোসাহেব বলে, এই চুপ সব !
হুজুর ঝিমান ! পাখা কর্, ডাক্ নিমাইএ !
সাহেব কহেন, ঝিমাইনি, কই
এই ত জেগেই রয়েছি।
মোসাহেব বলে, হুজুর জেগেই রয়েছেন, তা
আগেই সবারে কয়েছি !
সাহেব কহেন, জাগিয়া দেখিনু, জুটিয়াছে যত
হনুমান আর অপদেব !
হুজুরের চোখ, যাবে কোথা বাবা ?
প্রণমিয়া কয় মোসাহেব।।
কুলি-মজুর- কাজী নজরুল ইসলাম
দেখিনু সেদিন রেলে,
কুলি বলে এক বাবু সাব তারে ঠেলে দিলে নীচে ফেলে!
চোখ ফেটে এল জল,
এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?
যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প-শকট চলে,
বাবু সাব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে।
বেতন দিয়াছ?-চুপ রও যত মিথ্যাবাদীর দল!
কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল?
রাজপথে তব চলিছে মোটর, সাগরে জাহাজ চলে,
রেলপথে চলে বাষ্প-শকট, দেশ ছেয়ে গেল কলে,
বল ত এসব কাহাদের দান! তোমার অট্টালিকা
কার খুনে রাঙা?-ঠুলি খুলে দেখ, প্রতি হঁটে আছে লিখা।
তুমি জান না ক, কিন- পথের প্রতি ধূলিকণা জানে,
ঐ পথ, ঐ জাহাজ, শকট, অট্টালিকার মানে!
আসিতেছে শুভদিন,
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ!
হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,
পাহাড়-কাটা সে পথের দুপাশে পড়িয়া যাদের হাড়,
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,
তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,
তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!
তুমি শুয়ে রবে তেতালার পরে আমরা রহিব নীচে,
অথচ তোমারে দেবতা বলিব, সে ভরসা আজ মিছে!
সিক্ত যাদের সারা দেহ-মন মাটির মমতা-রসে
এই ধরণীর তরণীর হাল রবে তাহাদেরি বশে!
তারি পদরজ অঞ্জলি করি মাথায় লইব তুলি,
সকলের সাথে পথে চলি যার পায়ে লাগিয়াছে ধূলি!
আজ নিখিলের বেদনা -আর্ত পীড়িতের মাখি খুন,
লালে লাল হয়ে উদিছে নবীন প্রভাতের নবারুণ!
আজ হৃদয়ের জমা-ধরা যত কবাট ভাঙিয়া দাও,
রং-করা ঐ চামড়ার যত আবরণ খুলে নাও!
আকাশের আজ যত বায়ু আছে হইয়া জমাট নীল,
মাতামাতি করে ঢুকুক্ এ বুকে, খুলে দাও যত খিল!
সকল আকাশ ভাঙিয়া পড়-ক আমাদের এই ঘরে,
মোদের মাথায় চন্দ্র সূর্য তারারা পড়-ক ঝরে।
সকল কালের সকল দেশের সকল মানুষ আসি
এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শোনো এক মিলনের বাঁশী।
একজনে দিলে ব্যথা-
সমান হইয়া বাজে সে বেদনা সকলের বুকে হেথা।
একের অসম্মান
নিখিল মানব-জাতির লজ্জা-সকলের অপমান!
মহা-মানবের মহা-বেদনার আজি মহা-উত্থান,
উর্ধ্বে হাসিছে ভগবান, নীচে কাঁপিতেছে শয়তান!
ঈশ্বর- কাজী নজরুল ইসলাম
কে তুমি খুঁজিছ জগদীশ ভাই আকাশ পাতাল জুড়ে
কে তুমি ফিরিছ বনে-জঙ্গলে, কে তুমি পাহাড়-চূড়ে?
হায় ঋষি দরবেশ,
বুকের মানিকে বুকে ধরে তুমি খোঁজ তারে দেশ-দেশ।
সৃষ্টি রয়েছে তোমা পানে চেয়ে তুমি আছ চোখ বুঁজে,
স্রষ্টারে খোঁজো-আপনারে তুমি আপনি ফিরিছ খুঁজে!
ইচ্ছা-অন্ধ! আঁখি খোলো, দেশ দর্পণে নিজ-কায়া,
দেখিবে, তোমারি সব অবয়বে পড়েছে তাঁহার ছায়া।
শিহরি উঠো না, শাস্ত্রবিদের করো নাক বীর, ভয়-
তাহারা খোদার খোদ প্রাইভেট সেক্রেটারী ত নয়!
