নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
কার্জন হল থেকে বেরিয়ে দোয়েল চত্বর পেরুলেই একটু দূরে রাস্তার ওপাশে সায়েন্স লাইব্রেরি । তড়িঘড়ি করে ছুটছি সেদিকেই; দুদিন বাদে মাস্টার্স ফাইনাল । ফুটপাথে একটা পাঁচ-ছয় বছরের ছোট্ট মেয়েকে দেখে থমকে দাঁড়াতে হল । না, ও ভিক্ষা করছে না । মেয়েটি খোলা আকাশের নিচে প্লাস্টিকের বস্তা পেতে, তার ওপর বসে পড়ালেখা করছে! এক মনে, এক ধ্যানে । আশেপাশের কোন কিছুর প্রতিই খেয়াল নেই যেন । ব্যস্ত রাস্তার মানুষ, গাড়ির শব্দ... এমনকি টিপটিপ বৃষ্টিও ওর মনোযোগ অন্যদিকে নিতে পারেনি । দেখে অনেকটাই অবাক হলাম । আজকালকার ছেলেমেয়েরা নাকি পড়তেই চায়না –এমন অভিযোগ খোদ তাদের বাবা-মায়ের থেকেই যখন পাই, তখন এমন মনোযোগ দিয়ে ফুটপাথে বসে পড়ালেখা করতে দেখা আসলেই অবাক হবার মতোই ব্যাপার ।
মেয়েটি লিখেই যাচ্ছে । বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে খাতা ভিজে যাচ্ছে, কলমের কালি খাতার মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে; তবুও সে লিখেই যাচ্ছে । মনে পড়ে গেলো ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা । তিনি রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে পড়তেন । আর এই মেয়ে... যাহোক, ওর দিকে এগিয়ে গেলাম । ভার্সিটিপড়ুয়া আরও দুটি মেয়েও ওর কাছে গিয়ে গল্প জমানোর চেষ্টাকরতে লাগলো । প্রথমে সে কাউকেই পাত্তা দিলো না । অনেক কষ্টে ওর মুখে কথা ফোটানো গেলো । তবু সে খাতা থেকে চোখ সরাল না, বরং লিখতে লিখতেই প্রশ্নের জবাব দিতে লাগলো । ওর নাম আসমানি । থাকে যাত্রাবাড়ীতে, বাবার সাথে । কিন্তু এখানে কেন তবে? ছোট্ট দুটি ঠোঁট বাকিয়ে আসমানি জানাল, ওর মা নেই । তাই বাসায় একা ওকে রেখে আসতে চায়না ওর বাবা । “বাবা কোথায় তোমার?” আসমানি রাস্তার বিপরীত পাশে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো ওর বাবাকে ।
আসমানির বাবা আবদুল আলীম একজন পঙ্গু হকার । বাসে বাসে ঘুরে হকারি করেন, আর যেখানে যান একমাত্র মেয়েকে সাথে নিয়ে যান । মেয়েকে স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্টেনে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন, এখন ক্লাস টুতে । সেখানেই মেয়ে নিজ গরজে পড়তে যায় । কাল ধর্ম পরীক্ষা, তাই আজ সে পরীক্ষার পড়া লিখছে । আলীম ভাই এর নিকট জানতে চাইলাম, এতটুকুন একটা মেয়েকে নিয়ে এভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো কি ঠিক? আপনি আবার বিয়ে করেন না কেন? মেয়েকে মানুষ করবে কে? তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, বিয়েটা তার আর করা হবে না । এভাবেই মেয়েকে মানুষ করতে চান তিনি । চলে আসার সময় শুধু একটা কথাই বললাম, “আপনার মেয়ের বড় হয়ে ডাক্তার হবার খুব শখ । ওর চোখে সেই স্বপ্ন দেখেছি । ওকে মানুষ করুন । পড়ালেখা বন্ধ করা যাবে না ।”
ওদিকে, আসমানি নামের পিচ্চি মেয়েটা, দুনিয়ার সব আগ্রহ এক করে, টিপটিপ বৃষ্টির মাঝেই লিখে যাচ্ছে তখনও...
// আসমানির খোঁজ নিতে যোগাযোগ করতে পারেনঃ আবদুল আলীম (০১৯৮২২২৯৮৫৫) ।
লেখাঃ দেব দুলাল গুহ
Click This Link
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৫৫
ছাসা ডোনার বলেছেন: হে আল্লাহ সাহায্য কর এই মেয়ে আসমানীকে, ও যেন নিজের স্বপ্ন পুরন করতে পারে। ওর বাবাকেও সাহায্য কর। আমীন