নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
রাত আনুমানিক পৌনে দশটা। ফরিদপুর সদরের শ্যামলী হোটেলের সামনে থেকে অটোরিক্সায় উঠব বলে দাঁড়িয়েছি, যাব গোয়ালচামট। হাতে বাজারের ব্যাগ, একটু বাজার-সদায় করতে হলো। আরও কিছুদিন থাকতে হবে বাড়িতে। তো, একটু পর একটা অটো এলো, যাত্রীবোঝাই। পিছে বসে আছেন টুপি পরিহিত পাকা দাঁড়ির এক হুজুর, দুই পায়ের মাঝে বাজারের ব্যাগ রেখে এমনভাবে পা ছড়িয়ে বসে আছেন, যে তাঁর পাশে আরেকজন বসার কথা থাকলেও তিনি জায়গা রাখেননি। অটোচালককে জিজ্ঞেস করলাম যাবে কিনা, ভাড়া কতো । সে জানাল ৫ টাকা ভাড়া । বেশ, উঠতে গিয়ে দেখি জায়গা নেই । আমি সবসময় রাস্তার বা দিক দিয়ে অটো বা রিক্সায় ওঠানামা করি। কারণ ডানদিক দিয়ে উঠতে গেলে পিছের থেকে আসা গাড়ির চাপা খাওয়ার ভয় থাকে । যেখানে-সেখানে রাস্তার মাঝে অটোরিকশা থামানোর কারণে এই দুর্ঘটনার সম্ভাবনাটা আরও বেড়ে যায়। তো, আমি যথারীতি বাদিক দিয়ে উঠতে চেষ্টা করলাম। এক পা রিক্সায় দিতেই, চালক গাড়ি টান দিল । ফলে আমার হাতের ব্যাগটি সামনের মুরুব্বির পায়ে একটু ছোঁয়া লাগলো । আমি ছোট থেকেই বড়দেরকে যোগ্য সম্মান দিয়ে থাকি। আর তিনি যে বেশে আছেন, তাতে মনে হয় তিনি আল্লাহর পথের লোক, ধর্ম-কর্ম করেন। আমি দুঃখপ্রকাশ করলাম, কিন্তু মুরুব্বি তার আগেই অকথ্য ভাষায় বকাবকি শুরু করে দিলেন! তিনি চিৎকার করে বলতে লাগলেন, আমার ব্যাগ থেকে নাকি তাঁর গায়ে পানি লেগেছে! আমি বিনয়ের সাথে জানালাম, “চাচা, এই ব্যাগে শুধু সব্জি আছে, মাছ-মাংসজাতীয় কিছু নেই। তাই পানি লাগার কথা নয় ।” কিন্তু তিনি বকাবকি চালিয়ে গেলেন। এরপর অভিযোগে নতুন করে যোগ করলেন, আমি নাকি তাঁর পায়ে পারা দিয়েছি! অটোর স্ট্যান্ড শক্ত করে ধরে ছিলাম আমি, তাই ব্যাগটা একটু ছোঁয়া দিয়ে গেলেও পায়ে পারা তাঁর কখনোই লাগেনি। তবুও আমি মাথা ঠাণ্ডা রেখে দুঃখপ্রকাশ করলাম। এরপর তিনি জানতে চাইলেন, আমি কেন রাস্তার ডানদিক দিয়ে এসে এই সিটে বসলাম না? আমি জানালাম, “আমি উঠতেই তো গাড়ি টান দিল। আর আপনার সামনে তো পর্যাপ্ত জায়গা আছে, এদিক দিয়ে গেলে অসুবিধা কোথায়?” তিনি থামলেন না। বসতে গিয়ে দেখি জায়গা নেই। অটোচালক চালিয়েই যাচ্ছে, ততোক্ষণে কিছুদূর চলেও এসেছি, তাই আর না নেমে মুরুব্বির পাশেই