নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভেঙে ভেঙে গড়া ভালোবাসা / বাবু ফরিদী, অংশ: ৩

১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৮

৩) ওদের বিয়ের মাস কয়েক আগের কথা।

অমিতের সাথে গৌরীর গোপন বন্ধুত্ব স্নায়ু উত্তেজক প্রহর গুণছে। দুই কপোত-কপোতী বাহ্যিক জগতের সকল বন্ধন একপাশে করে পরিণতির অপেক্ষায় পাগলের মতো অধৈর্য্য হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে একদিন গৌরী এসেছিল ওদের বাড়িতে। ও তখন পাশের বাড়ির গোলুর বিয়ের কথাবার্তায় দু’পক্ষের মধ্যস্থতা করছিল। খবর পেয়ে বাড়িতে এলো। ঘরে ঢুকে দেখলো গৌরীকে। ওর পরণে ছিল কফি রঙের শাড়ী, মেরুন রং-এর শাল। গৌরী চৌকিতে বসে উদাসীনভাবে শাড়ীর আঁচল নিয়ে পাকাচ্ছিল। অমিতকে দেখে উঠে দাঁড়ায়।

‘উঠছো কেনো? বসো।’ –অমিত একটা চেয়ার টেনে বসে।
না থাক, আজ আসি।
কতক্ষণ এসেছো?
‘এইতো’ -গৌরী দৃষ্টি নামায়।
তবে এখনই যেতে চাইছো যে?
পিকনিক থেকে ফিরলাম, তাই-
‘তাই’ –অমিতের ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি।
‘তাই কী’ –কৃত্রিম অভিমানে চোখ তোলে গৌরী।

অমিতের চোখে চোখ পড়তেই ওর দৃষ্টি কেঁপে ওঠে। অমিত বুঝতে পারে এই সাজগোজ সবই ওর জন্যে। তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ছাড়ে না। বলে, ‘আজ তোমাকে অপূর্ব লাগছে’ ।

‘অপূর্ব না ছাই!’ –মেয়েলী ঢং-এ মাথা বাঁকায় গৌরী।
সত্যি।

অমিত এগিয়ে যায় গৌরীর খুব কাছে। দু’হাতে ওর কাঁধ ধরে বিছানার ওপর বসায়। গৌরীর কাঁধ থেকে শালটা বিছানার উপর খসে পড়ে। অমিত ওর মুখটা দু’হাতের তালুতে নিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বার কয়েক দেখে।

অমিতের হাতের আলতো স্পর্শ গৌরীকে ভীষণ বিচলিত করে। ওর অনুনয় মাখানো দৃষ্টি কিছু বলতে চায়। ঠোঁট দু’টো কাঁপে। অমিতের মধ্যেও চঞ্চলতা ছড়িয়ে পড়ে, মুখ খুলতে চায়। কিন্তু মুখের কথা মুখেই থেকে যায়। দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস বয়। এক সময় ঢোঁক গিলে শুস্ক কণ্ঠে অমিত মুখ খোলে- ‘গৌরী’ । জড়িয়ে ধরে ওকে।

গৌরীও জড়িয়ে ধরে অমিতকে। উত্তেজিত হয়ে ওঠে দু’জনেই। অমিতের বাহুবন্ধনে শক্তিহীন হয়ে পড়ে গৌরী। অমিতের শরীরে গৌরীর শরীর জ্যামিতিক বিন্যাসে ধরা দেয়। এক সময় ওর গায়ের রঙের চেয়ে ঈষৎ ফর্সা বুক অমিতের চোখের সামনে স্ফীত হয়ে ওঠে।

গৌরীও আবেগে দীপ্তিময়ী হয়ে ওঠে। ওর দেহ ভীষণ প্রলোভন জাগায় অমিতকে। অমিত ওর চুলের মধ্যে মুখ রেখে আদর করে। শরীরের স্নিগ্ধ সুগন্ধ আর কুমারী শরীরের উষ্ণতা অমিতের সকল সংযম কলংকিত করে। এক অদ্ভুত ভয় আর আকর্ষণ মিশ্রিত দৃষ্টির সাথে দৃষ্টি মিলিয়ে গৌরীর গোলাপি ঠোঁটে চুমু খায়। তীব্র আবেগ আর উম্মত্ততায় দিশেহারা হয়ে ওঠে অমিত। সহসা ওর হাত দু’টো গৌরীর বুকের বন্দরে নোঙ্গর ফেলে।

গৌরী সম্বিত ফিরে পায় হঠাৎ করেই। প্রচন্ড ক্ষিপ্রতায় ওর হাত দু’টো সরিয়ে দেয়। তারপর এক ঝাটকায় নিজেকে মুক্ত করে শরীর সামাল দিতে দিতে কিছুটা দূরত্বে অবস্থান নেয়। ক্রোধ আর অক্ষম বিদ্রোহে জ্বলে ওঠে গৌরী। অব্যক্ত কান্নায় শরীর ফুলে ফুলে ওঠে। দু’চোখে বিদ্রুপের দৃষ্টি ঝরে।

ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে যায় অমিত। নিজের অমার্জিত কর্মের জন্য নিজেকেই মনে মনে ভর্তসনা করে, মৃদু হেসে গৌরীর দিকে এগোয়। ‘আমরা মিছেমিছি স্নায়ু উত্তেজিত করলাম’ । -বলে গৌরীর মাথায় হাত রেখে বাচ্চাদের মতো আদর জানায়। গৌরীর চোখের পাড় উপচে কান্না ঝরে। হাত দিয়ে অমিত তা মুছে দেয়।

ধীর পায়ে গৌরী অমিতের ঘর ছাড়ে। অমিত ওর গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকে অপরাধীর চোখে।

তারপর একদিন ওদের বিয়ে হলো। স্ত্রীর জগৎ দেখলো গৌরী। বাচ্চা এলো গর্ভে। অথচ ইন্দ্রিয় পরায়না গৌরী প্রতিনিয়তই অসূর্যস্পর্শা থাকতে চেয়েছে। থাকতে চেয়েছে পবিত্র এবং শান্ত। রাখতে চেয়েছে দৈহিক শুদ্ধতা। যেমনটি যুবতী মেয়েদের জন্য অলংকার। এ জন্য বিবাহিত জীবনের প্রতিটি রাতই ওদের কাছে মনে হয়েছে ফুলশয্যার রাত। অমিত কিন্তু এ জন্য গৌরীকে প্রশংসাই করেছে। কিন্তু আজ? এক উঠোন মানুষের মধ্যে গৌরী অবলীলায় কী সব কাণ্ডই না করলো!

অমিতের চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে আসে। চারদিক থেকে ক্রমে ক্রমে অন্ধকার ওকে গ্রাস করে।

...চলবে।

উপন্যাসঃ ভেঙে ভেঙে গড়া ভালোবাসা
লেখকঃ কবি বাবু ফরিদী

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.