নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
১. কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগ যাবার পথটুকু সাধারণত পায়ে হেঁটেই যাই। দূরত্ব বেশি নাহলেও এটুকু পথেই দুই থেকে তিনবার জ্যামে আটকে থাকতে হয়। এর চেয়ে হেঁটে যাওয়া শরীরের জন্য উপকারী এবং সময় বাঁচে। গত ১৮ নভেম্বর রাতেও হেঁটে ফিরছিলাম। তখন বাংলামোটর মোড়ের কাছাকাছি। দেখলাম, নিষেধ থাকা স্বত্বেও কয়েকটি রিক্সা-ভ্যান এই রাস্তায় ঢুকে পড়েছে। এটা অবাক হবার মতো বিষয় নয়, সয়ে গেছে। অবাক হলাম তখন, যখন দেখলাম, বস্তাবোঝাই একটি ভ্যানকে থামানো হলে এক কথা-দুই কথায় তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে ভ্যানচালক ট্রাফিক পুলিশের সহকারির গায়ে হাত তুললো! হ্যাঁ, চর-থাপ্পড়-ঘুষি! প্রথমে সে একা, তারপর ভ্যানের বস্তার ওপর বসে থাকা দুজন যাত্রী নেমে এসে সদলবলে! সুযোগ বুঝে সাথের আরেকটি বস্তাবোঝাই ভ্যানের চালক-যাত্রীরাও এসে তাদের সাথে যোগ দিল। বেচারা হতবম্ব হয়ে মার খেয়ে যাচ্ছে, হাতের লাঠি তাঁর রাস্তায় পড়ে গেছে, তুলতে পারছে না। আরও অবাক করা ব্যাপার, এই দৃশ্যটি পাশের ফুটপাথের পথচারীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে, কেউ প্রতিবাদ করছে না। যেন বাঁধা দিয়ে ব্যাটা বড্ড বেআইনি কাজ করে ফেলেছে! ওর যেন মার খাওয়াটাই উচিৎ! অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা দুজন পথচারী যখন তাঁকে উদ্ধারে ব্যস্ত, ভ্যান নিয়ে তাদের ততক্ষণে কেটে পড়া সারা। পুলিশের সেই সহকারি তখনও হতভম্ব, যেন ভয় পেয়েছেন। আমরা তাঁকে অভয় দিয়ে বললাম, “আপনি যদি নিজেকেই নিজে রক্ষা করতে না পারেন, তো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করবেন কিভাবে?”
আপনি ভাবছেন, তিনি সততার পরিচয় দিয়েছেন? নাও হতে পারে। এমনও হতে পারে, যে মুচলেকা নিয়ে বনিবনা হয়নি! অসম্ভব কিছু না। আবার, ঢাকায় গাড়ি যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে বাড়েনি সড়ক। যে যার ইচ্ছামতো গাড়ি চালায়। হঠাৎ লেন পরিবর্তন করে, যেখানে খুশী গাড়ি পার্ক করে। ফিটনেস নেই বেশিরভাগেরই। যেন দেখার কেউ নেই। সিগনাল বাতিগুলো জ্বলে আর নেভে, তাতে সংযুক্ত ডিজিটাল ঘড়ির সময় গণনা শেষে আবার শুরু হয়। কিন্তু তাতে ‘ট্রাফিক কন্ট্রোল’ হয়না, শুধু শুধু অনেকখানি বিদ্যুৎ খরচ হয়। ফুটপাথ হকারদের দখলে, মাঝে মাঝে দখলে যায় বাইকেরও! পথচারীও তাই রাস্তায় নেমে আসে, ঘটে দুর্ঘটনা। এভাবেই অনিয়মে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে সবাই। এই অভ্যস্ততার পরিণাম ভালো নয়।
২. অনেকগুলো প্রাণ নিয়ে পদ্মায় ডুবে গেল এমভি পিনাক-৬। ভিডিওতে লঞ্চটির ডুবে যাওয়া দেখে শিহরিত হননি- এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই ঘটনায় অনেকেই গালি দিয়েছেন যাত্রীসাধারণকে। বলেছেন, এতজন একসাথে উঠেছো কেন? অথচ, প্রশ্নটা হওয়া উচিৎ- ‘এতজন একসাথে উঠিয়েছে কেন?’ প্রশাসন দুর্ঘটনার পর কিছুটা তৎপরতা দেখায়, অতঃপর কিছুদিন গেলে ঐ যা-তাই। ঈদ-পূজার ভীরের সুযোগে লঞ্চে বেশি যাত্রী ‘ওরা’ ওঠাবেই। ফেরী পর্যাপ্ত নয়। আপনাকেও উঠতে হবে ঐ ভীরের মাঝেই। পর্যাপ্ত লাইফজ্যাকেট নেই, বেঁচে পার হওয়া অনিশ্চিত জেনেও আপনি উঠবেন। কারণ, না উঠে পাড়ে বসে থাকাটা কাজের কথা নয়। আর সেখানে প্রতিবাদ করতে গেলে আপনি হবেন অপমানিত-লাঞ্ছিত।
৩. সত্যি বলতে কি, এখানে নিয়ম করাই হয় যেন ভাঙ্গার জন্য! জীবিকার তাগিদে জীবনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে পথে বের হই আমরা। প্রথম প্রথম কেউ কেউ চেষ্টা করি ‘সিস্টেম’কে বদলাতে। কিছুদিন পর ‘সিস্টেম’ নিজেই আমাদেরকে বদলে দেয়। তারপর আমরা হয়ে উঠি আত্মকেন্দ্রিক, যেকোন উপায়ে ‘বড়’ হতে চাই। দেশটাকে নিয়ে ভাবি না কেউ। এভাবেই চলতে থাকে যদি, তবে একবার ভাবুন তো- এই দেশের ভবিষ্যৎ কি?
-দেব দুলাল গুহ
[ ছাপা হয়েছে ২৩/১১/২০১৪ তারিখের দৈনিক ইত্তেফাক এর দৃষ্টিকোণ পাতা: Click This Link ]
২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০৬
কলমের কালি শেষ বলেছেন: ভালো বলেছেন ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২৯
ডি মুন বলেছেন: সত্যি বলতে কি, এখানে নিয়ম করাই হয় যেন ভাঙ্গার জন্য!
ঠিকই বলেছেন।