বসে পড়লাম । বসার সময় উনি আগের মতোই দুজনের সিটের দের জনের জায়গা দখল নিয়ে বসে রইলেন। আমি বললাম, “একটু চেপে বসেন চাচা ।” তিনি এটাকে “আদেশ” হিসেবে নিয়ে বকাবকিতে নতুন মাত্রা পেলেন যেন। বলে চললেন, “আজকালকার ছেলেপেলে, বড়দের মান্য করতে জানে না, পায়ে পারা দেয়, আবার কিছু বললে তর্ক করে... অশিক্ষিত ছেলেপেলে...” –এভাবে তিনি বলেই গেলেন। আমি প্রতিবাদ না করে পারলাম না। আমার শিক্ষাগত যোগ্যতাটা তাঁকে জানালাম। এবার তিনি কথার সুর পাল্টালেন, বললেন, “এজন্যই তো উচ্চশিক্ষা দিতে নাই ছেলেপেলেরে... বেশি বই পড়লে এমনি হয়... লেখাপড়া শিখে বেয়াদব হইছে!” আমি সবিনয়ে সেসব অভিযোগ অস্বীকার করলাম। অটোর বাকি যাত্রীদের কেউ কেউ চুপ, কেউবা তাকিয়ে আছে মুরুব্বির দিকে। বুঝতে পারলাম, মুরুব্বি বলেই কেউ কিছু বলছে না। মুরুব্বি বলে গেলেন- “আমারে শিক্ষার গরম দেহায়! আমি হইলাম কলেজের শিক্ষক...” আমি তখন বললাম, “চাচা, জ্ঞানত আমি কোন অন্যায় করিনি। আপনি যদি এরপরেও এমন সাধারণ বিষয়টাকে নিয়ে কচলাতে থাকেন, তাহলে আমি জানতে চাইব আপনি কোন কলেজে পড়ান?” এমন সময় ঢোক গিলে তিনি নিজেকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা শুরু করলেন, “ক্যান? তুমার বিশ্বাস হয় না? দাঁড়াও তুমার বেয়াদবির জবাব আমি দিতেছি... ৫ টাকা ভাড়া দিয়া উঠছ, আবার বেশি কথা? আমি ভাড়া দিছি ২০ টাকা...” এতক্ষণ মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করলাম, কিন্তু এবার পারলাম না। মুরুব্বি আমাকে টাকার গরম দেখাচ্ছেন। আমি বললাম, “আপনি কি অটোর চালক? চালক যখন ভাড়া জানতে চাইলেই ৫টাকা বললো, তখন আপনি কেন ভাড়ার প্রসঙ্গ টানলেন? আর আপনি তো দূর থেকে এসেছেন, আমি যেটুকু যাব, সেটুকুর ভাড়া তো ৫ টাকাই। আপনি কি ২০ টাকা দিয়ে গাড়ি কিনে নিয়েছেন? তাহলে রিজার্ভ করে উঠলেন না কেন? আর আমাকেই বা ওঠাতে দিলেন কেন?” মুরুব্বি কোন যুক্তি বোঝেন না, তাঁর গলাবাজি চলছেই। আমি বেশ ক’বার তাঁকে থামার অনুরোধ করলাম। অন্য যাত্রীরাও করলো, কিন্তু তিনি থামছেন না। একজন যাত্রী বললেন, “চাচা, উনি হয়তো না বুঝে পারা দিতেও পারেন, তিনি তো ক্ষমা চেয়েছেনই, এরপর আপনি এতসব বলছেন কেন? আর ভাড়ার খোটা কেন দিচ্ছেন? এতই যখন টাকার গরম, তখন কেন আপনি একা রিজার্ভ করে উঠলেন না?”
