নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাহাতো সমাচার

মাহাতোদের নিয়ে কাজ করতে চাই

নিমাই চন্দ্র মাহাতো

I am an indigenous people

নিমাই চন্দ্র মাহাতো › বিস্তারিত পোস্টঃ

আদিবাসীদের ভূমি এবং সংস্কৃতি হারানোর কারণ ও উত্তরণের উপায়

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২০



প্রথম অংশ- আদিবাসীদের ভূমি এবং সংস্কৃতি হারানোর কারণ ও উত্তরণের উপায়



তথ্যের অধিকারহীনতা:

তথ্যের অধিকার এবং এই বিষয়ে পর্যাপ্ত উৎসের অভাব আদিবাসী জনগনকে আইন, বিচার এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে দূরে সরিয়ে রাখে। দেখা যায় যে বেশির ভাগ তথ্যই বাংলা ভাষায় দেয়া হয়, যার কারেন অনেকের কাছেই তা বোধগম্য ভাষায় হয়না। এইগুলো আদিবাসী ভাষায় অনুবাদ করা হয়না, কেননা ধরে নেয়া হয় যে, বাংলাদেশে সকলেই বাংলা বুঝবে। দ্বিতীয়ত, প্রশাসনিক ক্ষেতেও বাঙালি লোকজন বেশি হওয়ায় তারা বাঙালিদের সুযোগ সুবিধাই বেশি দেখে।

বাংলাদেশে বর্তমান সংসদে সবচেয়ে বেশি আদিবাসী আইন প্রণেতা রয়েছেন, যদিও প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম। সেই সমস্যা রয়েছে স্থানীয় সরকার এবং বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা পর্যায়েও, যার কারণে বার বার অগ্রাহ্য করা হয়েছে তাদের ভূমি এবং সংস্কৃতির স্বীকৃতি।



সরকারী এবং বেসরকারী উদ্যোগ:

সরকারী পর্যায়ে নাম করনের রাজনীতির বাহাস সত্যিকারভাবেই আদিবাসীদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে বলে এই লেখনী মনে করছে। আদিবাসীদের ভুমি রক্ষায় সরকার এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পাহাড়ের আদিবাসী জন্য পার্বত্র চট্টগ্রাম ভুমি কমিশন তৈরি করলেও সমতর অঞ্চলের আদিবাসীদের ভুমি রক্ষার জন্য সেরকম কোনো উদ্যোগ হয়নি। সরকারী উন্নয়ন বলতে সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয় থেকে বিশেষ তহবিল মাত্র। এর বাইরে আদিবাসীদের সংস্কৃতি রক্ষার জন্য তেরি হওযা সাম্প্রতিক ক্ষুত্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বিল ২০১০ এ মাত্র ২৭ জনগোষ্ঠীর তালিকা আছে, এবং এই ধরনের অসম্পূর্ণ তালিকা সহই এটি গেজেট আকার প্রকাশিত হয়েছে।

এর বাইরে বেসরকারী উদ্যোগ বরং লক্ষ্যনীয়। বাঙালিদের মনে আদিবাসীদের নিয়ে ইতিবাচক মনোযোগ তৈরির করার ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবঙ তৃনমূল পর্যায়ে বহু এনজিও কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি কোন কোন বেসরকারী সংস্থা আদিবাসীদের ভূমি হারানোর বিষয়টিকে প্রাধ্যান্য দিয়ে তাদের পক্ষে মামলা পরিচালনাসহ বিভিন্ন ধরনের সমর্থন দিচ্ছেন। বিভিন্ন নিপীড়ন এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে বিভিন্ন প্রচারণামূলক কমৃসুচি গ্রহণ করছেন।



করনীয়:

১. ’উপজাতি’ কিংবা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে নয়’ আদিবাসী হিসেবেই সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে রাষ্ট্রকেই।

২. প্রথাগত ভূমি মালিকানার স্বীকৃতি দিতে হবে।

৩. পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন তৈরি করতে হবে।

৪. আদিবাসীদের জন্য সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে প্রনযনকৃত যে কোন কর্মসূচীতে আদিবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

৫. বই-পুস্তক রাষ্ট্রীয় দলিল পত্রে আদিবাসীদের যেকোনো ধরনের নেতিবাচক উপস্থাপণ বন্ধ করতে হবে।

