নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৪ -আমার দেখা, দেখে লেখা।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৫

১) রাহুল শর্মার ভক্ত বনে গেছি গতবারই। এবার তো রীতিমত তাঁকে গুরু মানছি। অসাধারণ সান্তুর বাজাও গুরু! চালিয়ে যাও! কিন্তু আজ যে সারারাত থাকা গেলো না, শরীরটা সাড়া দিচ্ছে না। তাই চলে যাই। বাকি রাতগুলিতে যে আমাকে জাগতেই হবে।

২৯ নভেম্বর ২০১৪।



২) প্রস্তুত হয়ে বেরয়েছি সবে, আর্মি স্টেডিয়ামে সারারাত থাকার প্ল্যান নিয়ে। চৌরাসিয়ার বাঁশি ডাকছে। এইমাত্র শোনা খবরটির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না মোটেও। শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী আর নেই! কিভাবে কী হয়ে গেল?!



এইতো গতকালই আর্মি স্টেডিয়ামে একটি স্টলে তাঁর আঁকা কিছু ছবি দেখিয়ে তাঁর গল্প করছিলাম ছোট ভাইদের কাছে। আজ তিনি নেই! প্রথম আলোর এত সুন্দর লোগোটা তাঁর সৃষ্টি। আর তাঁকে দেখব না অশোকদা আর জাহীদ ভাইয়ের সাথে! কিভাবে সম্ভব? এখনই যাবার সময় হল শিল্পী?



শিল্পী, চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়। আপনি বেঁচে থাকবেন আপনার শিল্পের মাঝে আমাদের মনে।

৩০ নভেম্বর ২০১৪।



৩) "আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে,

কে দিয়েছে গালি?"



বিদূষী অরুণা সৈরাম তাঁর আজকের পরিবেশনার ষোলা কলা পূর্ণ করলেন, সাথে সাথে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীতের এবারের আসরেরও ষোল আনা পূর্ণ করলেন আমাদের জাতীয় কবি নজরুল এবং কমল দাসগুপ্তের এই অনন্য সৃষ্টি পরিবেশনার মাধ্যমে। হ্যাঁ, শ্যামা সঙ্গীত। আহ, একজন সাউথ ইন্ডিয়ান হয়েও তিনি যা বাংলা গাইলেন! অসাধারণ! মুগ্ধ হয়ে গেলাম! তিনি বললেন, প্রতি বছর তিনি অপেক্ষায় থাকেন এই নভেম্বর মাসের জন্য। এদেশের এই আয়োজনকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রেনেসাঁ বলে অবিহিত করে, তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সকল বোদ্ধাদের ধন্যবাদ জানান। তাঁকে বলতে ইচ্ছে হল, আপনাদের ধন্যবাদ জানাই এমন অমৃতসুধা আমাদের মাঝে বিলিয়ে দেবার জন্য।



মনেই হচ্ছে না এতটা রাত হয়েছে। আজ তো রাত হবে না। এভাবেই জমে থাকবে আসর, থাকবে উৎসব। আমরা জেগে থাকব ভোর অবধি। এরপর আসবেন সিতার হাতে পন্ডিত কুশল দাস এবং কন্ঠে পন্ডিত উলহাস কাশালকার। দেখতে দেখতে তিনদিন গেল, বাকি আর দুই!

৩০ নভেম্বর ২০১৪।



৪) পন্ডিত যোগেশ সামসিকে দেখি প্রতিটা দিন উৎসবের শুরু থেকে শেষ অবধি প্রায় একাই তবলা বাজিয়ে যান, নিরলস, নিখুঁত! আমি অবাক হয়ে দেখি, আর ভাবি- কিভাবে পারেন আপনি? হাত ব্যাথা করে না? একটা বারের জন্যও মন এদিক-সেদিক যায় না?! কিভাবে সম্ভব এতক্ষণ ধরে একনাগারে তবলা বাজিয়ে যাওয়া?



