নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভেঙে ভেঙে গড়া ভালোবাসা-২

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৩৩

২) একুশ বছরের গৌরী। বিয়ে হয়েছে চার বছরের কিছু বেশী। বাচ্চাটা হবার পর থেকেই অসুস্থ।

প্রথমে জ্বর, তারপর থেকে মাথা খারাপ। এক পর্যায়ে উন্মাদ, পাগল। কেউ বলে গৌরীকে জ্বীনে ধরেছে, কেউ বলে পেত্নী। আবার কেউ কেউ অন্যরকম মন্তব্যও করেছে।

সেয়ানা মেয়ে। বর্ষার নদীর মতোই ওর শরীরের সমস্ত বাঁক ভরাট হ’তে হ’তে একদিন ফলবতী গাছের মতো সবার চোখের সামনেই ন্যূয়ে পড়লো। তারপর আবার শরৎ- হেমন্ত এলো ওর শরীরে। এভাবে রোদের রঙ বদলের মতো গৌরীও অনেকখানি বদলেছে। ওর শরীরে এখন পানসে রঙ-এর দিন। ওকে ঘিরে হাজারো পুরুষের কৌতূহলী দৃষ্টি একসময় মাছির মতো ভিন ভিন করতো। হঠাৎ ওর পাগল হবার খবরে তা আবার প্রাণ পেলো। সারা শহর জুড়ে একটা চঞ্চলতা। দলে দলে ভীড় জমতে থাকে উৎসাহী মানুষের। সুযোগ বুঝে কেউ কেউ ‘দাওয়াই’ দেবার অজুহাতে গৌরীকে হাতড়ে নিতে চেয়েছিল। খবর পেয়ে কনট্রাকটর সতু ওর দেখাশোনা চিকিৎসা ও পথ্যের ভার নেয়।

বাবার বাড়িতেই গৌরীর চিকিৎসা চলছিল। নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরোয় তাদের সংসারে ওর চিকিৎসা ফকির-ফকরদের টোটকা-ফোটকা ছাড়া এদেশে আর কি-ই বা আশা করা যায়। তবুও একবার ডাক্তার দেখানো হয়েছিল বৈ কি!

এদিকে অমিত- গৌরীর স্বামী বেচারা শ্বাশুড়ীর প্রতি অতিশয় বিনয়ী, শ্রদ্ধাশীল ও আস্থাবান একজন অসচ্ছ্বল মানুষ। কোন রকম ঝক্কি ঝামেলার ধার ধারে না। হাই স্কুলের শিক্ষক। মাঝে মধ্যে দু’চারটা কবিতা লিখে অবসর সময় কাটায়। পারিবারিক অসুখ-বিসুখে সে আজকাল ভগবানের উপর বেশী নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যদিও এমনটি ছিল না কোনদিন। আজন্ম চোখা ছেলেটির এই পরিবর্তন অনেকের কাছেই কষ্টকর। এদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার শিকার কত যুবক যে এভাবে বোথা হয়ে গ্রাম-গ্রামান্তরে সমাজের ক্ষত আগলে দিনাতিপাত করছে!

অমিতের মতে এদেশে কোনও ভালো চিকিৎসক নেই। কারণ, জ্বর সর্দি, আমাশয় বাদে জটিল কোন রোগ হলেই অর্থশালী মানুষ ভারত-বিদেশ করে চিকিৎসা করিয়ে ফেরে। দেশীয় চিকিৎসায় এ পরীক্ষা সে পরীক্ষা করে একদিকে টাকার শ্রাদ্ধ, অন্যদিকে কালক্ষেপণ। সবকিছু পরীক্ষার পর রোগীর অবস্থার যখন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না, তখন চিকিৎসক বলবেন এদেশে এ রোগের ভালো চিকিৎসা নেই। একারণে একজন কবিতালেখক তদুপরি একজন স্কুল শিক্ষক তার অর্থের জোড়াতালি দেয়া সংসারের আঁচালে গৌরীকে ঢাকতে সাহস পায় না। যদিও গৌরী তার প্রেমিকা-স্ত্রী। তবু শ্বাশুড়ীর অজ্ঞতার পাশাপাশি নারীর টানের যোগসূত্রটিকে অমিত বেশী প্রাধান্য দিচ্ছে। মাঝে মাঝে ওর মাথাও বিগড়ে যেতে চায়, তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখবার চেষ্টা ওর সবসময় থাকে। যখন খুব খারাপ বোধ হয়, তখন ঘুষি পাকিয়ে বারান্দার থামে অথবা নিজের হাতেই আঘাত করে ভাগ্যের চাকাটাকে বদলাতে চায়।

সতুর প্রতি অমিতের শ্রদ্ধা আপন বড়দার মতো। ও এ বাড়িতে আসার পর থেকে অমিত নিজেকে কিছুটা হালকা বোধ করছে।

সতু এসে প্রথমেই বিগড়ে যায়। গ্রামের মানুষ ভেঙে পড়েছে বাড়িতে। রান্নাঘরের কোণে ঝি-বৌরা ঘোমটা মাথায় আঁচল মুখে চেপে দাঁড়িয়ে। কী বিতিকিচ্ছিরি কাণ্ড!
উঠোনের মধ্যখানে গৌরী। ওর অর্ধ-উলঙ্গ শরীরে মনে হচ্ছিল বিছুটির জ্বালা। ক্রোধে সে দিশেহারা। লাল চুনির মতো রক্তবর্ণ চোখ। মাটিতে পা আছড়ায়, হাত চাপড়ায়, ইনিয়ে-বিনিয়ে কাঁদে। মাটির উপর তর্জনী দিয়ে দাগ কাটে, মুখে যন্ত্রণা, বুকে পিপাসা, পিপাসার দহনে কুঁচকে গেছে ত্বক। এক এক সময় নিজের মুখটাই খামচে দেয়। আঁকাবাঁকা রেখা ফুটে ওঠে মুখে। চিনচিন জ্বালা শুরু হয়। মুখের ফর্সা রং-এর মাঝে নীল শিরা দেখা দেয়। দেখা দেয় বিন্দু বিন্দু ঘাম।

