নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভেঙে ভেঙে গড়া ভালোবাসাঃ ৫

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:৩২

(৫)

ওঝার চিকিৎসার কাজে প্রয়োজনীয় এটা সেটা যোগাড় করতে করতে সতুর সমস্ত দিন কেটে গেলো। দুটো লাল গামছা, চাউল, লাল পাতিল, কালো মুরগি, ঝিকার ডাল, আরও কত কী। এরই ফাঁকে ওঝা সম্বন্ধে অনেক তথ্য জানা হয়ে যায় ওর।



একঃ ওঝা লোকটা সুবিধের নয়। যে বধু বা মেয়েকে সে একবার নিজের করে পেতে চাইবে, সে যত বড় ঘরেরই হোক, তার হবেই।

দুইঃ এক ধনুষ্টংকার আক্রান্ত বাচ্চাকে জ্বিনে ধরেছে জ্ঞানে এই ওঝা ঝাঁটা দিয়ে প্রহার করতে করতে মেরে ফেলেছে।



তিনঃ মাটির মালসায় খড় কুটো ও নারিকেলের ছোবড়ার সাজাল তৈরি করে সেই ধূয়া একটা নিম্যুনিয়া আক্রান্ত বাচ্চার নাক মুখ দিয়ে প্রবাহিত করে মেরে ফেলেছে।



চারঃ জ্বিনে ধরা নারীদের চিকিৎসার নামে একটি ঘরে আটকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। শক্তিতে যদি না কুলোয়, তখন অস্ত্র হিসেবে ঐ ঝিকার ডাল এদেশের বিশেষ ক্ষমতা আইন, সামরিক আইন কিংবা সন্ত্রাস দমন আইনের মতো সুকৌশলে প্রয়োগ হয়। যতক্ষণ না বশ মানে, ততক্ষণ চলে ওঝার নির্যাতন। তারপর পাশবিক অত্যাচার, দান-দক্ষিণা আরও কত কী!



যদিও এসবের বেশিরভাগই সতুর কাছে অবাস্তব মনে হয়েছে। তবু একটা অজানা ভীতি ওর সমস্ত শরীর মন আচ্ছন্ন করে ফেলে। মনে মনে ভাবে, এসব টাউট বাটপার ও ধাপ্পাবাজদের কাছে গ্রামের মানুষ কত অসহায়। কত নারী তাদের মান সম্ভ্রম নষ্ট করছে এদের হাতে, কত শিশু এদের হাতে বেঘোরে প্রাণ দিচ্ছে। এটাই সম্ভবত আমাদের অজ্ঞতার ফল, প্রকৃত গ্রামীণতা।



গৌরীর শ্লীলতাহানীর কথা ভাবতেই সতুর পিলে চমকে যায়, ভয়ে গেঁথে যায় সমস্ত শরীর। কপালে ফুটে ওঠে ঘামের কণা। কিছু করার ইচ্ছা তার এ মুহূর্তে মনে আসে না। শুধু অপেক্ষা, অপেক্ষার বৈঠা হাতে সময়কে বয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্বটুকু শুধু এ মুহূর্তে পালন করে সতু।



বাড়িতে এসেই বিষয়টি প্রথমে মৌরীর সাথে আলোচনা করলো। আলোচনার সূত্র ধরে ওর সামনে আর একজন সতু এসে দাঁড়ায়। যার মতে, ভয় মানে অজ্ঞানতা। মৌরীও বিষয়টি বাড়ির এবং পাড়া-পড়শী দু’চারজনের মাথায় ঘুড়ালো।



সন্ধ্যা না হতেই বাড়িতে টাকটুক করে মানুষের আসা-যাওয়া চলতে থাকে। সবার চোখে উৎকণ্ঠার ছাপ। আবার এমন অনেকেই এসেছে, যাদের চোখে অন্যরকম দৃষ্টি...।



জ্বিনের পাগলীর চিকিৎসা। নামকরা ওঝার আগমন। এমনি খোশগল্পের মধ্যে সন্ধার পরপরই বাড়ির আঙ্গিনায় ওঝার পা পড়ে। সতুর দৃষ্টি বিঁধে যায় ওঝার উপর, তাকে দেখতে অনেকটা লাগে সিম্পাঞ্জির মতো। মুখে দাড়ি গোঁফ মিলিয়ে কচুরীর শেকড়ের মতো শ’খানেক পশম, চোখ দুটো আগুনের ভাটার মতো গণগণে, মাথায় কাঁধ অবধি পাতলা চুল, চুলের আগার দিকটা লালচে বর্ণের। পরণে এক টুকরো ময়লা মার্কিন কাপড়, উদোম গতর, খালি পা, হাতে বাঁকাকোঁকা মুথাসুদ্ধ একটা তল্লাবাঁশের লাঠি। সব মিলিয়ে তাকে একজন ঠকবাজ ভাবতে কারো ভুল হবার কথা নয়। মুহূর্তেই সতুর গা রি-রি করে ওঠে।



ওঝার পেছনে তিন ব্যাটারির টর্স হাতে সকালবেলার দেখা সেই লোকটা। ওঝা মাঝে মাঝে তাকে সাগরেদ বলে সম্বোধন করছে। সাগরেদ ওঝার তলব মাফিক এটা ওটা গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, বাড়ির ওপর লোকের উপস্থিতি বেড়ে যায়। সতুর কিন্তু ওদিকে নজর নেই। ওর নজর এখন শুধু ওঝার দিকে।



ওঝা চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া রোগীর বাড়িতে বসে না, কিছু পানাহার করে না বলে এ বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথেই জানিয়ে দিয়েছে। সে কারণে উঠোনের এক কোণে সে তার নিজের মতো করে ঠাই করে নিয়েছে এবং সেখানেই হরিদাসীকে ডাকা হয়েছে।



