নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
আমি বরং একটা গল্প বলি । গল্পটা একাত্তরের, সত্য গল্প । ফরিদপুর শহরের নামকরা হোমিও ডাক্তার কালিপদ, বাজারে তাঁর ওষুধের দোকান ও চেম্বার । বড় ছেলে কমলকে নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্ন । পড়ালেখার পাশাপাশি কমল বাবার দোকানেও বসে । সেই দোকানে পতপত করে ওরে মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের পতাকা । হঠাৎ একদিন খবর এল, পদ্মা নদী পার হয়ে মিলিটারি আসছে । কোন বাধাই তাদের ট্যাংকের সামনে দাঁড়াতে পারছে না । জয় বাংলার পতাকার স্থলে জায়গা করে নিল চাঁদ-তারার পতাকা । বাড়ির সামনের মূল রাস্তায় এসে কমলের বাবা হতাশ হয় । দেখে, রিক্সাযোগে শহরের সব মানুষ গ্রামের দিকে ছুটছে । কোনমতে প্রাণটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে পালানো আর কি! বুঝতে পারে, এখানে আর থাকা নিরাপদ নয় । উদ্বাস্তু জীবনের সেই শুরু । এরপর কমলের বিশাল পরিবার শুধু এক আত্মীয় থেকে আরেক আত্মীয়, গ্রামের ভেতর থেকে আরও ভেতরে পালিয়ে বেড়াতে থাকে । আজ এখানে তো কাল ওখানে । কোথাও শান্তি নেই । দূর আকাশে কালো ধোয়া মিলিটারির উপস্থিতি ঘোষণা দেয় । এই বুঝি ওরা এদিকে এল! একদিন, ভিটার টানে লুকিয়ে শহরে আসে কমল । বাড়ির উঠোনে চুপিচুপি পা দিতেই আদরের কুকুরটিও চিনতে পারেনা ওকে, ঘেউ রব তোলে । কমলদের বাড়ির ভেতর তখন টর্চের আলো, সাথে পাশের বিহারি পাড়ার বিহারি কণ্ঠ । বুঝতে কষ্ট হয়না, বাড়ি ছেড়ে পালানোর আগে নিজেদের যা কিছু সম্বল ছিল, ঘরের মেঝেতে গর্ত করে পুঁতে রাখা সেই পিতল-কাসার বাসন, সোনা সব লুট হচ্ছে! বুকভরা কান্না নিয়ে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসে কমল । এরপর অনেকবার মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছে সে ও তাঁর পরিবার । চেয়ে-চিন্তে খেয়েছে, কখনও বা গতর খেটে কিংবা কমলের বাবার ডাক্তারি বিদ্যের কল্যাণে দু-চারটে খেয়ে-পড়ে কাটিয়ে দিয়েছে নয়টি মাস । কিন্তু, কিছুতেই নিজের দেশ ছেড়ে শরণার্থী হয়ে অন্য দেশে পারি জমায়নি । মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে থেকেছে, এমনকি কমল নিজেও যুদ্ধ করেছে । কিন্তু সার্টিফিকেট নেয়নি । দেশ স্বাধীন হবার পর, লুট হওয়া সম্পদের কিছুই ফিরে আসেনি । শুধু হাহাকার আর অর্থকষ্ট । ওষুধের অভাবে মারা গেলো জন্মদাত্রী মা । বাবা উন্মাদের মতো, সংসার অগোছালো । এরপরের ইতিহাস কমলের সংগ্রামের ইতিহাস । শুন্য থেকে পুনরায় শুরু করার ইতিহাস । নতুন স্বপ্নে সেই শুরু নতুন দেশে । যেই দেশে থাকবে না কোন সাম্প্রদায়িকতা, থাকবে না ভেদাভেদ । সমান অধিকার নিয়ে শুরু হবে নতুন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ।
এমন অনেক পরিবারের দৃষ্টান্ত দেয়া যায়, যারা সেদিন সব হারিয়েও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল । সব হারিয়েও এখন থেকে আর কিছু হারাতে হবে না ভেবে চোখে রঙ্গিন চশমা এঁটে ভুল স্বপ্ন দেখেছিল । আজ স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও সেই একই নিপীড়ন, একই অত্যাচার । জাতি-ধর্মের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাইনি আমরা । অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এখনও যেন সুন্দর এক টুকরো স্বপ্ন! আজও মানুষের স্বাধীন ভোটাধিকার নেই । আজও দেশে সব সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই । পান থেকে চুন খসলেই, কিংবা চায়ে চিনি কম হলেই যেন হিন্দু সম্প্রদায়ের দোষ! স্বাধীনতার এত বছর পর এদেশে জন্ম নিয়েও তাদের মুখ থেকে কেন বের হবে- “এদেশ আমার না! আমি কি করছি? আমায় কেন মারলো?” ঐ মেয়েটির কি দোষ ছিল, যার কষ্টার্জিত সার্টিফিকেটে আগুন দিয়ে ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেয়া হল? কেন সম্ভ্রম রক্ষায় শীতের রাতে বৌ-ঝিরা নদীর পানিতে আশ্রয় নেবে? আর, সহিংসতা নিশ্চিত জেনেও আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে কেন ব্যর্থ হচ্ছি? নাকি অগ্রাহ্য করছি?