হঠাৎ ও স্খলিত কন্ঠে বলে ওঠে, ‘যাহ্‌!’ তারপর এক দৌড়ে মানুষের ভীড় ঠেলে ছুটে যায় বাড়ির সংলগ্ন এঁদো পুকুরে।

এ দৃশ্য দেখে সতু প্রথমে অবাক, হতবাক। এক সময় নিজেই গৌরীর কাণ্ডকারখানা অন্যদের সাথে দু’চোখ ভরে উপভোগ করতে থাকে।

পুকুরের চারদিকে হর্ষ-উৎফুল্ল জনতা।

গৌরী জলে ঝাঁপ দেয়। এক ডুবে মাঝপুকুরে গিয়ে মাথা তোলে, আবার ডোবে। আবার ওঠে। মাঝ পুকুরে গভীর জলে ডুবে থেকে শীতল হতে চায়।

এভাবে কেটে যায় এক ঘণ্টার মতো। তারপর হরিদাসীর অনুরোধে সতু কাপড় বদলে পুকুরে নামে। মাঝ পুকুর থেকে ওকে টেনে এনে পাড়ে তুলতেই এক ঝাটকায় সতুর হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করে আবারও জলে আছড়ে পড়ে গৌরী। এভাবে আরও কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়। তারপর অমিতের সহায়তায় সতু একসময় ওকে পাড়ে তোলে। টেনে-হিচড়ে ঘরের বারান্দায় আনা হলো। উবু হয়ে, হাটু পর্যন্ত কাপড় তুলে পায়ের উপর চিপতেই ওর ভরাট বুক বেরিয়ে পড়ে। দর্শনার্থীদের মধ্যে চঞ্চলতা বাড়ে। হয়তো এতে গৌরীর মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলো। সে পরণের শুভ্র শাড়ীর আঁচল ফেলে সামনের দিকে এগোয়। পট পট করে লাল ব্লাউজের বোতামগুলো খুলতে খুলতে বলে- ‘আয় জাউরার ছাওয়াল জাউরারা, আয় আয়’। গৌরী হাঁপাতে হাঁপাতে উঠোনে নেমে পড়ে। দর্শনার্থীরা ভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে।

সতু হতবম্ব হয়ে যায়। পরক্ষণেই সম্বিত ফিরে পায়। দ্রুত পায়ে এগোয়। গৌরীর গতি রোধ করে। দু’হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে ভাঙা গলায় অনুযোগের সুরে বলে, ‘ছিঃ ছিঃ, একি হচ্ছে?’ সতু গৌরীকে ঘরের ভেতর নিয়ে যায়।

মিনিট দু’য়েক পর ঘর থেকে বেরিয়ে উৎসুক জনতার উদ্দেশ্যে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। ওর বুকের ভেতর একাত্তরের ভয়ত্রাস, পোড়াবাড়ি, মরা মানুষের গন্ধ ঘুরপাক খায়। ভয় পাহারা দেয় ওকে। একবার মনে হয় চিৎকার করে বলে, ‘দাঁড়িয়ে কি দেখছেন আপনারা?? আমাদের কি মান-সম্মান নেই?’ কিন্তু বলতে পারে না। অব্যক্ত ক্রোধ সংবরণ করতে কষ্ট হয় ওর। কামড়ে খাবলে নিতে চায় মাংসের দলা। অথচ কিছুই হয় না। চোখে শুধু জল চিক চিক করে সমুদ্রতটের বালুর মতো। গৌরীর প্রতি ভালোবাসার অদৃশ্য আঁচলে চোখ মোছে সতু। বুক ঠাসা কষ্টগুলো একপাশে সরিয়ে ফিকে হলুদ হাসি হেসে শুধু বলে, ‘আপনারা এখন যান। সবারই তো ঘরে মা-বোন আছে?’

উঠোনের মানুষ একে একে সরে পড়ে। অমিত এসে সতুর গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। সতু অমিতের চোখে চোখ রেখে আশ্চর্য বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি হেসে ওকে দুশ্চিন্তামুক্ত হবার অভয় দেয়। অমিত মাথা নত করে। সতু ওর পিঠে হাত রেখে বাড়ির ভেতর চলে যায়। অমিত একা একা উঠোন পাড়ি দেয়। বাড়ির পালানে এসে সবুজ ঘাসের উপর বসে পড়ে গৌরীর কথা ভেবে। যে গৌরী আজ অমিতের কাছে একই সঙ্গে কত কাছের, আবার কত দূরের।

/চলবে...

উপন্যাসঃ ভেঙে ভেঙে গড়া ভালোবাসা
লেখকঃ কবি বাবু ফরিদী

১ম অংশ:
www.somewhereinblog.net/blog/nipun_kothon/30028451

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:০৬

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: প্রথমেইতো বাজিমাত করে দিয়েছেন, কথাগুলো চমৎকার আয়োজনে ভরা ---চলুক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.