৬. আদিবাসীদের ভাষার স্বীকৃতি দিতে হবে।

৭. প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে আদিবাসী ভাষার স্বীকৃতি দিতে হবে।

৮. যে সকল ভাষার বর্নমালা আছে সেগুলো দিয়েই অচিরেই পাঠপুস্তক এবং ক্যারিকুলাম তৈরির কাজ শুরু করতে হবে।

৯. বনের উপর আদিবাসীদের পূর্ণ অধিকার দিতে হবে এবং তার চর্চা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।

১০. বনের অধিবাসী বিশেষ করে আদিবাসীদের সঙ্গে আলিাচনা করেই বন আইন সংশোধন করতে হবে।

১১. আদিবাসীদের নিজেদের ভূমি রেজিস্টি করার দিকে ঝোঁক দিতে হবে অর্থাৎ ভূমির কাগজপত্র হালনাগাদ করার ব্যবস্থা করতে হবে, যেন কেউ সহজে ভূমি দখল করে না নিতে পারে।

১২. আদিবাসী নারীদের নিজেদের মধ্যে একাত্মতা তৈরির জন্য আদিবাসী নারী আন্দোলনের ফ্্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে।

১৩. আদিবাসী নেতাদের আন্দোলনের বিষয়ে নিজেদের এজেন্সী থাকতে হবে।

১৪. আদিবাসী নারী পুরুষ যেন অবাধ তথ্য পায় সেই বিষয়ে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে।

১৫. বিভিন্ন প্রচারণামূলক, জনসচেতনতা মূলক কর্মকাণ্ডগুলো বিভিন্ন আদিবাসী ভাষায় অনুবাদ করে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

১৬. আদিবাসীদের কাছে এই সব প্রচারের ক্ষেত্রে সহজবোধ্যতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আদিবাসী নাচ, গান প্রক্রিয়া হিসেবে কাজে লাগতে পারে।

১৭. শুধু নাচ, গানই নয়, মিডিয়াতে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সকল নিপীড়ন, বৈষম্য তুলে ধরতে হবে।

১৮. আদিবাসীদের জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ হচ্ছে কীনা সেটির প্রতি লক্ষ্য রাকতে হবে।

১৯. আদিবাসীদের বর্নিল জীবন যাপনের প্রতি সকলকে ইতিবাচক মনোভোবে তেরির ক্ষেত্রে সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।

২০. ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে আদিবাসী মানুসদের অবদান ইতিহাসে যুক্ত করতে হবে এবং জাতীয়ভাবে তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে সন্মানিত হবেন সেই জাতির মানুষ এবং তাদের সংস্কৃতি।

২১. আদিবাসীদের বিভিন্ন লোক সাহিত্য, গল্প, কবিতা, নাটককে বাংলার সম মর্যাদা দিয়ে প্রচার এবং প্রকাশের সুযোগ সুষ্টি করে দিতে হবে সরকার এবং সংশ্লিষ্টজন এবং সংগঠনকে।

২২. স্থানীয় সরকার এবং সংসদে আদিবাসী প্রতিনিধি বাড়াতে হবে।

২৩. বাঙালি সুশীল সমাজ এবং যারা আদিবাসীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম তাদের সঙ্গে নিয়ে দেনদরবারের নতুন পাটাতন তৈরি করা জরুরী।



ভারতের মানবতাবাদী ঔপন্যাসিক অরন্ধতী রায় তার সাম্প্রতিক একটি লেখায় বলেছেন একমাত্র আদিবাসীরাই প্রতিরোধের নতুন ধরণ তৈরি করছে এবং যা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধেও একটি বিশাল প্রতিরাধ। তারা চ্যালেঞ্জ করছে পুঁজিবাদী উন্নয়ন ভাবণাকেও। এতো বৈষম্য এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাাম করে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়, তাদের জীবনই জয়ী হয়।

পরিশেষে বাংলাদেশে গত বছর বহুল প্রচারিত একটি বিজ্ঞাপনের কথা বলে শেষ করছি আজকের প্রাবন্ধিক আলাপ। একটি মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনের বংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কবি নির্মলেন্দু গুণ এবং একজন খ্যাতিমান লেখক বলেছিলেন, মানুষ বাঁচে তার ভাষায়, আর ভাষা বাঁচে মানুষের লেখনীতে। এভাবে আদিবাসীদের ভাষাকেও বাঁচতে হবে তাদের লেখনিতে আর নিজেদের বেঁচে থাকার মধ্যে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.