অভয়নগরের ঘটনা নতুন কিছু নয় । চলে আসছে এবং চলতে থাকবে । টিএসসিতে বিক্ষোভ সমাবেশ, কিংবা প্রেসক্লাবে কালো পতাকা হাতে মানববন্ধন, টিভি টকশো, ফেসবুকে নীতিবাক্য আর হা-পিত্যেশ করা স্ট্যাটাস এর কোন প্রতিকার বা প্রতিরোধ দেবে না, যতদিন না আমরা নিজেরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করছি । মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উপহাসে পরিণত করলে চলবে না, চেতনার বাণী অন্তরে ধারণ করতে হবে । দেশজুড়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে দেশের একটি বিশেষ সম্প্রদায় বারবার কেন ক্ষতিগ্রস্থ হবে? স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে ওরা কি রাষ্ট্র তথা সরকারের থেকে জীবনের ও যানমালের নিরাপত্তা দাবি করতে পারে না? স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বলে যারা নিজেদেরকে পরিচয় দেন, তাঁরা ক্ষমতায় থেকেও কি এই দায় এড়াতে পারেন?
নির্মলেন্দু গুণের কবিতা দিয়ে শেষ
করি-
'রাইতভর ঘুমুইতে পারি না,
ওরা কহন আসে,
কহন আসে।’
কাঁন্দিস না মা, আমার কথা শোন,
তুই তোর হাতের শাঁখা খুলে ফেল,
মুছে ফেল তোর সিঁথির সিঁদুর।
তোর ঠাকুরের শেষকৃত্য দেখে,
শেষে আমাদের শেষকৃত্য
ডেকে আনবি নাকি?
চল, তোর ঠাকুর পুড়ছে পুড়ুক।
আগে তো জীবনটা বাঁচা, মা।
আমি বলছি, এতে তোর অমঙ্গল হবে না।
ভগবান কি এতোই অন্ধ নাকি?
দেখিস মা, চন্দ্রমুগ্ধ মূর্খের উল্লাস থেমে গেলে
আমরা ফিরে আসবো একাত্তরের মতো।
তখন তিনিই ফিরিয়ে দেবেন তোর শাঁখা-সিঁদুর,
তোর ঠাকুরের ছিন্নভিন্ন দেহ।
‘তবে তাই হোক বাবা,
এই যে আমি বন্ধ করলাম আমার চোখ,
- তুই ভেঙে দে আমার শাঁখা,
মুছে দে আমার সিঁদুর,
জ্বলে পুড়ে শুদ্ধ হোক আমার ঠাকুর।’
(সুন্দরগঞ্জ বা বাঁশখালির গল্প)
[ শুরুর গল্পটি বাবু ফরিদীর "কমলের
একাত্তর" উপন্যাসের একটা অংশের
সারসংক্ষেপ । অবশ্যই সত্য ঘটনা ।
প্রয়োজন মনে করলে শেয়ার
করে অন্যদেরকেও পড়ার সুযোগ
করে দিন। ]
Click This Link
২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:৩৬
...নিপুণ কথন... বলেছেন: লেখাটি আমারই। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫৮
সুমন কর বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।