নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
গতকাল রাতে ১টার দিকে ঘুমিয়েছিলাম, মোটা কাথা গায়ে জড়িয়ে। বেশ শীত পড়েছে আজকাল। বৃষ্টি, ঝর লেগেই আছে। এই অসময়ে ঠান্ডা লেগে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখা চাই। আমার আবার ফ্যান না চালিয়ে শুলে ভালো লাগে না, ঘুম আসে না। ফ্যান চালিয়ে ঘুমানোর আরেকটা সুবিধা হলো, ফ্যানের বাতাস এবং কিঞ্চিৎ আওয়াজে বাইরের শব্দ কানে আসে কম। এতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকি কম।
কিন্তু আজ ঘুম ভেঙ্গে গেলো ভোরেই। জেগে দেখি বিদ্যূৎ নেই। বুঝলাম, ঘুম ভাঙ্গার কারণটা বাইরের শব্দ। প্রতিবেশিদের আবার বাতিক আছে ভোর ৪টায় উঠে হাউকাউ শুরু করার। চলে একটানা প্রায় সারাদিনই!
আমি বিছানা ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম। ভাবলাম, আজ প্রকৃতি দেখব। মহিম স্কুলের মোরে ফেকু কাকার হোটেল, সেখানে খাটি গরুর দুধের চা -খারাপ না, ভালোই। তবে যে পরিমাণ চা দেয়, তাতে তেষ্টা মেটা কঠিন! ঘুমটা ভালোভাবে ভাঙ্গতেও তাই বেগ পেতে হলো। এই হোটেলের সাথে জড়িয়ে আছে আমার অনেক অনেক শৈশবস্মৃতি। সেসব মনে করতে করতে পিছে ফিরেই খেয়াল করে দেখলাম, পিছের মার্কেটের সামনে একটা পিক আপ ভ্যান রাস্তার পাশের ড্রেনের ঢাকনা ভেঙ্গে এক চাকা ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে চিৎপটাং! ওকে উদ্ধার করতে আশেপাশে একঝাক চিন্তিত মুখ, চোখের নিচে কালি- ভালো ঘুম হয়নি বোঝা গেলো। তবে সেখানে কাজের লোক খুব কম, দর্শকের সংখ্যাই বেশি। এটা আর নতুন কি এদেশে?!
আমি বেশিক্ষণ দর্শক হয়ে থাকতে পারলাম না। চলে এলাম। উপকারে আসতে না পারলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখা আমার কাজ নয়। এরপর ঢুকলাম প্রভুর আঙ্গিনায়। আজ ভোরের কীর্তনটা এত ভালো লাগছে কেন? পাখির কলকাকলিতে সেই কীর্তন যেন আরও পূর্ণতা পেলো। এখানে ২৪ ঘন্টা কীর্তন হয়, থেমে যায়না কখনো। একবারই থেমেছিলো সেই ১৯৭১ সালে। যখন পাক হানাদার ইয়া বড় ট্যাংক এনে গুড়িয়ে দিয়েছিল আঙিনার মঠ। "হরি পুরুষ জগদ্বন্ধু..." কীর্তন করছিলেন নয়জন সাধু। "জগদ্বন্ধু"-কে "বঙ্গবন্ধু" ঠাউরে সেখানেই ব্রাশফায়ারে কতল করা হলো তাঁদের! আহা, সাচ্চা পাকিস্তানিদের কী বুদ্ধি! কী বিচার!
কবি বাবু ফরিদীর "কমলের একাত্তর" উপন্যাসে সেইসময়ের অনেক জীবন্ত স্মৃতিচারণ আছে। বাবার বইটা পড়েই এসব জেনেছি। সেখানে একাত্তরে ফরিদপুরের চিত্র আঁকা আছে কথার মালায়, যা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সংগৃহীত এবং সংরক্ষিতও আছে। সেসব কথা আজ থাক। আজকের ভোর এবং সকালটা ভালো করে দিলো পিচ্চি একটা ছেলের ভুবন-ভোলানো হাসি। ছেলেটা এখন ওর বাবার হাত ধরে হাঁটাহাটি ব্যায়াম করছে, আর আমি বসে বসে ওদের দেখছি!
©somewhere in net ltd.