বাকরুদ্ধ আমি। প্রণাম জানাই।

১ ডিসেম্বর ২০১৪।



৫) একটু আগে যে রাত শেষ হয়ে কুয়াশার চাদরে ঢাকা ভোর এলো, সেই রাতটি একইসাথে বিশাল কিছু হারিয়ে ফেলার নিকষ আঁধার বেদনার এবং নতুন কিছু পাওয়ার আনন্দের। বেদনার বলছি কেন সেটা আপনারা জানেন। আমাদের দেশবরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী মারা গেছেন হঠাৎ করেই, বলা নেই-কওয়া নেই, এমন একজন শিল্পী স্রেফ নাই হয়ে গেলেন। এটা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য অবশ্যই এক শোকের রাত। কিন্তু, এই রাতটি আবার কিছু পাওয়ারও। কেউ কি ভাবতে পেরেছিল, এমন আধুনিক যুগে হঠাৎ করেই হারিয়ে যাওয়ার পথের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এভাবে আবার পুনরায় জেগে উঠবে, জাগাবে অন্যদের, ঘটাবে বিপ্লব? তবে জেনে রাখুন, এই রাতে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের আয়োজনে উপস্থিত দর্শকের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫৫ হাজার (সূত্র: আয়োজক কর্তৃপক্ষ)। এটা কি নি:সন্দেহে আমাদের জন্য বড় পাওয়া নয়?



একদিন যারা উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের নাম শুনে নাক শিটকাতো, আজ তারা সদলবলে এই সঙ্গীত উপভোগ করতে যায়, সারারাত মুগ্ধতা নিয়ে জাগে। বিশেষ করে তরুণ সমাজের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। গত রাতে স্টেডিয়ামে ঢোকার জন্য বিশাল বিশাল লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়ানো হাজারো মানুষের হাসিমাখা মুখগুলি যদি আপনি দেখতেন! এতটুকু ক্লান্তি নেই। আজকাল ব্যান্ডের কনসার্টেও এমন ভিড় হয় কিনা সন্দেহ। এই জনস্রোত, এই রুচিবোধ, এই ভালোলাগাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।



কৌশিকীর কন্ঠ- উফ কী দারুণ! তিনি দেখতেও অনেক সুন্দর। আর হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার কথা আর কিছু বলার নেই। গুরু মেনেছি। আমি একইসাথে হেসেছি, আবার কেঁদেছি তাঁর বাঁশির সুরে। সত্যিই অসাধারণ।



অনুষ্ঠান শেষে, ঘরমুখি মানুষের ঢলে মুগ্ধ শ্রোতাদের ভিড়ে, আমার বিশ্বাস কাইয়ুম চৌধুরীও ছিলেন। এই আয়োজনে এসেই তো চিরনিদ্রায় গেলেন, এই আয়োজন, এই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, বাংলার এই শিল্পবোদ্ধা সমাজে তিনি বেঁচে থাকবেন। কিন্তু কী শেষকথা বলতে চেয়েছিলেন তিনি? সেটা তো জানা হলো না!

১ ডিসেম্বর ২০১৪।



৬) ওস্তাদ আমজাদ আলী খাঁ শুধু শারদ নামের যন্ত্রটির সাথে আমাদের অনেককে এই প্রথমবারের মতো পরিচিতই করলেন যে তা নয়, তিনি বরং আমাদের মাঝে এই যন্ত্রটির প্রতি ভালোবাসা জন্মালেন। আমরা ভালোবাসতে শিখলাম, সুর, তাল আর লয়ের মায়াজালে বুঁদ হয়ে থাকলাম। এবং, মনে হল যেন স্বর্গের সুধা পান করলাম। গুরু, অসাধারণ!



আমার দুই বান্ধবিকে আজ অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে ধরে নিয়ে এসেছি। এটাই ওদের প্রথমবারের মতো বাইরে রাত জাগা। সাথে আছে আরো দুই বন্ধু। এনেছি ক'জন ছোটভাই-বড়ভাই আর এক মামাকেও। কারো চোখে ঘুম নেই। বান্ধবি আফসোস করে বলল, "আরো দুইদিন আগে কেন আমাকে আনলি না?"



বেঙ্গলের এই উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের আয়োজন বছরে অন্তত দুইবার করার দাবি জানাই। আমরা মুগ্ধ। এমন রাত আর সুরেলা ভোর আমরা ঘনঘন উপহার চাই। ধন্যবাদ সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

২ ডিসেম্বর ২০১৪।



৭) বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৪ শেষে-



অন্তরে অতৃপ্তি রইল

সাঙ্গ করিয়া মনে হইল

শেষ হইয়াও হইল না শেষ!



আগামী নভেম্বরের অপেক্ষায় রইলাম।

২ডিসেম্বর ২০১৪।





-দেব দুলাল গুহ (দেবু ফরিদী)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৩

এহসান সাবির বলেছেন: আগামী নভেম্বরের অপেক্ষায় রইলাম আমিও......

২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৩

আমিনুর রহমান বলেছেন:



পাটা মচকে যাওয়া যেতে পারিনি। অথচ রেজিস্ট্রেশন করেছি একদম প্রথম দিকে ... :(

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪০

...নিপুণ কথন... বলেছেন: মিস করেছেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.