অল্পক্ষণের মধ্যেই হরিদাসী কাপড়ের আঁচল গুছাতে গুছাতে ওঝার সামনে এসে বসে। পেছনে সতু, মৌরী অমিতসহ বাড়ির অনেকেই অর্ধবৃত্তাকারে দাঁড়ায়। ওঝা এক এক করে রোগিনী সম্বন্ধে খুঁটিনাটি সব জানার আগ্রহ দেখায়। সমবেত কণ্ঠের জবাবে ওঝা তার প্রার্থিত উত্তর পেয়ে আশ্বস্ত হবার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ায়। কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে সে দুটো লক্ষণের আভাস দেয়। প্রথমত, রোগিণীর বাচ্চা প্রসবকালীন সময়ের রক্তমাখা কাপড়-চোপড় কেউ ক্ষতি করেছে। দ্বিতীয়ত, রোগিণী পেত্নীর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এভাবে কিছুদিন আগে মুন্সীপাড়ার নৈমুদ্দিনের মেয়ে ময়নাও আক্রান্ত হয়েছিল।



ওঝা অত্যন্ত গর্বের সাথে জানায়, সে চিকিৎসা সে নিজে করেছিল। ময়না এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। সুন্দরভাবেই স্বামীর ঘর করছে।



গৌরীও ওঝার চিকিৎসায় সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভ করবে এ রকম বোধ জন্মাবার মতো আরও অনেক কথাই সে বললো। এক সময় তারই নির্দেশে, গৌরীকে একটা আঁটসাঁট ঘরে নেয়া হলো। উপস্থিত দর্শকদের ভেতরকার চাপা উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। ওদের কেউ কেউ ধীর পায়ে ঐ ঘরের আশেপাশে ভিড় করতে থাকে।



ওঝা ভিড় ঠেলে ঘরের উদ্দেশ্যে এগোয়। পেছনে সাগরেদ। যাবার পথে সবাইকে ভয় দেখিয়ে বলে যায়, ‘চিকিৎসার সময়ে কোন লোক এ ঘরের ত্রি-সীমানায় থাকতে পারবে না। যদি থাকে তাহলে রোগিণীর ছেড়ে যাওয়া পেত্নী অন্য কারো শরীরে ভর করলে সে দায়ী থাকবে না।



ওঝা এগোয়। পেছনে সাগরেদ। তার পেছনে সতু পথ করে নেয়। অমিত কিছুটা এগিয়ে একসময় ভিড়ের ভেতর হারিয়ে যায়। এ মুহূর্তে বাড়ির উপর দিয়ে প্রবাহিত রাতের স্বচ্ছ বাতাসের চলাচল অশরীরী বোধের জন্ম দেয়, সতুর বুকে বিষাক্ত সাপের মতো শ্বাস-প্রশ্বাস উঠানামা করে।



দরজার কাছে এসেই গৌরীর ফুলের কোরকের মতো পবিত্র দেহটার দিকে স্থির দৃষ্টি ফেলে। ভয়ে কুঁকড়ে আছে ও। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। সতু ওর কাছে এগোয়। ওকে দেখতে পেয়ে গৌরীর দেহে প্রাণ ফিরে এলো যেন। ঘরের মাঝখানের খুঁটিটা জড়িয়ে ধরে ও গভীর করে শ্বাস টানলো। ওঝা দরজার সামনে পথ রোধ করে দাঁড়ায়।



সবাইকে দূরে সরে যাবার সাবধানী বাণী শুনিয়ে দরজায় কপাট দেবার উপক্রম করে। সতু অসহিষ্ণু কন্ঠে বলে ওঠে, ‘দাঁড়ান, আমিও আসবো।’ সতু ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। ওঝা দরজার পাল্লা দুটোতে হাত রেখে সতুর গতিরোধ করে বলে, ‘এ ঘরে রোগিণীর কাছে আমি আর আমার সাগরেদ ছাড়া আর কেউ আসবেন না। এতে চিকিৎসার ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে আর জটিলটাও বাড়বে।



এরই মধ্যে মৌরী এসে দাঁড়ায় সতুর পেছনে। সতুর পিঠে আস্তে করে চিমটি কাটে। পেছন ফেরে সতু। দেখে মৌরী এবং অমিত ওর পেছনে দাঁড়িয়ে। তারপর ওঝার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলে, ‘না, এ ঘরে রোগিণীর কাছে শুধু আপনি আর আমি থাকিবো। অন্য কেউ নয়।’



আহ-হা, বুঝতে পারতেছেন না, ঝাড়ফুঁক এর কাজে সাগরেদের প্রয়োজন।



‘ও আমিই পারবো।’ সতুর কণ্ঠে দৃঢ়তা প্রকাশ পায়। ওঝা সাগরেদের দিকে তাকায়। তারপর সতুকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘পারবেন না।’

পারবো।



সতু সাগরেদকে লক্ষ্য করে। তার চোখ দুটো রাগে ক্ষোভে কটমট করছে।



//...... চলবে।



উপন্যাসঃ ভেঙে ভেঙে গড়া ভালোবাসা

লেখকঃ কবি বাবু ফরিদী​ ।



[বিঃদ্রঃ আগের অংশগুলো পড়তে আমার টাইমলাইনে যান অথবা বাবু ফরিদীর পেইজে] দেখুন। উপন্যাসটি সম্পর্কে আপনার মতামত জানান। আপনাদের ভালো লাগলে উপন্যাসের পুরোটাই পর্যায়ক্রমে এখানে টাইপ করে দেবো । ধন্যবাদ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.