নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্য রাজনদের বাঁচাতে হবে

১৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:০৪

|| রাজন হারলে হারবে বাংলাদেশ ||

রাজনকে মেরে কামরুল কোন 'দোষ করেনি', 'সামান্য ভুল' করেছে। ভুলটা হলো এই যে, সৌদি আরব প্রবাসী কামরুল এক মাসের জন্য দেশে এসে ভুলে গিয়েছিল এটা বাংলাদেশ। সে হয়তো ভেবেছিলো সে এখনো আরবেই আছে। জানা মতে, আরবদেশে চুরির শাস্তি জনসমক্ষে হাত কেটে নেয়া অথবা তরবারি দিয়ে শিরশ্ছেদ করা। এই শিরশ্ছেদ করার ভিডিও ইউটিউবে আপলোডও করা হয়, যার কল্যাণে আমরা তা দেখতে পাই ঘরে বসে।

সাইরাস নাউরাস্তে পরিচালিত দ্যা স্টোনিং অব সোরাইয়া ছবিটা যদি আপনি দেখে থাকেন, তাহলে আপনি দেখেছেন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের এক নারীকে কোমড় পর্যন্ত মাটিতে গেড়ে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলার দৃশ্য। না দেখে থাকলে অবাক হবেন, তবু এটা সত্যি যে, সেই মেয়েটিকে প্রথম পাথরটি ছুঁড়েছিলেন মেয়েটির জন্মদাতা পিতা! কারণ, সমাজ তাঁর মেয়ের বিচার করেছে। আর মেয়ে কি করেছে? আসলে সে এক কামুক দুশ্চরিত্র পুরুষের কামনায় সাড়া দেয়নি বলে সেই পুরুষের শত্রুতার শিকার হয়েছে। পুরুষশাষিত সে সমাজে সহজেই মেয়েটির ওপর এই অপবাদ দেয়া গেছে যে মেয়েটিই বেলাল্লাপনা করেছে। যা করতে মেয়েটি আপত্তি জানিয়েছে, তাতেই সুরাইয়াকে জড়ানো হয়েছে।

সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি, পৃথিবীর সকল দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা একরকম নয়। আমাদের অত্যন্ত সৌভাগ্য যে আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বদেশ এখনো গণতান্ত্রিক বিচারব্যবস্থায় বিশ্বাসী, মানুষের মনে এখনো মনুষ্যত্ব আছে। তাইতো, শিশু রাজনের ওপর নির্মম নির্যাতন আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়, আমরা প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়ি, বিচার চাই। এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে আশাপ্রদ খবরও পাই। প্রধান আসামি কামরুলকে সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পালিয়েও বাঁচতে পারেনি সে। ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে ধরে জনগণ যাকে পুলিশে দিয়েছিল, সেই মুহিতকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। দ্রুত এমন কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে ধন্যবাদ। এখন বাকি আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তি দেয়া জরুরি। ওরা রাজনকে হত্যার দৃশ্য ভিডিও করে সবাইকে দেখিয়েছে। আমরা যেন ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করে বিশ্বকে দেখাতে পারি।

আর কোন শিশু যেন নির্যাতিত না হয়। কোন শিশু যদি কোন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে অভাবের তাড়নায় সে এমনটি করেছে। আর দেরী না করে দ্রুত শিশুটির মানসিক চিকিৎসা করাতে হবে, কোনটা করা উচিৎ আর কোনটা অনুচিত তা বোঝাতে হবে, নিতে হবে যত্ন। এই কাজটি পরিবারকেই করতে হবে। প্রত্যেক বাবা মায়ের উচিৎ তাদের শিশু সন্তানটিকে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া, স্কুলের পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে শিশুকে নিয়ে যাওয়া। এতে তার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। আর সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্যও আছে নানা প্রতিষ্ঠান। শিশু শ্রম বন্ধ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে। তারপরেও যদি কোন শিশু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, তবে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে তাকে অক্ষত অবস্থায় দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।

আবার শুরুর প্রসঙ্গে ফিরে আসি। কামরুলের ঐ 'সামন্য ভুল' কেড়ে নিয়েছে একটি তাজা প্রাণ। যে শিশুটি বড় হয়ে নিজের অসচ্ছল পরিবার এমনকি সদ্য নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ হওয়া বাংলাদেশের হাল ধরতে পারতো। ফুল ফুটে সুগন্ধ ছড়ানোর আগেই কুঁড়ি অবস্থাতেই তাকে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এখন আর এসব বলে কোন লাভ নেই। আমরা এখন যেটা করতে পারি সেটা হলো, শিশু নির্যাতন বন্ধ করা।

শিশুশ্রম থাকলে শিশু নির্যাতন থাকবেই। মোটরগাড়ি মেরামতের দোকানে গেলে আপনি দেখবেন কালি-ঝুল মেখে একটা না একটা শিশু সেখানে আছেই। রাস্তার হোটেল বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলিতে যান। দেখবেন, ৫-৬ বছরের শিশুটিকেও চাঁদপুর কিংবা দিনাজপুর থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে ক্যান্টিনবয় হিসেবে কাজ করানোর জন্য। এরা যে এখানে আসে, খুবই সামান্য বেতনে কাজ করে, ছাত্রদের বকা এমনকি চর-থাপ্পড় পর্যন্ত খায়। এদেরকে দিয়ে রুমে রুমে খাবার টানানো হয়। আবার দিনশেষে টাকার হিসেবে সামান্য গড়মিল হলেই ক্যান্টিনের মালিকের হাতেও নির্যাতিত হতে হয়। এদের অনেকেই ঈদে বাড়িতে যেতে পারে না। আমার বোধগম্য হয় না, এমন বাচ্চা ছেলেকে দূরে রেখে ওদের মা কীভাবে থাকেন? যে বয়সে ওদের পড়ালেখা করার কথা, খেলাধুলা করার কথা, সে বয়সেই ওদেরকে কাজে পাঠানো হচ্ছে! সন্তানের দায়িত্বই যদি নিতে না পারেন, তবে জন্ম কেন দেন? অন্যদিকে কামরুলের মতো মানুষরুপী পশুদেরও যোগ্যতা ও এখতিয়ার নেই আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া মানে দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো। সচেতন নাগরিক যেটা করতে পারে না।

আমরা অবশ্যই উচ্চিশিক্ষায় শিক্ষিত হতে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে বিদেশে যাব। যেখানেই যাই, নিজেদের সংস্কৃতির সাথে মিলিয়ে ভালোটা গ্রহণ করে খারাপটা বর্জন করবো। এবং, আমাদের মনে হয় মনুষ্যত্বের জায়গাটাকে আবারও ঝালাই করে নেয়ার সময় এসেছে। শিশু রাজন অশ্রুসিক্ত নয়নে নির্যাতনের শিকার হয়ে মরে গিয়ে আমাদেরকে লজ্জা দিয়ে গেলো। এই দায় আমরা এড়াতে পারিনা। রাজনকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। আর কোন রাজনকে যেন আমরা এভাবে মরতে না দেই।

ইত্তেফাকের দৃষ্টিকোণেঃ Click This Link

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:০২

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: কিছু কি বলার আছে!!












আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.