নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
শুনেছি, নিজে না খেয়েও মা তাঁর সন্তানকে খাওয়ান। শুনেছি কি শুধু? আমিতো নিজের মাকেই দেখেছি! রাস্তার ঐ হতদরিদ্র মাকেও দেখেছি জীর্ণ বুকের শীর্ণ স্তনের সবটুকু বুকের দুধ নিংড়ে তাঁর কোলের বাচ্চাটিকে খাওয়াতে, ফুটপাথে বসেই। আমি বাড়ি থাকিনা বলে আমার মা তো মাঝে মাঝে বাসায় রান্না করাই ছেড়ে দেয়। বলে, তুই নাই, রান্না করে খাওয়াবো কাকে? কত কষ্ট করে এক একজন মা তাঁর সন্তানকে লালন-পালন করেন! আর, আজ, এ আমি কী শুনলাম? বনশ্রীতে নিজ হাতে ওড়না পেঁচিয়ে নিজের পেটে ধারণ করা দুই মাছুম বাচ্চাকে হত্যা করেছেন এক মা? সে কী মা, নাকি ডাইনি? যত ঝামেলাই থাকুক সংসারে, মনে যতই অশান্তি থাকুক, এটা কীভাবে একজন মা করতে পারেন? আমি ভাবতেই পারছি না।
সেদিন একটা ছবি দেখে এতটাই ভালো লেগেছে, যে আমি পাগলের মতো পরেরদিন অফিসে গিয়ে সবাইকে ছবিটি বিলিয়ে বেড়িয়েছি। ছবিটি অবশ্যই দেখার জন্য অনুরোধ করেছি। ছবিটির নাম 'রুম'(২০১৫)। এই ছবিতেই মায়ের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রীর অস্কার জিতেছেন ব্রি ল্যারসন।
একটি ছেলে, যে কিনা জন্মের পর থেকেই একটি আবদ্ধ ঘরের ভেতর বন্দি। পাঁচ বছর ধরে সে সেখানে থাকে তাঁর মায়ের সাথে। মা-ই ওর দুনিয়া। ঐ ঘরের বাইরে কোনদিন যায়নি সে। একটা লোক মাঝে মাঝে খাবার-দাবার এনে দিয়ে যায়। এই দুজন ছাড়া আর কাউকে সে কোনদিন দেখেনি। ওর কাছে এই ঘরের বাইরে যা কিছু, তাঁর সবই অন্য গ্রহ! পঞ্চম জন্মবার্ষিকীর দিন, মা ওকে জানায়, এতদিন ওকে যা যা বলা হয়েছে, সব মিথ্যা। আসলে, এখানে, এই ঘরটায় ওর মাকে ঐ লোকটা জোর করে এনে আটকে রেখেছে সাত বছর! স্কুল থেকে ফেরার পথে মিথ্যা বলে মেয়েটিকে নিয়ে আসা হয়। ঐ লোকটার ঐরসেই জন্ম নেয় ছেলেটি। জন্মের পর থেকেই সে তার মায়ের সাথে এই ঘরে বন্দি। ঘরের দরজা একটা লক দিয়ে আটকানো, যেটার কম্বিনেশন ওরা জানেনা। মা তাঁর পিচ্চি ছেলের সাহায্য চায়। বুদ্ধি করে চাতুরির আশ্রয় নিয়ে বাচ্চাটিকে সেখান থেকে বের করে। ধরা পড়ে গেলে যে নিজের মৃত্যু নিশ্চিত, সেটা জেনেও মা তাঁর সন্তানকে মুক্ত হবার শিক্ষা দেয়। আহা, মায়েরা তো এমনটাই হয়। সেই ছেলে বের হয়ে পরে ওর মাকেও মুক্ত করে। এই হলো ছবিটার কাহিনী।
দেখুন, একজন মা, শুধু সন্তানের কথা ভেবে এতগুলো বছর ঐ এক ঘরে কাটিয়ে দিয়েছে, তাও জোরপূর্বক স্বামী বনে যাওয়া লোকটার ঔরসে জন্ম নেয়া সেই শিশু! আর এখানে, আমার বাংলাদেশে, একজন মহিলা তাঁর নিজের সন্তানকে, তাও একজন না একই সাথে দুজনকে হত্যা করেছে(যদি র্যাবের দাবি অনুযায়ী তিনি সত্যি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে থাকেন, তো)। হত্যা করে সুস্থ মস্তিষ্কে চাইনিজ রেস্টুরেন্টের দোষ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছেন। এমনকি, লাশ দুটির ময়নাতদন্তের পর তাদের না নিয়ে দেশের বাড়িতে পালিয়ে গিয়ে সন্তান হারানোর বেদনায় মুর্ছা যাবার ভান ধরেছেন! কোথায় যাচ্ছে আমাদের সমাজ? এ কেমন মা?
এই মহিলা যদি সত্যিই দোষী হয়ে থাকে, তবে অনতিবিলম্বে তাঁর বিচার দাবি করছি। তিনি 'মা' নামের কলংক।
-দেব দুলাল গুহ।
©somewhere in net ltd.