নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
রাত ১১টার কিছু পরে পলাশীর থেকে চা খেয়ে টুকটাক কেনাকাটা করে ফিরছি। বুয়েটের বাজারের গেটের দুই পাশে দুটি রিক্সা। এর মধ্যে একটি রিক্সার চালক ষাটোর্ধ একজন বৃদ্ধ। এমন শীতের রাতে বড় একটা ময়লা পশমী জ্যাকেট পড়ে রিক্সার পাদানিতে বসে আছেন। একবার ভাবলাম, অন্য রিক্সায় যাই। সেটার চালক যুবক, গায়ে জোর আছে। এই বৃদ্ধর রিক্সায় চড়লে তাঁর রিক্সা টানতে কষ্ট হবে। আর এটা দেখে কষ্ট হবে আমারও। তবুও আমাকে দেখে এই বৃদ্ধাই আগে তৎপরতা দেখালো বিধায় তাঁর রিক্সাতেই চড়তে বাধ্য হলাম। তাছাড়া তাঁর নিশ্চয়ই টাকার দরকার। আমাকে না নিয়ে বসে থাকলে বরং তাঁর ক্ষতি। একটা খ্যাপ আগে মারতে পারলে হয়তো একটু আগে ঘুমাতে যেতে পারবে।
যাহোক, রিক্সায় করে ফিরতে ফিরতে জানতে চাইলাম, 'চাচা, ছেলেমেয়ে নাই?' এই প্রশ্নটা আমি বৃদ্ধ রিক্সাচালক দেখলেই করি। করেই ভাবলাম, ব্যাথার আগুনে ঘি ঢেলে দিলাম নাতো?
চাচা ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবেই নিয়ে বললেন, 'আছে। এক ছেলে।'
কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলাম, 'সে কি করে? কাজ করে না? নাকি আপনাকে দেখে না? এই বয়সেও কেন আপনার রিক্সা চালাতে হচ্ছে? ছোট থেকে ছেলে মানুষ করে বাপ-মা কী জন্য? বুড়ো বয়সেও যদি এমন কষ্ট করা লাগে?'
চাচা যে পিছে ফিরবেন, সেই জো নেই। প্যাডেল মারাও থামালেন না, কারণ একবার ছন্দে ছন্দে প্যাডেল না মারলে পরেরবার টানতে আরও কষ্ট হবে। আরও জোরে প্যাডেল মারতে হবে, ফলে কষ্ট দ্বিগুণ হবে।
চাচা উত্তর দিলেন, 'সে চাকরি করে।'
-কী চাকরি করে, যে বাপকে এই বয়সে রিক্সা চালাতে পাঠায় এত রাতে?
-দারোয়ানের চাকরি করে। সে বাসা ভাড়া দেয়। তাতেই টানাটানি লাইগা যায়। তাই আমারেও গতর খাটতে হয়।
-দারোয়ানের তো বেতন একেবারে কম হওয়ার কথা না! থাকেন কই? বাসা ভাড়া কতো?
-নদীর ওপারে থাকি।
-বুড়িগঙ্গার ওপারে?
-হ, জিঞ্জিরা। বাসা ভাড়া ৫ হাজার।
-তো আপনার ছেলে দারোয়ানি করে ঢাকা শহরে ৫ হাজার টাকাও পায় না?
-মালিক খারাপ। টাকা কম দেয়।
-তাহলে অন্য মালিকের বাসায় কাজ করে না কেনো? না পোষালে নিজে রিক্সা চালাক, তবু বাপকে এই বয়সে... আচ্ছা, টাকা উড়ানোর স্বভাব আছে? মানে নেশা-টেশা?
-কে জানে? কয় তো মালিকে টাকা দেয় না!
-বিয়ে করছে ছেলে?
-না।
-বিয়ের আগেই এই অবস্থা! আমার মনে হয় ছেলে মেয়ে মানুষের পিছে আর নেশার পিছে টাকা উড়ায়। খোঁজ নেন।
-কী জানি!
-বিয়ের পরে তো আপনারে আর চিনবেই না। তখন যাবেন কই!
-জানিনা বাবা।
এরই মাঝে গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। তবুও চাচাকে এক কষ্টের গল্প শোনালাম। তাঁকে বললাম, 'আপনার ছেলের বাবা জীবিত আছে, তবু সে বাবাকে ঠিকমতো দেখে না, অথচ আপনি জানেন কী, এমনও ছেলে আছে যারা বাবাকে নিজের রোজগারের টাকায় একবেলা খাওয়াতে পারেনি বলে, একটা জামা বাবাকে কিনে দিতে পারেনি বলে কষ্ট পায়?'
চাচা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। রিক্সা আরও ধীর হয়ে গেলো। বললেন, 'সবই কপাল।'
ততক্ষণে গন্তব্যে পৌঁছে গেছি। রিক্সা থেকে নেমে মানিব্যাগে হাত দিলাম। চাচা বললেন, 'দুঃখ কইরো না বাবা... ভাতিজা...'
আমি তাঁকে চকচকে একটা নোট দিয়ে বললাম, 'আজ আর রিক্সা চালাতে হবে না। যান, ছেলের সাথে ঘুমান গিয়ে।'
চাচার মুখের দিকে তাকাতে পারলাম না। চলে এলাম। শুধু শুনলাম, তিনি বিরবির করে কী কী যেন দোয়া করছেন।
এই রিক্সাচালকের জন্য কিছু করা যায়। কারণ তিনি হাত পাতেননি। বানিয়ে মিথ্যেও বলেননি। টিএসসি কিংবা কার্জনে রিক্সা নিয়ে 'বাপজান, একটা কথা ছিলো...' বলে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসা বুড়ো হলে স্রেফ বলে দিতাম- 'ভণ্ডামি ছেড়ে বাসায় যান।' কিন্তু এই বৃদ্ধ আলাদা। তিনি ছেলের মিথ্যেকেও বিশ্বাস করেন এবং এই বয়সেও মা-মরা ছেলের কষ্ট লাঘবে শীতের কয়াশা ঘেরা রাতেও রিক্সা চালাতে বাধ্য হন।
এই রিক্সাচালকের জন্য শ্রদ্ধা। তাঁর ছেলের সুমতি হোক। তাঁর কষ্ট লাঘব হোক।
-দেব দুলাল গুহ (দেবু ফরিদী)।
২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১২
অগ্নি সারথি বলেছেন: এই রিক্সাচালকের জন্য শ্রদ্ধা। তাঁর ছেলের সুমতি হোক। তাঁর কষ্ট লাঘব হোক।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:০৫
বিলুপ্ত প্রায় বলেছেন: বাস্তবতা বড়ই রহস্যময়