নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুই প্রজন্ম: মিল-অমিল

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১১

যারা আমাকে ছোট থেকে দেখে আসছেন এবং আমার বাবাকে চিনতেন, তাঁদের অনেকে বলেন, বাবার সাথে নাকি আমার প্রায় সবকিছুতেই মিল, শুধু একটা বিষয় বাদে। কী সেই বিষয়? জানবেন চলুন-

আমার বাবা সবসময় পরিপাটি থাকতো। কী পোষাক-আষাকে, কী কাজে। তাঁর জীবনটা ছিল একেবারেই রুটিনমাফিক। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে কয়েকটা চাল আর জল খাওয়া। তারপর কুলি করে বিছানায় বসেই চা খাওয়া, যাকে বাবা বলতো "বেড-টি"। এরপর বিছানা ছেড়ে বাসি কাজ সারা। নাস্তা করে অফিস/কোর্টে যাওয়া। যেদিন দুপুরের আগেই বাসায় ফিরে আসতো সেদিন স্নান সেরে ঠিক দুপুর ১:৩০ এর মধ্যে দুপুরের খাবার খেত। এর চেয়ে দেরি যাতে নাহয়, সে চেষ্টাটাই মা করতো। খেয়েই কিছুটা আলস্যনিদ্রা, ছোটবেলায় (কলেজে ওঠার আগ পর্যন্ত) আমাকে বুকে জড়িয়ে ঘুম,যাতে ভরদুপুরে মহল্লার ছেলেমেয়েদের সাথে খেলতে না যাই। সূর্যের চাপ কমে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই উঠে পড়ে চোখেমুখে জল দিয়ে, সেভ করার দরকার থাকলে মাঝেমাঝে নিজের সেভ নিজেই করে খদ্দরের পাঞ্জাবি পড়ে, শীতের দিনে মুখে লোশন-লিপজেল মেখে তারপর শহরের সাহিত্যপাড়ায় সুহৃদদের সাথে সাহিত্য-আড্ডা দিতে যেত, বেশিরভাগ সময়েই কোর্ট চত্বরের সাহিত্যসংস্থা অথবা ওপার বাজারের হোটেল শ্যামলীতে। বাবার গালে কোনদিন খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখিনি। একদিন পরপর সেভ করতো। এরপর সন্ধ্যার পরপর বাসায় ফিরে আমি পড়ছি কিনা তার দেখভাল করতো। আমি অনেক রাত পর্যন্ত পড়তাম, বাবা জেগে থাকতো। মাঝখানে শুধু রাত ১০:৩০ এর খবরের সময় টিভি দেখতে দেখতে রাতের খাবার খেতাম। কোন খবর দেখে মন্তব্য/সমালোচনা করলে বাবা বকা দিতো, বলতো- দিনকাল খারাপ, মন্তব্য না করাই ভালো...

আর, দেখুন, আমি হয়েছি একেবারেই বাবার উল্টোটা। ব্লগ-ফেসবুক-পত্রিকায় লেখালেখি করি, অনেক কিছু নিয়েই নিজের সুস্পষ্ট মন্তব্য করি। (বাবাও আমার মতো বয়সে তৎকালীন পত্রপত্রিকায় এমন কলাম লিখতো, সম্পাদনা করতো। সংগঠন করতো, পথনাটক করতো। কি করেনি?) যাতে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস হয়, সেজন্য ছোটথেকেই আমাকে মর্ণিং শিফটে ভর্তি করানো হলো। "বেবি"তে ব্যাপ্টিস্ট চার্চ মিশন স্কুলে, ক্লাস ৪ থেকে ফরিদপুর জিলা স্কুলে,নটরডেম কলেজে কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে, এমনকি কলেজের হোস্টেলেও বাধ্যতামূলক খুব ভোরে উঠতে হতো। অথচ দেখুন, বাবা মারা যাবার পরেই আমাকে আর বকা দেবার কেউ রইল না, আমিও হয়ে গেলাম অগোছালো! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পর পলিটিক্স করার শর্তে খুব কষ্টে একটা সীটের অর্ধেকটা পাওয়া গেল থাকার জন্য। সারারাত ছারপোকা কামরাতো, ফুলে যেত পিঠ, ঘুম আসতো ভোরে। পরেরদিন ক্লাস মিস হতো। এখন ছারপোকা নেই, তবুও সেই দেরীতেই উঠি। কোনকাজ সময়মতো করিনা, ইচ্ছ্বমতো চলি। গোসলের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই, বেশিরভাগদিনেই সকালে খাইনা। উঠিই তো দেরীতে! মাঝেমাঝে অন্য দুবেলাতেও হয় অনিয়ম। মনের অবস্থা খারাপ থাকলে দিনের পর দিন সেভ করিনা, মুখেঝোপঝার হয়ে যায়। চুড়ান্ত পর্যায়ের বিরক্ত নাহয়ে আর সেভ হই কই? ইচ্ছে হলে সারারাত জেগে থাকি, দিন-দুনিয়া নিয়ে ভেবে উদ্ধার করি দেশকে। (তবে অবশ্যই নেশা করিনা। করিনি কখনো।)

আমি নিশ্চিত, এমন অগোছালো আমাকে আজ যদি বাবা দেখতো, বকা তো দিতই হয়তো চড়টাও দিত। আহা তাই যদি হতো! আমিতো বাবার চেহাড়াটা একবার দেখার জন্য কতরাত জেগে কেঁদেছি! কতদিন বাবার বকা খেতে চেয়েছি! কই, বাবা এলো কই?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.