নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
(৩)
পড়তে বসে কলি এসব স্মৃতি ভাসাত চোখে, আর নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে থাকত শ্রাবণের মুখের দিকে। শ্রাবণ পড়া বুঝাতে বুঝাতে হঠাৎ থেমে যেতো। বলতো-
-কি রে, হা করে কী দেখছিস? বুঝেছিস?
কলি ঘাড় কাত করে।
শ্রাবণ পরীক্ষা নেয়- বল, কী বুঝলি?
কলি ফিকফিক করে মুখে হাত চেপে হাসে।
শ্রাবণ বই বন্ধ করে বলে- যাহ, তোকে আর বোঝাবো না।
-ক্যান? বুঝাবি না ক্যান?
-ক্যান? বুঝাবি না ক্যান?- বলে শ্রাবণ ভেংচি কাটে।
কলি ড্যাব ড্যাব চোখে শ্রাবণের দিকে তাকায়।
শ্রাবণের মায়া হয়। ও কলির ডান হাত হাতে তুলে গালের সাথে মিশিয়ে বলে- পড়াশুনায় মনোযোগী না হলে পাস করবি কী করে? আর পাস না করতে পারলে তো আমার সাথে স্কুলে যেতে পারবি না, আমার পাশে বসতে পারবি না, আমার কাছে পড়া শিখতে আসতে পারবি না। এটা কি ভালো হবে বল? তখন তুই আর আমি আলাদা হয়ে যাবো—
কলি আরও কাছে এলো। শ্রাবণের পিঠে একহাত রেখে মাথাটা ওর কাঁধে ঠেকিয়ে বলল- আর অমন করবো না। কলির গণ্ড বেয়ে গড়িয়ে পড়লো জল।
শ্রাবণ সস্নেহে কলির পিঠে বাঁহাত রাখলো। ডান হাতে ওর চোখ মুছে দিতে দিতে বললো- পাগলি মেয়ে, নে পড়। যেটা না বুঝিস, আমাকে বলবি। আমি এখন আমার পড়া পড়বো।
কলি আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলো শ্রাবণকে। উদাসচোখে বললো- পাস না করতে পারলে আর তোর সাথে মিশতে পারবো না, না? আমরা আলাদা হয়ে যাবো, না?
-আরে না। ওটা কথার কথা। আমি আমার ক্লাসের পড়া পারি বলে তোকে বুঝাই, তুই অন্য ক্লাসে পড়লে কি আমি এতটা পারবো? আমি কি মাস্টার? আমি জানি তুই পাস করবি- আমার সাথেই থাকবি। পড়ার সময় দুষ্টুমি করিস, তাই একটু ভয় দেখালাম। তুই তো আমার বন্ধু- সাথী আমার।
কলি আনন্দের হাসি হাসলো। একটি নাতিদীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে শ্রাবণকে বাহুমুক্ত করলো। শ্রাবণ ওর চোখের জল মুছে দিলো সস্নেহে। কলি পড়ায় মনযোগী হলো আবার।
প্রতিদিন এভাবেই এগিয়ে চলে শ্রাবণ-কলির জীবন। একসাথে স্কুলে যাওয়া, খেলাধুলা করা। একজন আর একজনকে একদিন সঙ্গ না দিয়ে থাকতে পারে না। কেমন জানি একটা শূন্যতা মনকে আচ্ছন্ন করে। এভাবে শিশু শ্রাবণ-কলি বড় হতে থাকে আর ফোর, ফাইভ, সিক্স- এর সিঁড়ি ডিঙায়। সপ্তম শ্রেণিতে উঠে হঠাৎ করেই শ্রাবণ একদিন আবিষ্কার করলো অন্য কলিকে!
পড়াশোনার ফাঁকে শ্রাবণের এতদিনের বিক্ষিপ্ত, চঞ্চল চোখ একদিন কলির শরীরে আটকে যায় বারবার। কলিও স্বতস্ফূর্ততায় হোঁচট খায়। তা দেখে শ্রাবণ লাজনম্র চোখে কলির চোখে তাকায়। কলি বিনয়ী চোখে বলে- তুই বারবার অমন করে তাকাচ্ছিস ক্যান?
শ্রাবণ স্বাভাবিক কন্ঠে বলে- তুই বড় হচ্ছিস, না?
কলি ওর কথার কোন অর্থ বুঝে না, বলে- কী জানি!
শ্রাবণের চোখ ততক্ষণে কলির বুকে আছড়ে পড়েছে!
কলি তা লক্ষ করে। দেখে- ফ্রকের দুটো অংশ অন্য অংশের চেয়ে একটু বেশি ময়লা দেখাচ্ছে। টের পায় সদ্যভিন্ন বুকের স্ফীত অংশেই এ ছাপ আর শ্রাবণের দৃষ্টিটাও ওখানে। কলির মনে কী জানি হয়- অমনি দৌড়ে পালায় শ্রাবণের সামনে থেকে।
এরপর থেকে কলির বুকে ওড়না উঠে এলেও। গুটিধরা বুক ডালিম হলো, আর অপেক্ষা করলো বেলের। শ্রাবণ তরতর করে স্কুলের সিঁড়ি ডিঙিয়ে কলেজে গেলো। কলেজ পেরিয়ে এখন যাচ্ছে ভার্সিটিতে, কিন্তু কলি এসএসসি-তে দু-দুবার ডাব্বা মেরে লাড্ডু-মার্কা ছাত্রীতে অভিষিক্ত হয়েছে! কিন্তু ওদের জোড়া ভাঙেনি।
(চলবে)
উপন্যাসঃ নির্জনতার সমুদ্রে অবগাহন,
লেখকঃ কবি বাবু ফরিদী
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৪:৫৮
রাজসোহান বলেছেন: আগের পর্ব পড়তে হবে +