আমি বুঝলাম না, আমি কী এমন অন্যায়টা করেছি? ততোক্ষণে আঙ্গিনার ঘাটে এসে গেছি। আমি নামব। তবে চেঁচামেচি শুনে আর আমাকে দেখে আশেপাশের থেকে আমার পরিচিত কিছু ছোটভাই এগিয়ে এলো । দূর থেকে বড় ভাই-চাচারাও দেখছিলেন। মুরুব্বি আসবার পথে বলছিলেন, তিনি আমাকে দেখে নেবেন। এমনকি একসময় মারতেও উদ্যত হয়েছিলেন । আমি তখন জানতে চাইলাম, “চাচা, দেখে নেবেন না আমাকে? প্লিজ, দেখেন।” মুরুব্বি কিছুটা দমে দিয়ে, একটু ঠাণ্ডা স্বরে সবাইকে আমার বিরুদ্ধে নালিশ করতে বসলেন। আশেপাশের লোকজন তো আমাকে একদম ছোট থেকে দেখে আসছেন, কাজেই তাঁদেরকে কেউ শত চেষ্টাতেও বোঝাতে পারবে না, আমি বেয়াদবি করতে পারি, সেটাও কারণ ছাড়া। তাছাড়া সামনের প্রতিবাদী যাত্রী আমার পক্ষেই কথা বললেন। তখন আমার এক ছোট ভাই সজল বলল, “চাচা, এতটুকু ব্যাপারে এমন খিটমিট না করলেও পারতেন। মুরুব্বি মানুষ মুরুব্বির মতো থাকেন ।” আমি ঝামেলা এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করি। এই কথাবার্তার মাঝেই অটোচালককে ৫টাকা ভাড়া মিটিয়ে উঠেও ১০টাকা দিলাম। টাকার গরম কেউ দেখালে, আমার ভালো লাগে না। সবারই তো আত্মসম্মানবোধ থাকা চাই, আমারও কিছুটা থাকবে -এটাই স্বাভাবিক । আমি আর কথা না বাড়িয়ে অটো ছেড়ে দিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ালাম । পিছে পিছে আমার ৮-১০টা ছোটভাই জানাল, “দাদা, জামাত-শিবির তো, তাই এমন করে। এসব নতুন কিছু না। তুমি এলাকায় তেমন একটা থাকো না, তাই এমন পরিস্থিতিতে পড় নাই ।” আমি আসলেই অবাক হলাম। সব সমীকরণ যেন মিলে গেল মুহুর্তেই! আমি যে জায়গাটায় আসব বলে অটোতে উঠেছিলাম, সেটা একটা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। এটা শুনেই তাহলে আমার সাথে মুরুব্বি এমন পশুর মতো আচরণ করছিলেন? ক্ষমতায় না থেকেই এই অবস্থা, আর থাকলে কি করতেন? আমি শিক্ষিত ছেলে, ক্ষমা চেয়েছি, আবার প্রতিবাদও করেছি। তবে শেষে ঝামেলা এড়িয়ে গেছি। কিন্তু অন্য কেউ হলে? কেউ কেউ চুপ করে সহ্য করতো, আবার কেউ হয়তো উচ্চবাচ্চ করতো। হয়তো দাঙ্গাও লেগে যেতে পারতো! এভাবেই তাহলে ছোট ব্যাপারকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় বানিয়ে তারপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়? আচ্ছা, আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? এমন আচরণ পাবার জন্যই কি আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, একাত্তরে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলেন আমার দাদু? বাবা বেঁচে থাকতে কোনদিন দেখিনি সম্প্রদায়ের মাঝে পার্থক্য খুঁজতে, আমাকেও শেখাননি এসব। ৩০ বছর তাঁর সাথে মিশেও অনেকেই তাঁর ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে থেকেছেন অজ্ঞ। কিন্তু আজ আমি এটা কি দেখলাম? কেন দেখলাম?
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৯
...নিপুণ কথন... বলেছেন: হুজুরকে হুজুর বলব নাতো কি বলব?
২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৮
শহিদুল বলেছেন: এদের আদর্শ হলো রগচটা অসভ্য আরব জাত তাই এদের আচরণ ওদের মতই.....
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৩
সামুরাই_কাতানা বলেছেন: আপনার কাছে একটা প্রশ্ন " আপনি আপনার গল্পের টাইটেল এভাবে দিলেন কেনো? আপনি এভাবে দিতে পারতেন" মিঃ বললেন তোমাকে দেখে নিবো, অথবা দিতে পারতেন " রিকসা শেয়ার করতে গিয়ে বিরম্ভনা"। কিন্তু আপনি টাইটেল দিলেন "হুজুর বললেন তোমাকে দেখে নিবো"। আচ্ছা টুপি আর দাড়ি রাখলেই কি হুজুর বলতে হবে ? "
মাপ করবেন আসলে আপনাকে কষ্ট দেওয়া আমার কনো উদ্দেশ্য নেই। আপনি কি ভেবে লিখেছেন জানি না। তবে অনেকে পড়ে ধরে নিবে যে হুজুররা আসলেই খারাপ।