সকলের মাঝে প্রকাশ তাঁহার, সকলের মাঝে তিনি!
আমারে দেখিয়া আমার অদেখা জন্মদাতারে চিনি!
রত্ন লইয়া বেচা-কেনা করে বণিক সিন্ধু-কুলে-
রত্নাকরের খবর তা বলে পুছো না ওদের ভুলে।
উহারা রত্ন-বেনে,
রত্ন চিনিয়া মনে করে ওরা রত্নাকরেও চেনে!
ডুবে নাই তারা অতল গভীর রত্ন-সিন্ধুতলে,
শাস্ত্র না ঘেঁটে ডুব দাও, সখা, সত্য-সিন্ধু-জলে।
সাম্যবাদী - কাজী নজরুল ইসলাম
গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!
কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?
কনফুসিয়াস? চার্বআখ চেলা? বলে যাও, বলো আরো!
বন্ধু, যা-খুশি হও,
পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও,
কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক-
জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব পড়ে যাও, য্ত সখ-
কিন্তু, কেন এ পন্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?
দোকানে কেন এ দর কষাকষি? -পথে ফুটে তাজা ফুল!
তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,
সকল শাস্র খুঁজে পাবে সখা, খুলে দেখ নিজ প্রাণ!
তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার,
তোমার হৃষয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার।
কেন খুঁজে ফের দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি -কঙ্কালে?
হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!
বন্ধু, বলিনি ঝুট,
এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।
এই হৃদ্য়ই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,
বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম এ, মদিনা, কাবা-ভবন,
মসজিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়,
এইখানে বসে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।
এই রণ-ভূমে বাঁশীর কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,
এই মাঠে হল মেষের রাখাল নবীরা খোদার মিতা।
এই হৃদয়ের ধ্যান-গুহা-মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি
ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা-বেদনার ডাক শুনি।
এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিতেন আহবান,
এইখানে বসি গাহিলেন তিনি কোরানের সাম-গান!
মিথ্যা শুনিনি ভাই,
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।
হে মহাজীবন - সুকান্ত ভট্টাচার্য
হে-মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন, কঠোর গদ্য আনো,
পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো!
প্রয়োজন নেই, কবিতার স্নিগ্ধতা
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়:
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝল্সানো রুটি॥
ছাড়পত্র-সুকান্ত ভট্টাচার্য
যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুমঃ
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে।
খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।
সে ভাষা বোঝে না কেউ,
কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার।
আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা।
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের
পরিচয়-পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে।
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস।।
আঠারো বছর বয়স-সুকান্ত ভট্টাচার্য
আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ
র্স্পধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।
আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।
এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।
আঠরো বছর বয়স ভয়ঙ্কর
তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা,
এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর
এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা।
আঠারো বছর বয়স যে দুর্বার
পথে প্রান্তরে ছোটায় বহু তুফান,
দুর্যোগে হাল ঠিক মতো রাখা ভার
ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্র প্রাণ।
