নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
(৫)
শ্রাবণের ছোট খালু ওর ভালো সহ্য করতে পারেনি কোনদিন। নিজের বাউন্ডুলে কম-মেধাবি ছেলেটিকে বরাবরই দাঁড় করাতো শ্রাবণের কৃতিত্বের পাশাপাশি। কী করে ওদের দাবিয়ে রাখা যায় সেই কূটবুদ্ধি নিয়ে থাকতো সব সময়। তহশিলদার মানুষ তো, সবই দলিল-পরচায়, কলমের খোঁচা জ্ঞানে শ্রাবণকে ভুলপথে পরিচালিত করার করবার বুদ্ধি দিতো ওর সৌম্য-শান্ত বাবাকে। প্রথম প্রথম বাবা যেভাবে চলতে বলতো, শ্রাবণও চলতো সেভাবে। কিন্তু যখন দেখলো বাবা এসব তহশিলদারি মস্তিষ্কে বলেন, তখন থেকে শুরু হলো শ্রাবণের বিদ্রোহ। একসময় বাবাও সব বুঝতে পারলেন।
এসএসসি পরীক্ষার পর খালু স্কুলে গিয়ে নম্বরপত্র দেখেই শ্রাবণের রেজাল্টের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছিলেন। যখন দেখলেন নিজের ছেলের চাইতে প্রায় দ্বিগুণ মার্কস ওর, তখন পান চ্যাগরাতে চ্যাগরাতে বললেন- এ বছর প্রশ্নপত্র আউট হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের সবারই ভালো রেজাল্ট হয়েছে। শ্রাবণ কোনো জবাব দেয়নি তার কথার। শুধু অপেক্ষা করেছে ভালো কলেজ থেকে এইচএসসিতে ভালো রেজাল্ট করার।
এমনি ভাবের ঘোরে কখন যে একটু ঘুম এলো, তা টের পেলো না শ্রাবণ।
কলেজ-চত্বরে পা রাখতেই, পরিচিত মুখগুলো নজরে এলো। কেউ নোটিশবোর্ড থেকে ফিরছে, আর কেউ নোটিশবোর্ডমুখী। শ্রাবণ নোটিশবোর্ডমুখী ছাত্রদের কাতারে এগুতে থাকলো। প্রচন্ড ভিড়। ক্রমে ঠেলাঠেলির মাঝে একরকম স্রোতে গা ভাসানোর মতো করে একসময় নোটিশবোর্ডে ঠেকলো ওরা। শ্রাবণের বুকটা দুরুদুরু করে। ফ্যাকাশে হয় মুখ। আশেপাশে ভ্রুক্ষেপের সময় নেই, তবু দু-একজনকে চোখে না পড়ে পারে না। দু-একটি ছেলেমেয়েকে কাঁদতে দেখে বিলচিত হয় শ্রাবণের মন।
শ্রাবণ দ্যাখ, পলি কাঁদছে! –নয়নের সচকিত কন্ঠ।
ডানে-বায়ে চোখ ঘোরায় শ্রাবণ। ডানে একটা মেয়ের দিকে আটকে যায় ওর দৃষ্টি। জবাব দেয়- হয়তো খারাপ করেছে।
এরই মাঝে সহপাঠী কাজল বলে ওঠে- এই যে শ্রাবণ, তোর খবর খুব ভালো। নয়নেরও। আর নোটিশবোর্ডে যেতে হবে না—
মৃদু হেসে রোল নম্বরটা সচক্ষে দেখে নেয় শ্রাবণ- প্রথম বিভাগ, চারটে লেটার।
কাজল এগিয়ে এলো- কিরে, বিশ্বাস হলো? চল চল ঠাকুরের দোকানে! মিষ্টি খাওয়া!
-যাচ্ছি, যাচ্ছি, তা তোর রেজাল্ট কী?
-ঐ যে, সেকেন্ড ডিভিশন! এসএসসিরটাই। আমি এতেই খুশি। করবো ব্যবসা, অত ভালো করে কী হবে?
ভালো করার মতো প্রস্তুতি নিলে তো হবে! –বললো নয়ন। শ্রাবণ নয়নের চোখে চোখ রাখলো।
কাজল হোঁচট খায়। বলে- করি রাজনীতি। পড়বো কখন? ইচ্ছে করলে ভালো রেজাল্ট আমাদেরও হতো। কিন্তু কী দরকার? হলে তো—না থাক, তোরা ভালো রেজাল্ট করে যা না করতে পারবি, আমরা খারাপ রেজাল্ট নিয়েও তা পারি। অনার্স-মাস্টার্স করে থাকবি বেকার। ঘুরবি চাকরি-বাকরির ধান্দায়। জীবনের অর্ধেকটা কাটবে এভাবেই। আর আমাদের দ্যাখ, সময়মতো বিয়ে করেছি, ব্যবসা জুড়েছি—আর কী চাই? এখন শুধু মাল কামানোর ধান্দা।
ক’বছর আছিস যেন কলেজে? –নয়ন টিপ্পনী কাটে।
-এই ধর চার বছর।
-ইলেকশন করবি নাকি?
-করবো না মানে! আলবৎ করবো। এবারই তো সুযোগ! আমাদের প্যানেল একটাই হবে। আর ওরা নির্বাচন করছে না। শুধু টিয়া ভাইকে ম্যানেজ করতে পারলেই—
কথায় কথায় ঠাকুরের দোকানের কাছে চলে এলো ওরা।
কাজল থামলো। হাতের ইশারায় ঠাকুরের দোকানের কথা স্মরণ করিয়ে দিলো।
-নারে ভাই, আজ পকেটে টাকা নেই। শ্রাবণ বললো।
-নেই মানে? এতো ভালো রেজাল্ট! বাকিতে খাওয়া! চল, বলে দিচ্ছি।
-না রে দোস্ত, আমি বাকি খাই না।
-আজকে খা।
এবার নয়ন মুখ খুললো- ক্যানো, বলে দিতে হবে ক্যানো? তোরা খেয়ে বিল না দিলেই বা কী? কিছু বলার সাহস আছে নাকি ঠাকুরের? নইলে বল, আমিই খাওয়াই—
-আরে, একজন খাওয়ালেই হলো।
ওরা ঠাকুরের দোকানে বসে অর্ডার দেয়। শেষে বিলটা অন্য এক কন্ট্রাক্টরের ঘাড়ে চাপায় কাজল।
শ্রাবণ অসহিষ্ণু কণ্ঠে বলে, চল নয়ন— বাবা-মা উদগ্রীব হয়ে আছেন। বাড়ি চল।
-হ্যাঁ, চল। আমারও তাড়া আছে।
নয়ন উঠে পড়ে। সঙ্গে শ্রাবণও। কাজল আড্ডাবাজদের সাথে মিশে যায়।
-চলি কাজল। নয়ন হাত রাখে কাজলের পিঠে।
-কিরে, যাচ্ছিস?
-হ্যারে, বাড়িতে সবাই চিন্তায় থাকবে। বললো শ্রাবণ।
কাজল নয়নের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে কী যেন বললো। নয়ন পকেট থেকে একটি বিশ টাকার নোট কাজলের হাতে দিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ালো।
(চলবে)
উপন্যাসঃ নির্জনতার সমুদ্রে অবগাহন,
লেখকঃ কবি বাবু ফরিদী।
©somewhere in net ltd.