আঠারো বছর বয়সে আঘাত আসে
অবিশ্র্রান্ত; একে একে হয় জড়ো,
এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে
এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো।
তব আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি,
এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে,
বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী
এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।
এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,
এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।।
চিরদিনের - সুকান্ত ভট্টাচার্য
এখানে বৃষ্টিমুখর লাজুক গাঁয়ে
এসে থেমে গেছে ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটা,
সবুজ মাঠেরা পথ দেয় পায়ে পায়ে
পথ নেই, তবু এখানে যে পথ হাঁটা।
জোড়া দীঘি, তার পাড়েতে তালের সারি
দূরে বাঁশঝাড়ে আত্মদানের সাড়া,
পচা জল আর মশায় অহংকারী
নীরব এখানে অমর কিষাণপাড়া।
এ গ্রামের পাশে মজা নদী বারো মাস
বর্ষায় আজ বিদ্রোহ বুঝি করে,
গোয়ালে পাঠায় ইশারা সবুজ ঘাস
এ গ্রাম নতুন সবুজ ঘাগরা পরে।
রাত্রি এখানে স্বাগত সান্ধ্য শাঁখে
কিষাণকে ঘরে পাঠায় যে আল-পথ;
বুড়ো বটতলা পরস্পরকে ডাকে
সন্ধ্যা সেখানে জড়ো করে জনমত।
দুর্ভিক্ষের আঁচল জড়ানো গায়ে
এ গ্রামের লোক আজো সব কাজ করে,
কৃষক-বধূরা ঢেঁকিকে নাচায় পায়ে
প্রতি সন্ধ্যায় দীপ জ্বলে ঘরে ঘরে।
রাত্রি হলেই দাওয়ার অন্ধকারে
ঠাকুমা গল্প শোনায় যে নাতনীকে,
কেমন করে সে আকালেতে গতবারে,
চলে গেল লোক দিশাহারা দিকে দিকে।
এখানে সকাল ঘোষিত পাখির গানে
কামার, কুমোর, তাঁতী তার কাজে জোটে,
সারাটা দুপুর ক্ষেতের চাষীরা কানে
একটানা আর বিচিত্র ধ্বনি ওঠে। হঠাৎ সেদিন জল আনবার পথে
কৃষক-বধূ সে থমকে তাকায় পাশে,
ঘোমটা তুলে সে দেখে নেয় কোনোমতে,
সবুজ ফসলে সুবর্ণ যুগ আসে।।
নিমন্ত্রণ- জসীমউদ্দীন
তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,
ছোট গাঁওখানি- ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া,
কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া;
ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী
পারের খবর টানাটানি করি;
বিনাসুতি মালা গাথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া;
বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দুইটি তটের হিয়া।
তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে, ছোট সে কাজল গাঁয়,
গলাগলি ধরি কলা বন; যেন ঘিরিয়া রয়েছে তায়।
সরু পথ খানি সুতায় বাঁধিয়া
দূর পথিকেরে আনিছে টানিয়া,
বনের হাওয়ায়, গাছের ছায়ায়, ধরিয়া রাখিবে তায়,
বুকখানি তার ভরে দেবে বুঝি, মায়া আর মমতায়!
তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে নরম ঘাসের পাতে
চুম্বন রাখি অধরখানিতে মেজে লয়ো নিরালাতে।
তেলাকুচা লতা গলায় পরিয়া
মেঠো ফুলে নিও আঁচল ভরিয়া,
হেথায় সেথায় ভাব করো তুমি বুনো পাখিদের সাথে,
তোমার গায়ের রংখানি তুমি দেখিবে তাদের পাতে।
তুমি যদি যাও আমাদের গাঁয়ে, তোমারে সঙ্গে করি
নদীর ওপারে চলে যাই তবে লইয়া ঘাটের তরী।
মাঠের যত না রাখাল ডাকিয়া
তোর সনে দেই মিতালী করিয়া
ঢেলা কুড়াইয়া গড়ি ইমারত সারা দিনমান ধরি,
সত্যিকারের নগর ভুলিয়া নকল নগর গড়ি।
তুমি যদি যাও দেখিবে সেখানে মটর লতার সনে,
সীম আর সীম হাত বাড়াইলে মুঠি ভরে সেই খানে।
তুমি যদি যাও সে সব কুড়ায়ে
নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,
খাব আর যত গেঁয়ো চাষীদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে,
হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব দুইজনে।
তুমি যদি যাও শালুক কুড়ায়ে, খুব খুব বড় করে,
এমন একটি গাঁথিব মালা যা দেখনি কাহারো গলে,
কারেও দেব না, তুমি যদি চাও
আচ্ছা না হয় দিয়ে দেব তাও,
মালাটিরে তুমি রাখিও কিন্তু শক্ত করিয়া ধরে,
ও পাড়াব সব দুষ্ট ছেলেরা নিতে পারে জোর করে;
সন্ধ্যা হইলে ঘরে ফিরে যাব, মা যদি বকিতে চায়,
মতলব কিছু আঁটিব যাহাতে খুশী তারে করা যায়!
লাল আলোয়ানে ঘুঁটে কুড়াইয়া
বেঁধে নিয়ে যাব মাথায় করিয়া
এত ঘুষ পেয়ে যদি বা তাহার মন না উঠিতে চায়,
বলিব ; কালিকে মটরের শাক এনে দেব বহু তায়।
খুব ভোর করে উঠিতে হইবে, সূয্যি উঠারও আগে,
কারেও কবি না, দেখিস্ পায়ের শব্দে কেহ না জাগে
রেল সড়কের ছোট খাদ ভরে
ডানকিনে মাছ কিলবিল করে;
কাদার বাঁধন গাঁথি মাঝামাঝি জল সেঁচে আগে ভাগে
সব মাছগুলো কুড়ায়ে আনিব কাহারো জানার আগে।
ভর দুপুরেতে এক রাশ কাঁদা আর এক রাশ মাছ,
কাপড়ে জড়ায়ে ফিরিয়া আসিব আপন বাড়ির কাছ।
ওরে মুখ – পোড়া ওরে রে বাঁদর।
গালি – ভরা মার অমনি আদর,
কতদিন আমি শুনি নারে ভাই আমার মায়ের পাছ;
যাবি তুই ভাই, আমাদের গাঁয়ে যেথা ঘন কালো গাছ।
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।
ঘন কালো বন – মায়া মমতায় বেঁধেছে বনের বায়।
গাছের ছায়ায় বনের লতায়
মোর শিশুকাল লুকায়েছে হায়!
আজি সে – সব সরায়ে সরায়ে খুজিয়া লইব তায়,
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গায়।
তোরে নিয়ে যাব আমাদের গাঁয়ে ঘন-পল্লব তলে
লুকায়ে থাকিস্, খুজে যেন কেহ পায় না কোনই বলে।
মেঠো কোন ফুল কুড়াইতে যেয়ে,
হারাইয়া যাস্ পথ নাহি পেয়ে;
অলস দেহটি মাটিতে বিছায়ে ঘুমাস সন্ধ্যা হলে,
সারা গাঁও আমি খুজিয়া ফিরিব তোরি নাম বলে বলে।
০৭ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৩৭
আলোরিকা বলেছেন: ধন্যবাদ... আমিও এজন্যই প্রিয় কবিতাগুলোকে একত্রিত করেছি ....... 'যখন খুশি পড়ার জন্য'..... ভাল থাকবেন .....
২| ০৭ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৩০
হাসান মাহবুব বলেছেন: +++++
০৭ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪০
আলোরিকা বলেছেন: +
৩| ০৭ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:০০
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
চমৎকার আয়োজন।+++
১০ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:৪০
আলোরিকা বলেছেন: :-) +
৪| ০৭ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৮
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: দারুণ পোস্ট। হে মহাজীবন কবিতাটা দেখে ভাল লাগল।
প্লাস।
১০ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:৩৫
আলোরিকা বলেছেন: :-) ধন্যবাদ।
৫| ০৭ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৩
জেন রসি বলেছেন: দ্রোহের কবিতা ভালো লাগে।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
১০ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:৩৭
আলোরিকা বলেছেন: :-) ধন্যবাদ।
৬| ০৭ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭
তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। পড়ে সমৃদ্ধ হলাম
১০ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:৩৮
আলোরিকা বলেছেন: :-)
৭| ০৭ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এস আলভী বলেছেন: অনেক প্রতিক্ষার পর ফ্রন্টপেইজ একসেস দেওয়ায় ব্লগ কর্তৃপক্ষকে গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আপনার লেখায় আমি আজ প্রথম মন্তব্য করার সুযোগ পেয়ে গর্ব বোধ করছি।
নতুন ব্লগার হিসাবে আপনার সহযোগিতা কামনা করছি। ধন্যবাদ।
১০ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:৪৮
আলোরিকা বলেছেন: সুস্বাগতম ..... আমার লেখায় ( সংকলনে ) প্রথম মন্তব্য করেছেন জেনে আমিও গর্ব বোধ করছি ..... ধন্যবাদ ...... ভাল থাকুন ..... লিখতে থাকুন ..... :-)
৮| ০৮ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:৪৯
বঙ্গতনয় বলেছেন: খুব ভাল সংগ্রহ। পড়ে মনে হল সংগ্রাহকের ভাল কবিতাজ্ঞান আছে। ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ
৯| ১০ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:৫৬
আলোরিকা বলেছেন: কবিতাজ্ঞান কতটুকু আছে জানিনা ..... কবিতা পড়তে ভাললাগে আর ভাললাগা কবিতাগুলোই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম .... আপনাদের ভাললাগছে জেনে আমি কৃতার্থ .....ভাল থাকবেন ..... ধন্যবাদ ...
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪
সুফিয়া বলেছেন: এত সুন্দর সুন্দর বিখ্যাত কবিতার কালেকশান। অনেক ভাল একটা কাজ করেছেন। পোস্টে +++++
প্রিয়তে রাখলাম যখন খুশি পড়ার জন্য।